New Muslims APP

ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ

Preaching Authentic Islam in Banglaইসলামের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, আনুগত্য স্বীকার করা, আত্মসমর্পণ করা, বশ্যতা মেনে নেয়া। পরিভাষায় ইসলাম হলো, আল্লাহর একত্ববাদের কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে পূর্ণ আনুগত্যের সাথে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নিয়ে শিরক থেকে মুক্ত থাকা এবং মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। সাধারণ অর্থে ইসলাম হলো- ‘মহান আল্লাহ রাসূলগণের আগমনের শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন- যেসব বিধানাবলি প্রবর্তন করেছেন, সেগুলো অনুযায়ী তাঁর ইবাদত করা।’ আর বিশেষ অর্থে ইসলাম হলো, ‘শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: যে শরিয়ত নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন সেগুলোর যথাযথ বাস-বায়ন করা।’ সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ইসলাম বিশেষ অর্থে শেষ নবী সা:-এর শরিয়তের নাম। একে পুরোপুরি মেনে চলতে পারলেই প্রকৃত মুসলিম হওয়া সম্ভব।
ইসলামের আরকান বা খুঁটিগুলো : ইসলামের আরকান বা খুঁটি পাঁচটি। ১. ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সা: আল্লাহর প্রেরিত রাসূল’ এ্র সাক্ষ্য দেয়া। ২. সালাত প্রতিষ্ঠা করা। ৩. জাকাত প্রদান করা। ৪. রমজানের রোজা রাখা এবং ৫. সামর্থ্যবানদের জন্য বায়তুল্লায় হজ পালন করা।
এই পাঁচটি খুঁটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত : ক. এমন খুঁটি যা ছাড়া কোনো ভিত্তিমূল গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। এ ধরনের খুঁটিকে ‘মূল খুঁটি’ বলা হয়। এগুলো দু’টি : ১. ‘শাহাদাতাইন’ তথা আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়া।
২. সালাত প্রতিষ্ঠা করা। খ. এমন খুঁটি যা কোনো ভিত্তির পরিপূর্ণতার জন্য প্রয়োজন হয়। এ ধরনের খুঁটিকে ‘পূর্ণতার জন্য প্রয়োজনীয় খুঁটি’ বলে। এগুলো তিনটি : ১. জাকাত দেয়া ২. রমজানের রোজা রাখা ৩.  হজ পালন করা।
ইসলামের পাঁচ খুঁটির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় রাসূল সা:-এর আলাচ্য হাদিসে। তিনি ইরশাদ করেন- ‘ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি। ১. এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই, মুহাম্মদ সা: আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। ২. নামাজ কায়েম করা ৩. জাকাত দেয়া ৪. বায়তুল্লায় হজ করা ৫. রমজান মাসে রোজা রাখা।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়গুলো : যেসব কারণে ইসলাম নষ্ট হয়ে যায়, এর সংখ্যা অনেক, সবচেয়ে মারাত্মক এবং অধিক সংঘটিত হয় এমন ১০ টি কাজ নিম্নরূপ :
১. আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক করা। শিরকের গুনাহ ক্ষমা করা হয় না এবং মৃত্যুর আগে যদি গ্রহণযোগ্য তওবা না করে মারা যায় তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা কখনো (সে গুনাহ) মাফ করবেন না (যেখানে) তাঁর সাথে কাউকে শরিক করা হয়। এ ছাড়া অন্য সব গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন’ (সূরা আন-নিসা : ৪৮)। যেমন- কোনো জিন বা কবরবাসীর জন্য জবেহ করা, সাদাকাহ করা প্রভৃতি।
২. যে ব্যক্তি নিজের মাঝে আর আল্লাহর মাঝে এমন মাধ্যম গ্রহণ করে, যাদেরকে সে ডাকে, যাদের কাছে সুপারিশ চায় এবং যাদের ওপর নির্ভর করে, সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির।
৩. যে ব্যক্তি মুশরিকদের কাফির বলে না অথবা তাদের কাফির হওয়ার ব্যপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মাজহাবকে সত্য বলে মনে করে, সে কাফির।
৪. যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস রাখবে যে, মুহাম্মদ সা:-এর আদর্শ ছাড়া অন্য কারো আদর্শ বেশি পরিপূর্ণ অথবা তাঁর মাধ্যমে আগত বিধানের চেয়ে অন্য কারো বিধান উত্তম, সে ব্যক্তি কাফির।
৫. রাসূল সা: যে আদর্শ নিয়ে আগমন করেছেন ( সহিহ্ সূত্রে প্রমাণিত) তার কোনো কিছুকে কেউ ঘৃণা করলে সে কাফির হয়ে যাবে যদিও সে তার ওপর আমল করে। আল্লাহর বাণী : ‘এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা (তাদের জন্য) যা কিছু পাঠিয়েছেন তারা তা অপছন্দ করেছে, ফলে আল্লাহ তায়ালাও তাদের যাবতীয় কর্ম বিনষ্ট করে দিয়েছেন’ (সূরা মুহাম্মদ : ৯)।
৬. আল্লাহর দ্বীনের কোনো কিছুকে অথবা তাঁর সাওয়াবকে অথবা তার শাসি-কে যে ব্যক্তি ঠাট্টা করবে সে কাফির হয়ে যাবে। এ মর্মে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তুমি (তাদের) বলো, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা দোষ ছাড়ানোর চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা পুনরায় কাফির হয়ে গিয়েছ’ (আত-তাওবা : ৬৫-৬৬)।
৭. যে ব্যক্তি জাদু করবে অথবা জাদুর প্রতি ঈমান আনবে সে কাফির হয়ে যাবে। দলিল : ‘আর (হারুত ও মারুত ফেরেশতাদ্বয়) যখনই কাউকে ঐ বিষয়ের শিক্ষা দিত তখন প্রথমেই স্পষ্টভাবে সাবধান করে দিত যে, দেখো আমরা এক পরীক্ষা মাত্র, তুমি কুফরি করো না’ (আল-বাকারাহ : ১০২)।
৮. যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিপক্ষে কাফিরদের পক্ষে সাহায্য সহযোগিতা করবে সে কাফির হয়ে যাবে। দলিল : ‘তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু বানাবে, সে তাদেরই অন-র্ভুক্ত হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না’ (আল-মায়িদাহ : ৫১)।
৯. যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস রাখবে যে, কোনো কোনো ব্যক্তির জন্য রাসূল সা:-এর অনুসরণ করা ওয়াজিব নয় এবং তার জন্য তাঁর শারিয়ত থেকে বেরিয়ে যাওয়া জায়েজ আছে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে সে (উদ্ভাবিত) ব্যবস’া কখনো গ্রহণ করা হবে না’(আল-ইমরান : ৮৫)।
১০. যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তা শিক্ষা গ্রহণ করবে না এবং তার ওপর আমলও করবে না সে ব্যক্তিও ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তার চাইতে বড় জালেম আর কে হতে পারে যে ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহ দ্বারা নসিহত করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অবশ্যই আমি নাফরমানদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবো’ (আস-সাজদাহ্ : ২২)।
ইসলাম বিনষ্টকারী বস’গুলোর সব ক’টিই ধ্বংসাত্মক হওয়ার দিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং সংঘটিত হওয়ার দিক থেকেও অধিক। অতএব প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য হবে এগুলোকে পরিহার করে চলা এবং নিজেও তাতে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা।

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.