ইসলাম আমাদেরকে যেসব কাজ করার কথা বলেছে এর কয়েকটি ধরন আছে। সবগুলোর স্তর সমান নয়। যেমন ফরজ ও ওয়াজিব আমলের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর তা করা অবশ্য কর্তব্য, না করলে কবিরা গুনাহ হবে। ফিকাহর কিতাবের পরিভাষায় সুন্নত ও মুস্তাহাব উভয় ধরনকে নফলের মধ্যে শামিল করা হয়। নফল অর্থ অতিরিক্ত। অর্থাৎ তা ফরজ ও ওয়াজিবের অতিরিক্ত। একে ফরজ ও ওয়াজিবের পরিপূরক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সুন্নত হলো এমন কাজ যার পেছনে অকাট্য নয় এমন দলিল বিদ্যমান। রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে এর প্রতি আমলের ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ পাওয়া যায়।
রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরামের রা. যুগে আমলের এমন শ্রেণিবিন্যাস ছিল না। তারা আমাদের সময়ের করণীয় এ চার শ্রেণির আমল তথা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাবকে সমান গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। ইমামদের সর্বসম্মত মত হলো, কোনো নফল কাজ শুরু করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। কোনো কারণে ওই নফল কাজ ভঙ্গ হলে ফের কাজা করাও ওয়াজিব থেকে যায়। তাই নফল কাজটি করা বা না করা ইচ্ছাধীন হলেও একবার করতে শুরু করলে তার মধ্যে আর ফরজ ওয়াজিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। তদুপরি কোনো নফল কাজ পারতপক্ষে তরক না করা উচিত। কেননা যেমনি এটা ফরজের পরিপূরক, তেমনি এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের সোপান।
নফল ইবাদতের বেশি দরকার হবে কেয়ামতের দিন, হাশরের ময়দানে। যেদিন ফরজ ইবাদতের ত্রুটির কারণে বান্দা আটকে যাবে তখন তার নফল ইবাদতগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দৈনন্দিন এমন অনেক নফল আমল আছে যা অতি সহজেই করা যায় আবার এর সওয়াবও বেশি। যেমন সবসময় মনে মনে জিকির করতে থাকা, মাসনুন দোয়াগুলো রপ্ত করে নেয়া এবং প্রয়োজনীয় সময় পাঠ করা; সব কাজের আগে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা; যেকোনো কাজে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা; এমনকি একজন মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলাও নফল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। নফল ইবাদত কোনো সময় ধরে করতে হয় না। আল্লাহর কাছে কোন ইবাদতটি কবুল হয়ে যাবে বলা যায় না। যেকোনো ইবাদতের উসিলায় আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন।