শেষ পাঠ
উৎস হিসেবে সুন্নাহ
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ما اتاكم الرسول فخذوه وما نها كم عنه فانتهوا
রাসূল তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন তা মজবুতভাবে ধর, আর যা নিষেধ করেছেন তা পরিহার কর। (সূরা হাশর- ০৭)
কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহর আনুগত্যের পাশাপাশি রাসূলের আনুত্যের কথা এসেছে,
যেমনঃ وما ارسلنا من رسول الا ليطاع باذن الله
আমি রাসূল (সা) এই উদ্দেশ্যেই পাঠিয়েছি যে, আল্লাহর নির্দেশে তাঁর আনুগত্য করা হবে। (সূরা নিসা-৬৪)
ومن يطع الرسول فقد اطاع الله
যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করে। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর তাহলে সৎপথ পাবে। (সূরা নূর- ৫৪)
ان تطيعوه تهتدوا أطيعوا الله والرسول لعلكم ترحمون
তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা কৃপা লাভ করতে পার (সুরা আলে ইমরান- ১৩২)
উপরিউক্ত আয়াতসমূহে আমাদেরকে সুন্নাহর আনুগত্য করার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ
يأيهاالذين أمنوا استجيبوا لله وللرسول إذا دعاكم لما يحييكم
হে মুমিনগণ! রাসূল যখন তোমাদের এমন কিছুর দিকে আহবান করে যা তোমাদের প্রানবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দিবে। (সুরা আনফাল- ২৪)
এ আয়াতে রাসূলের আহবানে সাড়া দানের জন্য মুমিনদের কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ আরও বলেন-
قل إن كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم
বল (হে রাসূল!) তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ মাফ করবেন, (সূরা আলে ইমরান- ৩১) এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন- فاتبعوا كتاب الله এর পরিবর্তে فاتبعوني শব্দ ব্যবহার করেছেন। এতে বুঝা যায় রাসূলের অনুসরণকে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বলে গণ্য করা হয়েছে।
আসলে সুন্নাহ হলো সেই উচ্চতর আইন যা সর্বোচ্চ বিধানদাতার- আল্লাহ তা’আলার মর্জি ও ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে। এ বিধান মুহাম্মাদ (সা) থেকে আমাদের নিকট দুটি মাধ্যমে পৌছেছে।
এক. কুরআন, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিধান ও তাঁর হিদায়াতের সমষ্টি।
দুই. মুহাম্মাদ (সা) এর উসওয়া-ই-হাসান বা অনুসরণীয় উত্তম আদর্শ, অথবা তাঁর সুন্নাহ যা কুরআন এর উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। মুহাম্মাদ (সা) শুধুমাত্র আল্লাহর বাণীবাহকই ছিলেন না যে, তাঁর কিতাব পৌঁছে দেয়া ব্যতীত আর কোন দায়িত্ব ছিল না, বরং তিনি আল্লাহর নিয়োগকৃত পথ প্রদর্শক, আইন প্রণেতা ও প্রশিক্ষক ছিলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করা, সঠিক উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দেয়া এবং সে উদ্দেশ্য অনুযায়ী লোকদের প্রশিক্ষণ দেয়া।
সুন্নাহের বিষয় বস্তু
মুহাম্মদ (সা) সাধারণ মানুষের মত সকল গুণের অধিকারী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি কোন ফিরিশতা বা অন্য জাতির গুণে গুণান্বিত কোন সৃষ্টি ছিলেন না। এ জন্য তার সামগ্রিক জীবনের কার্ম-কান্ড, কথা-বার্তা, চাল-চলন, খাওয়া-দাওয়া ও ওঠা-বসা এসবই সুন্নাহ-এর বিষয়বস্তু। এ বিষয়ে আল্লামা কিরমানী (রহ) বলেন-
وموضوع السنة ذات النبي صلى الله عليه وسلم من حيث أنه رسول الله
আল্লাহর রাসূল হিসেবে নবী করীম (সা) এর জীবন সংশ্লিষ্ট বিষয়াদী হচ্ছে সুন্নাহের বিষয় বস্তু।
উৎস হিসেবে সুন্নাহর প্রয়োজনীয়তা
সুন্নাহ আলাদা কোন উৎস বা জ্ঞানের বর্তিকা নয়। কুরআনের সম্পূরক বিশ্লেষক ও সাব্যস্তকরণ ই সুন্নাহর প্রধান কাজ। ফলে কুরআন পূর্ণাঙ্গ অনুধাবন করতে সুন্নাহের দারস্থ হওয়া আশ্চর্য কোন বিষয় নয়। সুন্নাহর প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল।
১. مؤكدة و مقررة বা কুরআনের মমার্থ সাব্যস্ত করা ও দৃঢ় করাঃ এ বিষয়টি বুঝতে আল্লাহর একটি বাণী উল্লেখ করা যেতে পারে যথা انما الخمر والميسر والانصاب والازلام رجس من عمل الشيطان فاجتنبوه لعلكم تفلحون
নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা ও ভাগ্যনির্ধারক শর, শয়তানের কাজ, সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। (সূরা আল-মায়েদা-৯০) এ আয়াতকে হাদীসের একটি অংশ পূর্ণাঙ্গরূপে সুদৃঢ় করেছে তা হচ্ছে- كل مسكر خمر وكل خمر حرام অর্থ- প্রত্যেক নিশাজাতিয় বস্তু খমর বা মদ আর মদ হারাম।
২. مبينة شارحة বা ব্যাখ্যা প্রদানঃ আল কুরআনের অনেক আয়াত ইঙ্গিত বাহক বা গভীর মর্মার্থ সম্পন্ন হওয়ায় তা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে সুন্নাহ কুরআনের অনেক আয়াতের মর্মার্থ বুঝাতে ও ব্যখ্যা দানে বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল।
ক. تخصيص العام ব্যাপতকা হতে সংক্ষিপ্ত করণঃ আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে- يوصيكم الله فى اولادكم আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশণা দিয়েছেন। (সূরা আল-নিছা-১১) এ আয়াত মূলত: ব্যাপকতার অর্থে ব্যবহৃত। হাদীসের ভাষা দ্বারা এর মর্মার্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে- لاوصية لوارث ওয়ারেছ ব্যক্তির জন্য কোন ওসীয়াত নেই।
খ. تقييد المطلق : সাধারণ বিষয়কে সীমাবদ্ধ করণ- আল্লাহর ঘোষণা السارق والسارقة فاقطعوا ايديهما পুরুষ কিংবা নারী চুরি করলে তাদের হাত কেটে দাও। (সূরা সায়েদা-৩৮) এ আয়াত দ্বারা চোর চুরি করলেই তার দ্বন্ড হচ্ছে হাত কেটে ফেলা অথচ কি পরিমান চুরি করলে কতটুকু হাত কাটা যাবে তা উল্লেখ নেই। সুন্নাহ এ বিষয়ে সীমাবদ্ধতা দিয়েছে- موضع القطع وهوالرسغ কর্তনের স্থান কব্জী।
গ. تفصيل المجمل : বা সংক্ষিপ্ত বিষয়ে বিশদব্যাখ্যা- আল্লাহর ঘোষণা اقيمو الصلواة واتواالزكوة তোমরা যথাযথভাবে সালাত আদায় ও যাকাত প্রদান কর। (সূরা আল ৪৪)
এ আয়াত সালাত ও যাকাত আদায়ের কোন বিস্তারিত নিয়ম ও পরিমাণ উল্লেখ করেনি সুন্নাহ দ্বারা এ বিষয়টি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে, خذوا عنى مناسككم – তোমরা তোমাদের শরীয়াতের বিধি-বিধান আমার থেকে গ্রহণ কর।
৩. النسخ: পরিবর্তণ করা- পবিত্র কুরআনে এসেছে- الوصية للوالدين والاقربين অর্থ পিতা-মাতা ও আত্মীয়দের জন্য ওয়াছিয়ত (সূরা আল বাকারা-১৮০) হাদীস দ্বারা এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে- لاوصية لوارث ওয়ারেছ ব্যক্তির জন্য কোন ওসীয়াত নেই।
৪. مؤسسة احكام جديدة: নব্য বিধান প্রণয়ন- সুন্নাহ কুরআনের সাথে সামাঞ্জস্যতা থেকে নতুন কিছু বিধান প্রণয়ন করেছে তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য
ক. পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশমের পোশাক ব্যবহার হারাম।
খ. দু বোন একত্রে বিয়ে করা হারাম
গ. মদ পানকারীর শাস্তির বিধান
ঘ. বিবাহিত ব্যভিচারকারীর বিধান প্রণয়ন
ঙ. কিছু খাদ্য ও পানীয় হারামকরণ ইত্যাদি।
কুরআন ও হাদীসরে প্রকৃত অর্থ জানার উপায়
প্রথমতঃ ভাষা। কুরআনের বহু আয়াতে বলা হয়েছে কুরআন আরবী ভাষায় অবর্তীণ হয়েছে । আল্লাহ তা‘আলা এটা বারবার বলছেনে যাতে কেউ কুরআনকে এমনভাবে ব্যাখ্যা না করে যাতে আরবী ভাষার সাথে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং কুরআন ভালভাবে বোঝার জন্য প্রথম র্শত হচ্ছে আরবী ভাষা বোঝা।
দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে – আরবী ভাষা জানার পর কুরআনরে মাধ্যমেই কুরআনের বক্তব্যকে ব্যাখ্যা করতে হবে যেমনটি আরবীতে বলা হয়ে থাকে “ইয়ুফাসিরু বা‘দুহু বা‘দান”। কুরআন নিজেই এর ব্যাখ্যাস্বরূপ। তাই কোন আয়াতে সাধারণভাবে কোন কিছু উল্লেখ করা হলে অন্য আয়াতে এর বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে সাহাবীদরে বক্তব্য, তাঁদের ব্যাখ্যাসমূহ ভালভাবে বোঝা। তাঁরা বিশেষ মর্যাদার অধকিারী-কারণ..
প্রথমত কুরআনের ভাষা ছিল সেই ভাষা, যে ভাষায় তাঁরা কথা বলতনে, সুতরাং স্বাভাবকিভাবইে পরর্বতী প্রজন্মের লোকদরে থেকে তাঁরা কুরআন বেশি ভালভাবে বুঝতেন।
দ্বিতীয়ত, তাঁরা হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর সাথে বাস করতেন। তাঁরা কুরআন অবর্তীণ হওয়ার সময়, ঘটনা ও উপলক্ষ জানতেন ।
তৃতীয়ত, তাঁরা সরাসরি হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
চর্তুথত, তাঁরা র্সবশ্রেষ্ঠ মুসলমান। তাই আমরা জানি নিশ্চিত না হয়ে তাঁরা কোন আয়াতের ব্যাখ্যা দিতেন না। যদি নিশ্চিত না হতেন তাহলে বলতনে “আমি নিশ্চিত নই” , না হলে বলতেন “আমার মনে হয় এই আয়াতরে ব্যাখ্যা এরূপ”।
যদি কোন নিশ্চিত ব্যাখ্যা না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে ঐ আয়াতের বা ঐ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইজমা’ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া রয়েছে কিয়াস। কিয়াস কুরআন থেকে সরাসরি গৃহীত কোন দললি নয়, বরং যেসবের ব্যাপারে কুরআনে সরাসরি নির্দেশ নেই,সেক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালার হুকুম জানার পদ্ধতি।
কিয়াস-শব্দটির অর্থের ব্যাখ্যা এরূপ- আমরা কুরআন ও হাদীস থেকে জানি যে ‘ক’ এর ক্ষেত্রে নির্দেশ ‘খ’, এখন আমরা ‘গ’ খুঁজে পেলাম যা ‘ক’ এর মত। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে ‘গ’ এর ক্ষেত্রেওে নির্দেশ ‘খ’। এটাই কিয়াস।
ষষ্ঠ প্রয়োজনীয় র্শত হচ্ছে ইখলাস বা একনষ্ঠিতা: যে কেউ এমনকি যদি সে মুসলমান নাও হয়, সে ভাষা রপ্ত করতে পারবে সে হাদীস এবং কুরআনরে আয়াতসমূহ শিখতে পারবে মুখস্ত করতে পারবে সে এসব আয়াতরে অর্ন্তনিহিত ব্যাখ্যা বুঝতে পারবে কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তাকে প্রকৃত জ্ঞান দিবেননা -যে জ্ঞান একজন মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করবে,তেমনি তাকে হেদায়েত দিবেন না যদি তার ইখলাস না থাকে ।
কুরআন ও সুন্নাহ জ্ঞানের উৎস: কতিপয় উদাহরণ :
১. বদরের বন্দীদেরকে জ্ঞান দানের শর্তে মুক্তিদান- যেমন যায়েদ ইবনে আনছারী এর মাধ্যমে রাসূল (সা) সর্ব প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন মদীনায়।
২. মদীনায় সনদের মাধ্যমে ভবিষ্যত পরিকল্পনায় নৈপুন্য প্রদর্শন করা ও বাস্তবায়নে সহায়ক হওয়া।
৩. বিভিন্ন ভাষার গুরুত্ব দু’ভাষী নিয়োগ যেমন মদীনায় এসে বিভিন্ন বর্ণ ও ভাষা-ভাষী লোকদের সাথে মতবিনিময় করে জানা।
সুন্নাহর মাধ্যমে মানুষ মূর্খতা থেকে সভ্যতার দিকে অগ্রসর হয়েছে উশৃঙ্খলতা থেকে শৃঙ্খলতার সোপানে আত্মনিয়োগ করেছে।
৪. আমানতদারী : আমানত শব্দের অর্থ :- গচ্ছিত রাখা, জমা রাখা। খেয়ানত এর বপিরীত শব্দ। সাধারণত কারো কাছে কোন অর্থ গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়। যিনি গচ্ছিত দ্রব্য যথাথতভাবে হিফাজতে রাখেন এবং প্রকৃত মালিক চাওয়া মাত্র তা ফিরত দানে তাকে আমীন (বিশ্বস্ত) বলা হয়।
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সাঃ) ও তোমাদের উপর ন্যস্ত আমানতের খেয়ানত করো না। অথচ তোমরা এর গুরুত্ব জান। (সূরা আনফাল,আয়াত-২৭)
৫. সুদ ও ঘুষ : সুদ প্রথা টাকা দিয়ে টাকা উপার্জন করা, ইসলামী সমাজে একটি অমার্জনীয় অপরাধ। ইসলামের দৃষ্টিতে উহা একটি মারাত্মক ও ধ্বংসাত্বক শোষনের হাতিয়ার । আরবীতে একে বলা হয় রিবা,আর ঘুষ হল একটি সামাজকি ব্যধি অন্যরে অধিকার করায়ত্ব করার লক্ষে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিকে যে অবৈধ অর্থ পণ্য সামগ্রী পর্দার অন্তরালে (গোপনে) প্রদান করে তাই ঘুষ বা উৎকোচ নামে পরচিতি।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন – কিন্তু যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে ৷তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “ ব্যবসা তো সুদেরই মতো ৷” অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম ৷কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌঁছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে ৷আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে ,সে জাহান্নামের অধিবাসী ৷ সেখানে সে থাকবে চিরকাল (সূরা-বাকারা,আয়াত-২৭৫) কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদরে মূলধন তোমাদরেই। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না ৷ (সূরা-বাকারা-২৭৯)
৬. গীবত : গীবত শব্দরে অর্থ হল কুৎসা রটনা করা।
হে ঈমানদাগণ, বেশি ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ ৷দোষ অন্বেষন করো না ৷আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে ৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয় ৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু৷ (সূরা হুজরাত -১২)
হাদীস শরীফে – নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনেঃ তোমরা কি জান, গীবত কি? তাঁরা বললেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জাননে। তিনি বললেন: গীবত হল তোমার ভাইয়ের সর্ম্পকে এমন কছিু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করবে। প্রশ্ন করা হলঃ আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনি কি বলেন? তিনি বললনেঃ তুমি তার সর্ম্পকে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। (মুসলমি/৬৩৫৭-আবূ হুরাইরা (রাঃ), বুখারী/৫৬১৩, আবূ দাঊদ/১৭৯৯)
উপসংহার :
সৃষ্টির সেরা মানব জাতি ধন্য হয়েছে তার জ্ঞানগরিমা দ্বারাই,পৃথিবীর অন্য সকল সৃষ্টির মাঝে মানব জাতির পার্থক্য বা শ্রেষ্ঠত্য এখানেই। জ্ঞানের মাধ্যমেই মানুষ তার আদি, অন্ত, ইতিহাস, ঐতিহ্য। জানতে পারে কে তার স্রষ্টা, কী তার দায়িত্ব। মানুষের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করার যে নীতিমালা প্রয়োজন তার উৎস হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ। এর বাহিরে যে সব জ্ঞান বিজ্ঞান রয়েছে তা এ দু’টিরই শাখা প্রশাখা। এ দু’টি জ্ঞান ভান্ডারকে যে সকল মানুষ পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করবে তারা ইহকালিন সফলতা ও পরকালিন মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে। রাসূল (সা) এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে বলেছেন যে- تركت فيكم امرين لن تضلوا ماتمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বিষয় রেখে গেলাম ঐ দু’টি বিষয় আকড়িয়ে থাকলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবেনা। বিষয় দু’টি হচ্ছে আলকুরআন ও রাসূলে সুন্নাহ। সমাপ্ত