আল্লাহ শব্দটি মহান সত্তার ইসমে ‘জাত’। আল্লাহর এই সত্তামূলক নামটি পবিত্র কুরআনে ২৫৮৪ বার উল্লেখ রয়েছে। হাদিস শরিফেও এর কোনো প্রতিশব্দ উল্লেখ করা হয়নি। আল্লাহ শব্দটি তুলনারহিত এমন এক অনুপম মহান সত্তার ইসমে ‘জাত’, যার কোনো লিঙ্গান্তর, ভাবান্তর ও বচনান্তর অকল্পনীয়। এ ‘জাত’ নামটি হচ্ছে সর্বপ্রকার সম্বন্ধরহিত একক ও অনুপম।
আল্লাহ কোনোক্রমেই হিন্দুদের ভগবান, খ্রিষ্টান বা পৌত্তলিকদের ঈশ্বর, ইংরেজদের গড বা ইরানিদের খোদার প্রতিশব্দ নয়। এমনকি আল্লাহ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে এগুলোর প্রয়োগ বা প্রয়োগের কল্পনাও করা যায় না। কেননা আসমায়ে হুসনার মাঝে এ শব্দগুলোর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না এবং ভগবান, ঈশ্বর, গড ও খোদা শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দও রয়েছে। ইরানের অগ্নিপূজকদের ব্যবহৃত পাহলভিভাষী খোদা (স্বয়ম্ভু) শব্দটির আমাদের মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আসমায়ে হুসনার বহির্ভূত খোদা শব্দটি গ্রহণ করলে ভগবান, ঈশ্বর ও গড শব্দ গ্রহণের পথ উন্মুক্ত হয়। সাত শ’ খ্রিষ্টাব্দে ইরান থেকে আগত ধর্ম প্রচারক মুসলমান ও বণিকদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে বলে প্রদেশের মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে খোদা শব্দের ব্যবহার শিখে। বিভিন্ন সময় বইপত্রে লেখায় ও বলায় এ শব্দটি প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং গতানুগতিকভাবে খোদা শব্দের ব্যবহার আমাদের সমাজে চলে আসে ।
আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, জ্ঞানপাপী আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবান ও গড ইত্যাদিকে ধর্মীয় উদারতায় একাকার করে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এদের কেউ কেউ আল্লাহ শব্দটিকে ভীষণ সাম্প্রদায়িক বলে ঈশ্বরই গ্রহণীয় মনে করেন। কিন্তু ওপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায় ভগবান, ঈশ্বর, গড ও খোদা কখনো এক নয় এবং একই অর্থে ব্যবহার করা মারাত্মক অপরাধ। অতএব, আমাদের ঈমান আকিদার স্বার্থে ও ইসলামী সংস্কৃতি রক্ষার্থে বিজাতীয় শব্দগুলোর পরিবর্তে আল্লাহ শব্দটি তামাম দুনিয়ার মুসলমানদের একই ভাষায় এবং একই শব্দে উচ্চারণ করা উচিত ।
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ পাকের ৯৯টি সিফাতি নাম রয়েছে এগুলোকে যে আয়ত্ত করে নেবে সে পরকালে জান্নাতে প্রবেশ করেবে’ তবে এ সিফাতি নামগুলো তাঁর একক আল্লাহ শব্দকে পুরোপুরি ধারণ করার ক্ষমতা রাখে না এবং আল্লাহ শব্দের পূর্ণ মূলভাব প্রকাশ করতেও পারে না; কেননা সিফাতি নামগুলো আল্লাহর প্রকৃত স্বরূপ নয়। কারণ গুণ থেকে বস্তু সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে থাকে। শিখার জ্যোতি যেমন শিখা নয়, আল্লাহর গুণও তেমনি আল্লাহ নয়; শুধু ইসমে জাতের পরিচয় বহন করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কিছু আসমায়ে হুসনা রয়েছে সেই আসমায়ে হুসনাগুলো একমাত্র আল্লাহর সত্তার সাথেই নির্দিষ্ট যা হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়। যখন কেউ আল্লাহকে ডাকবে তখন এসব নামেই ডাকা অপরিহার্য। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, আল্লাহর জন্য রয়েছে আসমায়ে হুসনা। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাকো আর তাদের বর্জন করো যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। অর্থাৎ কুরআন ও হাদিসে উল্লিখিত ইসমে জাত ও ইসমে সিফাতকে পরিবর্তন করে নিজেদের ইচ্ছামতো অন্য যেকোনো নামে খেয়াল খুশিমতো ডাকে; শিগগিরই তারা তাদের কৃতকর্মের ফল পাবে ।
কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর ইসমে জাত ও ইসমে সিফাতের পরিবর্তন করে সঠিক অর্থ ছেড়ে তাকে এ দিক সে দিক করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জুড়ে দেয়াকে কুরআনের পরিভাষায় এলহাদ বলে। যারা আল্লাহ তায়ালার আসমায়ে হুসনার ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হেদায়েত আল্লাহ তাঁর নবীকে দান করেছেন। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত ইসমে জাত ও ইসমে সিফাতকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো গুণে আল্লাহকে ডাকার বা গুণ-কীর্তন করার ইখতিয়ার বা অধিকার আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে দেননি। যেমন আল্লাহকে নূর বলা যাবে কিন্তু জ্যোতি বলা যাবে না। কারিম বলা যাবে কিন্তু সখী বা দাতা বলা যাবে না। এখানে দ্বিতীয় শব্দ সমার্থক হলেও কুরআন হাদিসে না থাকায় বলা যাবে না ।
আল্লাহর ইসমে জাত ও ইসমে সিফাত কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে সেগুলোর মধ্যে কোনো নামকে অশোভন মনে করে বর্জন বা পরিত্যাগ করা যাবে না; এতে সে নামের প্রতি অবজ্ঞা বা বেয়াদবি প্রদর্শন বোঝায় ।
আল্লাহ তায়ালার জন্য নির্ধারিত নামে সম্বোধন করে কোনো লোককে ডাকা যাবে না। যেগুলো শুধু আল্লাহ ছাড়া অপর কারো জন্য ব্যবহার করার কোনো প্রমাণ কুরআন ও হাদিসে নেই; সেগুলো কারো জন্য ব্যবহার করা যাবে না। আর যেসব নাম আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ব্যবহার করার উদাহরণ কুরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত সেসব নাম অন্যের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন রাহিম, কারিম, রাশিদ, আজিজ, আলী ইত্যাদি ।
যেসব নাম আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ব্যবহার কুরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয় এবং যেগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য এগুলো ব্যবহার করাই এলহাদ, যা একেবারেই হারাম। যেমন রাহমান, সুবহান, রাজ্জাক, খালেক, কুদ্দুস ইত্যাদি। আল্লাহ ছাড়া ভ্রান্ত বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাউকে ডাকলে হবে কুফর, আর ভ্রান্ত বিশ্বাস না হলে শিরকসুলভ শব্দ ব্যবহারের কারণে হবে পাপের কাজ ।
আল্লাহ শব্দের পরিবর্তে খোদা শব্দটি ভারতবর্ষে মুসলিম সমাজে বহুল প্রচলিত হয়ে পড়েছে; বিশেষত যাদের মাতৃভাষা উর্দু বা হিন্দি। খোদা শব্দটি যেন তাদের হাড় মজ্জার সাথে মিশে গেছে। এমনকি মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের লেখাপড়া ও লেখনীর মাঝে আল্লাহ শব্দের পরিবর্তে খোদা শব্দটি অত্যন্ত সম্মানের সাথে স্থান লাভ করেছে। এ অঞ্চলে বিভিন্ন সময় ওয়াজ নসিহতে, বিভিন্ন বইপত্রে বিশেষ করে ধর্মীয় কিতাবাদিতে আল্লাহ শব্দের পরিবর্তে খোদা শব্দ ব্যবহার করা এলহাদের অন্তর্ভুক্ত। আসুন আমরা জীবনের সব ক্ষেত্রে খোদার পরিবর্তে আল্লাহ পাকের ইসমে জাত ও ইসমে সিফাতের ব্যবহার করে আল্লাহর আজাব ও গজব থেকে বাঁচার চেষ্টা করি । = সমাপ্ত=