কবরে নিষিদ্ধকর্ম সমূহ নিম্নরূপ–
১. কবর এক বিঘতের বেশি উচুঁ করা, পাকা ও চুনকাম করা, সমাধি সৌধ নির্মাণ করা, গায়ে নাম লেখা, কবরের উপরে বসা, কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ । (মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৯৬-৯৯)।
২. ধুয়ে মুছে সুন্দর করা, কবরে মসজিদ নির্মাণ করা, সেখানে মেলা বসানো, ওরস করা ও কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করা নিষিদ্ধ ।(মুসলিম, মিশকাত হা/৭১৩; নাসাঈ, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৯২৬; ফিকহুস সুন্নাহ ১/২৯৫)।
৩. কবরের নিকট গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি যবেহ করা। জাহেলী যুগে দানশীল ও নেককার ব্যক্তিদের কবরের পাশে এগুলি করা হতো।(আবু দাউদ হা/৩২২২; আহমাদ হা/১৩০৫৫, সিলসিলা সহীহাহ হা/২৪৩৬)।
৪. কবরে ফুল দেওয়া, গেলাফ চড়ানো, শামিয়ানা টাঙ্গানো ইত্যাদি।(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯৫)।রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে ইট, পাথর ও মাটি ইত্যাদিকে কাপড় পরিধান করাতে নির্দেশ দেননি।(মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯৪ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২, ‘ছবি সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪; )।
এগুলো স্পষ্টভাবে কবর পূজার শামিল। রাসূলুল্লাহ(ছাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি কোন মূর্তিকে ছেড় না নিশ্চিহৃ না করা পর্যন্ত এবং কোন উঁচু কবরকে ছেড় না মাটি সমান না করা পর্যন্ত’। {মুসলিম হা/৯৬৯; ঐ, মিশকাত হা/১৯৯৬ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘মৃতের দাফন’ অনুচ্ছেদ-৬; }।
৫- রাসূলুল্লাহ প্রার্থনা করেছেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে ইবাদতের স্থানে পরিণত করো না। আল্লাহর গযব কঠোরতর হয় ঐ জাতির উপরে, যারা তাদের নবীর কবরকে সিজদাহর স্থানে পরিণত করে’। (মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৭৫০, ‘সালাত’-অধ্যায়-৪, মসজিদ ও সালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭)।
৬- আজকাল কবরকে ‘মাযার’ বলা হচ্ছে। যার অর্থ: পবিত্র সফরের স্থান। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলে গেছেন, ‘(নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে) তিনটি স্থান ব্যতীত সফর করা যাবে না, মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্বছা ও আমার এই মসজিদ’। (ম্ত্তুাফাক ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯৩, ‘মসজিদ ও সালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭)।
তিনি তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা আমার কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করো না’।(নাসাঈ, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৯২৬, ‘রাসূল (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ’অনুচ্ছেদ-১৬)।
৭- মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তিনি উম্মতকে সাবধান করে বলেন, ‘সাবধান! তোমরা কবর সমূহকে সিজদাহর স্থানে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে যাচ্ছি।(মুসলিম হা/১২১৬, মিশকাত হা/৭১৩, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, আলবানী, )।
৮- কবরে মসজিদ নির্মাণকারী ও সেখানে মৃত ব্যক্তির ছবি, মূতি ও প্রতিকৃতি স্থাপনকারীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকটে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসাবে গণ্য হবে’।
(বুখারী হা/১৩৪১; মুসলিম হা/১২০৯)।
৯- কবরের বদলে কোন গৃহে বা রাস্তার ধারে বা কোন বিশেষ স্থানে মৃতের পূর্ণদেহী বা আবক্ষ প্রতিকৃতি নির্মাণ করে বা স্মৃতিচিহৃ স্থাপন করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা ও নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা পরিষ্কারভাবে মূর্তিপূজার শামিল। যা স্পষ্ট শিরক এবং যা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। (আবু দাউদ হা/৪১৫৮।)
মাইয়েতের অভিভাকের জন্য সুন্নাত হলো কবরকে পাথর ইত্যাদি দ্বারা চিহ্নিত করে রাখা; যাতে করে পরবর্তীতে তার পরিবারের কেউ মারা গেলে তার পার্শ্বে দাফন করতে পারে এবং তার দ্বারা তার মাইয়েতের কবরকে চিনতে পারে। রাসূল(ছাঃ),সাহাবী উসমান ইবনে মাজউন (রাঃ)- এর কবরের উপর চিহৃ স্থাপন করেছিলেন।(আবুদাউদ হা/৩১৯২; শায়খ ইবনে বায, জানাযার বিধান, বঙ্গ:)।