ঈদায়নের ছালাত ১ম হিজরী সনে চালু হয়। এটা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। রাসূলুলাহ (ছাঃ) নিয়মিতভাবে তা আদায় করেছেন এবং নারী-পুরুষ সকল মুসলমানকে ঈদের জামা‘আতে হাযির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এদিন সর্বোত্তম পোষাক পরিধান করতেন ও নিজ স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে ঈদগাহে যেতেন।[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১৭-১৮।] তিনি একপথে যেতেন ও অন্যপথে ফিরতেন।[বুখারী, মিশকাত হা/১৪৩৪।]
ঈদায়নের ছালাত সকল নফল ছালাতের মধ্যে সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ।[তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৮।] তা সহ কোন ইবাদতের জন্য নিয়ত মুখে বলতে হয় না। বরং হৃদয়ে সংকল্প করতে হয়।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১।] ঈদায়নের ছালাতে সূরায়ে আ‘লা ও গা-শিয়াহ অথবা ক্বাফ ও ক্বামার পড়া সুন্নাত।[নায়লুল আওত্বার ৪/২৫১।] অবশ্য মুক্তাদীগণ কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বেন।[নায়লুল আওত্বার ৪/২৫১।]
ঈদায়নের জন্য প্রথমে ছালাত ও পরে খুৎবা প্রদান করতে হয়।ত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৬, ১৪৩১।] ঈদের ছালাতের আগে পিছে কোন ছালাত নেই, আযান বা এক্বামত নেই। ঈদগাহে বের হবার সময় উচ্চৈকণ্ঠে তাকবীর এবং পৌঁছার পরেও তাকবীরধ্বনি ব্যতীত কাউকে জলদি আসার জন্য আহবান করাও ঠিক নয়।[সলিম, মিশকাত হা/১৪৫১;] কোন কোন ঈদগাহে ইমাম পৌঁছে যাওয়ার পরেও ছালাতের পূর্বে বিভিন্ন জনে বক্তৃতা করে থাকেন। এটা সুন্নাত বিরোধী কাজ।
ঈদায়নের খুৎবা একটি হওয়াই ছহীহ হাদীছ সম্মত। মাঝখানে বসে দু’টি খুৎবা প্রদান সম্পর্কে কয়েকটি ‘যঈফ’ হাদীছ রয়েছে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন যে, এটিই প্রমাণিত সুন্নাত যে, আলাহর রাসূল (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুৎবা দিয়েছেন- যার মধ্যে আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, দো‘আ সবই ছিল।[‘আৎ ২/৩৩০-৩১।]
মুসলমানদের জাতীয় আনন্দ-উৎসব মাত্র দু’টি- ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা।[আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৪৩৯।] এই দু’দিন ছিয়াম পালন নিষিদ্ধ।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০৪৮।] এক্ষণে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ নামে তৃতীয় আরেকটি ঈদ-এর প্রচলন ঘটানো নিঃসন্দেহে বিদ‘আত- যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
ঈদায়নের জামা‘আতে পুরুষদের পিছনে পর্দার মধ্যে মহিলাগণ প্রত্যেকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে যোগদান করবেন। প্রত্যেকের চাদর না থাকলে একজনের চাদরে দু’জন আসবেন। খত্বীব ছাহেব নারী-পুরুষ সকলকে লক্ষ্য করে মাতৃভাষায় পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে খুৎবা প্রদান করবেন। ঋতুবর্তী মহিলারা কেবল খুৎবা শ্রবণ করবেন।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৩১।] মিশকাতের খ্যাতনামা ভাষ্যকার ওবায়দুলাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন যে, উক্ত হাদীছের শেষে বর্ণিত دعوة المسلمين কথাটি ‘আম’। এর দ্বারা খুৎবা ও নছীহত বুঝানো হয়েছে। কেননা ঈদায়নের ছালাতের পরে (সম্মিলিত) দো‘আর প্রমাণে রাসূলুলাহ (ছাঃ) থেকে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি’।[মির‘আৎ ২/৩৩১।]
ঈদায়নের ছালাত আলাহর নবী (ছাঃ) বৃষ্টির কারণে একবার ব্যতীত সর্বদা ময়দানে পড়েছেন। এই ময়দানটি মদীনার মসজিদে নববীর পূর্ব দরজা বরাবর পাঁচশ’ গজ দূরে ‘বাত্বহান’ সমতল ভূমিতে অবস্থিত।[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১৮-১৯] সুতরাং বৃষ্টি বা অন্য কোন যরূরী কারণে ময়দানে যাওয়া অসম্ভব হ’লে মসজিদে ঈদের জামা‘আত করা যাবে।[ফিক্ব্হুস সুন্নাহ ১/৩১৮] কিন্তু বিনা কারণে বড় মসজিদের দোহাই দিয়ে মহানগরী বা অন্যত্র মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করা সুন্নাত বিরোধী আমল। জামা‘আত ছুটে গেলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নিবে। ঈদগাহে আসতে না পারলে বাড়ীতে মেয়েরা সহ বাড়ীর সকলকে নিয়ে ঈদগাহের ন্যায় তাকবীর সহকারে জামা‘আতের সাথে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে।[বুখারী, ফৎহসহ ২/৫৫০-৫১।]
জুম‘আ ও ঈদ একই দিনে হওয়াতে রাসূলুলাহ (ছাঃ) দু’টিই পড়েছেন। তবে যারা ঈদ পড়েছেন, তাদের জন্য জুম‘আ অপরিহার্য করেননি।[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১৬, নায়ল ৪/২৩১।]
ঈদের দিন ছাহাবায়ে কেরাম পরস্পরে সাক্ষাৎ হ’লে বলতেন ‘আলাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্না ওয়া মিনকা’ (অর্থ: আলাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ হ’তে কবুল করুন!)।[ফিক্ব্হুস সুন্নাহ ১/৩১৫।] এদিন নির্দোষ খেলাধুলা করা যাবে।[.ফিক্ব্হুস সুন্নাহ ১/৩২২।] কিন্তু তাই বলে পটকাবাজি, মাইকে ক্যাসেটবাজি, চরিত্র বিধ্বংসী ভিডিও প্রদর্শন, বাজে সিনেমা দেখা, খেলাধুলার নামে নারী-পুরুষের অবাধ সমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
ঈদায়নের ছালাতে অতিরিক্ত তাকবীর : প্রথম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমা ও ছানা পড়ার পরে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ মোট বার তাকবীর দেওয়া সুন্নাত। এরপরে ‘আঊযুবিলাহ’ পাঠ অন্তে ক্বিরাআত পড়বে। প্রতি তাকবীরে দু’হাত উঠাবে। তাকবীর বলতে ভুলে গেলে বা গণনায় ভুল হ’লে তা পুনরায় বলতে হয় না বা ‘সিজদায়ে সহো’ লাগে না।[মির‘আৎ হা/১৪৫৭, ২/৩৩৮-৮১, হাকেম ১/২৯৮।]
==== সমাপ্ত =====