New Muslims APP

আল্লাহ এবং মাজলুমের মাঝে কোনো দেয়াল থাকে না

safe_image[3]যারা বিভিন্নভাবে জুলুমের শিকার হন তারাই মাজলুম। সেই মাজলুমের কিছু হক রয়েছে। যেগুলো আদায় না করলে প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। নিচে মাজলুমের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ হক আলোচনা করা হলো :

আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা : মাজলুমের সবচেয়ে বড় হক হলো তার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী এবং জালিমের জুলুম থেকে তিনিই একমাত্র রাকারী। এ জন্য বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ধরনা দিতে হবে। আল্লাহ বলেন, তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেবো, যারা আমার ইবাদতে অহঙ্কার করে তারা অচিরে জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।’ (আল-মুমিন-৬০)। আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। (আল বাকারাহ-১৮৬)

মাজলুমের পাবলম্বন করা : মাজলুমের জন্য আরো একটি হক হলো তার পক্ষে অবস্থান করা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মাজলুমের ফরিয়াদ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মাজলুম এবং আল্লাহর মাঝে কোনো দেয়াল নেই। (সহিহ আল বুখারি : ৩৫০৯)। জুলুম একটি পাপকাজ এবং এর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সবাইকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাই মাজলুমের পাবলম্বন করে জালিমের বিপে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।

সবর করা : মাজলুমকে জুলুম থেকে বাঁচানোর জন্য সবর করতে হবে। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জগতে মুমিনদের অবস্থার একটি উদাহরণ সহিহ মুসলিম সহিহ বুখারিতে আবু হুরায়রা রা:-এর সূত্রে বর্ণিত আরেকটি উদাহরণে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘ঈমানদার ব্যক্তির উদাহরণ শস্যের নরম ডগার মতো, বাতাস যে দিকেই বয়ে চলে, সে দিকেই তার পত্র-পল্লব ঝুঁকে পড়ে। বাতাস যখন থেমে যায়, সে-ও স্থির হয়ে দাঁড়ায়। ঈমানদারগণ বালা-মুসিবত দ্বারা এভাবেই পরীতি হন। কাফিরদের উদাহরণ দেবদারু (শক্ত পাইন) বৃরে মতো, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়। আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তা মূলসহ উপড়ে ফেলেন।’ শস্যের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে। তার সাথে একাকার হয়ে যায়। যদিও বাতাস শস্যকে এ দিক সে দিক দোলায়মান রাখে। কিন্তু ছুড়ে মারতে, টুকরা করতে বা নিচে ফেলে দিতে পারে না। তদ্রƒপ মুসিবত যদিও মুমিনকে কান্ত, ঘর্মাক্ত ও চিন্তামগ্ন রাখে, কিন্তু সে তাকে হতবিহ্বল, নিরাশ কিংবা পরাস্ত করতে পারে না। কারণ আল্লাহর প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস তাকে প্রেরণা দেয়, তার মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে, সর্বোপরি তাকে হেফাজত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। সূরা বাকারাহ-১৫৩। হাদিসে এসেছে, ‘ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কল্যাণ কাউকে প্রদান করা হয়নি’। সহিহ বুখারি সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, ‘মুমিনের ব্যাপারটি চমৎকার, নেয়ামত অর্জিত হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক এতে কৃতজ্ঞতার সাওয়াব অর্জিত হয়। মুসিবতে পতিত হলে ধৈর্যধারণ করে, তা-ও তার জন্য কল্যাণকর এতে ধৈর্যের সাওয়াব লাভ হয়।’

মাজলুমকে জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করা : এ বিষয়ে কুরআন মাজিদে বিশেষ তাকিদ দিয়ে বলা হয়েছে, আর তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে’ যার অধিবাসীরা জালিম এবং আমাদের জন্য আপনার প থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার প থেকে একজন সাহায্যকারী। (সূরা আননিসা-৭৫)

জালিমের প ত্যাগ করা : জালিমের প ত্যাগ করা মাজলুমের অন্যতম হক। কোনোভাবেই জালিমের পক্ষে অবস্থান করা যাবে না। তার পক্ষ ত্যাগ করতে হবে। কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আর যারা জুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; অন্যথায় আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক থাকবে না। অতঃপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।’ (সূরা হুদ-১১৩)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমার ভাই জালিমকে (জুলুম করা থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে) সাহায্য করো এবং মাজলুমকে (জুলুমের হাত থেকে বাঁচানো মাধ্যমে) সাহায্য করো।

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.