ইসলামে ন্যায় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব:

ইসলামে ন্যায় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব

ইসলামে ন্যায় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব

যুগে যুগে আল্লাহ যত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন তার উদ্দেশ্য সমাজে ন্যায় নিষ্ঠতা ও সুশৃঙ্খলার বিধান করা। মানুষের মাঝে যেমন হায়েনার চরিত্র বা পশুত্ব রয়েছে তেমনি ফেরেশতা সুলভ উত্তম প্রবৃত্তিও রয়েছে। পশুত্বের ওপর সুন্দর গুণাবলীকে জাগিয়ে তোলাই নবী, রাসূল, আওলিয়া, আম্বিয়ার কাজ। নবী রাসুল প্রেরণের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে,অত্যাচারী-অসভ্য-বর্বর লোকদেরকে সুসভ্য,ন্যায়ানুগ-সুশৃঙ্খল করাই ছিল তাদের কাজ। কুরআনেও এর প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন,

 لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْـمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ [الحديد: 25]

নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদণ্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। (সূরা হাদীদ: ২৫)

অর্থাৎ যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ প্রেরণের মূল উদ্দেশ্যই হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায়ের উপরই কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার উপর আকাশ ও জমিন আপন স্থানে স্থীর রয়েছে।

ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি কারো মনোভূত নাও হয় তবুও তা হতে বিরত থাকা যাবে না:  আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّـهِ وَلَوْ عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ ۚ إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللهُ أَوْلَىٰ بِهِمَا ۖ فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَىٰ أَن تَعْدِلُوا ۚ وَإِن تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا

হে ঈমানদারগণ!,তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়,তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব,তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও,তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত। (সূরা নিসা: ১৩৫)

সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়।

মহান আল্লাহ অন্যত্র বলছেন:

 ويقول أيضًا: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ للهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ [المائدة: 8]،

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে,তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা মায়োদা: ৮)

ইসলামে ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির স্থান নেই:

 সম্মানিত উপস্থিতি: ইসলামে ন্যায় প্রতিষ্ঠার মানে হচ্ছে,যেখানে ভালোবাসা বা শত্রুতা কিংবা বংশ মর্যাদার প্রভাব কোন কাজ করবে না। তেমনিভাবে ন্যায় বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিমের পার্থক্যও কোন প্রভাব ফেলবে না। তারা চাই বন্ধু হোক কিংবা শত্রু হোক। সর্বক্ষেত্রে ইসলাম ন্যায়ের কথা বলে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ আন্তর্জাতিকভাবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় সৃষ্টির সেরাজাতি মানব এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ সকলকে সঠিকভাবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার তাওফীক দান করুন। আমীন

ইসলামে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নীতি বা অবস্থান:

 এখানে লক্ষ্যণীয় যে বনী মাখযুম গোত্রকে তখন সম্ভ্রান্ত পরিবার বলে স্বীকার করা হতো: সেই গোত্রের এক মহিলা চুরি করেছে। তার যেন হাত কাটা না হয় সে জন্য উসামা বিন যায়েদের মধ্যস্থতায় রাসূলের নিকট সুপারিশ করা হয়। রাসূল (সা.) চরমভাবে রাগান্বিত হয়ে তাৎপর্যপূর্ণ খোৎবা প্রদান করেন। উক্ত খোৎবায় ইসলামে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নীতি বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেন। এবং বলেন:

 عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ قُرَيْشًا أَهَمَّهُمْ شَأْنُ الْمَرْأَةِ الْمَخْزُومِيَّةِ الَّتِي سَرَقَتْ فَقَالُوا وَمَنْ يُكَلِّمُ فِيهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا وَمَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلَّا أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ حِبُّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللَّهِ ثُمَّ قَامَ فَخَطَبَ ثُمَّ قَالَ إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمْ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمْ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ وَاَيْمُ اللَّهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا  رواه البخاري  و مسلم

 

হযরতআয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে,মাখযুমী গোত্রের যে মহিলাটি চুরি করেছিল তার বিষয়টি কুরায়শদের খুবই উদ্বিগ্ন করে তোলে। তারা নিজেদের মধ্যে বলল,এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কথা বলবার মত কে আছে? কেউ কেউ বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একান্ত প্রিয় পাত্র উসামা ইবনু যায়েদ ব্যতীত আর উে সাহস পাবে না। তারপর উসামা এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,তুমি আমার কাছে আল্লাহ নির্ধরিত হদসমূহের (বিচারের সীমা) অন্যতম হদ সম্পর্কে সুপারিশ করছ?এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং খুতবা দিয়ে বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এই জন্যই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল যে,তাদের মধ্যে প্রতিপত্তিশালী ভদ্র ঘরের কেউ যদি চুরি করত তবে তারা তাকে ছেড়ে দিত আর দুর্বল কোন ব্যক্তি চুরি করলে তার উপর হদ প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করত তবুও আমি অবশ্যই তার হাত কাটতাম। (বুখারী ও মুসলিম)

সবার হক প্রতিষ্ঠা করাই ন্যায় বিচারের মূল লক্ষ্য

ন্যায় বা ইনসাফ এটি আল্লাহর দাঁড়িপাল্লা, যদ্বারা দুর্বলদের হক ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মযলুমের সাথে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইসলামী সমাজে সবার হক প্রতিষ্ঠা করাই ন্যায় বিচারের মূল লক্ষ্য।

ইসলাম সমাজের সর্ব স্তরের লোকের সাথে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে। নিজের নফস বা সত্ত্বা থেকে শুরু করে, সকলের সাথে। তার বাস্তবতা আমরা লক্ষ্য করি যখন সালমান ফারসী (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন,আর তারই প্রতিবেশী আবুদ দারদা (রা.)-কে দেখতে পান যে,তিনি স্ত্রীর সঙ্গ ত্যাগ করে রাত ভর কিয়ামুল লাইল করতেন,এবং দিনভর রোযা থাকতেন। তখন সালমান ফারসী (রা.) আবুদ দারদাকে নিম্নের কথাগুলো উপদেশ করলেন:

عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : آخَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ سَلْمَانَ وأَبِي الدَّرْدَاءِ ، فَزَارَ سَلْمَانُ أَبَا الدَّرْدَاءِ فَرَأَى أُمَّ الدَّرْدَاءِ مُتَبَذِّلَةً ، فَقَالَ لَهَا : مَا شَأْنُكِ ؟ قَالَتْ : أَخُوكَ أَبُو الدَّرْدَاءِ لَيْسَ لَهُ حَاجَةٌ فِي الدُّنْيَا ، فَجَاءَ أَبُو الدَّرْدَاءِ فَصَنَعَ لَهُ طَعَامًا ، فَقَالَ : كُلْ فَإِنِّي صَائِمٌ ، قَالَ : مَا أَنَا بِآكِلٍ حَتَّى تَأْكُلَ فَأَكَلَ ، فَلَمَّا كَانَ اللَّيْلُ ذَهَبَ أَبُو الدَّرْدَاءِ يَقُومُ ، فَقَالَ : نَمْ فَنَامَ ثُمَّ ذَهَبَ يَقُومُ ، فَقَالَ : نَمْ ، فَلَمَّا كَانَ آخِرُ اللَّيْلِ قَالَ سَلْمَانُ : قُمِ الْآنَ ، قَالَ : فَصَلَّيَا ، فَقَالَ لَهُ سَلْمَانُ : ” إِنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَلِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَلِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا فَأَعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ ” ، فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” صَدَقَ سَلْمَانُ رواه البخاري

আবু জুহাইফা (রা.) বলেন:- রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালমান (রা.) এবং আবু দারদা (রা.) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেছিলেন। সালমান (রা.) আবু দারদা (রা.) এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলেন আর উম্মে দারদা (রা.) [আবু দারদা (রা.)এর স্ত্রী]-কে ময়লা কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখতে পেলেন এবং তাকে তার ঐ অবস্থার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, ‘আপনার ভাই আবু দারদার দুনিয়ার চাহিদা নাই’। এর মধ্যে আবু দারদা এলেন এবং তার (সালমানের) জন্য খাবার তৈরি করলেন আর বললেন, ‘আপনি খাবার গ্রহণ করুন, আমি রোযা আছি’। সালমান (রা.) বললেন, ‘তুমি না খেলে আমি খাচ্ছি না’। কাজেই আবু দারদা (রা.) খেলেন। যখন রাত হলো, আবু দারদা (রা.) উঠে পড়লেন (রাতের নামায পড়ার জন্য)। সালমান (রা.) বললেন, ‘ঘুমাও’; তিনি ঘুমালেন। পুনরায় আবু দারদা উঠলেন (নামাযের জন্য), আর সালমান (রা.) বললেন,‘ঘুমাও’। রাতের শেষ দিকে সালমান (রা.) তাকে বললেন,‘এখন ওঠো (নামাযের জন্য)’। কাজেই তারা উভয়ে নামায পড়লেন এবং সালমান (রা.) আবু দারদা (রা.)কে বললেন, তোমার ওপর তোমার রবের হক রয়েছে; তোমার ওপরে তোমার আত্মার হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে; কাজেই প্রত্যেককে তার প্রাপ্য হক প্রদান করা উচিত পরে আবু দারদা (রা.) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাত করলেন এবং একথা তার কাছে উল্লেখ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “সালমান সত্য বলেছে।” [বুখারি, হাদিস নং -১৮৬৭]

ইসলাম সর্বত্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কথা বলে:

বাক্য ব্যয় অর্থাৎ পরষ্পর কথোপকথনেও ইনসাফ করার ব্যাপারে ইসলাম তাগিদ দিয়েছে: মহান আল্লাহ এরশাদ করছেন:

  وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى} [الأنعام: 152

আর যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ইনসাফ কর, যদিও সে আত্মীয় হয়। (আনয়াম: ১৫২)

 ইসলাম বিচার কাজ পরিচালনার বেলায়ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে বলে:

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ النساء: 58  

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। (নিসা: ৫৮)

এক কথায় মহান আল্লাহ ইনসাফ ও দয়াশীলতার নির্দেশ দিচ্ছেন:

إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيْتَاءِ ذِي القُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা নাহল: ৯০)

ইসলাম সন্ধির ক্ষেত্রেও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে বলে: আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ  [الحجرات:   9

আর যদি মুমিনদের দু‘দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়,তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে,তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে,তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর,যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়-বিচারকারীদের ভালবাসেন। (সূরা হুজুরাত: ৯)

ন্যায় প্রতিষ্ঠার ফল:

ইনসাফ বা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার মর্যাদার আল্লাহর নিকট বেশি। আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন: إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ   নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন। (সূরা হুজুরাত: ৯)

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়ারা (রা.) বলেন: একজন নীতিবান, ইনসাফগার বাদশা তার প্রজাদের মধ্যে একদিনের ইনসাফের আমল একজন সাধারণ আবেদের ১০০ বছর আমল অপেক্ষা উত্তম। সুবহানাল্লাহ

কিয়ামতের দিন ইনসাফগার বাদশা আল্লাহর ছায়ার নিচে অবস্থান করবে-

এই বিষয়ে রাসূলে কারীম (সা.) হতে হাদীস বর্ণিত আছে:

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ  : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ: الإِمَامُ الْعَادِلُ. وَشَابٌّ نَشَأَ بِعِبَادَةِ اللّهِ. وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ. وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِي اللّهِ، اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ. وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إِنِّي أَخَافُ اللّهَ. وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّىٰ لاَ تَعْلَمُ يَمِينُهُ مَا تُنْفِقُ شِمَالُهُ. وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللّهَ خَالِياً، فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ – متفق عليه

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা:) বলেছেন: সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তায়ালা (কিয়ামতের দিন) তার আরশের ছায়ায় স্থান দান করবেন। সেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর অন্য কোন ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায় পরায়ন নেতা। ২. ঐ যুবক যে তার যৌবন কাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছেন। ৩. এমন (মুসলিম) ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লটকানো থাকে, একবার মসজিদ থেকে বের হলে পুনরায় প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত ব্যাকুল থাকে। ৪. এমন দু’ব্যক্তি যারা কেবল আল্লাহর মহব্বতে পরস্পর মিলিত হয় এবং পৃথ হয়। ৫. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ফেলে। ৬. যে ব্যক্তিকে কোন সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরী রমনী ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আহবান জানায় আর ঐ ব্যক্তি শুধু আল্লাহর ভয়েই বিরত থাকে। ৭. যে ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে তার ডান হাত কি দান করলো বাম হাতও জানলো না। (বুখারী-মুসলিম)

ন্যায় প্রতিষ্ঠাতা মানবজাতিকে এই দুনিয়ায়ও নিরাপত্তা প্রদান করে:

اَلْعَدْلُ أَمَانٌ لِلْإِنْسَانِ فِيْ الدُّنْيَا، وَقَدْ حُكِيَ أَنَّ أَحَدَ رُسُلِ الْمُلُوْكِ جَاءَ لِمُقَابَلَةِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، فَوَجَدَهُ نَائِمًا تَحْتَ شَجَرَةٍ، فَتَعَجَّبَ؛ إِذْ كَيْفَ يَنَامُ حَاكِمُ الْمُسْلِمِيْنَ دُوْنَ حَرَسٍ، وَقَالَ: حَكَمْتَ فَعَدَلْتَ فَأَمِنْتَ فَنِمْتَ فَسَلَّمْتَ يَا عُمَرُ..

বর্ণিত আছে যে, একদা কোন এক দেশের দূত হযরত উমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসলো। তাকে তিনি একটি গাছের নিচে ঘুমন্ত অব্স্থায় দেখে, আশ্চর্যবোধ করলো!!কিভাবে প্রহরী ছাড়া মুসলমানদের বাদশা ঘুমাচ্ছে! আর বলতে লাগলো, বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছ, লোকদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছো। এই জন্যই হে উমরা! তুমি নিরাপদে ঘুমাচ্ছ।

 

Related Post