অন্যের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাওয়া ও তার আদবসমূহ

images

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, -“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রশে করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৭] আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন,= “আর তোমাদের সন্তান-সন্ততি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে যেমনিভাবে তাদের অগ্রজরা অনুমতি প্রার্থনা করত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৫৯]
এক- আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“অনুমতি চাওয়া তিনবার। তারপর যদি তোমাকে অনুমতি দেয়, প্রবেশ কর, অন্যথায় ফেরত চলে আসবে”। [বুখারি মুসলিম ]
দুই- সাহাল ইবন সাআদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“অনুমতি চাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে, চোখের কারণে”। [বুখারি ও মুসলিম ]
তিন: রিব‘য়ী ইবন হিরাশ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী আমের গোত্রের এক লোক আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন,
“একদিন সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চায়, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ ঘরে অবস্থান করছিল। লোকটি বলল, আমি কি প্রবেশ করব? তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ খাদেমকে ডেকে বলল, তুমি যাও এবং লোকটিকে অনুমতি চাওয়ার পদ্ধতি শেখাও। তুমি তাকে বল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব? লোকটি এ কথা শোনে বলল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব? তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিল এবং সে ঘরে প্রবেশ করল”। ইমাম আবু-দাউদ হাদিসটিকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন ।
চার- কালদা ইব্‌ন হাম্বল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে সালাম না দিয়ে তার নিকট প্রবেশ করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে বললেন, ফিরে যাও! এবং বল, আসসালামু আলাইকুম আমি কি প্রবেশ করব”? বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী , ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান।
অনুমতির বিধান
অনুমতি প্রার্থনাকারীকে তুমি কে? বললে, যে নাম বা উপাধিতে মানুষ তাকে চেনে, সে নাম বা উপাধি উল্লেখ করে বলবে- আমি অমুক, শুধু ‘আমি’ ‘আমি’ বলা মাকরূহ।
এক- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, মিরাজের প্রসিদ্ধ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, তারপর জিবরীল আ. আমাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে আরোহণ করেন এবং দরজা খুলে দেয়ার অনুরোধ করেন, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি কে? উত্তরে তিনি বললেন, আমি জিবরীল, তারপর জিজ্ঞাসা করা হল, তোমার সাথে কে? বলল, আমার সাথে মুহাম্মদ। তারপর তিনি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও সব আসমানে আরোহণ করেন। প্রতিটি আসমানের দরজায় তাকে বলা হয়, তুমি কে? তখন তিনি বলেন, আমি জিবরীল”। [বুখারি ও মুসলিম ]
দুই- আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একরাত আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পেলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ চাদের আলোতে একা একা হাঁটছে। তারপর সে ঘুরে দাঁড়ালে আমাকে দেখতে পেল এবং বলল, লোকটি কে? আমি বললাম, আমি আবু যর”। [বুখারি ও মুসলিম
তিন- উম্মে হানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে দেখি, তিনি গোসল করছেন এবং ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ তাকে ডেকে রাখছেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে সে? আমি বললাম: আমি উম্মে হানি”। [বুখারি ও মুসলিম]
চার- জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন.
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে আসি এবং তার দরজায় আওয়াজ করি। তিনি বললেন, লোকটি কে? আমি বললাম: আমি, এ কথা শোনে তিনি বললেন: আমি আমি! মনে হয় যেন, তিনি এ কথা বলাকে অপছন্দ করেন। [বুখারি মুসলিম ]

Related Post