আল্লাহু। আল্লাহ শব্দের যিকিরে মনে আসে প্রশান্তি। দিল হয় পরিশুদ্ধ। আত্মার স্থীরতা মিলে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।’ (সুরা আল আরাফ : ১৮০)
উত্তম নাম বলতে সে সকল নামকে বোঝানো হয়েছে, যা গুণ-বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণতায় সর্বোচ্চ স্তরকে চিহ্নিত করে। তার গুণবাচক নামকে বলা হয়, আসমাউল হুসনা। উপরুল্লেখিত আয়াতেও ‘আসমায়ুল হুসনা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার দ্বারা বোঝা যায় যে, এসব আসমায়ে হুসনা বা উত্তম নামসমূহ একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের -ই বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্য লাভ করা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আর যখন জানা গেল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য বিশেষ কিছু নাম রয়েছে, এবং সেসমস্ত নাম আল্লাহর সত্তার সাথেই নির্দিষ্ট, কাজেই আল্লাহকে যখন ডাকবে, এসব নামে ডাকাই কর্তব্য। আয়াতের অপরাংশে বলা হয়েছে, ‘তাদের কথা ছাড়ুন, যারা আল্লাহ তায়ালার আসমায়ে হুসনার ব্যাপারে বাঁকা চাল অবলম্বন করে। অচিরেই তারা তাদের কৃত বাঁকামীর প্রতিফল পেয়ে যাবে। অর্থাৎ যারা আল্লাহর নামের প্রকৃত অর্থ ছেড়ে এদিক-সেদিকের বানোয়াট ও ধারণাপ্রসূত অর্থ ও ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ জুড়ে দেয় এবং কুরআনের অর্থ গ্রহণে যুক্তি ও বাঁকা চালের আশ্রয় নেয়, তাদের ব্যাপারটা ছেড়ে দেওয়াই কর্তব্য। কারণ, তারা যে বাঁকামী এখন করছে, এর প্রতিফল তারা কড়ায়-গ-ায় পেয়ে যাবে।
আয়াতের মর্ম কথা হলো, হামদ, সানা, গুণ ও প্রশংসাকীর্তন, তাসবীহ-তাহলীলের যোগ্য যেহেতু শুধুমাত্র আল্লাহ-ই এবং বিপদাপদে মুক্তি দান আর প্রয়োজন মেটানোও শুধু তাঁর-ই ক্ষমতায়। কাজেই যদি প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করতে হয়, তবে তাঁরই করবে আর নিজের প্রয়োজন বা উদ্দেশ্য সিদ্ধি কিংবা বিপদমুক্তির জন্য ডাকতে হলে শুধু তাঁকেই ডাকবে, তাঁরই কাছে সাহায্য চাইবে। আর ডাকার পদ্ধতিও বলে দেওয়া হয়েছে যে, তাঁর জন্য নির্ধারিত ‘আসমায়ে হুসনা’ বা উত্তম নামে -ই ডাকবে।
এ আয়াতের মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাতিকে দুটি হিদায়াত বা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, প্রথমত : আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্তাই প্রকৃত হামদ-সানা বা বিপদমুক্তি বা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ডাকার যোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত : তাঁকে ডাকার জন্য মানুষ এমন মুক্ত নয় যে, যেকোনো শব্দে ইচ্ছা ডাকতে থাকবে, বরং আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহপরবশ হয়ে আমাদিগকে সেসব শব্দ সমষ্টিও শিখিয়ে দিয়েছেন যা তাঁর মহত্ব ও মর্যাদার উপযোগী। সেই সাথে এ সমস্ত শব্দেই তাঁকে ডাকার জন্য আমাদিগকে বাধ্য করে দিয়েছেন যাতে আমরা নিজের মত শব্দ পরিবর্তন না করি। কারণ, আল্লাহর গুণ বৈশিষ্ট্যের সব দিক লক্ষ্য রেখে তাঁর মহত্বের উপযোগী শব্দ চয়ন করতে পারা মানুষের সাধ্যের ঊর্ধ্বে। (মায়ারেফুল কুরআন )
ইমাম বোখারি ও মুসলিম, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে রেওয়ায়েত করেছেন যে, রাসুলে করীম সা. এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার নিরানববইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এগুলোকে আয়ত্ত করে নেবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বোখারী ২৭৩৬, মুসলিম ২৬৭৭)
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আল্লাহর এই নিরানববই নাম পাঠ করে যে উদ্দেশ্যের জন্যই প্রার্থনা করা হয়, তা কবুল হয়।