হাদীসে রাসূল এখলাস সম্পর্কে
হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে; বিখ্যাত সাহাবী দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রাঃ) হতে। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি: যে তিনি বলেন: সমস্ত কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করেছে তাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে, আর হিজরত দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথাব কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরত যে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।
ব্যাখ্যা: নাম ‘উমর’ লকব বা উপধি ‘ফারুক’ এবং কুনিয়াত বা উপনাম ‘আবু হাফ্স’। পিতা ‘খাত্তাব’ ও মাতা ‘হান্তামা’। তিনিই সর্বপ্রথম ‘আমীরুল মু’মিনীন’ উপাধি লাভ করেন, সর্ব প্রথম প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করেন এবং রাসূল (সাঃ) থেকে ৫৩৯ টি হাদীস বর্ণনা করেন। ৬৩ বছর বয়সে আবু লুলুয়াহ মজুসীর (অগ্নিপূজক) হাতে শহীদ হন। রাসূলের হুজরায় তাঁরই সাথে চির নিদ্রায় শায়িত হন। তার খেলাফত কাল ১০ বছর ৬ মাস ৫ রাত ছিল।
হাদীসটি সহীহ ও প্রসিদ্ধ। হাদীসের সকল ইমামগণই স্ব স্ব কিতাবে হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি রাসূলের প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী এবং ইসলামের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। হাদীসটি এতই ব্যাপক যে, গ্রন্থকারগণ তাদের কিতাবের সূচনায় লিপিবদ্ধ করে থাকেন। আবু উবায়দা (রাঃ) বলেন: হাদীসটি রাসূল (সাঃ) এর সমস্ত হাদীসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, এর মত দ্বিতীয় হাদীস নেই। হাদীস বিসারদগণ বলেছেন: হাদীসটি গোটা এলেমের একতৃতীয়াংশ। ইমাম বায়হাকী (রহ:) ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, বান্দার আমল তিনটি অঙ্গের সাথে সম্পর্ক থাকে। ১. কলব বা অন্তর, ২. জিহ্বা ৩. অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। আর নিয়তের সম্পর্ক অন্তরের সাথে।
যখন রাসূল (সাঃ) হিজরত করে মদীনায় গেলেন। তখন সাহাবাগণ মদীনায় হিজরত করেন। এক ব্যক্তি মদীনায় গেল কোন একজন মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে। তখন রাসূল (সাঃ) মিম্বরে আরোহণ করে বক্তৃতা দেওয়া আরম্ভ করলেন: হে মানব মণ্ডলী! সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল; তিনবার বললেন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করলো, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকেই হলো। আর যে ব্যক্তি দুনিয়া কিংবা কোন নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে হিজরত করবে, তার হিজরত সেদিকেই হবে।
হাদীস বিসারদগণ বলেছেন: রাসূল (সাঃ) যাকে কেন্দ্র করে এই বক্তৃতা প্রদান করেন, সে হলো মুহাজের উম্মু কায়েস।
হাদীসটির সার কথা
১. বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া আমল গৃহীত হয় না।
২. মুমিনব্যক্তি তার আমল অনুযায়ী সাওয়াব পেয়ে থাকেন।
৩. যার আমল একমাত্র আল্লাহর জন্য হবে, তার আমলই কবুল হবে।
৪. যেব্যক্তি লোক দেখানো আমল করবে, তার আমল কবুল হবে না।
হাদীসটি গবেষণা করলে যা জানা যায়:
১. সমস্ত আমলই তার উদ্দেশ্য বা নিয়তের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে।
২. মানুষকে তার নিয়তের উপর ভিত্তি করে যা দেওয়া হয়, নিয়ত ছাড়া তা দেওয়া হয় না।
৩. আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
৪. আমল ও অভ্যাসের মধ্যে নিয়তই পার্থক্য করে থাকে।
৫. মুমিনের নিয়ত পৌঁছে যায়, যেখানে তার আমল পৌঁছে।
৬. হাদীসটির মধ্যে সকলকে আমল করার পূর্বে বিশুদ্ধ নিয়তের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।