আশুরার তাৎপর্য ঃ করণীয় ও বর্জনীয়
ইসলামে কিছু পর্ব বা দিবস আছে। যেগুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্ধারণ করেছেন ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য। এমনি একটা দিবসের নাম আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখ। মুসলিম উম্মাহর দ্বারে কড়া নাড়ে প্রতি বছর।
এ মাসে রয়েছে এমন একটি দিন, দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে যে দিনে নবী মুসা (আ.) এর বিজয় হয়েছিল। পতন হয়েছিল তৎকালীন সবচেয়ে শক্তিশালী জালেম সম্রাট ফেরআউন ও তার সাম্রাজ্যের। সে দিনটিই হল আশুরা; মুহাররম মাসের দশ তারিখ।
এ দিনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এ দিনে রোযা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে।
যেমন হাদীসে এসেছে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ رواه مسلم ১১৬৩
“আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) বলেছেনঃ রমযানের পর সর্বোত্তম রোযা হল আল্লাহর প্রিয় মুহাররম মাসের রোযা। এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হল রাতের নামাজ” (মুসলিম: ১১৬৩)
আশুরার বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে এ দিনে আল্লাহ তা’আলা তার নবী মুছা (আ.) ও তার অনুসারী ঈমানদারদের ফেরআউনের জুলুম থেকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার বাহিনীসহ সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছেন।
রাসূল (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন তিনি আশুরার দিনে ইহুদীদের রোযা পালন করতে দেখলেন। যেমন হাদীসে এসেছে
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رضى الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ ” فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم” فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَىبِمُوسَى مِنْكُمْ ” فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
“ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে রোযা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন “এটা কোন দিন যে তোমরা রোযা পালন করছ? তারা বললঃ এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুছা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোযা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোযা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রাসূল (সা.) বললেনঃ “তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা (আ.) এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রাসূল (সা.) রোযা পালন করলেন ও অন্যদেরকে রোযা পালনের নির্দেশ দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলে কারীম (সা.) ইহুদীদের কথা বিশ্বাস করে রোযা পালন করেছেন এমনটি নয়। সম্ভবত আল্লাহ তা’আলা অহীর মাধ্যমে ইহুদীদের এ বক্তব্যের সত্যতা জানিয়ে ছিলেন অথবা তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে এর সত্যতা উপলদ্ধি করেছিলেন।
এ দিনে রোযা পালনের ফযীলত সম্পর্কে হাদীসে আরো এসেছে;
عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيْ رضىي الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه و سلم سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ فَقَالَ: ্রيُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَগ্ধ، وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ فَقَالَ: يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ رواه مسلم
আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.) কে আশুরার রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তিনি বললেনঃ “ বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গৃহীত হয়।” (মুসলিম, তিরমিযী)
ইমাম বায়হাকী (রহঃ) বলেনঃ “এ হাদীসের ব্যাখ্যা হলঃ যে রোযা পালনকারীর গুনাহ রয়েছে তার গুনাহের কাফফারা হবে আর যার গুনাহ নেই আশুরার রোযা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।” (ফাযায়েলুল আওকাত: বায়হাকী) মোট কথা আশুরার দিনের রোযা হল এক বছরের রোযাতুল্য।
রাসূলে কারীম (সা.) এ রোযাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পালন করতেন। যেমন হাদীসে এসেছে;
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه و سلم يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ رواه البخاري
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেনঃ “আমি রাসূল (সা.) কে এ রোযা ছাড়া অন্য কোন রোযাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। আর তা হল আশুরার রোযা ও এই রমযান মাসের রোযা।” (বুখারী: ১৮৬৭)
আমাদের সালফে সালেহীন এ রোযাকে গুরুত্ব দিয়ে পালন করতেন। এমনকি সফরে থাকাকালীন সময়েও তারা এ রোযাকে পরিত্যাগ করতেন না। যেমন ইমাম ইবনে রজব (রহ.) বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে আব্বাস (রা.), আবু ইসহাক আস-সাবেয়ী, ইমাম যুহরী (রহ.) প্রমুখ বলতেনঃ “রমযানের রোযা কোন কারণে ছুটে গেলে অন্য সময়ে আদায় করার সুযোগ থাকে, কিন্তু আশুরার রোযা ছুটে গেলে আর রাখা যায় না।” (লাতায়েফুল মাআ‘রিফ : ইবনে রজব)
তাই তারা সফরে থাকা অবস্থায়ও আশুরার রোযা আদায় করতেন। নেক কাজে অগ্রণী হওয়ার ব্যাপারে এই ছিল আমাদের পূর্বসূরী ওলামায়ে কেরামের আদর্শ।
আশুরার রোযার ব্যাপারে ইহুদীদের বিরোধিতা করার নির্দেশ
যে সকল বিষয়ে কোন শরয়ী হুকুম অবতীর্ণ হয়নি, মদীনায় আসার পর সে সকল বিষয়ে রাসূল (সা.) ইহুদীদের অনুরূপ আমল করা পছন্দ করতেন। যেমন তিনি মসজিদুল আকসাকে কিবলা হিসেবে গ্রহণ করলেন। উদ্দেশ্য ছিল ইহুদীরা যেন ইসলামকে নিজেদের ধর্মের মতই মনে করে, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। পরে যখন সত্য ধর্ম ইসলাম গ্রহণের পরিবর্তে ইহুদীদের অবাধ্যতা, হিংসা, কপটতা, বিশ্বাসঘাতকতা, বর্ণবাদী নীতি ও চরম সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ পেল, তখন সকল ব্যাপারে তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হল, এবং ধর্মীয় ও সংস্কৃতিকর ব্যাপারে তাদের সাথে সাদৃশ্যতাপূর্ণ সকল আমল ও আচরণ করতে নিষেধ করা হল।
তাই রাসূল (সা.) সংকল্প করলেন, আশুরার দিনে তিনি ইহুদীদের মত আর একটি করে রোযা পালন করবেন না। বরং এ রোযার সাথে মুহাররম মাসের নবম তারিখে একটি রোযা বাড়িয়ে রাখার মাধ্যমে ইহুদীদের ধর্ম ও সংস্কৃতির বিরোধিতা করবেন। এর প্রমাণ হিসেবে বহু হাদীস এসেছে।
যেমনঃ-
رَوَى عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قال : حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم . رواه مسلم
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন রাসূল (সা.) আশুরার রোযা পালন করলেন ও অন্যকে পালন করার নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেনঃ “এটা তো এমন এক দিন যাকে ইহুদী ও খ্রিস্টানরা সম্মান করে থাকে।” তখন রাসূল (সা.) বললেনঃ “আগামী বছর আসলে ইনশা-আল্লাহ আমরা নবম তারিখে রোযা পালন করব।” ইবনে আব্বাস (রা.) বলেনঃ “পরবর্তী বছর আসার পূর্বেই রাসূল (সা.) ইন্তেকাল করলেন।” (মুসলিম: ১৯১৬)
আশুরার রোযা কোনটি?
হাকাম ইবনুল আ‘ওয়াজ নামে এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস (রা.) কে আশুরার রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “যখন মুহাররম মাসের চাঁদ দেখবে তখন থেকে হিসেব করবে এবং নবম তারিখের সকাল থেকে রোযা পালন করবে।” (মুসলিম ও তিরমিযী)
ইবনে আব্বাস (রা.) এর এ উত্তর থেকে এ ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশংকা নেই যে, আশুরার রোযা আসলে কোন দিন; নবম না দশম তারিখে?
ইবনুল কায়্যিম (রহঃ) বলেন ঃ “কেউ যদি আশুরা সম্পর্কিত ইবনে আব্বাস (রা.) এর বর্ণনাসমূহ একত্র করে পড়ে দেখে, তা হলে তার সামনে কোন বিভ্রান্তি বা অস্পষ্টতা থাকবে না, এবং সে ইবনে আব্বাস (রা.) এর ইলম ও প্রজ্ঞার গভীরতা উপলদ্ধি করতে পারবে। বর্ণিত হাদীসে প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন নি যে আশুরা নবম তারিখে। তিনি শুধু নবম তারিখে রোযা আরম্ভ করতে বলেছেন। (যাদুল মাআ‘দ)
হাদীসে এসেছে
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم :صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا ) رواه أحمد (২১৫৫) (
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “তোমরা আশুরা দিবসে রোযা পালন কর ও এ ক্ষেত্রে ইহুদীদের বিরোধিতা কর। তাই তোমরা আশুরার একদিন পূর্বে অথবা একদিন পরে রোযা পালন করবে। (আহমদ)
এ হাদীসে কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ঃ
(১) রাসূল (সা.) আশুরার দিনে রোযা পালন করতে বলেছেন। তাই আশুরার দিনকে বাদ দিয়ে রোযা পালন করলে তা আশুরার রোযা হবে না।
(২) আশুরার রোযা পালনের ক্ষেত্রে ইহুদীদের বিরোধিতা করতে হবে। তাই ইহুদীদের মত দশম তারিখে একটি মাত্র রোযা পালন করা যাবে না।
(৩) আশুরার একদিন পূর্বে রোযা পালন করতে হবে।
(৪) যদি আশুরার পূর্বের দিন রোযা পালন করা কোন কারণে সম্ভব না হয় তাহলে আশুরা ও তার পরের দিন রোযা পালন করতে হবে।
অতএব আশুরার দিন বাদ দিয়ে আশুরার একদিন পূর্বে ও একদিন পরে রোযা পালন করা ঠিক হবে না। তেমনি আশুরার দিনসহ একদিন পূর্বে ও একদিন পরে মোট তিনটি রোযা পালন করাও ঠিক হবে না।
ইহুদীদের ধর্মীয় আচারের বিরোধিতা করার জন্য এ পদ্ধতিতে রোযা পালন করা হবে ।
যেমন হাদীসে এসেছে;
كما جاء في حديث أبي موسى رضي الله عنه قال: كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَعُدُّهُ الْيَهُودُ عِيدًا وفي رواية مسلم: “كَانَ يَوْمُ عَاشُوْرَاءَ تُعَظِّمُهُ الْيًهُوْدُ وَتَتَّخِذُهُ عِيْداً”. وفي رواية له أيضاً: “كان أَهْلُ خَيْبَرَ (اليهود) يَتَّخِذُوْنَهُ عِيْداً، وَيُلْبِسُونَ نِسَاءَهُمْ فِيهِ حُلِيَّهُمْ وَشَارَتَهُمْ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم : ” فَصُومُوهُ أَنْتُمْ ” ” (رواه البخاري)
আবু মুছা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ খায়বর অঞ্চলের ইহুদীরা আশুরার দিনে রোযা পালন করত ও ঈদ উদযাপন করত। এ দিনে তাদের মেয়েরা অলংকারাদি পরিধান করত ও তারা উত্তম পোশাকে সজ্জিত হত। রাসূল (সা.) বললেনঃ “তাহলে তোমরা সেদিনে রোযা পালন করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় জানা যায়ঃ
(১) অঞ্চল ও গোত্র ভেদে ইহুদীদের ধর্মীয় আচরণের বিভিন্নতা। মদীনার ইহুদীরা শুধু রোযা পালন করত আর খায়বারের ইহুদীরা রোযা পালন ও উৎসব পালন করত।
(২) যেহেতু এ দিনে ইহুদীরা ঈদ পালন করত। আর রোযা হল ঈদের বিরোধী। তাই রোযা পালন করে তাদের ঈদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিলেন আল্লাহ, রাসূল (সাঃ কে।
(৩) রোযা ও ঈদ পরস্পরের বিরোধী। তাই তা একই দিনে একত্র হতে পারে না।
(৪) আল্লাহর রাসূল (সা.) এর এ বাণীটি ইসলামের শেষ দিকের। কারণ খায়বর বিজয় ও হাদীসের বর্ণনাকারী আবু মুছা আল-আশ‘আরীর রাসূলের সঙ্গ লাভ তাঁর জীবনের শেষ দিকের ঘটনা। যদিও আবু মুছা (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন মক্কী জীবনে।
ইবনে রজব (রহঃ) বলেনঃ “এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা গেল এ দিনকে উৎসবের দিন হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর কাফির মুশরিকদের ঈদের সাথে সংহতি প্রকাশ না করে ঐদিনে রোযা পালন করে তাদের উৎসবের বিরোধিতা করতে বলা হয়েছে।” (লাতায়েফুল মাআ’রিফ)
কারবালার ঘটনার সাথে আশুরার কি সম্পর্ক?
বর্তমানে আমরা দেখছি প্রায় সর্ব মহল থেকে আশুরার মূল বিষয় বলে কারবালার ঘটনাকেই বুঝানো হচ্ছে। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক নয়।
ইসলামের আগমনের পূর্বে আশুরা ছিল। যেমন আমরা হাদীস দ্বারা জানতে পেরেছি। তখন মক্কার মুশরিকরা যেমন আশুরার সওম পালন করত তেমনি ইহুদীরা মুছা আ. এর বিজয়ের স্মরণে আশুরার সওম পালন করত।
শরীয়তের মানদন্ডে আশুরার প্রচলিত আমলসমূহ
মুসলিম জনসাধারণের দিকে তাকালে আপনি দেখবেন যে, তারা এ আশুরাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের কাজ-কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এবং এ কাজগুলো তারা আশুরার আমল মনে করেই করে থাকে। যেমন আশুরার রাত্রি জাগরণ, বিভিন্ন প্রকার উন্নত খাবারের ব্যবস্থা, পশু জবেহ, আনন্দ-ফূর্তির প্রকাশ, আবার কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের স্মরণে মাযারের প্রতিকৃতি বানিয়ে তা নিয়ে মাতম ও তাযিয়া মিছিল বের করা, মাহফিল ও আলোচনা সভা ইত্যাদি।
এগুলো বিভ্রান্ত শিয়া ও রাফেজীদের কাজ হলেও দুঃখজনকভাবে আমাদের সাধারণ মুসলিম জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
তাই আমাদের জেনে নিতে হবে কোনটা আশুরা সম্পর্কিত আমল আর কোনটা ভেজাল বা বিদ‘আত।
যদি আমাদের আমলগুলো শরীয়ত সম্মত হয় তা হলে তা দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সওয়াব লাভ করতে পারব। আর যদি আমলগুলো শরীয়ত সমর্থিত না হয়, বিদ’আত হয়, তাহলে তা পালন করার কারণে আমরা গুনাহগার হবো। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পরিবর্তে তার থেকে দূরে সরে পড়বো।
আমাদের সর্বদা ভাল করে মনে রাখতে হবে যে, যে কোন আমল আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হওয়ার জন্য দুটো শর্ত রয়েছে।
একটি হল : আমলটি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করতে হবে।
দ্বিতীয়টি হল : আমলটি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে হতে হবে।
আশুরার দিনে বর্জনীয় জিনিসসমূহ
আশুরার দিনে রোযা ও তওবা ইস্তেগফার ছাড়া যেহেতু অন্য কোনো আমল পাওয়া যায় না তাই আমাদের দেশে আশুরার দিনে যে সমস্ত রেওয়াজ রুসম রয়েছে যেমন- মিলাদ মাহফিল করা, খিচুড়ি পাকানো, বিশেষত শিয়াদের আবিষ্কৃত কু-প্রথা ও বিদআতগুলো যেমন তাজিয়া (মাজারের সাদৃশ্য করে হযরত হুসাইন (রা.) এর নকল কবর তৈরী করা), ঢাক ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো, হায় হাসান হায় হুসাইন বলে মাতম করা, ছুরি মেরে নিজের বুক পিঠ থেকে রক্ত বের করে বুক চাপড়ানো, শোকের পোশাক পরা ইত্যাদি অবশ্যই বর্জনীয়। এ সব করা যেমন হারাম তেমনি এ সব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাও হারাম। আল্লাহ তাআলা নিজ দয়ায় আমাদেরকে আশুরার পবিত্রতা ও তাৎপর্য থেকে উপকৃত হওয়ার এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে দিনটি অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমীন।