ভূমিকা : আল্লাহ রব্বুল আল আমিন এই পৃথিবীতে মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেই মানুষকে ছেড়ে দেননি বরং তাকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য, অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন।
আর নবী রাসুলগণ যেহেতু নির্বাচিত নন। বরং তারা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনিত, সুতরাং তারা যে নবী একথা প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ প্রত্যেক নবীর সাথে মু’জিযাহ প্রেরণ করেছেন।
সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ(সাঃ) এর নবুওয়াতকে প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ অসংখ্য মু’জিযাহ প্রেরণ করেছেন। তার ভেতরে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য হল আল্ কুরআন।
আর তাই এই কুরআনের রয়েছে কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, যার কারণে সে সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জিযার দাবিদার আমরা আল্ কুরআনের সেই বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইন্শাআল্লাহ
১ । অধিক পঠিতব্য কিতাব : কুরআন শব্দটি আরবী শব্দটি ﻓﻌﻼﻦ এর ওজনে ক্রিয়ামূল বা মাসদার। ইমাম র্ফারা (রাঃ) এর মতে ﻗﺮﺍﻥ শব্দটি ﻗﺮﻦ ধাতু থেকে নির্গত ﻗﺮﻦ শব্দের অর্থ একত্র থাকা মিলিত থাকা যেহেতু কুরআনের প্রতিটি আয়াত একটি অপরটির সাথে ছন্দের মত মিলানো
কারো মতে,এটি ﻗﺮﺍ ধাত থেকে নির্গত যার অর্থ হল পাঠ করা। তাই আল্ কুরআন অর্থ হচ্ছে অধিক পাঠযোগ্য বা অধিক পঠিতব্য।
প্রিয় পাঠক কুরআনের মতো এত বেশি পাঠ করা হয় পৃথিবীতে এমন কোন গ্রন্থ নেই। কোন ধর্মীয় গ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক, ইত্যাদি যাই হোক। কারণ এ কুরআন পড়ে পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষ।
অন্যান্য গ্রন্থের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি যে, কিছু কিছু গ্রন্থ বিশেষ যুগে বিশেষ সময়ে মানুষের কাছে যতই সমাদৃত হোক কিন্তু কুরআনের মতো এতো অধিক পঠিত আর কোনো গ্রন্থ নেই।
কুরআন চৌদ্দশত বছর পূর্ব থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সকল যুগের সব মানুষের কাছে সমান ভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে।
অবশ্য কুরআনকে সবাই একই উদ্দেশ্যে পড়েনা কেউ পড়ে আল্লাহকে খুশি করার জন্য। কেউ বা কুরআনের ভুল ত্রুটি খুঁজবার জন্য কুরআন তেলওয়াত করে।
ত্রুটি খুঁজতে যেয়ে কেউ আবার ড.মরিস বুকাইলির মত এ কুরআনের কাছেই মাথা নত করে দেয়।
২। কুরআন মুখস্তকারীর সংখ্যা অগনিত : এটি হচ্ছে পবিত্র কুরআনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যে এই পৃথিবীতে গোটা কুরআনকে মুখস্ত করেছে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি
পৃথিবীতে অন্যান্য গ্রন্থের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি যে, সে সমস্ত গ্রন্থের বিশেষ বিশেষ অধ্যায় কিছু মানুষের মুখস্ত থাকে কিস্তু শুধু মাত্র কুরআনের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্তকারীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। অথচ কুরআনটা কত বড় একটু লক্ষ্য করুন। এ কুরআনের রয়েছে ১১৪টি সুরা, ৩০ পারা, ৭টি মনজিল, ৫৬১টি রুকু, ৮৬৪৩০টি শব্দ, ৫৩২৪৩টি যবর, ৩৯৫৮২টি যের, ৮৮০৪ টি পেশ, ১২৫৩ টি তাশদীদ এবং ১০৫৬৮১টি নুক্তা রয়েছে।
এত বড় বিশাল গ্রন্থ মুখস্ত করা সহজ ব্যাপার নয়, তাও আবার মুখস্ত করে ১০ থেকে ১২ বছরের ছেলে মেয়েরা। সত্যিই বড় অবাক হতে হয়।
যদি কখনো কাফির, মুশরিকেরা গোটা পৃথিবীর কুরআনকে জালিয়ে দেয় তবুও এ কুরআনকে আল্লাহ হাফেজদের মাধ্যমে হেফাযত করেন।
৩। গোটা কুরআনকে কাব্যিক আকারে পেশ করা হয়েছে : আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে পথহারা মানুষদেরকে পথ দেখাবার জন্য প্রেরণ করেছে অসংখ্য নবী ও রাসুল, আর যেহেতু নবী রাসুলগণ নির্বাচিত নন বরং তারা আল্লাহর মনোনিত সুতরাং তারা যে আল্লাহর নবী একথা প্রমাণ করার জন্য সেই যুগে যে বিষয়টি সব চেয়ে আলোচিত ও আকর্ষণীয় তারই মত অথচ সেই জিনিস নয় এমন কিছুকে মু’জিযাহ হিসাবে প্রেরণ করেছেন আর আমরা জানি মোহাম্মদ(সাঃ) যে যুগে এবং যে স্থানে জন্ম গ্রহণ করেছেন, সেখানে সর্বত্র চলত কবিতার ছড়া ছড়ি তারা তাদের সাধারণ কথা বার্তাগুলো পর্যন্ত কবিতার মত বলার চেষ্টা করতো, উকাজের মেলা বসত সেখানে বিভিন্ন কবির আগমন ঘটত তারা কবিতা নিয়ে পরস্পর কাব্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকতো এই কারণে সে যুগে কুরআনকে আল্লাহর কালাম প্রমাণ করবার জন্য আল্লাহ তায়ালা মু’জিযাহ হিসাবে গোটা কুরআনকে কাব্যিক আকারে পেশ করেছেন। এবং সে কবিতার মান এতই উচ্চ পর্যায়ের ছিল যে সে যুগের বিখ্যাত কবি ইমরুল কায়েস কবিতা লেখা বন্ধ করে দেন এবং তিনি বলতেন যে, কুরআনের সামনে আমার এসব কবিতা চলবেনা। আপনি যদি কুরআনকে না থেমে পড়েন,তা হলে মনে হবে আপনি একটি প্রবন্ধ পাঠ করছেন। আর যদি থেমে পড়েন তাহলে মনে হবে একটি কবিতা আবৃতি করছেন।
৪। আল কুরআনের কোন আয়াত প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বিপরীত নয় : পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এই কুরআনের অসংখ্য আয়াতে বিজ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনা করা। অথচ কুরআনের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, আধুনিক প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যশীল। তবে মনে রাখতে হবে বিজ্ঞানের যে তত্ত্বটি এখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি সেটির সাথে সামঞ্জস্য থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে যেমন প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মতে ছায়াপথ গুলো গঠনের পূর্বে ব্যাপক গ্যাসিয় বস্তু বা মেঘমালা বিদ্যমান ছিলো প্রাথমিক স্তরের সৌর, বস্তুগুলোর বর্ণনার ক্ষেত্রে বাষ্প শব্দটি অধিকতর ব্যবহার হয়েছে এবার দেখুন এ সম্পর্কে আল্লাহ কি বলেন, ﻂﺎﺌﻌﻴﻥ………ﺜﻢﺍﺴﺘﻮﻯﺇﻠﻰﺍﻠﺴﻤﺎﺀ অর্থাৎ, অতঃপর তিনি আকাশ রাজ্যের দিকে লক্ষ্য করলেন।তখন তা ছিল শুধুই ধোয়া তিনি এটাকে এবং জমিনকে উদ্দেশ্য করে বল্লেন
অস্তিত্ব ধারণ কর ইচ্ছাই হোক বা অনিচ্ছাই হোক তারা উভয়েই বলল আমরা স্বেচ্ছাই অনুগতদের মত অস্তিত্ব ধারণ করলাম (সুরা হাঃ মিম, সাজদাহ্ঃ ১১)
আর একটা উদাহরণ দেওয়া যাক অণু হচ্ছে কোন বস্তুর ক্ষুদ্রতম অংশ কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলেছে অণুকেও ভাঙ্গা সম্ভব, অণু বিভাজ্য হতে পারে এবার দেখুন কুরআন কি বলে, কাফিররা বলে আমাদের উপর কিয়ামত আসবেনা বলুন কেন আসবেনা আমার পালনকর্তার শপথ অবশ্যই আসবে যিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডল অণু পরিমান কোন কিছু তার অজ্ঞাত নয়, না তার থেকে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ বরং এক সুস্পষ্ট কিতাবে তা সংরক্ষিত(আল কুরআন)
প্রিয় পাঠক, অতঃএব প্রমাণিত হল যে পবিত্র কুরআনের সকল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বর্তমান প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যশীল। এমনি ভাবে আল্লাহ পাক ভূ-বিদ্যা, সমুদ্র বিজ্ঞান,জীব বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণী বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে বিষদ ভাবে আলোচনা করেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল প্রতিটি তত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যশীল।
৫। কুরআনের আলোচনায় কোন সীমাবদ্ধতা নেই : আমরা জানি যে কেউ যখন কোন বিয়য়ে চিন্তা করে বা কোন কথা বলে বা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন তার সেই কথা বলা চিন্তা-চেতনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিশেষ সময় স্থান কাল পাত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। শুধু তাই নয় এই সকল কর্ম-কান্ড ব্যক্তি স্বার্থ বা হীনমন্যতার ঊর্ধ্বে খুব কমই উঠতে পারে এই সকল কর্মকান্ড সম্পাদন কারীগণ যদি পুরুষ অথবা নারী হয়ে থাকে তাহলে তার কথা বলা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা পুরুষ অথবা নারী কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। যদি সে হয়ে থাকে শ্বেতাঙ্গ অথবা কৃষ্ণাঙ্গ তাহলে তার কথা বার্তা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ কেন্দ্রিক হয়ে থাকে ।
এটা মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আর এ জন্যই মানুষের চিন্তা-চেতনাপ্রসূত কোন মতবাদ দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে স্থায়ী শান্তি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা বিশেষ সীমাবদ্ধতার বেড়ায় আবদ্ধ থাকে কিন্তু যেহেতু এ কুরআন কোন মানুষের পক্ষ থেকে নাযিল হয়নি বরং এ কুরআন নাযিল হয়েছে এমন এক স্রষ্টার পক্ষ থেকে, যিনি সকল প্রকার ব্যক্তি স্বার্থপরতা বা হীন মন্যতা থেকে পবিত্র তার কাছে রয়েছে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পুংখানুপুঙ্খ জ্ঞান।
এ কারণেই পবিত্র কুরআনের আলোচনায় পাওয়া যাবে না কোন সিমাবদ্ধতা বরং তার আলোচনায় পাওয়া যাবে এক বিশাল প্রশস্ততা,এ কুরআনের আলোচনায় বিশেষ কোন দেশ,জাতি,সময় বা স্থানকে সম্বোধন করা হয়নি, সুতরাং কুরআনের একাটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সকল প্রকার সিমা বদ্ধতা থেকে পবিত্র।
৬। একটি আয়াতের সাথে আর একটি আয়াতের কোন বৈপরীত্ব নেই : পবিত্র কুরআন দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাযিল হয়েছে, অথচ একটি আয়াতের সাথে আর একটি আয়াতের কোন বৈপরীত্ব খুজে পাওয়া যাবে না
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ﻛﺛﻴﺭﺍ……….ﺍﻓﻼﻳﺗﺪﺒﺭﻭﻥ তারা কি উপলব্ধি করে না? যে এ কুরআন যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে নাযিল হতো তাহলে তোমরা এর মধ্যে অনেক বৈপরীত্ব দেখতে পেতে (সুরা নিসা,আয়াত-৮২)
প্রিয় পাঠক একটি বিষয় লক্ষ্য করুন মানুষের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তনশীল মানুষের ভেতরে যারা লেখক আছেন তারা ১০ বছর আগে যে বিষয়টি লিখেছেন,দেখা যায় ১০ বছর পরে লিখেছেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত কথা অথবা মানুষ তাদের মনের অজান্তেই এমন কথা বলেন বা লেখেন যা তার পূর্বের অনেক লেখা বা কথার বিপরীত।
সুতরাং এ কুরআন যদি কোন মানুষের রচনা করা হতো তাহলে অবশ্যই এ কুরআনে বিপরীত ধরনের কথা-বার্তা পাওয়া যেতো,কিন্তু যেহেতু এ কুরআন নাযিল হয়েছে মহান স্রষ্টার কাছ থেকে,সেই জন্যই এ কুরআনের ভেতরে কোন ধরনের বৈপরীত্ব পাওয়া যায় না।
৭। বারংবার পড়লেও খারাপ লাগেনা : মহাগ্রন্থ আল কুরআনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট। হলো এ কুরআন যতবারই পড়া হবে ততবারই ভাল লাগবে। প্রিয় পাঠক লক্ষ করুন একটা খুুব জন প্রিয় গান সেই গানটি কয়েক বার শোনার পর স্বাভাবিক ভাবেই আর ভাল লাগেনা।কিন্তু এ কুরআনকে আপনি যতবার পড়বেন ততবার মনে হবে এই মাত্র জিব্রাইল (আঃ) নাযিল করলেন,কারণ কুরআন কখনো পুরাতন হবে না রাসুল(সাঃ) বলেছেন,কুরআন কোন দিন পুরাতন বা জীর্ণ হবে না,এর আশ্চর্য ধরনের বিস্ময়কারিতা কখনো শেষ হবে না কুরআন হচ্ছে হেদায়েতের মশাল এবং এই কিতাব জ্ঞান ও বিজ্ঞানের এক কূল কিনারাহীন অগাধ জলধি (তাফসীরে সাইদী)
সূরা ফাতিহা আমরা দিন রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে শুধুমাত্র ফরজ নামাজেই ১৭ বার পাঠ করি এছাড়াও সুন্নত ও নফল নামাজে অগনিত বার পড়ে থাকি। কিন্তু আজো কারো মুখে শুনিনি যে সূরা ফাতেহা পড়তে বা শুনতে ভালো লাগে না।
৮। অমুসলিমদের অধিকার দিয়েছে আল কুরআন : অনেকেই আমাদের কাছে বলেন,যে আপনারা যে কুরআন প্রতিষ্ঠার কথা বলেন কুরআন যদি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে অমুসলিমদের কি হবে?
মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশী এটা যেন বাংলার সেই প্রবাদ বাক্যের মতই।
এসব প্রশ্নকারীদের আমরা যখন জিজ্ঞাসা করি, অমুসলিমদের স্রষ্টা কে? তারা বলে আল্লাহ। এবার আমরা বলি এ কুরআন এসেছে কার কাছ থেকে তারা বলে আল্লাহ,তখন আমরা সেই ভদ্র লোককে বলি কুরআনের স্রষ্টা যে আল্লাহ অমুসলিমদের স্রষ্টাও সেই আল্লাহ,সুতরাং আপনি কি ভাবে চিন্তা করেন যে সেই কুরআন প্রতিষ্ঠিত হলে অমুসলিমদের অধিকার নষ্ট হবে।
আসল কথা হল এ পৃথিবীতে আল্লাহর যত নিয়ামত আছে তা সকলের জন্য প্রযোজ্য। এ দুনিয়াতে আল্লাহ কারো প্রতি বৈষম্য করেননি আল্লাহ পাকের যত নিয়ামত আছে তার ভিতরে সব চেয়ে বড় নিয়ামত হল আল-কুরআন। এই কুরআন প্রতিষ্ঠিত হলে কারো প্রতি কোন বৈষম্য হবে না। সকল জাতি,ধর্ম এবং বর্ণের মানুষ নিরাপদে থাকতে পারবে,ইসলামের ইতিহাস তার বাস্তব সাক্ষী। রাসুল(সাঃ)বলেছেন,যদি কোন মুসলিম কোন অমুসলিমের অধিকার হরণ করে তাহলে আমি কিয়ামতের দিন অমুসলিমের পক্ষাবলম্বন করবো।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন ইসলাম ভারতের পদদলিত বিরাট সাম্রাজ্যের প্রতি আশীর্বাদ স্বরূপ এসেছিল।
৯। নির্ভুল একটি কিতাব : মহাগ্রন্থ আল কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হচ্ছে এটি একটি নির্ভূল কিতাব যার ভেতরে কোন প্রকার সন্দেহ সংসয়ের অবকাশ নেই।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ﻠﻠﻤﺘﻘﻴﻦ……….. ﺫﻠﻚﺍﻠﻜﺘﺎﺏ এটি একটি কিতাব যার ভেতরে কোন সন্দেহ নেই(সূরা বাকারা আয়াত-২) প্রিয় পাঠক কুরআন নাযিল হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এ কুরআনের ভুল ধরার জন্য অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা হয়েছে,কিন্তু সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর অসংখ্য গবেষক,চিন্তাবিদ,আরবি ভাষায় যাদের পূর্ণ দখল রয়েছে তারা অনেক চেষ্টা করে অবশেষে ব্যর্থ হয়েছে । তাদেরই ভেতরের এক জন ড.মরিস বুকাইলি, যিনি,কুরআনের ভুল ধরার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। অবশেষে এ কুরআনের কাছে মাথা নত করে দিয়েছে,শুধু তাই নয় বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান নামে তিনি একটি বিশাল গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেই গ্রন্থটি পড়ে অসংখ্য অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করছে। যেহেতু এ কুরআন এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে, সেহেতু এ কুরআনের ভেতরে কোন প্রকার ভুল থাকতে পারে না। সুতরাং কুরআন হচ্ছে একটি নির্ভুল কিতাব।
দুই.
১০। কুরআন তার অনুসারীদের চরমভাবে আকৃষ্ট করে : পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,কুরআন তার অনুসারীদের চরমভাবে আকৃষ্ট করে ধরে রাখে।
ইতিহাসে দেখা যায় এ কুরআনের অনুসারীদের উপর সীমাহীন নির্যাতন করেও তাদের কে এ কুরআনের বিশ্বাস থেকে এক চুল পরিমাণও বিচ্যুত করা যায়নি। এ কুরআনকে বিশ্বাস করার কারণে হযরত বেলালকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তার গলায় রশি বেঁধে উত্তপ্ত বালুর উপর টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বেড়ানো হয়েছে। এই কুরআন কে বিশ্বাস করার কারণেই হযরত সুমাইয়াকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে। এই কুরআনের আন্দোলন করার কারণেই সাইয়েদ কুতুবকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। জয়নব আল গাযালীর মত হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে আবদ্ধ করে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে, কিন্তু তাদের কেউ-ই এর উপর বিশ্বাস থেকে এক চুল পরিমান বিচ্যুত হয়নি।
সুতরাং এটিই হচ্ছে পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট যে,কুরআনের অনুসারীরা কুরআনের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করে না।
১১। কুরআন তার তেলাওয়াতকারীর ঈমান বৃদ্ধি করে : কুরআন যে সব মুমিন তেলাওয়াত করবে কুরআন তাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,ﻴﺘﻭﻜﻟﻭﻥ ………. ﺇﻨﻤﺎﺍﻠﻤﺅﻤﻧﻭﻥপ্রকৃত মুমিন এর বৈশিষ্ট হল আল্লাহর স্মরণে তাদের দিল কেঁপে উঠে এবং তাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। তারা আল্লাহর উপর আস্থাশীল ও নির্ভরশীল হয়ে উঠে,নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক থেকে ব্যয় করে বস্তুত তারাই হচ্ছে সত্যিকারের মুমিন তাদের জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে খুবই উচ্চ মর্যাদা এবং আরো রয়েছে তাদের কৃতকর্মের ক্ষমা ও অতি উত্তম রিজিক(সূরা আনফাল আয়াত-২-৪)
১২। উত্তম বিচার ব্যবস্থা পেশ করেছে : যদি কোন ভূ-খন্ডের মানুষের মাঝে শান্তি,স্বস্তি এবং নিরাপত্তা দিতে হয় তাহলে সেখানে অবশ্যই উত্তম বিচার ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের দ্বারা অনেক আইন প্রণয়ন হয়েছে এবং বিচার ব্যবস্থাও তৈরী হয়েছে,কিন্তু কোন আইন-ই মানুষকে সত্যিকার শান্তি দিতে পারেনি, কারণ ঐ সমস্ত আইন বা বিচার ব্যবস্থা ছিল মানুষের তৈরী করা। অপরদিকে মহাগ্রন্থ আল কুরআন যেটি নাযিল হয়েছে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষ থেকে,এই কুরআনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ একটি উত্তম বিচার ব্যবস্থা পেশ করেছে। যে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে রাসুল(সাঃ) বলেছেন, ﺍﻟﻰﻫﺪﻯﺻﺭﺍﻄ ﻤﺴﺘﻘﻴﻢ ………ﻤﻦﻗﺎﻝﺑﻪﺻﺪﻕ এ কুরআন থেকে যে লোক কথা বলে সেই সত্য কথা বলে,যে এর উপর আমল করে সে এর প্রতিদান লাভ করবে,যে এর সাহায্যে বিচার করবে সেই ন্যায় বিচার করবে, যে এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সে সহজ-সরল পথের দিকে আহ্বান জানিয়েছে (তাফসিরে সাইদী)।
আল কুরআনের বিচার ব্যবস্থা উত্তম বিচার ব্যবস্থা এটি কোন কাল্পনিক কথা নয়,বরং রাসুল(সাঃ) যে সমাজ গড়েছিলেন সেই সমাজই তার বাস্তব প্রমাণ।
সুতরাং পৃথিবীর মানুষের উচিত মানুষের তৈরী করা সকল আইন বা বিচার ব্যবস্থা ছেড়ে মহান সৃষ্টিকর্তার বিচার ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নেওয়া,যারা এই বিচার ব্যবস্থা মানবেনা তাদের সম্পর্কে আল্লাহর বক্তব্য হল
১.আরবী ﺍﻠﻜﺎﻓﺮﻮﻥ……..ﻮﻤﻦﻠﻡ যারা আমার নাযিল করা বিধান দিয়ে বিচার করবেনা তারা কাফের(মায়েদা আয়াত-৪৪)
২. আরবী ﺍﻠﻇﺎﻠﻤﻭﻦ…….. ﻮﻤﻦﻠﻡ যারা আমার নাযিল করা বিধান দিয়ে বিচার করবেনা তারা জালেম (মায়েদা আয়াত-৪৫)
৩. আরবী ﺍﻠﻔﺎﺴﻗﻭﻥ…….. ﻮﻤﻦﻠﻡ যারা আমার নাযিল করা বিধান দিয়ে বিচার করবেনা তারা ফাসেক (মায়েদা আয়াত-৪৭)
তিনি আরো বলেছেন হে রাসুল তারা ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ তারা আপনাকে বিচারক হিসাবে না মানবে।
১৩। কুরআন তার অনুসারীদের মর্যাদাবান করে গড়ে তোলে : মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে যারা পড়বে বা তেলাওয়াত করবে এবং তার অনুসরণ করবে এ কুরআন তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয় একটি কাঠকে আমরা কতটুকুই মুল্য দিয়ে থাকি কিন্তু সেই কাঠটি যখন রেহেল কাঠ বা আল কুরআন রাখার পাত্রে পরিণত হয় তখন সকলের কাছে সেই কাঠটির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রমযান মাস আরবী ১২ মাসের মধ্যে একটি মাস ছাড়া আর কিছুই নয়,কিন্তু যেহেতু এ মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে,সেহেতু এ মাসের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশী হয়ে গিয়েছে। অনুরুপ ভাবে এক জন মানুষের মর্যাদা মানুষের কাছে বেড়ে যায় ,যখন তার ভেতরে আল কুরআনের জ্ঞান থাকে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ﻼﻳﻌﻟﻤﻭﻥ ………. ﻫﻝﻴﺴﺘﻭ তোমাদের ভেতর যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি সমান ?
রাসুল(সাঃ)বলেছেন, ﻮﻋﻠﻤﻪ………ﺨﻴﺭﻜﻡ তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়।
১৪। আল-কুরআন মানুষকে শান্তি,স্বস্তি এবং নিরাপত্তা দিতে সক্ষম : যে ভূ-খন্ডে আল কুরআন প্রতিষ্ঠিত হবে, এ কুরআন সে ভূ-খন্ডের লোকদেরকে পূর্ণ শান্তি,স্বস্তি দিতে সক্ষম। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকায় তাহলে দেখতে পাই, এ কুরআন যখন নাযিল হয়ে ছিল তখন সমগ্র পৃথিবী বিশেষ করে আরব জাতির অবস্থা ছিল চরম শোচনীয়, ধর্ম এবং নৈতিকতার সীমা ছাড়িয়ে তারা পশুর মত জীবন-যাপন শুরু করে ছিল,অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তারা হয়ে গিয়েছিল চরম দেউলিয়া,দারিদ্র্য তাদের কে আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে ফেলেছিল, তাদের সমাজে কোন মানুষের নিরাপত্তা ছিলনা। আল কুরআন তাদের জীবন এবং সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটালো, অবশেষে তারা হয়ে উঠল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তাদের সমাজে মানুষের শান্তি,স্বস্তি এবং নিরাপত্তা ফিরে পেল, নারী তার সতীত্বের নিরাপত্তা পেল,অর্থনৈতিক ভাবে তারা পরিপূর্ণ সচ্ছল হয়ে উঠল এবং অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে তাদের সমাজে ভিক্ষা নেওয়ার মত কোন মানুষ পাওয়া যেত না, কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ﻤﻦﺍﻠﺴﻤﺎﺀ……..ﻭﻠﻭﺍﻦ যদি কোন জনপদের লোকেরা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে,তাহলে আসমান ও যমিনের বরকতের দরজা তাদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সূরা কুরাইশে আল্লাহ বলেছেন, ﻤﻦﺧﻭﻑ………ﻓﻠﻴﻌﺑﺪﻭﺍ যদি ক্ষুধা লাগলে খেতে চাও এবং (হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি) ভয়ভীতি থেকে নিরাপত্তা পেতে চাও তাহলে এই ঘরের(কাবা) রবের দাসত্ব কর।
১৫। কুরআনের ভবিষ্যৎ বাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে : পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ অনেক ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন যেগুলো পরবর্তীতে বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
নিম্নে আমরা এরকম কয়েকটি তুলে ধরছি
১.৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে রাসুলের হিযরতের ৭ বছর পূর্বে পারস্য সম্রাট ২য় খসরুর সেনাবাহিনীর হাতে রোম সম্রাট হেরা ক্লিয়াসের বাহিনী চরমভাবে পরাজিত হয়,এ যুদ্ধে রোম সম্রাট তার গোটা এশিয়ান এলাকা হারিয়ে ফেলেন এবং কনস্টান্টিনোপলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়, এ যুদ্ধে রোমক শক্তি এতটাই পর্যুদস্ত ছিল যে তাদের সাফল্যের ভবিষ্যৎ বাণী হাস্যকর ছিল। অথচ এ সম্পর্কে আল্লাহর বক্তব্য শুনুন, ﺳﻴﻐﻠﺑﻭﻥ……..ﺍﻠﻡ রোমানরা আরবদের নিকটবর্তী ভূ-খন্ডে পরাজয় বরণ করেছে অতঃপর তারা ১০ বছরেরও কম সময়ের ভেতরে বিজয় লাভ করবে। (সূরা রোম আয়াত-১-৪)
অবশেষে দেখা গেল ৬২৪ সালে পুনর্গঠিত রোমান শক্তি পারসিয়ানদের কাছ থেকে শুধু তাদের হারানো এশিয়ান এলাকাই উদ্ধার করেনি বরং পারস্যের মূল ভূ-খন্ড পর্যন্ত দখল করে নেয়।
২.প্রিয় পাঠক আমরা জানি যে রাসুল (সাঃ) যখন মদিনা থেকে হজ্জ করার উদ্দেশ্যে মক্কার দিকে ১৪০০ জন সাহাবী নিয়ে যাত্রা করেছিলেন পথিমধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হলেন এবং এক পর্যায়ে হুদাইবিয়া নামক স্থানে কাফেরদের সাথে সন্ধি হল,যা ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। এই হুদাইবিয়ার সন্ধির ভেতরে লুকিয়েছিল মুসলমানদের সেই কাংখিত মক্কা বিজয়। ঠিক এ সময় আল্লাহ বলেছিলেন, ﻤﺑﻳﻨﺎ………ﺍﻧﺎ নিশ্চয় আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি (সূরা ফাতাহ্ আয়াত-১)
এ আয়াতটি যখন নাযিল হয় তখনও মক্কা বিজয় হয়নি,অতঃপর এর কিছুদিন পরে আল্লাহর কুরআনের ভবিষ্যৎ বাণীর বাস্তবায়ন হল মক্কা মুসলমানদের হস্তগত হয়ে গেল, প্রায় ১০ হাজার সাহাবী নিয়ে রাসুল(সাঃ)বীর দর্পে মক্কায় প্রবেশ করলেন।
৩. ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় আল্লাহর রাসুলের চাচা আবু লাহাব ইসলামের সাথে কঠিন বে-আদবী করেছে,এই আবু লাহাবের বাড়ি ছিল রাসুলের বাড়ির সাথে লাগানো,শুধু আবু লাহাব নয় তার স্ত্রী উম্মে জামিল এবং তার ছেলে উত্বা ও উতাইবাসহ আবু লাহাব পরিবারের সকলেই রাসুলের সাথে চরম বে-আদবী করতো।
এই রকম তিনটি ঘটনা আমরা উল্লেখ করছি
ক.তিরমিজী শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে হযরত তারেক ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন, আমি যুলমাযায এলাকায় দেখলাম আল্লাহর রাসুল(সাঃ) লোকদের ডেকে বলছেন হে লোকেরা তোমরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলো তাহলে তোমরা কল্যাণ লাভ করবে এ অবস্থায় পেছন থেকে একটি লোক আল্লাহর রাসুলকে পাথর দিয়ে আঘাত করছে,পাথরের আঘাতে আল্লাহর রাসুলের পা দুটো রক্তে ভিজে গেল,লোকটি আল্লাহর রাসুলকে দেখিয়ে অন্যান্য লোকদেরকে বলছে এই লোকটি যা বলছে তা মিথ্যা তোমরা তার কথা কেউ শুননা।
খ.আল্লাহর রাসুলের নবুয়াত লাভের পূর্বে আবু লাহাবের দুই ছেলে উতবা ও উতাইবার সাথে রাসুলের দুই মেয়ে বিবাহ হয়েছিল।
নবুয়াত লাভ করার পর আল্লাহর রাসুল যখন দাওয়াতী কাজ শুরু করল,তখন আবু লাহাব তার ছেলেদের ডেকে বলল তোমরা যদি মোহাম্মদের কন্যাদ্বয়কে পরিত্যাগ না কর,তাহলে তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকবেনা,জাহিল সন্তানদ্বয় বর্বর পিতার আদেশ পালন করল। এমনকি উতাইবা আল্লাহর রাসুলের সামনে এসে কুরআনের দু’টা সূরার নাম উল্লেখ করে বলল আমি এসব বিশ্বাস করিনা,একথা বলেই সে আল্লাহর রাসুলের দিকে থু-থু নিক্ষেপ করল যদিও সেটি রাসুলের শরীরে স্পর্শ করেনি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, হে আমার আল্লাহ। এর উপর তুমি তোমার কুকুরগুলোর ভিতর থেকে একটি কুকুর লেলিয়ে দাও,এই ঘটনার বেশ কিছু দিন পরে সিরিয়া সফর কালে একটি বাঘ উতাইবাকে ক্ষত-বিক্ষত করে উদরস্ত করেছিল(তাফসীরে সাইদী)
গ.যখন সূরা লাহাব নাযিল হল তখন ক্ষিপ্ত হয়ে আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিল এক মুঠো পাথর নিয়ে কাবার দিকে ছুটলো রাসুল(সাঃ)ও আবু বকর তখন সেখানেই ছিলেন। কিন্তু উম্মে জামিলের চোখ থেকে আল্লাহ তার রাসুলকে আড়াল করে দিলেন।
প্রিয় পাঠক এবার লক্ষ্য করুন এ আবু লাহাব ও তার স্ত্রী সম্পর্কে আল্লাহ কি ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন তাদের করুণ পরিণতি সম্পকের্, (ﻤﻥﻤﺴﺩ………ﺘﺑﺖﻳﺪﺍ)
আবু লাহাবের দুটো হাত(অর্থাৎ তার শক্তি)ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজে ও তার ধন সম্পদ তার কোন কাজে আসবেনা,কাজে আসবেনা তার আয় উপার্জন বরং সে নিক্ষিপ্ত হবে আগুনের লেলিহান শিখায় তার সাথে থাকবে জ্বালানী বহনকারী তার স্ত্রী তার গলাই যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়ানো আছে(সূরা লাহাব)
এই সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার মাত্র ৭-৮ বছর অতিবাহিত না হতেই বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এই যুদ্ধে মূলত ইসলাম বিরোধীদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গিয়েছিল। কারণ ইসলাম বিরোধী অধিকাংশ নেতা যারা ছিল আবু লাহাবের প্রেরণা ও তার শক্তির উৎস তারা সবাই বদরের প্রান্তরে নিহত হয়েছিল অর্থাৎ তার দুটো হাত ধ্বংস হওয়া বলতে তার এই শক্তির উৎস ধ্বংস হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। আবু লাহাব এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও জনশক্তি ও অস্ত্র দিয়ে ইসলাম বিরোধীদের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল।বদরের যুদ্ধের শোচনীয় পরাজয়ের সংবাদ যখন মক্কায় পৌঁছাল, তখন সে মানসিক ভাবে এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিল যে শয্যা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল এই শয্যাই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো,বদরের যুদ্ধের পর ১সপ্তাহও আবু লাহাব জীবিত থাকেনি সে এমন মারাত্মক ধরনের সংক্রামক চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিল যে তার গোটা শরীরে পচন ধরেছিল, বমন উদ্রেককারী উৎকট দুর্গন্ধে তার ঘরেও কেউ প্রবেশ করতো না। পরিবারের একটি লোকও তার মৃত্যুর সময় দুর্গন্ধের কারণে এবং ছোঁয়াচে রোগের ভয়ে কাছে আসতে পারেনি,তার মৃত্যুর পরে লাশ ৩ দিন একই ঘরে পড়ে ছিল লাশ পচে গলে চার দিকে এক অসহনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল,পিতার লাশের সৎকার না করার কারণে শেষ পর্যন্ত লোক জন আবু লাহাবের ছেলেদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল।
তখন তারা অর্থের বিনিময়ে কয়েক জন হাবশি গোলাম যোগাড় করে তাদের দিয়ে গর্ত খনন করালো, লোকগুলো নাকে কাপড় বেঁধে বেশ দুর থেকে দীর্ঘ লাঠির সাহায্যে লাশ ঠেলে দিয়ে গর্তে ফেলে মাটি চাপা দিয়ে ছিল, মহান আল্লাহ তার ভবিষ্যৎ বাণী এভাবেই কার্যকর করেছিলেন। আর আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলেরও একই পরিনতি হয়েছিল এবং তার গলায় একটি মূল্যবান হার ছিল,তার গলার হার কিয়ামতের দিন পাকানো রশির মতোই ব্যবহৃত হবে।
শেষ কথা : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে মহাগ্রন্থ আল কুরআন একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রন্থ ও ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্টের অধিকারী। এবং উপরিউক্ত বৈশিষ্ট সমূহ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে এই গ্রন্থটি কখনোই কোন মানুষের রচিত হতে পারেনা। সুতরাং পৃথিবীর মানুষের উচিৎ মানব রচিত সকল মতবাদ এবং মতাদর্শ ছেড়ে শুধুমাত্র কুরআনের আলোকে মানুষের ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনকে গড়ে তোলা।