প্রশ্ন: আমাদের দেশের প্রায় মসজিদে দেখা যায়, যে নামাযের পূর্ব মুহূর্তে ইকামতের আগে কিংবা জুমুয়ার দিন বাংলায় ওয়াজ করার সময় হতে ইকামতের আগ পর্যন্ত লাল বাতি জ্বালানো হয়। অর্থাৎ ইকামতের পূর্বে নির্দিষ্ট সময়ে নামায পড়া নিষেধ। অথচ উপরের কার্যকলাপগুলো আরবদেশের কোন মসজিদে দেখা যায় না। বিস্তারিত বুঝিয়ে বললে আমরা উপকৃত হবো।
উত্তর: দেখুন নামায একটি প্রতিষ্ঠিত ইবাদত, কেউ ইচ্ছা করলেই নামায পড়া থেকে কাউকে বিরত রাখার ইখতিয়ার রাখেনা। শরীয়ত প্রণেতা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনটি সময়ে নামায পড়াকে নিষিদ্ধ করেছেন।
ক) সূর্য উদয় হওয়ার সময়,
খ) সূর্য যখন মাথার উপর থাকে তখন, আর
গ) সূর্য যখন অস্ত যায় তখন। (মুসলিম)
এই তিনটি সময়ে কারণ জনিত নামায ছাড়া অন্য যে কোন নফল নামায পড়া মাকরূহ। অর্থাৎ এই নিষিদ্ধ সময়েও কারণ জনিত নামায পড়া যাবে, যেমন সালাতুল কুসুফ, সালাতুল জানাযা, তাহিয়্যাতুল ওযু, দুখুলুল মসজিদ ইত্যাদি নামায পড়া যাবে। উল্লেখিত কারণ ছাড়া কেউ ইচ্ছা করলেই ইকামতের পূর্বে কিংবা শুক্রবার দিন জুমুয়ার পূর্বে লালবাতি জ্বালিয়ে সাধারণ মুসল্লিদেরকে নামায পড়া থেকে বিরত রাখার অধিকার রাখে না। বরং কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকায়াত নামায না পড়ে বসা উচিত না। সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে;
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِيُّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَجَلَسَ فَقَالَ لَهُ: يَا سُلَيْكُ قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَتَجَوَّزْ فِيهِمَا – ثُمَّ قَالَ: إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَلْيَتَجَوَّزْ فِيهِمَا -رواه مسلم
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) জুমুয়ার খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় সুলাইক আল গাতফানী নামাক সাহাবী মসজিদে প্রবেশ করে বসে গেলেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, হে সুলাইক! দাঁড়াও সংক্ষিপ্তভাবে দুই রাকায়াত নামায বড়ে বসো। অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন: জুমুয়ার দিন ইমাম খুতবাহ প্রদান কালে যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, তখনও সে যেনো দুই রাকায়াত নামায আদায় করে বসে। নামায সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করবে। (মুসলিম)
উপরোল্লিখিত হাদীস দ্বারা জানা গেলো যে, ইমাম খুতবা প্রদান কালেও দুখুল মসজিদ নামায পড়েই মুসল্লিকে বসতে হয়, যা রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত রয়েছে। সেখানে কিভাবে লালবাতি জ্বালিয়ে মুসল্লিদেরকে নামায পড়া হতে বিরত রাখা হয়! আমি মনে করি যারা লালবাতি জ্বালায় তারা হাদীসের বিরোধিতা করে।
সুতরাং আমাদের উচিত এভাবে লালবাতি না জ্বালানো। এবং মুসল্লিদেরকে দুখুল মসজিদ নামাযে উৎসাহ প্রদান করা। মহান আল্লাহ সকলকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন