আমাদের সকলের জীবনেই অনুসরণীয় বা অনুকরণীয় কেউ না কেউ আছেন যার ব্যক্তিত্ত্ব, আচরণ, কথাবার্তা আমাদের মনে গভীরভাবে ছাপ ফেলে যায়। কিন্তু কখনো চিন্তা করে দেখেছেন কি, তাঁরা কিভাবে সবার প্রিয় হয়ে উঠলেন?
লক্ষ্য করে দেখুন, তাঁরা কেউ কিন্তু নিজের সুন্দর চেহারার জন্য আপনার কাছে প্রিয় নন, বরং এই প্রিয় হবার পেছনে আছে গুরুত্বপূর্ণ একটা কারণ। তাঁরা সকলের কাছে প্রিয় হবার কারণ হলো তাদের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। আর নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারলে তাঁদের মতন আপনিও হয়ে উঠতে পারেন সবার আকাঙ্খিত।
তবে প্রথমেই মনে রাখবেন, সবার আকাঙ্খিত হতে চাইলে আপনাকে হতে হবে একজন ভালো মানুষ। তারপর আসবে অন্য সব দিক। আসুন নিজের ব্যক্তিত্ত্বকে বিকাশ করতে কি করা যেতে পারে তা জেনে নেই।
১) নিজের একটি সুন্দর ও পৃথক ব্যক্তিত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করুন। কারো অনুকরণ করে নয়, বরং সবাই যেন আপনাকে অনুসরণ করতে চায় সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। আর এই জন্য, আপনি যেমন আছেন তেমন থাকারই চেষ্টা করুন। জোর করে কোনও কিছু নিজের ওপরে আরোপ করতে যাবেন না।
২) যখন যে কাজটি করছেন তখন শুধু সেই কাজেই মনোযোগ দিন। অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে যখন আছেন তখন সেখানেই মনোযোগ ধরে রাখুন, আবার যখন পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে আছেন তখন তাদের সাথেই সময় কাটান। এভাবে আপনি নিজের শতভাগ ব্যবহার করতে পারবেন।
৩) মানুষ হিসেবে যে সম্মানটা আপনি অন্যদের কাছ হতে আশা করেন, ঠিক তেমনই অন্যদেরকে সম্মান দিতে শিখুন। বড়দের করুন শ্রদ্ধা আর ছোটদের দিন স্নেহ।
৪) আপনার চাইতে নিচের পদের লোকদের সাথে যথাযথ আদবের সাথেই কথা বলুন। একজন ব্যক্তি রিকশা চালায় বলেই তাকে তুই করে বলতে হবে, বা বাসার কাজের মানুষটি আপনার থেকে বয়সে বড় হলেও কাজের মানুষ হয়েছেন বিধায় তাঁকে অপমান করে কথা বলার অধিকার আপনি রাখেন না। যিনি নিজের চাইতে ছোট পদের মানুষদের সাথে ভালো আচরণ করতে পারেন না, তিনি কোনোদিনই একজন ভালো মানুষ হতে পারেন না। এবং সকলের নিকট জনপ্রিয়ও হওয়া সম্ভব না।
৫) অন্য ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে দৃঢ়ভাবে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, আপনার নিজেরও ব্যক্তিগত একটি জীবন আছে যেখানে অন্যলোকের হস্তক্ষেপ আপনার পছন্দ হবেনা। যদি তাই হয় তবে অন্যের ব্যাপারে কেন নাক গলাতে যাবেন?
৬) সব সময় “ফরমাল” বা খুব দামী পোশাক পরে সেজেগুজে থাকলেই স্মার্টনেস আসবে তা নয়, তবে একদম অপরিষ্কার থাকলেও তো চলবে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকার চেষ্টা করুন। আপনার শরীরের দুর্গন্ধে যদি অন্য কারো সমস্যা হয় তবে তা তো আপনাকে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরবে না। পোশাক যেমনি হোক, তা যেন পরিপাটি আর পরিছন্ন হয় সেটাই খেয়াল রাখবেন।
৭) অপ্রয়োজনীয় ও ফালতু কথা বলবেন না এবং অন্যদেরকেও বলতে উৎসাহিত করবেন না। বেশি কথা বলাই স্মার্টনেস এর লক্ষন নয়, বরং পরিস্থিতি মোতাবেক প্রয়োজনীয় কিন্তু জোরদার কথা বলুন। অপ্রাসঙ্গিক কথা বা মন্তব্য জীবনের সব ক্ষেত্রেই আপনার ব্যক্তিত্বকে খাটো করে। এমনকি লক্ষ্য করে দেখবেন যে একটি অপ্রাসঙ্গিক ফেসবুক কমেন্ট পর্যন্ত আপনাকে কতটা খেলো করে ফেলে অন্যের চোখে।
৮) সব কিছুই করলেন পরামর্শ মতন, কিন্তু দিন শেষে যদি আপনার মাঝে নিজেকে নিয়ে যদি প্রশ্ন রয়ে যায়, তাহলে আর নিজেকে স্মার্ট হিসেবে তৈরি করবেন কিভাবে? তাই অতি অবশ্যই নিজের উপরে বিশ্বাস আনুন। আপনি আত্মবিশ্বাসী না হলে তো অন্যরাও তো আপনার প্রতি আস্থা আনতে পারবে না, তাই না? আত্মবিশ্বাসী মানুষের আলাদাই একটি ব্যক্তিত্বের ছটা থাকে।
৯) নিজেকে ব্যক্তিত্ববান দেখাতে গিয়ে আবার অতিরিক্ত ভাব বা মুড দেখাতে যাবেন না যেন। অতিরিক্ত ভাব দেখালেই কেউ স্মার্ট হয়ে যায়না, বরং স্মার্টনেস কমিয়েই দেয় আপনার আলগা এই ভাব।
১০) রপ্ত করুন সুন্দর করে কথা বলার অভ্যাস। আপনি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বললে যে কেউ আপনার কথার মূল্য দিতে বাধ্য। সেই সাথে ঘরের বাইরে এড়িয়ে চলুন আঞ্চলিকতাকে। কথা বলার সময় সরল সহজভাবেই কথা বলুন, বাঁকা কথা বা অতিরিক্ত জটিল কথা বলে নিজেকে স্মার্ট প্রমাণ করতে চাইলে বোকা বনে যাবার সম্ভাবনাই বেশি। আর অবশ্যই সকলকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।
১১) কথা বলার সময় লোকদের মনোযোগী করার চেষ্টা করবেন এবং হাসি মুখে কথা বলার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার কথার প্রতি আপনার আস্থা প্রকাশ পাবে। এবং সামনের মানুষটিও আপনার ওপরে আস্থা খুঁজে পাবে।
১২) কথা বলার সময় সুন্দর সুন্দর শব্দ চয়ন করুন, এছাড়াও নিজের মাতৃভাষাকে ভালোভাবে জেনে শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করুন। অন্য ভাষাইয় কথা বলার আগে নিজের ভাষা সম্পর্কে জানুন। যে ব্যক্তি নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানেন না, তিনি কোনোদিনই একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ হতে পারেন না।
১৩) অপরের কৃতিত্বের জন্য প্রশংসা করতে শিখুন। তাদের অর্জনকে হিংসা করতে যাবেন না। অন্যকে কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিতে পারে কেবলই একজন সঠিক ব্যক্তিত্ববান মানুষ।
এই তো রইলো পরামর্শ, তবে পালন করার দায়িত্বটি কিন্তু আপনার। একটু চেষ্টা করেই দেখুন, খুব কঠিন কিছু কিন্তু নয়। কিন্তু এই ব্যাপার গুলোই আপনাকে করে তুলবে আরও আকর্ষণীয় ও ব্যক্তিত্ববান একজন মানুষ।