New Muslims APP

পরকালের প্রতি বিশ্বাস

পরকালের প্রতি বিশ্বাস

পরকালের প্রতি বিশ্বাস

মামুনুর রশীদ
 পরকাল:
তা হলো, কিয়ামত দিবস, যে দিন আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত সৃষ্টিজীবকে সমবেত করবেন হিসাব নিকাশ ও প্রতিদান প্রদানের জন্য। আখেরাত বা পরকালের নাম করণের কারণ হলো; যে এই দিনের পর আর কোন কাল নেই। সে দিন থেকে জান্নাতিরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।
 পরকালের প্রসিদ্ধ কিছু নাম:
পুনরুত্থান, চূড়ান্ত ফয়াসালার দিন, বেরুবার দিন, প্রতিদান দিবসের দিন, চিরস্থায়ী বা অনন্তজীবনের দিন, বিচার দিবসের দিন, ভয় দেখানোর দিন, একত্রিত হওয়ার দিন, পরস্পর হার-জিতের দিন, সাক্ষাতের দিন, অনুশোচনা করার দিন, পরিতাপ করার দিন, কান ফাটানো আওয়াজ, মহাবিপর্যয়, আচ্ছন্নকারী বিপদ, মহা ঘটনা, অবশ্যম্ভাবী ঘটনা, মহাদুর্ঘটনা। পরকালের এই নামগুলো পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আলোচিত হয়েছে।
 পরকালের প্রতি ঈমান:
দৃঢ় বিশ্বাস করা সেসব বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সেই দিনে সংগঠিত হবে সংবাদ প্রদান করেছেন। যেমন, পূনরুত্থান, একত্রিত হওয়া, হিসাব প্রদান করা, পুলসিরাত, দাঁড়িপাল্লা, জান্নাত, জাহান্নাম, কিয়ামত সংক্রান্ত আরো অন্যান্য বিষয়।
পরকালের আলোচনায় মৃত্যুর পূর্বের অবস্থা অর্থাৎ কিয়ামতের নিদর্শন, এবং মৃত্যুর পরের অবস্থা, কবরের যন্ত্রণা, কবরের সুখ, শান্তি।
 পরকালের গুরুত্ব:
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ রোকন। দুনিয়া ও পরকালের যতবীয় সফলাতা এই উল্লেখিত দুটি বিশ্বাসের প্রতি নির্ভরশীল। এই পরকালের বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি বিশ্বাসের সঙ্গে বহু স্থানে পবিত্র কুরআনের উল্লেখ করেছেন।
১- আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। (সূরা তালাক: ২)
২- অনত্র আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে। এতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা নিসা: ৮৭)
৩- মহান আল্লাহ আরো বলেন: অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাওÑ যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। (সূরা নিসা: ৫৯)
 কবরের যন্ত্রণা:
১- হযরত বারা ইবনে আযেব সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূল (সা.)-এর সাথে জানাযা নামায পড়ার জন্য বের হলাম। এ সময় রাসূল (সা.) বললেন; মৃত বক্তিকে কবরস্থ করার পর, তার কাছে দু‘জন ফেরেশতা আসেন, তারা তাকে প্রশ্ন করেন, তোমরা রব কে? তখন তিনি বলেন, আল্লাহ আমার রব, অতঃপর তারা প্রশ্ন করেন, তোমার দ্বীন কি ছিল? তখন তিনি বলেন, ইসলাম আমার দ্বীন, আরো প্রশ্ন করা হয়, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা যাকে তোমার নিকট পাঠানো হয়েছিল? তখন তিনি জবাব দেন, তিনি হলেন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। (আহমদ: ১৮৭৩৩ ও আবু দাউদ)
২- হযরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত: তিনি রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন: যখন মৃতকে কবরে রাখা হয়, এবং লোকজন দাফন কাজ সম্পাদন করে চলে আসে, তখন মৃত ব্যক্তি কবর হতে স্বজনদের ফিরে আসার পায়ের শব্দ পর্যন্ত শুনতে পান। তখন দু‘জন ফেরেশতা তার নিকট আসেন, এবং তাকে বসান, তার উভয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি এই মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করো? তখন সে বলে: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, তুমি তোমার জাহান্নামের আসনের দিকে দৃষ্টি দাও, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেটা জান্নাতী আসন দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। সেটি তারা সকলে দেখতে পান।
আর মৃত ব্যক্তি যদি কাফের বা মুনাফিক হয়, তাকে উল্লেখিত প্রশ্নগুলো করা হলে সে বলে, আমি জানিনা, তবে অন্যান্য মানুষ যা বলে আমিও তাই বলি, তখন তাকে বলা হবে, তুমি কিছুই জাননা, তুমি কিছুই বুঝনা, তখন তার দুই কানের মধ্যখানে লোহার হাতুরি দিয়ে আঘাত করা হয়, আঘাতের তীব্রতায় সে চিৎকার করে, সে চিৎকার মানব ও দানব ছাড়া পৃথিবীর সকলেই শুনতে পায়। (বুখারী: ১৩৩৮, মুসলিম: ২৮৭০)
 কবরের শাস্তি দুই প্রকার:
১- কিয়ামত পর্যন্ত দীর্ঘায়ু হবে: এটি কাফের মুনাফিকদের জন্য নির্ধারিত। যেমন আল্লাহ তা‘আল ফেরাউন সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন: আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ‘ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও।’ (সূরা গাফের: ৪৬)
২- স্থায়ী শাস্তি কিন্তু বিরতির সাথে: আর এটি নির্ধারিত করা হয়েছে, মুমিন গুনাহগারদের জন্য। তাকে তার অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করতে হবে। অতঃপর শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়। অথবা আল্লাহর রহমতে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। অথবা সে সাদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে কিংবা উপকারী ইলম বা নেক সন্তানদের দোয়ায় তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত: রাসূল (সা.) বলেন: মৃত ব্যক্তিকে প্রতিদিন সকাল বিকাল তার বাসস্থান দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তাকে জান্নাত দেখানো হয়, আর জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। কিয়ামত পর্যন্ত এভাবে দেখানো হয়। (বুখারী: ১৩৭৯, মুসলিম: ২৮৬৬)
 কবরের সুখ:
কবরের সুখ সত্যবাদী মুমিনদের জন্য, ১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন: নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল’। (সূরা ফুসসিলাত বা হামীম সেজদা: ৩০)
২- হযরত বারা ইবনে আযেব (রা.)-হতে বর্ণিত হাদীস, রাসূল (সা.) বলেন; মুমিন ব্যক্তি যখন কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেন; তখন আকাশ হতে এক আহ্বানকারী আহ্বান করেন, আমার বান্দার উত্তর সঠিক হয়েছে বা বান্দা সঠিক বলেছে। তার জন্য জান্নাতী বিছানা বিছিয়ে দাও, জান্নাতী পোশাক পরিধান করিয়ে দাও, জান্নাতের দরজা খুলে দাও। তার নিকট জান্নাতের সুবাস আসতে থাকবে, দৃষ্টির দূরত্ব বরাবর কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। (মুসনাদে আহমদ: ১৮৭৩৩)
 মুমিন ব্যক্তি কবরের শাস্তি ও যন্ত্রণা হতে পরিত্রাণ পাবে, আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছেন এমন ব্যক্তির বা যিনি পেটের যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেছেন তার মত।
 মৃত্যু হতে কিয়ামত অবদি রূহের অবস্থান:
আলমে বরযখ তথা কবর জগতে কিয়ামত পর্যন্ত রূহসমূহ বিশাল ব্যবধানে থাকবে। কিছু রূহ থাকবে ইল্লিয়্যিন সুমহান উঁচু স্থানে, আর তা হলো, আম্বিয়ায়ে কেরামগণের রূহ, তাদের মধ্যে কিছুটা মর্যাদার ব্যবধান থাকবে।
আবার কিছু রূহ পাখির আকৃতিতে জান্নাতের গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। আর তা হলো, মুমিনদের রূহ। আর কিছু রূহ সবুজ পাখির অভ্যন্তরে জান্নাতে উড়ে বেড়াবে। আর তা হলো শহীদদের রূহ।
আবার কিছু রূহ কবরেই আটক থাকে, গনীমতের তালার মতো, কিছু রূহ জান্নাতের দরজা পর্যন্ত গিয়ে আটক থাকে, ঋণের কারণে, কিছু পৃথিবীতে আটকে থাকে, উপরে যাওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলার কারণে। কিছু রূহ বা আত্মা ব্যভিচারের চুলায় উত্তপ্ত হতে থাকবে। আবার কিছু লোক রক্তের নহরে সাতার কাঁটতে থাকবে, পাথর নিক্ষেপ করা হবে, আর তারা হলো সুদ খোর।

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.