এই পর্ব বুঝতে হলে অবশ্যই পূর্বের পর্ব
পড়তে হবে
একটু পরেই দেখি গুলশান আরা এসেছে। আমি খুশি হয়ে গেলাম। সালাম বিনিময়ের পর ওর হাত ধরে বললাম “এতো দেরী করলেন ক্যান আপা? বাসায় কোনো সমস্যা?”
ঃ সমস্যা তো আছেই। আমি এখানে দেরী করতে পারব না শুধু আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম। আপনি চলে যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করে যাবেন।”
বললাম “একটু দেরী করেন। দারস টা শুনে যান।”
ঃ না না আমার সময় নেই। বলে চলে গেলো গুলশান আরা।
সম্মেলন শেষে জিলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুর রশীদ ভাই আমাকে বললেন,“রুমী আপা আপনি একটু গুলশান আরার সাথে কথা বলেন। গুলশান আরা মনে হয় সংগঠন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।”
আমি গুলশান আরার বাসায় গেলাম। আমাকে দেখে খুব খুশী হলো গুলশান আরা। বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো। ভালো আপ্যায়নের ব্যবস্থা করল। আমি বললাম “আপা, আপনি সাংগঠনিক কাজ থেকে দুরে সরে যাচ্ছেন মনে হয়।”
গুলশান আরা বললো “আপা সংগঠনের কাজ করতে যেয়ে আমি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।”
বললাম “যেমন?”
ঃ “যেমন আমার ছেলেমেয়েদের প্রতি সঠিক ভাবে যতœ নিতে পারছি না। পড়াশুনার খোঁজ খবর নিতে পারি না। ওদের রেজাল্ট ভালো হচ্ছে না।”
বললাম“ ঠিক আছে কাজ কম করেন। একদম ছেড়ে দিয়েন না। বায়াতের হক আদায় করেন। আপনার ব্যক্তিগত ইউনিটটা ঠিক রাখেন আর রুকন বৈঠকে হাজির থাকেন।”
আবার তিনমাস পরে যেয়ে শুনি গুলশান আরা একদম সরে গেছে। আমি ওর বাসায় আবার গেলাম। সাংগঠনিক খোঁজ খবর নিতেই ও বললো“ও সব বাদ দেন তো আপা। দুলাভাই কেমন আছে তাই বলেন।”ওর কথায় আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। বললাম “দুলাভাইকে দিয়ে তো আপনার সাথে সম্পর্ক না- সম্পর্ক সংগঠন দিয়ে। সংগঠনের কথাই যদি বাদ দেই তো আপনার সাথে সম্পর্কের আর কি থাকে?
কষ্ট পেলো গুলশান আরা। আহত কন্ঠে বললো “শুধুই সংগঠনের জন্য আপনার সাথে আমার সম্পর্ক? আর কোনো সম্পর্ক নেই? বললাম আপারে ২৫ বছর সংসার করার পর কোনো স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয় আর বলে তালাক দিয়েছি তো কি হয়েছে? এতোদিন একসাথে থাকলাম। তোমার সাথে কি আমার কোনো সম্পর্ক নেই? কি বলেন আপা তালাকের পরে স্বামী স্ত্রীর আর কোনো সম্পর্ক থাকে কি? থাকে না আপা। কারন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্র্ক হয়েছিলো বিয়ের মাধ্যমে। সেই বিয়েই যদি ভেংগে যায় সম্পর্ক কি ভাবে থাকবে? আপনার সাথে আমার সম্পর্ক হয়েছে সংগঠনের মাধ্যমে। সেই মাধ্যম ই যদি আপনি ছিন্ন করে ফেলেন তো সম্পর্ক থাকবে কি ভাবে? আপারে আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি আমাকে আপনি দূরে সরাবেন না।”
গুলশান আরার সাথে সেই আমার শেষ দেখা। গুলশান আরা সংগঠন থেকে একদম সরে গেলো। যে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য গুলশান আরা সংগঠন ছাড়ল তাদের পরবর্তী পরিনতির কথা মনে উঠলে ভয়ে আঁতকে উঠি। ওর মেয়েটা এক বখাটে বাজে ছেলের সাথে বের হয়ে চলে যায়। আর ছেলেটা পরপর তিনবার এস.এস.সি ফেল করে আত্মহত্যা করে। গুলশান আরার এই পরিনতি আমি কক্ষোনো চাইনি। বার বার পানাহ চাই আল্লাহর কাছে। মাঝে মধ্যে শুনি কোনো কোনো কর্মী বোন সন্তানের অজুহাত তোলেন। আমার তখনই মনে পড়ে গুলশান আরার কথা। ভয়ে শিউরে উঠি। গুলশান আরার জন্য এখনও হৃদয়ের মধ্যে একটা ব্যথা চিন চিন করে ওঠে।
তবে মাঝে মাঝে এই কষ্টের মধ্যেও খুশী হই এই ভেবে মাবুদরে আমার ভালোবাসার প্রমান আমি দিয়েছি। গুলশান আরাকে ভালোবেসেছিলাম তোমার জন্য বিচ্ছিন্নও হয়েছি তোমার জন্য। তুমি আমার প্রতি রাজি থেকো।
একবার নব বিবাহিতা এক মেয়ে এলো তার স্বামী তাকে ভালোবাসেনা। খুব অনুরোধ করে আমাকে বললো “আপা আপনি কোরআন হাদিস অনেক পড়েছেন। আমাকে আমার স্বামী একদম পছন্দ করে না। আমাকে কোনো তাবিজ কিংবা তদবির দিতে পারেন?”
মেয়েটির সাথে অনেকক্ষন কথাবার্তা বলে বললাম “তাবিজ না একটা তদবির দিতে পারি তোমাকে।”
মেয়েটি খুশী হয়ে বললো ,
“ তাই দেন আপা।”
বললাম “সময় মতো দুটি দোয়া পড়বে তুমি।”
ঃ “কি দোয়া?”
একটা হলো যখনই তোমার স্বামী বাইরে যাবে এবং ভেতর আসবে তখন তুমি হাসি মুখে সালাম দেবে। বলবে ‘আস্সালামু আলাইকুম। আর দিনে অন্তত দুইবার পরিবেশ বুঝে বলবে “আমি তোমাকে ভালোবাসী।”
মেয়েটি হেসেই খুন। বল্ল “সালামটা কোনো মতে দিতে পারব কিন্তু ঐ কথা বলতে পারব না।” এই মেয়েদের কি বলব এরা যাদু মন্ত্র দিয়ে স্বামীকে বশ করতে চায় ভালোবাসতে পারেনা।
তাকে বললাম “এ কথা বলা সুন্নত। রাসূল (সা.) বলেছেন যাকে ভালোবাসো তাকে ভালোবাসার কথাটা জানাও।”
রাসূল (সা.) এর এই শিক্ষা বিধর্মীরা মানে অথচ আমরা মানাতো দুরের কথা অনেকে জানি ই না। আমরা যদি মা ছেলেকে, ছেলে মাকে, স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে। ভাই বোনকে, বোন ভাইকে। বাবা -সন্তান-ভাই ভাই বন্ধু সবাই সবাইকে ‘তোমাকে ভালোবাসি’ এই কথাটি বেশী বেশী করে বলতে পারতাম। তাহলে আমাদের পরিবার আর পরিবেশের চেহারা বদলে যেতো। ভালোবাসার প্রচন্ড ঘাটতি আমাদের সমাজে। সেই সাথে ঝধপৎরভরপব আর পড়সঢ়ৎড়সরংব এরও বড় অভাব।
কবি আব্দুল হালিম খাঁর ভাষায় বলতে হয়—
আমাদের সবার বুকের গভীরে
মৎস চাষের মতো-
ভালোবাসার চাষ করা প্রয়োজন।
হযরত আনাস (রা.) বলেন,“আমি দশ বছর রাসূল (সা.) এর খেদমত করেছি তিনি কোনোদিন আমাকে বলেন নি এভাবে করলে ক্যানো? ওভাবে করলে না ক্যানো?”
কোনো খাদেম কিংবা খাদেমা সঠিকভাবে কাজ না করলে মালিক যদি কৈফিয়ত চাইত রাসূল (সা.) শুনলে বলতেন ‘ছেড়ে দাও তো পারলে তো করতোই।’
এই যে ‘ছেড়ে দাও’ কথাটা এই যে মনোভাবটা এরই নাম ঝধপৎরভরপব। এই মনোভাবের বড়ই অভাব আমাদের মধ্যে। এর জন্য শুধু এর জন্যই কতো সোনার সংসার পুড়ে ছাই হয়ে যায়।