বৈরাগী ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় ইসলাম। এই দুই প্রকার ইসলামের সন্ধান পাওয়া যায় কুরআন ও সুন্নাহ অধ্যয়ন করলে। ইসলামে বৈরাগ্যবাদ নেই। আল্লাহ বলেন, আর বৈরাগ্য সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে। আমি এটা তাদের ওপর ফরজ করিনি (সূরায়ে হাদিদ, আয়াত ২৭)। প্রিয় নবী বলেন, ইসলামে বৈরাগ্যবাদ নেই। বৈরাগ্যবাদ মানে হিন্দু সন্যাসীদের মতো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র বাদ দিয়ে শুধু ধর্মকর্ম নিয়ে পড়ে থাকা। যত নবী দুনিয়ায় এসেছেন তাঁদের অনেকেই রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের প্রিয়নবী সা:-ও মদিনায় গিয়েই সর্বজনীন রাষ্ট্র গঠন করে মদিনার রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ ও পালন করেছেন। ইসলামে সমাজনীতি, রাজনীতিসহ সব ব্যাপারে বিধিবিধান ও নির্দেশনা থাকায় এবং ইসলাম সে হিসেবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে চালাতে চায় বলেই শত্রুরা প্রকৃত মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে এত চক্রান্ত করে। ইসলামে যদি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চিন্তা না থাকত এবং শুধু কয়েকটি আচার অনুষ্ঠানের নামই ইসলাম হতো, তাহলে শত্রুরা ইসলাম নিয়ে এত চক্রান্তও করত না, ইসলামের হেফাজতের জন্য চিন্তাও করতে হতো না।
ইসলামের শত্রুর হাতিয়ার : ইসলামের পূর্ণ অনুশীলন ও অনুশাসনের অভাব এবং মুসলমানদের ইসলাম সম্বন্ধে জ্ঞানের অজ্ঞতাই হলো ইসলামের শত্রুদের বড় হাতিয়ার। মুসলমানদের ইসলামের সঠিক পরিচয় ও জ্ঞান না থাকায় তারাও শত্রুদের চক্রান্তের শিকার হয়। এ জন্য দায়ী আমাদের আলেমসমাজ ও ইসলামবর্জিত রাজনীতি। এই রাজনীতিকে ব্যবহার করে শত্রুরা আজ পুরো জাতিকে বেঈমান বানাচ্ছে।
ইসলাম কী : ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর দেয়া পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ। মানে ধর্মনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি স্বরাষ্ট্রনীতিপররাষ্ট্রনীতি,শাসননীতি,যুদ্ধনীতি,সন্ধিনীতি,শিক্ষানীতি,বাণিজ্যনীতি,সংস্কৃতি ব্যক্তিগত,পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বিধিবিধানসমৃদ্ধ আল্লাহর মনোনীত জীবন বিধান। এ জন্য ইসলামকে আল্লাহ আদ দ্বীন হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং নিজের অনুমোদন দিয়েছেন। এ কথাও তিনি বলেছেন যে, ইসলামের পরিবর্তে অন্য কোনো পথ ও পন্থায়, অন্য কোনো ধর্ম ও মতবাদের আনুগত্য অনুসরণ করে মানুষ ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে পারে না। দুনিয়া ও মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর দেয়া বিধান মতো না চলার কারণেই আজ বিশ্বব্যাপী অশান্তি। আল্লাহ বলেন, ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীন চাইবে তা অনুমোদন করা হবে না। আল কুরআন।
কুরআন কী বলে : প্রিয়নবী সা:-এর বিদায়ী ভাষণের দিন আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়ে আমার নেয়ামতের পূর্ণতা দিলাম। আর ইসলামকেই তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে অনুমোদন দিলাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইসলামই আল্লাহর নিকট হতে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিধান।’ অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন, ‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য জীবন বিধান সন্ধান করবে তা মঞ্জুর করা হবে না।’ আল কুরআন।
মুনাফেকের নামাজ : যারা ইসলাম পালন করতে চায় এবং মুসলমান হতে ও থাকতে চায় তাদের সব নীতিমালা ও বিধিবিধানসহ ইসলামকে গ্রহণ ও মান্য করে চলতে হবে। কিছু মানবে কিছু অমান্য করবে, কিছু বিশ্বাস কিছু অবিশ্বাস করবে এমন যদি হয় তা ইসলামও হবে না, মুসলমানিও হবে না। ইসলামের সুফলও সে পাবে না। তার নামাজ মদিনার মুনাফেকদের নামাজের মতো হবে। যারা প্রিয়নবী সা:-এর পেছনে নামাজ পড়ে জাহান্নামি হয়েছে। নাউজুবিল্লাহ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি কিতাবের (আল কুরআনের) কিছু অংশ বিশ্বাস করবে আর কিছু অমান্য করবে? তোমাদের মধ্যে যেই এমন করবে সে বা তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছিত হবে এবং আখিরাতে কঠিন আজাবে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (আল কুরআন) সমাপ্ত