সুন্নাতে রাসূল (সা.) নিয়ে বিভ্রান্তি ঃ
প্রত্যেক মূল কাজের আঞ্জাম দেয়ার জন্যে আনুষঙ্গিক কিছু কাজ অবশ্যই থাকে। আসল কাজটি সম্পাদন করার জন্যে আনুষঙ্গিক কাজগুলির জরুরীয়াত অনস্বীকার্য হলেও উহা মূল কাজের প্রস্তুতি মাত্র। যেমন একজন লোক নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করল, ওজু গোসলও সম্পন্ন করলেন, আযানের সাথে সাথে মসজিদ পর্যন্ত এসে নামাজ আদায় না করে চলে গেলেন। এ ব্যক্তি নামাজের জন্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন, এটা যেমন ঠিক। আবার মনে করুন, একজন পুলিশ যাকে প্রতিদিন সকালে প্যারেড করানো হয়, বিভিন্ন প্রশিক্ষণে তৈরী করা হয় যাতে সে দেশে শান্তি রক্ষা ও সীমানা পাহারাদারীর কাজটা সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে পারে। ঐ কাজে উপযোগী বিশেষ পোশাক, হাতে লাঠি বা রাইফেলও তাকে দেওয়া হয়েছে। এ পুলিশটি যদি সময়মতো বিশেষ পোশাক অস্ত্র হাতে সীমান্ত চৌকিতে ঠায় দাড়িয়ে থাকে আর তার সামনে লাখ লাখ টাকার মালামাল পাচার হয়ে যায় তবে এর ব্যাপারে কি বলা যাবে? এ পোশাকি পুলিশটির প্রস্তুতি ঠিক থাকলেও দেশ ও জাতির প্রতি তার যে মূল কাজ তা সে পালন করেনি। ঠিক তেমনি আজকের উম্মতে মুহাম্মদীর (সা.) মধ্যেও সুন্নাহ অনুসরণের নামে আত্মতৃপ্তির অহংকার ও দাবীর কমতি নাই, পোশাক পরিচ্ছদে, বেশভূষায় সার্বিক দৃষ্টিতে ঈমানী পরিচিতির কমতি নেই। কিন্তু দুঃখ ঐখানে যে, প্রস্তুতির মধ্যেই সব আয়োজন শেষ। উম্মতের ঐ পাহাদারের চোখের ওপর দিয়ে বিজাতীয় সভ্যতার মালামাল আমদানী হচ্ছে, প্রত্যহ আমাদের ঈমান আকীদা লুন্ঠিত হচ্ছে, শত্রু সৈন্য আমাদের রাজধানী আক্রমণের জন্যে দ্রুত বেগে এগিয়ে চলছে। অথচ আমরা এ দৃশ্য নীরবে অবলোকন করছি মাত্র। আগুনের লেলিহান শিখা বস্তির পর বস্তি ঘিরে নিচ্ছে, মানবতার আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারাক্রান্ত। আমরা যেন পানির বালতি হাতে নিয়ে শুধু আগুনের ধ্বংসলীলা দেখছি, ঐ সর্বগ্রাসী আগুন নিভিয়ে মানবতাকে বাঁচানোর জন্যে পানি নিক্ষেপের কাজটি যে মূল কাজ এ কথাটি কে না বুঝে? আল কুরআন তাই বলছে:
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا
কি হয়েছে তোমাদের, তোমরা কি আল্লাহর রাহে লড়ায়ে অবতীর্ণ হবে না? বৃদ্ধ নারী ও শিশুরা ফরিয়াদ করে বলছে, হে আমাদের রব! এই জালিম জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাও, আর জালিমদের মুকাবিলায় আমাদের জন্যে কোন বন্ধু বা সাহায্যকারী একটি দল পাঠিয়ে দাও। (সূরা নিসা আয়াত- ৭৪)
সুন্নাতে রাসূলর (সা.) দাবী ঃ
(ক) আম্বিয়ায়ে কিরামের আগমনের মূল উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা ও তা প্রতিষ্ঠার দায়িত্বকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থীর করা, এ কাজের গুরুত্বকে শরীয়াতে মুহাম্মাদী (সা.)-এর তামাম আহকামের উপর গুরুত্ব প্রদান করা। জীবনের সমস্ত শক্তি ও যোগ্যতা ও প্রতিভা এ উদ্দেশ্যের জন্যে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
(খ) সুন্নাহ প্রতিষ্ঠার জন্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, নিজেদের মধ্যে দ্বীন কায়েমের ব্যাপারে তামাম বিতর্কের অবসান করা, মৌলিক কাজের উপর উম্মতকে একত্রিত করা, দালালি ও ফতোয়াবাজির বিষাক্ত পরিবেশ বিদূরিত করা আর সুন্নাহ আর সুন্নাতে রাসূলের মাধ্যমে গোটা উম্মাতে মুহাম্মাদীর মধ্যে সীসাঢালা ইত্তেহাদ বা দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
(গ) সুন্নাহ বিরোধী, নবীজি ও সাহাবায়ে কিরামের আদর্শের বিপরীতে সব কিছুকে বিষবৎ (বিষতুল্য) বর্জন করা। ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ব্যাপারেও সুন্নাতে রাসূলের অনুসরণের প্রেরণা সৃষ্টি করা এবং দ্বীনের মধ্যে আহকাম আবিস্কারক বিদয়াতিদেরকে সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(ঘ) ফিতনা ফাসাদের তাণ্ডব দেখে ভীত বিহবল না হয়ে দৃঢ়ভাবে নবীজির রাস্তার উপর দাঁড়ানোর এমন কসম করা যে, প্রয়োজনে মালসম্পদ, আত্মীয়তার বন্ধন, নাগরিক অধীকার শুধু নয়; জীবন দিতে রাজি থাকবে কিন্তু সুন্নাতে রাসূল ছাড়তে রাজী হবে না।
উপসংহার ঃ
পরিশেষে বলতে চাই, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা.) আগমন কোন নির্দিষ্ট জামানার জন্যে নয়, এলাকা ভাষা বা জনগোষ্ঠি দিয়ে তাঁর রিসালাতকে সীমানা দেয়া হয়নি, তাই তাঁর আনিত আদর্শ দেশ কাল ভাষা বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানব সমাজের জন্যে। নবীজির (সা.) আদর্শের এমন কোন অংশ নেই যা আপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয়। মানব জাতির কল্যাণ তাঁর তরিকা গ্রহণের মধ্যে আর অকল্যাণ তাঁর তরিকা বর্জনের মধ্যেই। নির্ভিক সাহসি ও জানবাজ ব্যক্তিরাই কেবল নিজেদের জীবনকে রাঙাতে পারে সুন্নাতে রাসূলের (সা.) সুন্দর ও পাকা রঙ দিয়ে। আর স্বপ্ন দেখতে পারে উহার রঙে দুনিয়াকে রাঙাবার। আসুন আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদেরই প্রাণপ্রিয় রাসূলের সুন্নাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রহণের ব্যাপারে দৃঢ়তা ঘোষণা করে নেয়ামাতে মুহাম্মাদীর রিাসারাতের শোকর গোজার করি। মহান আল্লাহ্া তাআলা আমাদের কবুল করুন। আমীন।