“সৃষ্টির সূচনা থেকে কিয়ামাত পর্যন্ত যতো প্রকারের যতো মাখলুক আল্লাহ সৃষ্টি করবেন তাদের প্রত্যেকের সঠিক চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে খাদ্যের সব সরঞ্জাম হিসাব করে তিনি পৃথিবীর বুকে রেখে দিয়েছেন। স্থলভাগে ও পানিতে অসংখ্য প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে। যাদের প্রতিটি শ্রেণীর খাদ্য সংক্রান্ত প্রয়োজন অন্য সব শ্রেণী থেকে ভিন্ন। আল্লাহ বায়ুমণ্ডল স্থল ও পানিতে অসংখ্য প্রজাতির জীব-জন্তু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি প্রজাতির স্বতন্ত্র ধরণের খাদ্য প্রয়োজন। তাছাড়া এইসব প্রজাতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের সৃষ্টি মানুষ। মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন শুধু দেহের লালন ও পরিপুষ্টি সাধনের জন্যই নয়, তার রুচির পরিতৃপ্তির জন্যও নানা রকম খাদ্যের প্রয়োজন। আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষে কি জানা সম্ভব ছিলো, মাটির তৈরি এই গ্রহটির ওপর জীবনের উৎপত্তি থেকে শুরু করে তার পরিসমাপ্তি পর্যন্ত কোন্ কোন্ শ্রেণীর সৃষ্টিকুল কত সংখ্যক, কোথায় কোথায় এবং কোন্ কোন্ সময় অস্তিত্ব লাভ করবে এবং তাদের প্রতিপালনের জন্য কোন্ প্রকারের খাদ্য কত পরিমাণ দরকার হবে? নিজের সৃষ্টি পরিকল্পনানুসারে যেইভাবে তিনি খাদ্যের মুখাপেক্ষী এইসব মাখলুককে সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করেছিলেন, অনুরূপভাবে তাদের চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য সরবরাহেরও পূর্ণ ব্যবস্থা করেছেন।”
[তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ‘লা মাওদুদী, ১৪শ খণ্ড, সূরা হামীমুস সাজদার তাফসীরের ১২ নাম্বার টীকা।]
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন, وَكَأَيِّنْ مِّنْ دَابَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اللهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ [সূরা আল আনকাবূত : ৬০]
“অসংখ্য জীব এমন রয়েছে যারা নিজেদের রিয্কের ভাণ্ডার বহন করে বেড়ায় না। আল্লাহই তাদেরকে রিয্ক দেন এবং তোমাদের রিয্কও তিনিই দেন।”
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى اْلأَرْضِ إِلاَّ عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ [সূরা হূদ : ৬]
“পৃথিবীতে এমন কোন জীব নেই যার রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নয়। তিনিই জানেন কার বাস কোথায় এবং তাকে কোথায় রাখা হয়। সব কিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।”
إِنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِيْنُ [সূরা আয্ যারিয়াত : ৫৮]“নিশ্চয়ই আল্লাহই রিয্কদাতা, অটল ক্ষমতার অধিকারী।”
وَاْلأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ وَأَنْبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ شَىْءٍ مَّوْزُوْنٍ. وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَّسْتُمْ لَه بِرَازِقِيْنَ .وَإِنْ مِّنْ شَىْءٍ إِلاَّ عِنْدَنَا خَزَائِنُه وَمَا نُنَزِّلُه إِلاَّ بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ [সূরা আল হিজর : ১৯-২১]
“আমি পৃথিবীকে ছড়িয়ে দিয়েছি। এর ওপর পাহাড় গেড়ে দিয়েছি। এর মধ্যে পরিমাণ মত নানা ধরণের গাছ-পালা জন্মিয়েছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছি এবং তাদের জন্যও যাদের রিয্কদাতা তোমরা নও। এমন কোন জিনিস নেই যার ভাণ্ডার তাঁর হাতে নয়। এবং আমি তা সুনির্দিষ্ট পরিমাণে নাযিল করে থাকি।”
وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِىَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيْهَا وَقَدَّرَ فِيْهَا أَقْوَاتَهَا فِىْ أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءَ لِّلسَّائِلِيْنَ [সূরা হামীমুস সাজদা : ১০]
“তিনি (পৃথিবীকে অস্তিত্বদানের পর) ওপর থেকে পাহাড় গেড়ে দিয়েছেন। এতে বারাকাত দান করেছেন। আর এতে সকল প্রার্থীর চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে রিয্ক নির্দিষ্ট করেছেন, মাত্র চারদিনে।”
قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا [সূরা আত্ তালাক : ৩]
“আল্লাহ সবকিছুরই একটি পরিমাণ ঠিক করে রেখেছেন।”
نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
[সূরা আয্ যুখরুফ : ৩২]
“আমি দুনিয়ার জীবনে এদের মধ্যে জীবনোপকরণ বণ্টন করেছি, এদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোককে অন্যদের ওপর বেশি মর্যাদা দিয়েছি যাতে এরা একে অপরের সেবা গ্রহণ করতে পারে। এরা যা জমা করে তার চেয়ে তোমার রবের রাহমাত অনেক বেশি মূল্যবান।”
اللهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِه يَرْزُقُ مَنْ يَّشَاءُ وَهُوَ الْقَوِىُّ العَزِيْزُ [সূরা আশ্ শূরা : ১৯]
“আল্লাহ সূক্ষ্ম বদান্যতাপ্রবণ। যাকে ইচ্ছা রিয্ক দেন। তিনি শক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী।”
قُلْ إِنَّ رَبِّىْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَاءُ مِنْ عِبَادِه وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِّنْ شَىْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُه وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ [সূরা সাবা : ৩৯]
“তাদেরকে বলে দাও ঃ আমার রব তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা প্রচুর রিয্ক দেন, আর যাকে ইচ্ছা সংকীর্ণ করে দেন। আর তোমরা যা খরচ কর তার পরিবর্তে তিনি তোমাদেরকে আরো রিয্ক দেবেন। তিনিই তো সর্বোত্তম রিয্কদাতা।”
لَه مَقَالِيْدُ السَّموتِ وَالْأَرْضِ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَاءُ وَيَقْدِرُ إِنَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيْمٌ [সূরা আশ্ শূরা : ১২]
“আসমান ও যমীনের চাবি তাঁরই হাতে। তিনি যাকে চান অঢেল রিয্ক দেন এবং যাকে চান কম দেন। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুর জ্ঞান রাখেন।”
أَوَلَمْ يَعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَاءُ وَيَقْدِرُ إِنَّ فِىْ ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُوْنَ [সূরা আয্ যুমার : ৫২]
“তারা কি জানে না, নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে চান অঢেল রিয্ক দেন এবং যাকে চান তার রিয্ক সংকীর্ণ করে দেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা ঈমান পোষণ করে।”
قُلْ إِنَّ رَبِّىْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَاءُ وَيَقْدِرُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
[সূরা সাবা : ৩৬]
“তাদেরকে বলে দাও : নিশ্চয়ই আমার রব যাকে চান প্রশস্ত রিয্ক দেন এবং যাকে চান সংকীর্ণ রিয্ক দেন। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই এর তাৎপর্য জানেনা।”
وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلاَدَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاَقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْءًا كَبِيْرًا [সূরা বানী ইরাঈল : ৩১]
“এবং তোমরা অভাবের ভয়ে সন্তান হত্যা করো না। আমি তাদেরকে রিয্ক দেবো, তোমাদেরকেও দিচ্ছি। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা মস্ত বড় গুনাহ।”
وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلاَدَكُمْ مِّنْ إمْلاَقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ
[সূরা আল আন‘আম : ১৫১]
“এবং অভাবের ভয়ে সন্তান হত্যা করো না। তোমাদেরকে রিয্ক দিচ্ছি, তাদেরকেও দেবো,।”
وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِه لَبَغَوْا فِى الْأَرْضِ وَلكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَاءُ
[সূরা আশ্ শূরা : ২৭]
“আল্লাহ যদি তাঁর বান্দাদেরকে সীমাহীন রিয্ক দান করতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিদ্রোহের তুফান সৃষ্টি করতো। কিন্তু তিনি ইচ্ছা মতো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে রিয্ক নাযিল করেন।”
فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوْا لَه
[সূরা আল আনকাবূত : ১৭]
“অতএব আল্লাহর কাছেই রিয্ক অনুসন্ধান কর, তাঁরই ইবাদাত কর এবং তাঁরই শুকরিয়া আদায় কর।”