عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ لاَ يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الاِسْتِعْجَالُ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِي فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ
আবু হুরাইরাহ (রা.)এর সানাদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বান্দার দু’আ সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দু’আ করে এবং (দু‘আয়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! (দু’আয়) তাড়াহুড়া করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি দু’আ তো করেছি, আমি দু’আ তো করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দু’আ কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দু’আ করা পরিত্যাগ করে। (মুসলিম: ২৭৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪০, বুখারী: ৬৩৪০, তিরমিযী: ৩৩৮৭, আবু দাঊদ: ১৪৮৪, ইবনে মাজাহ: ৩৮৯৮)
عَنْ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ رضي الله عنه أَنَّ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ، حَدَّثَهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَا عَلَى الأَرْضِ مُسْلِمٌ يَدْعُو اللَّهَ بِدَعْوَةٍ إِلاَّ آتَاهُ اللَّهُ إِيَّاهَا أَوْ صَرَفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا مَا لَمْ يَدْعُ بِمَأْثَمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ
উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর বক্ষে যে মুসলিম লোকই আল্লাহ তা’আলার নিকটে কোন কিছুর জন্য দু’আ করে, অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাকে তা দান করেন কিংবা তার হতে একই রকম পরিমাণ ক্ষতি সরিয়ে দেন, যতক্ষণ না সে পাপে জড়িত হওয়ার জন্য অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দু’আ করে। সমবেত ব্যক্তিদের একজন বলল, তাহলে আমরা অত্যধিক দু’আ করতে পারি। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তার চাইতেও বেশী কবুলকারী। (তিরমিযী: ৩৫৭৩)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ فَقَالَ ( يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ) وَقَالَ ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ) ” . ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ ”
আবূ হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা’আলা তার প্রেরিত রাসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।” (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ঃ ৫১)
তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও” (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু’আ তিনি কী করে কবূল করতে পারেন?” (মুসলিম: ১০১৫,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬, তিরমিযী: ২৯৮৯)
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎকাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তা’আলা শীঘ্রই তোমাদের উপর তার শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তার নিকট দু’আ করলেও তিনি তোমাদের সেই দু’আ গ্রহণ করবেন না। (তিরমিযী: ২১৬৯)
ব্যাখ্যা:
দু‘আ কবূল হতে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, একজন মুসলমানের উচিত সেসব প্রতিবন্ধকতা থেকে বেঁচে থাকা, যাতে করে তার কৃতদু‘আসমূহ গৃহীত হয়। এমন ধারণা মোটেও সঠিক নয় যে, আল্লাহ আমার দু‘আ কবূল করেন না। বরং দু‘আ কবূল হওয়ার জন্য যত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো থেকে নিজেকে আগে পবিত্র করতে হবে। তাছাড়া তিনি আলিমুল গাইব, কোনটায় আমাদের কল্যাণ কোনটায় অকল্যাণ ভালো জানেন। তাই কখনো কখনো দু‘আর ফলাফল তিনি পৃথিবীতে দেন না। এটি পরকালের জন্য রেখে দেন। আবার কখনো দু‘আয় যা চাওয়া হয়েছে, তা না দিয়ে অকল্যাণকে দূর করে দেন। সুতরাং কোন মুসলমানের নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
ফাওয়ায়েদ বা শিক্ষাসমূহ
১। হারাম খাদ্য-পানীয় ও পোশাক দু‘আ কবূলে প্রতিবন্ধকতা করে।
২। অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার কারণে দু‘আ কবূল হয় না।
৩। দু‘আ কবূল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করাও দু‘আ কবূল হওয়ার জন্য অন্তরায়, কেননা এতে আল্লাহর প্রতি নিরাশ হওয়া বুঝায়।
৪। জরুরি নয় যে, দু‘আয় যা চাওয়া হবে, তাই কবূল হবে। হতে পারে অকল্যাণ দূর করা হয়েছে।
৫। সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা না দেওয়াও দু‘আ কবূলের জন্য অন্তরায়।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে দু‘আ কবূল হওয়ার জন্য যত প্রকার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন