সমস্ত কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল (দারসুল হাদীস)
আমীরুল মুমিনীন আবূ হাফস্ উমার ইবনু আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপর, আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়্যত করেছে, তাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে, আর যার হিজরত দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত সে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।”
সহীহ্ আল-বুখারী: ১, সহীহ্ মুসলিম: ১৯০৭। মুহাদ্দিসগণের দুই ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ইবনু ইব্রাহীম ইবনু মুগীরা ইবনু বারদেযবাহ আল-বুখারী এবং আবূল হাসান মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ ইবনু মুসলিম আল-কুশায়রী আন-নিশাপুরী আপন আপন সহীহ গ্রন্থে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। যা সবচেয়ে সহীহ গ্রন্থদ্বয় বলে বিবেচিত হয়।
হাদীসটির মান:
এই হাদীসটি বর্ণনাকারী কেবল মাত্র হযরত ওমর (রা.) কিন্তু তারপরেও উক্ত হাদীসটি প্রসিদ্ধ এবং বহুল পরিচিত। হাদীসের অসংখ্য গ্রন্থে এই রেওয়াতটি স্থান করে নিয়েছে এ কারণে এর বিশুদ্ধতা প্রশ্নাতিত পরন্তু ইমাম বুখারী (রহ) তার কিতাবের শুরু করেছেন এই হাদীসটি দিয়েই।
রাবির (বর্ণনারকারী) পরিচয়ঃ
নাম: উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। উপনাম: আবুল হাফস। উপাধি: আল-ফারুক। পিতা: খাত্তাব, মাতা: হানতামা বিনতে হাশেম ইবনে মুগীরা। জন্ম: হিজরতের ৪০ বছর পূর্বে রাসূল (সাঃ) এর জন্মের ১৩ বছর পর ৫৮৩ খৃষ্টাব্দে। প্রাথমিক জ্ঞান: উট চরাতেন। যৌবনে যুদ্ধবিদ্যা, কুস্তি, বক্তৃতা শিক্ষা লাভ করেন।
ইসলাম গ্রহণ:
নবুওয়াতের ৬ষ্ঠ সালে ৪০ তম ব্যক্তি হিসাবে।
খিলাফতের দায়িত্ব: হিজরী ১৩ সালের ২৩ জমাদিউল উলা। ২৪ শে আগস্ট ৬৩৪ সাল
খিলাফতকাল: ১০ বছর ৬ মাস। হিজরী সন প্রবর্তক।
মর্যাদা: রাসূল (সা.) বলেন, আমার পরে কেউ যদি নবী হতো, তাহলে সে হতো ওমর (রা.)। তিনি মোট হাদীস বর্ণনা করেছেন ৫৩৯টি। এককভাবে ইমাম বুখারী ৯টি ইমাম মুসলিম ১৫টি বর্ণনা করেছেন।
শাহাদাত বরণ: হিজরী ২৩ সালের ২৪শে জিলহজ্জ বুধবার মসজিদে নববীতে ইমামতি করার সময় মুগীরা বিন শুবার দাস আবু লুলু’র বিষাক্ত তরবারীর আঘাতে আহত হয়ে ৩দিন পর ২৭শে জিলহজ্জ শনিবার শাহাদাত বরণ করেন। এবং তিনি দুনিয়ায় যে দশজন সাহাবী জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন, তাঁদের একজন।
প্রেক্ষাপট বা শানে নুযূলঃ-
এই হাদীসের প্রেক্ষাপট হিসেবে দুটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রথমত: মহানবী (সা.) এর হিজরতের পর এক ব্যক্তি তার সামনে এসে বারবার বলতে থাকে – আমি হিজরতকারী! আমি হিজরতকারী!! এতে মহানবী (সাঃ) এর সন্দেহ হয় সবাই হিজরত করেছে কিন্তু কেউই একথা বলেনি। পরে জানা যায় উম্মে কায়েস নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে সে হিজরত করে।
দ্বিতীয়ত: ইসলাম পূর্ব যুগে আরবগণ অনারব ও দাসদেরকে হেয় মনে করত এবং তাদের প্রতি কন্যাদানে বিরত ছিল। ইসলামে এটি নিষিদ্ধ হওয়ায় আরবদের সাথে অনারবদের বিয়ে শাদীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে কোন কোন অনারব, আরব মহিলা বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করে। এই দুটি প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই রাসূল (সা.) উপরের হাদীসটি বলেন।
হাদীসটির ব্যাখ্যা:
এই হাদীসে দুটি বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এক. নিয়ত, দুই. হিজরত।
হাদীসটির বর্ণনাকারী হযরত উমার (রা.) তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
سَمِعْتُ আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি। এ দ্বারা বুঝা যায়, যে তিনি রাসূল (সা.) থেকে সরাসরি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই হাদীসটি শুধু হযরত উমার একাই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি এতই জনপ্রিয় যে এর সপক্ষে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সমর্থন পাওয়া যায়। সূরা বাকারার ২৭২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন।
وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنفُسِكُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّـهِ ۚ
যে মাল তোমরা ব্যয় কর, তা নিজ উপাকারার্থেই কর। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না। এখানে কোন উদ্দেশ্য মানে নিয়ত।
তেমনিভাবে সূরা ফাতহের ২৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖتَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا ۖ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। এখানেও ‘অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায়’ অর্থাৎ নিয়ত করবে।
অন্যান্য হাদীস থেকেও এই হাদীসের সমর্থন পাওয়া যায়; যেমন-
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ رضي الله عنه أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فَمِ امْرَأَتِكَ
সা‘আদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশে (নিয়তে) যা-ই ব্যয় কর না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।’ (মুসলিম ২৫/১ হাঃ ১৬২৮, আহমাদ ১৫৪৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৪)
إنَّما الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
“সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপর।
হাদীসটিতে ‘ইন্না’ শব্দের পরে ‘মা’ যোগ করে সীমাবদ্ধতার অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যেমন মাহমুদ দাঁড়িয়ে আছে, এই কথাতে সম্ভবনা আছে যে, মাহমুদ আগে বসা ছিলো, এখন দাঁড়িয়েছে অথবা একটুপর বসে পড়বে। কিন্তু যদি বলা হয় নিশ্চয়ই মাহমুদ দাঁড়িয়ে আছে। এর মানে হলো: নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মাহমুদ দাঁড়িয়েই আছে। তেমনিভাবে إنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ এর অর্থ হলো নিশ্চয়ই সমস্ত আমল নিয়তের উপরই নির্ভরশীল।
الْأَعْمَالُ আল আ‘মাল এটি আমল এর বহুবচন। আমল বলতে অন্তরের আমল, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আমল এবং মুখের আমল সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
অন্তরের আমল বলতে বুঝায়: অন্তর বা হৃদয় দ্বারা যেসব আমল করা হয়। যেমন আল্লাহর উপর ভরসা করা, তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করা, এবং তাকে ভয় করা ইত্যাদি এ ধরণের যত আমল আছে।
মুখের আমল বলতে বুঝায়: যা মুখ দ্বারা উচ্চারণ করে করা হয়। আর সবচেয়ে বেশি আমল মুখ দ্বারাই করা হয়। যেমন কুরআন তেলাওয়াত করা, যিকর করা, সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ ইত্যাদি।
অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আমল বলতে বুঝায়: হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ দ্বারা যেসব আমল করা হয়।
بِالنِّيَّاتِ নিয়তের বহুবচন নিয়্যা-ত। এর আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছাপোষণ করা। আর ইসলামী পরিভাষায় নিয়ত বলা হয়: কোন কাজ করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি কল্পে তার ইচ্ছাপোষণ করা। নিয়তের স্থান অন্তর, মুখে উচ্চারণ কিংবা কোন অঙ্গে সাথে নিয়তের কোন সম্পর্ক নাই।
নিয়ত শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘মনের ইচ্ছা অন্তরের সংকল্প’। নিয়ত হলো মনের অভ্যন্তরে উকি দেওয়া উদ্দেশ্য বা সংকল্প। নিয়তের জন্য কোন ধরনের শব্দ বা বাক্য নির্ধারণ করার হুকুম নেই। নিয়ত মূলত তাই যা মানুষ নিজের অন্তরে ধারণ করে অথবা সংকল্প করে।
নিয়তের সংজ্ঞাঃ ফতহুল বারী গ্রন্থকার বলেন- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও তার আদেশ পালনার্থে কোন কাজের দিকে মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ও অভিপ্রায় প্রয়োগ করা। আল্লামা খাত্তাবী (রহঃ) বলেন- মনের কোন কাজ করার সদিচ্ছা পোষণ করা এবং তা বাস্তবায়নে প্রাণপন চেষ্টা করা। নূরুল ইযাহ গ্রন্থকার বলেন- কাজের উপর মনের ইচ্ছা পোষণ করাই নিয়ত। আল্লামা বায়হাকী (রহ.) বলেন- বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোন উপকার লাভ বা কোন ক্ষতির প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে অনুকূল কাজে করার জন্য মনের উদ্যোগ উদ্বোধন।
নিয়তের ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়ঃ বর্তমান সময়ে কারো কর্মের বিষয়ে নিয়ত কেন্দ্রিক প্রশ্ন তোলা জায়েয নয়। কেননা কারো নিয়তের খবর কেবলা মাত্র আল্লাহ পাক জানেন। এই বিষয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন- “আমি উমর (রা.) কে বলতে শুনেছি- রাসূল (সা.) এর সময় লোকদের যাচাই করা হতো ওহী দ্বারা। কিন্তু এখন ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমরা তোমাদের বাহ্যিক কাজ দ্বারা যাচাই করবো। অতএব কেউ আমাদের সামনে ভাল কাজ করলে আমরা তাকে বিশ্বাস করবো এবং আমাদের নিকটবর্তী মনে করবো। আর তার অন্তরের অবস্থা অনুযায়ী আল্লাহ রয়েছেন। আর কেউ আমাদের সামনে খারাপ কাজ করলে আমরা তাকে মানবো না যতই সে বলুক তার অন্তরের অবস্থা ভালো। (বুখারী)
উপর্যুক্ত হাদীসটি থেকে একটি মূলনীতি জানা গেলো। নিয়তের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নিতে এই হাদীসটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে। যে কোন কাজ যদি বাহ্যত ভালো হয়, শরীয়াতের স্বীকৃত বিষয় হয় এবং কার্যত তার কিছু ভালো লক্ষণও দেখা যায় তখন তাকে সাদরে গ্রহণ করা হবে। তার নিয়ত সম্পর্কে গোয়েন্দাগীরি করা হবে না। অন্যদিকে যতই প্রচার করা হোক না কেন, আমরা যা কিছু করছি মানুষের বা দ্বীনের কল্যাণে করছি কিন্তু সেটা বাহ্যত শরীয়াতের খেলাফ বা শরীয়াত স্বীকৃত মন্দ কাজ, তখন সেই কাজকে খারাপ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং এই বিষয়ে কোন ধরনের হেকমতের আশ্রয় না নিয়ে খারাপ কে খারাপ হিসেবে গ্রহণ করা এবং তাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করার সাথে সাথে নিজে সেখান থেকে দুরে থাকা। কেননা নিয়ত যতই ভালো হোক, খারাপ কাজ বা পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
উদাহারণ হিসেবে যে কোন বেদয়াতের কথাই ধরুন। যে কোন বেদয়াতের উত্থান কিন্তু ভালো নিয়তে হয় এবং দ্বীনের কল্যাণকর মনে করে প্রচার বা আমল করা হয় কিন্তু ইসলাম সেটাকে হারাম বা পথভ্রষ্টতা হিসেবে উল্লেখ্য করেছে। কারণ হচ্ছে দ্বীনের মৌলিক বিষয়ের বাইরে নবী করীম (সা.) নতুন কিছুকে উদ্ভাবন করতে নিষেধ করেছেন, অতঃপর যে কেউ এমন কোন কর্মকাণ্ড করে সে প্রকারন্তরে নবী করিম (সা.) কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। কেননা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দেওয়ার যে দায়িত্ব তার ওপর ছিলো সেখানে অবিশ্বাসের অবতারণা করা হয় এবং দ্বীনকে অসম্পূর্ণ রেখে যাওয়ার মতো অবান্তর অভিযোগ দায়ের করে দেওয়া হয়। এই কারণে নিয়তের বিশুদ্ধতার সাথে কর্মের বিষয়ে শরীয়াতের সনদ থাকা চাই।
সত্যিকার অর্থে বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোন আমল গ্রহণযোগ হবে না। বুখারীতে স্পষ্ট করে বর্ণিত হয়েছে যে, নিয়তে গোলমাল থাকার কারনেই শহীদ, আলেমদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যতই লোক দেখানো আমল আখলাক সম্পন্ন হোক না কেন, নিয়তের পরিশুদ্ধি না থাকলে সেটা গ্রহণ যোগ্য হবে না। প্রতিটি আমল কে খালেস ভাবে আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই বিষয়ে নির্দেশনা আছে। মূলত ইবাদতে খূলুসিয়াত আননয়ন করাই নিয়ত ফরজ হওয়ার মূল কারণ।
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে। (সূরা বায়্যিনাহ: ৫)
নিয়তের গুরুত্ব সম্পর্কে আরো একটি প্রাসঙ্গিক হাদীস রয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : إِنَّ اللَّهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ ، وَأَمْوَالِكُمْ ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ ، وَأَعْمَالِكُمْ
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারার রূপে সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদের প্রাচুর্যের দিকে লক্ষ্য করবেন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তরের নিয়ত ও আমল দেখবেন। (মুসলিম: ৪৬৫৭)
বর্তমান সময়ে আমরা মুসলমানরা নিয়ত শব্দটিকে একেবারে নগন্য বিষয় বানিয়ে নিয়েছি। আমরা কারো সাথে বন্ধুতা, শত্রুতায়, দান খয়রাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার নিয়ত করছি না। আমরা জানিও না যে, আমাদের জাগতিক, পানাহার, খাওয়া, দাওয়া, ঘুম, ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনৈতিক, এবং সামজিক কর্মকান্ড সব কিছুই আল্লাহর জন্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। এসব ক্ষেত্রে নিয়তের পরিশুদ্ধতা এবং সুন্নাতের পাবন্দী গোটা জাগতিক আমলগুলো কে বিশুদ্ধ ইবাদতে রূপান্তরিত করে দেবে। কোন মানুষই নিয়ত ব্যতীত কোন কর্ম করতে পারে না। যে কোন একটি নিয়তকে ধারণ করে তাকে প্রত্যেকটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি কামণা না করলে অন্য কারো সন্তুষ্টি সেই জায়গায় স্থান করে নেবে এটাই স্বাভাবিক। কর্মের ভিতর নবীর (সা.) সুন্নাতের পাবন্দি না থাকলে কারো না কারো সুন্নাত বা আদর্শ তো মেনে নিতেই হবে। আমলের ক্ষেত্রে এই দুটি শূন্যতা কোন অবস্থায় বলবত থাকে না। মূলত নিয়ত এবং পদ্ধতির কারণেই যে কোন আমল গ্রহণযোগ্যতা পায়। আল্লাহ পাক বলেন, বলো, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সব কিছুই আল্লাহ পাকের জন্য যিনি বিশ্বজাহানের রব।- (সূরা আনআম: ১৬২)
নিয়তের বিশুদ্ধতার জন্যই মদীনায় অবস্থানকারীদের বিষয়ে রাসূল (সা.) বলেছিলেন যে, তারাও জিহাদের সওয়াব লাভ করেছে। বিশুদ্ধ নিয়তের সাথে কেউ শহীদি মৃত্যু কামনা করে বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও শহীদের মর্যাদা পাবে। (চলবে…)