Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

উত্তম ব্যবহার অমূল্য সম্পদ

Originally posted 2013-02-17 09:51:05.

حسن الخلق

ইসলামী শরীয়ত হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি যা সকল দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানদের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে এসব দিকের মধ্যে গুণাবলী শিষ্টাচার ও চরিত্রের দিকটি অন্যতম। ইসলাম এদিকে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। তাইতো আকীদা ও আখলাকের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী)

সুতরাং উত্তম চরিত্র হচ্ছে ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন। চরিত্র ব্যতীত ঈমান প্রতিফলিত হয় না বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁকে প্রেরণের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমি তো কেবল চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দিতে প্রেরিত হয়েছি। (বুখারী) এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা কালাম-৪)

সুন্দর ব্যবহার প্রকান্তরে ‘ইহসান’ মানব চরিত্রের অমূল্য সম্পদ। কারণ এই ইহসান মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দান করে। কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না আমাদের ব্যক্তিগত সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে এর গুরুত্ব কত অপরিসীম। যে মানুষটি তার মিষ্টি ব্যবহার দ্বারা মানুষের মন জয় করে থাকেন। আল্লাহ তা’আলা ও তার ওপর খুবই সন্তুষ্ট হন। কেননা মানবকে সেবা বা তুষ্ট করাই হচ্ছে আল্লাহর প্রিয় বান্দার কাতারে নিজেকে সামিল করা। কুরআন মজীদে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন : তোমরা ইহসান করো। কেননা আল্লাহ তা’আলা ইহসানকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা-১৯৫)  

আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ইহসানকারীদের সাথে আছেন। (সূরা আনকাবুত-৬৯)

ইহসান মূলত আরবী শব্দ। ইসলামের পরিভাষায় ইহসান হলো আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে উত্তমরূপে ইবাদত করা এবং তার সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা। ইহসান হচ্ছে যেকোনো কাজ ভালোভাবে সুচারু-রূপে সম্পন্ন করা। যেকোনো কাজের বিভিন্ন পর্যায় বা ধরন থাকে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজটি সারাকে ওই কাজের প্রথম পর্যায় বলে। দ্বিতীয় ধরন বা পর্যায় হচ্ছে কাজটি সুচারু-রূপে সম্পন্ন করা। অর্থাৎ ছুরিতে শান দিয়ে কাজটির নিখুঁত ফিনিশিং টানা। প্রথম কাজটি করা হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতির কারণে। একে নেহায়েত আনুগত্যের পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে। দ্বিতীয়টির ধরন হচ্ছে ইহসান। এর জন্য নিষ্ঠা, শ্রম ও গভীর ভালোবাসার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের কাজ যারা করেন তারা কখনো আত্মপূজারী-স্বার্থবাদী, ও পরশ্রীকাতরতার প্রশ্রয় দেন না।

উদাহরণ- স্বরূপ বলা যায়, পিতার মৃত্যুর পর সামাজিকভাবে দু’ভাই সমান অবস্থানে উঠল না। একজন লেখাপড়া শিখে বড় চাকরী ধরে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন। অন্যজন অশিক্ষিত হওয়ার কারণে অভাব-অনটনে কালাতিপাত করছেন। এমতাবস্থায় যদি বড় ভাই তার পৈত্রিক সম্পত্তি ছোট ভাইকে দিয়ে দেন এবং তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন, বড় ভাইয়ের এই মহতী উদ্যোগের কারণে তাকে “মুহসিন” ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে।

প্রতিটি মুহসিন ব্যক্তি মুমিন কিন্তু প্রতিটি মুমিন ব্যক্তি মুহসিন নন। যেমন : একজন মুমিন মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহ তা’আলার মর্জি মোতাবেক করেন। এর ভেতর কোনো দুর্বলতা বা আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু মুহসিন ব্যক্তির কাজ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার কাজে ও কথায় বিশেষ বিশেষত্ব পরিলক্ষিত হয়। মুহসিন ব্যক্তি মুমিন ও মুসলিমের ন্যায় জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহ তা’আলার মর্জি মোতাবেক পালন তো করেনই। উপরন্তু তার প্রতিটি কাজের সৌন্দর্য ও সুচারুতা থাকবে।

মুহসিন তিরস্কার, অবজ্ঞা, দাম্ভিকতা, অহঙ্কার, কটূক্তি, কুৎসা রচনা করা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, তুচ্ছজ্ঞান করতে পারেন না। তিনি কখনো দুরাচার-দুর্বৃত্ত-পাপিষ্ট, কদাচার, দুর্বচন, দূরভিসন্ধি দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার, দুশ্চরিত্র ও দুষ্কর্ম ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন না।

এ ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, এরা শিরকমুক্ত জীবনযাপন করেন। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এরা আমলে সালেহ দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করেন। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এরা আপসহীন ও সৎসাহসী ব্যক্তিত্বে পরিগণিত হবেন। আল্লাহ তা’আলার কাজে লজ্জা, ভয়, সঙ্কোচ কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। শত্রুর শকুনচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি অকুতোভয়ে বলবেন ‘আমি মুসলমান’ আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সঠিক মুসলমান হিসেবে বেচেঁ থাকার তাওফীক দান করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদের সবাইকে আল্লাহর হুকুম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ অনুযায়ী চলার এবং সুন্দর ব্যবহার-উত্তম চরিত্র গঠন করার তাওফীক দান করুন। আমীন ….

Related Post