বিশ্ব মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলো ঈদুল ফিতর বা রোযার ঈদ। এই দিনে মুসলমানদের জন্য করণীয় কিছু আমলের কথা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১- ঈদের নামাযের কোন আজান ও ইকামত নেই; বা “আস্সালাতু জামিয়া” ইত্যাদি বলারও বিধান নেই। জাবির বিন সামুরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি একবার, দুইবার নয় বরং অসংখ্যবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঈদের নামায আদায় করেছি কোন আজান ও ইকামত ছাড়াই।” (মুসলিম: হাদীস নং- ৮৮৭)
২- ঈদুল ফিতরের দিন নামাযে বের হওয়ার আগে কিছু আহার করা: আনাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন সকাল হলেই খেজুর খেতেন; এবং সেগুলো খেতেন বিজোড় সংখ্যায়।” (বুখারী: হাদীস নং- ৯৫৩)
ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামায থেকে ফিরে এসে কুরবানীর পশু জবেহ করার আগ পর্যন্ত কোন কিছু না খাওয়া উত্তম। বুরাইদা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আযহার দিন নামায আদায় না করে কিছু খেতেন না।” (হাসান হাদীস; তিরমিযী: হাদীস নং- ৫৪২, ইবনু মাজাহ: হাদীস নং- ১৭৫৬)
৩- নারী, শিশু ও ঋতুবতী মহিলার বের হওয়া: উম্মে আতিয়া (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “দুই ঈদের দিন আমাদের মধ্যকার ঋতুবতী মহিলা, পর্দানশীন সকলকে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা মুসল্লীদের জামায়াত ও তাদের দোয়ায় শরীক হবে, কিন্তু ঋতুবতীরা নামায থেকে বিরত থাকবে।” (বুখারী: হাদীস নং- ৩১৫, মুসলিম: হাদীস নং- ৮৯০) মহিলারা বের হওয়ার সময় সুগন্ধী ব্যবহার করবে না, সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় এমন পোশাক পরবে না, তারা পুরুষের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড়াবে না বরং তাদের থেকে আলাদা এক পাশে দাঁড়াবে।
৪- ঈদের নামাযের আগে বা পরে কোন নফল নামায আদায় করবে না; ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দুই রাকায়াত নামায আদায় করলেন, এর আগে বা পরে অন্য কোন নামায আদায় করলেন না। এ সময় বিলাল (রা.) তার সাথে ছিলেন।” (বুখারী: হাদীস নং- ৯৮৯, মুসলিম: হাদীস নং- ৮৮৪) যদি ঈদের নামায মসজিদে আদায় করা হয় তবে দুই রাকায়াত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করতে পারবে।
৫- উচ্চস্বরে অধিক পরিমাণ তাকবীর আদায় করা: আল্লাহর বাণী: “যাতে তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পুরণ করতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন তজ্জন্য আল্লাহর মহিমা বর্ণনা কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৫) শেষ রোযার দিন সুর্যাস্তের পর থেকে তাকবীর শুরু হবে এবং ইমাম নামাযের জন্য বের হওয়ার আগ পর্যন্ত চলবে।
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদে বের হতেন উচ্চস্বরে কালিমা ও তাকবীর পাঠ করতে করতে।” (বায়হাকী: আল-কুবরা, ৩/২৭৯) ইবনু উমর (রা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন সকালে ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে এসে ইমাম মিম্বরে উঠার আগ পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবীর আদায় করতেন। (সহীহ দারে কুতনী: ১৮০) ইমাম আহমদ বলেন: বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় হতে শুরু করে ঈদগাহে আসার আগ পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবীর আদায় করতে হবে।
৬- যাতয়াতের পথ আলাদা হওয়া: জাবির (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন রাস্তা পরিবর্তন করতেন।
৭- গোসল করা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া, খুশবু লাগানো, মেসওয়াক করা ও সুন্দর পোশাক পরিধান করা। সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব (রহ.) বলতেন: “ঈদুল ফিতরের সুন্নাত তিনটি: ঈদগাহে যাওয়া, নামাযে বের হওয়ার আগে খাওয়া, গোসল করা।” নাফে’ (রহ.) বলেন: “ইবনু উমর (রা.) ঈদুল ফিতরের দিন গোসল করতেন ও সুগন্ধী লাগাতেন।” (আল-ফারআবী: আহকামুল ঈদাঈন, পৃ- ৮৩)
(বাস্সাম আল-গানিম প্রণীত আহকামুস্ সিয়াম ওয়া আদাবুস্ সায়েম গ্রন্থ থেকে)