Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

জীবন ও পানি আল্লাহর নেয়ামত

জীবন ও পানি আল্লাহর নেয়ামত

জীবন ও পানি আল্লাহর নেয়ামত

মাটি, পানি, আলো, বাতাস সবকিছুই মানুষের উপকারে আসে। পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করতে এসবের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এর একটিকে বাদ দিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। আর এসবের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ। পানি সাধারণত নদী, সাগর, পুকুর ও মাটির নিচ থেকে পেয়ে থাকলেও বৃষ্টি পানির অন্যতম মাধ্যম। আর সরাসরি আল্লাহ নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার অন্যতম বৃষ্টি। শ্যামলীময় সুশোভিত বসুন্ধরা বৃষ্টির স্পর্শেই মানুষের জন্য বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় ভূমিকে উর্বর ও উৎপাদনশীল করে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকৃতি সজীবতায় ভরে ওঠে বৃষ্টির জাদুতে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জেনে শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করিও না’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২২)।
শান্তি-ময় পরিবেশ বজায় রাখতে আকাশ ও পৃথিবীকে সুশোভিত করা হয়েছে। বৃষ্টিকে শোভাবর্ধন করতে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। শোভাবর্ধন কেবল নয়, বরং আমাদের চাহিদা পূরণে বৃষ্টিপাতের ফলে খাদ্যশস্য ও ফুলে-ফলে ভরপুর করে দেয়া হয় ভূমণ্ডলকে। গ্রীষ্মের তাপদাহ কিংবা প্রচণ্ড খরায় শস্যক্ষেত যখন ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তখন একপশলা বৃষ্টিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয় পৃথিবীতে। এটি আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী তাদের সব ক্ষমতা একত্র করেও এ কাজটি করতে পারেন না অথচ আল্লাহর মর্জি হলে মুহূর্তের মধ্যে একটি দেশ, মহাদেশ কিংবা পৃথিবীকে বৃষ্টির স্পর্শ বুলিয়ে দিতে পারেন। এমনকি প্রচুর বৃষ্টির কবলে ফেলে দেয়ার কাজটিও করতে পারেন। এ কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ক্ষমতা যেমন মানুষের নেই, তেমনি কাজটি করিয়ে দেখানোর সামান্যতম শক্তিও কাউকে দেয়া হয়নি। সবই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, আদিতে আকাশ, নক্ষত্র, সূর্য, পৃথিবী ইত্যাদির পৃথক পৃথক সত্তা ছিল না। তখন মহাবিশ্ব ছিল অসংখ্য গ্যাসীয় কণার সমষ্টি, যাকে বলা হয় নীহারিকা। এই নীহারিকা পরবর্তী সময়ে বহু খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং এসব খণ্ড ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে নক্ষত্রপুঞ্জ, সূর্য, পৃথিবী ও অন্য গ্রহাদির সৃষ্টি হয়। পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলী একসাথে থাকাকালে মানুষের বা প্রাণিকুলের বসবাসের উপযোগিতা ছিল না। জীববিজ্ঞানীদের মতে, সাগরের অভ্যন্তরে অর্থাৎ পানিতেই প্রোটোপ্লাজম (জীবনের আদিম মূল উপাদান) থেকেই জীবের সৃষ্টি। আবার যাবতীয় জীবদেহ কোষ দ্বারা গঠিত এবং প্রত্যেকটি কোষের অন্যতম মূল উপাদান হচ্ছে পানি। ভিন্ন মতে পানি অর্থ শুক্র। (কুরতুবি)।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা কুফরি করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?’ (সূরা আম্বিয়া-৩০)।
মানুষের বাসযোগ্য করে সৃষ্টি করা পৃথিবী মানুষের জন্য রুজির ব্যবসার পাশাপাশি কল্যাণকর করে গড়ে তোলা হয়। আর বৃষ্টিপাতের ফলে সব কিছুকে করা হয় স্বাভাবিক। প্রকৃতিকে প্রাণবন- করতে সজীবতা ও সৌরভিত করা হয়। বিস্তীর্ণ মাঠ, গাছগাছালি, প্রাণিকুলের জীবনধারা যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য বৃষ্টি-পানির প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় বৃষ্টিকে স্রষ্টার অপূর্ব দান ও শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। পবিত্র কুরআনের বাণী, ‘আমি জলাধার-মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি, তদ্বারা উৎপন্ন করি শস্য উদ্ভিদ’ এই নেয়ামতের সাক্ষ্য বহন করে। আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টি, নদী-সাগর ও ভূগর্ভস’ পানি না থাকলে পৃথিবীর কোনো প্রাণী, গাছপালা কিছুই বেঁচে থাকতে পারত না। আল্লাহর এই কুদরতে বিশ্বজাহান সজীব ও প্রাণবন- হয়ে আছে। বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিরাজিসমৃদ্ধ পৃথিবী তার কুদরতি ইশারায় চলছে নিরবধি। পৃথিবীর গতিধারা প্রবাহিত হচ্ছে তারই ইচ্ছায়।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা মৎস্য আহরণ করতে পারো এবং যাতে তা থেকে আহরণ করতে পারো রত্নাবলি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান করো;… এবং স্থাপন করা হয়েছে নদ-নদী ও পথ যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে- পৌঁছতে পারো।(সূরা নাহল-১৪ ও ১৫)।
আল্লাহর নির্দেশেই সব কিছু হয়ে থাকে। মানব জাতিকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে আশরাফুল মাখলুকাত করে সৃষ্টি করেছেন। জগতের সবকিছুকে মানুষের উপকারে সৃষ্টি করা হয়েছে। কি্ন্তু’ মানুষ তাদের কর্তব্যকর্মে স্বাভাবিকতা বজায় না রাখা এবং আল্লাহর নাফরমানি করার কারণে ওই সব (জগতের সব কিছু) মানুষের প্রতি বৈরী হয়ে ওঠে। মানুষের ওপর নেমে আসে অরাজকতা, কষ্ট ও দুর্ভোগ। সৃষ্টিজগতের সব কিছু জ্ঞানবানদের জন্য শিক্ষার উপযোগী করে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাতে চিন-াশীলদের জন্য নিদর্শন বিরাজমান। রাত-দিন, সমুদ্র-নদী, আকাশ-জমিন, ঝড়-বৃষ্টি, পশু-পাখি, গাছগাছালি, মেঘমালাসহ যত সৃষ্টি সব কিছুই আল্লাহর অসীম নিদর্শন। সব কিছুকেই আল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এসব যেমন পৃথিবীকে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে, তেমনি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিতেও কাজ করে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞানে বৃষ্টিপাতের প্রাকৃতিক বর্ণনা দেয়া হলেও তার মূলে আল্লাহর অদৃশ্য শক্তি রয়েছে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পবিত্র কুরআনে ভাসমান মেঘমালা থেকে বৃষ্টিবর্ষণের সুন্দর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে- “তুমি কি দেখ না, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তৎপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্থরে স্থরে রাখেন, অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বারিধারা। তিনি আকাশসি’ত শিলাস্তুপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক দৃষ্টিশক্তিকে যেন বিলীন করে দিতে চায়।’ (সূরা আন-নূর-৪৩)।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষসাধন সত্ত্বেও বৃষ্টির বিকল্প আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। মাঠের ফসল, জমির উর্বরতা, গাছগাছালির সজীবতা, ফলফলাদির উৎপাদন, মাছ-জলজ প্রাণীর প্রাণ চাঞ্চল্যতা, পশু-পাখির খাদ্য শস্য’উৎপন্ন- সব কিছুতেই বৃষ্টিবর্ষণের ওপর নির্ভরতা বিরাজমান। এসব কিছুর সুষ্ঠু জীবনযাপন এবং স্বাভাবিক অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টির প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন আল্লাহ। তবে স্বাভাবিক অবস্থার ব্যতিক্রম হলেই সহজাত প্রাকৃতিক ধারা ব্যাহত হয়। নেমে আসে দুর্যোগ-দুর্গতি। গাছগাছালি, ভূমি, পশু-পাখি, মানুষসহ সব কিছুর ওপর পড়ে তার বিরূপ প্রভাব।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে, যা মানুষের হিত সাধন করে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানগুলোয়, আল্লাহ আকাশ থেকে যে বারি বর্ষণ দ্বারা ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন, তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিসরণে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৬৪)।
আল্লাহর রহমতের অনন-ধারা পৃথিবীতে না থাকলে মানুষ, জীবজন’, গাছগাছালি কোনো কিছুর উপযোগী বাসস্থান পাওয়া যেত না। পৃথিবীতে রয়েছে বেশুমার পানিরাশি। কিন্তু’ তার বেশির ভাগই ব্যবহারের অনুপযোগী। লবণাক্ততা ও অন্যান্য দূষণমুক্ত মিষ্টি পানির প্রধান উৎস বৃষ্টি। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হলে মিষ্টি পানির সঙ্কট দেখা দিয়ে থাকে। পর্যাপ্ত মিষ্টি পানির অভাব ঘটলে পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন থমকে যাবে। অনাবৃষ্টির কারণে আমরা ভূগর্ভের পানি যথেচ্ছ ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু’ সেটিও আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি- যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্রবহমান পানি!’
আল্লাহর দেয়া পানি আমরা প্রয়োজনে ব্যবহার করব ঠিকই, কিন্তু’ যথেচ্ছ ব্যবহার বা পানির অপচয় করা মোটেও উচিত হবে না। অপচয় করলে তার খেসারত দিতেই হবে। কোনো কিছু অতিরঞ্জিত যেমন ঠিক নয়, তেমনি অহেতুক কিছু করাও ইসলাম সমর্থন করে না। পানি দূষিত করাও চরম অন্যায়। আমাদের মনে রাখা দরকার, আমি যদি পানির অপচয় ও অপব্যবহার করি, তাহলে অন্য কেউ বঞ্চিত হবে। আর এভাবে অপচয় ও অপব্যবহার হতে থাকলে একসময় অনেকেই বঞ্চিত হবে। এজন্য আমাদের প্রিয় নবী সা: মুসলমানদের পানির দ্বারা পবিত্রতা হাসিলের কাজেও অপচয় করা থেকে নিষেধ করেছেন। রাসূল সা:-এর সাহাবি সাদ রা. অজুর পানি ব্যবহারে অপচয় করছিলেন দেখে রাসূলুল্লাহ সা: তাকে বললেন, ‘তুমি পানি অপচয় করছ কেন? সাদ রা: বললেন, অজুর সময়ও কি পানি অপচয় হয়? রাসূল সা: বললেন, হ্যাঁ এমনকি যদি তুমি চলমান নদীতেও অজু কর তাতেও পানির অপচয় হয়।’ (ইবনে মাজা)।
এজন্য আল্লাহর নিয়ামতরাজি উপভোগ করার পাশাপাশি যথাযথ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আবশ্যক। বৃষ্টিও একটি নিয়ামত। এই নিয়ামত মানুষকে অপরিসীম দয়ার অধিকারী করেছে। আমরা সারা জীবন এই অমূল্য দানের প্রতিদান দিতে চেষ্টা করলেও সম্ভব হবে না। তাই আল্লাহর সব নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি তাঁর ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স’াপন করে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রয়োজন।
==০=

Related Post