কুরআন সঠিকভাবে বুঝার জন্য কুরআন গবেষণার সঠিক নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। নিম্নে সে সব নিয়ম-নীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরছি।
১. কুরআন বুঝার সহজ পথ অনুসরণ। এ পথটির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে :
এক : কুরআনের তাফসীর প্রথমত কুরআন দিয়ে করা, তারপর সুন্নাহ দিয়ে এবং তারপর সাহাবাগণের বক্তব্যের মাধ্যমে। তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল কুরআন দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা করা। যদি কেউ কুরআনকে বিশুদ্ধরূপে বুঝতে চায় তাহলে তার উচিত সামগ্রিকভাবে কুরআনের প্রতি দৃষ্টি দেয়া এবং পুরো আয়াতের পূর্বাপর বক্তব্যের প্রতি খেয়াল রাখা। পাশাপাশি অন্য সূরায় যদি একই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত আয়াত থাকে তাহলে সে আয়াতের অর্থ কি তা জেনে নেয়া। যদি কোন আয়াতে বক্তব্য অস্পষ্ট থাকে তাহলে অন্য আয়াতে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে, যদি কোথাও বক্তব্য সংক্ষিপ্ত থাকে তাহলে অন্যত্র বিস্তারিত বক্তব্য থাকবে। যারা কুরআনের কিছু অংশ গ্রহণ করে এবং কিছু অংশ বাদ দেয় আল্লাহ কুরআনে তাদের নিন্দা করেছেন,
﴿أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ﴾
‘‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর?’’ (সূরা আল-বাকারাহ :৮৫)
﴿فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ﴾
‘‘সুতরাং যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে।(সূরা আলে-‘ইমরান : ৭)
কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীরের উদাহরণ : আল্লাহর বাণী,
﴿وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكاً ﴾
‘‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন।’ (সূরা ত্বহা : ১২৩)
এখানে ‘আল্লাহর স্মরণ’ দ্বারা উদ্দেশ্য কি কুরআন, নাকি আল্লাহ যে সব কিতাব নাযিল করেছেন সেগুলো, অথবা তাসবীহ তাহলীলের মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ?
আমরা যদি আয়াতটির পূর্বাপর বক্তব্যের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে বুঝতে পারব যে, ‘আল্লাহর যিকর বা স্মরণ’ দ্বারা এখানে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে, অন্যগুলো নয়; কেননা আল্লাহ বলেছেন,
﴿قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعاً بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدىً فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى (123) وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكاً وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى(124) قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيراً (125) قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى (126)﴾
‘‘তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয়েই জান্নাত হতে এক সাথে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত আসবে, তখন যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না’। ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, ‘হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন’? তিনি বলবেন, ‘এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী (কুরআন) এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল’।’’ (সূরা ত্বহা : ১২৩-১২৬)
এরপর আসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ দ্বারা কুরআনের ব্যাখ্যা দেয়ার বিষয়টি। স্বয়ং আল্লাহই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সুন্নার মাধ্যমে কুরআনের ব্যাখ্যা দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছেন। আল্লাহ বলেন,
﴿وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ﴾
‘‘এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে আর যাতে তারা চিন্তা করে।’’ (সূরা আন-নাহল : ৪৪)
ইমাম শাফেয়ী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব হুকুম দিয়েছেন তার সবই তিনি কুরআন থেকে যা বুঝেছেন তার অন্তর্ভূক্ত। কেননা আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ وَلا تَكُنْ لِلْخَائِنِينَ خَصِيماً﴾
‘‘নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না।’’ (সূরা আন-নিসা : ১০৫)
﴿وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ وَهُدىً وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ﴾
‘‘আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এজন্য যে, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দেবে এবং এটি হিদায়াত ও রহমত সেই কওমের জন্য যারা ঈমান আনে।’’ (সূরা আন-নাহল : ৪৪)
কুরআন ও সুন্নাহ দিয়ে কুরআনের তাফসীর করা না গেলে সে ক্ষেত্রে কুরআনের তাফসীর করতে হবে সাহাবাগণের বক্তব্যের মাধ্যমে; কেননা তারাই কুরআন নাযিলের অবস্থা ও প্রেক্ষাপট সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন, যা অন্যরা করতে পারেনি। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থেকে তারা সঠিক ইলম, প্রজ্ঞা ও ইসলামের মূল মাকাসিদের জ্ঞান দ্বারা আলোকিত হয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা. বলেন, ‘ঐ সত্ত্বার শপথ যিনি ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য আর কেউ নেই, আল্লাহর কিতাবে যে আয়াতই নাযিল হত, আমি জানতাম সে আয়াতটি কার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে এবং কোথায় নাযিল হয়েছে। আমার চেয়েও কিতাবুল্লাহ সম্পর্কে বেশী জানে এমন কারো সন্ধান পেলে অবশ্যই আমি তার কাছে আসতাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এক ব্যক্তি যখন দশটি আয়াত শিখত, তিনি সেগুলোর অর্থ ভালভাবে হৃদয়াঙ্গম করা ও আমল করা ছাড়া সেগুলো অতিক্রম করে অন্য আয়াতের দিকে যেতেন না।’ (হাফিয ইবন কাসীর, )তারা ইলম ও আমলের মধ্যে চমৎকার সমন্বয় সাধন করেছিলেন।
দুই : আসবাবুন নুযূল তথা নাযিলের কারণ ও প্রেক্ষাপট জানা। আল-কুরআন মূলত আল্লাহর কালাম বা বক্তব্য, যার একটি শাব্দিক অর্থ রয়েছে। অনেক সময়ই সে শাব্দিক অর্থ বুঝার জন্য প্রয়োজন সার্বিক প্রেক্ষাপট ও যাদের উদ্দেশ্যে সম্বোধন তাদের বিষয়টি অবগত হওয়া। এটি জানা না থাকলে কুরআনের আয়াত নিয়ে মুসলিম মানসে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা ও সংশয়। বুকাইর নামক একজন আলেম প্রখ্যাত তাবেয়ী নাফে‘কে জিজ্ঞাসা করলেন, হারুরী সম্প্রদায় সম্পর্কে ইবন উমারের অভিমত কেমন ছিল? তিনি বললেন, তিনি তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্টির অধম বলে মনে করতেন; কেননা কাফিরদের ব্যাপারে নাযিলকৃত আয়াতসমূহকে তারা মুমিনদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করত।’
তিন : আরবী ভাষা জানা। কুরআন সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। অতএব যে সঠিকভাবে কুরআন বুঝতে চায় তাকে অবশ্যই আরবী ভাষা বুঝতে হবে। সাথে সাথে কথায়, কাজে ও কুরআন নাযিলের নানা প্রেক্ষাপটে আরবদের ‘আদাত ও প্রথার সাথে পরিচিত হতে হবে।
এ তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যদি আমরা এমন তাফসীর পেতে চাই যা আমাদেরকে কুরআন সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করবে, তাহলে আমাদেরকে এমন তাফসীর ও ব্যাখা গ্রন্থ চয়ন করতে হবে যাতে উক্ত তিনটি বিষয়ের প্রতি যথেষ্ঠ গুরুত্ব রয়েছে। এ ধরনের তাফসীর ও ব্যাখ্যা গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, হাফিয ইবন কাসীরের তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, শায়খ আবদুর রহমান আস-সা‘দীর তাইসীরুল কারীম আর-রাহমান, আবু বাকর আল-জাযায়েরীর আইসারুত তাফাসীর, আবুল আ‘লা মাওদুদীর তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ কুতুবের ফী যিলালিল কুরআন, ড. মুহাম্মাদ আল-আশকার এর যুবদাতুয তাফাসীর ইত্যাদি।
তাফসীর পড়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে অনেকের তাফসীরে কিছু কিছু ভুল রয়েছে, আবার অনেকের আকীদাগত বিভ্রান্তি আছে। এ সব ভুল ও বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
২. যা উপকারী ও সবার জন্য মঙ্গলজনক কুরআন বুঝা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবসময় তাতেই নিজেকে সম্পৃক্ত ও নিয়োজিত রাখতে হবে। আর যা উপকারী ও প্রয়োজনীয় নয় তা এড়িয়ে যেতে হবে। আল্লাহ নিজেও মানুষের নানা অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে উত্তরে এমন বিষয় সমূহ তুলে ধরেছেন যা মানুষের জন্য কল্যাণকর। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাই আমরা নিম্নোক্ত আয়াতটিতে। আল্লাহ বলেন,
﴿يَسْأَلونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ ظُهُورِهَا وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَى وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
‘‘তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, ‘তা মানুষের ও হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক’। আর ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করবে। কিন্তু ভাল কাজ হল, যে তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা গৃহসমূহে তার দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৯)
এ আয়াতটিতে লোকেরা চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। হয়তো তারা জানতে চেয়েছে চাঁদটা শুরুতে কেন ছোট থাকে তারপর বড় হয়, অথবা চাঁদের হাকীকত কি কিংবা চাঁদের উপকারিতা কি ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ সরাসরি তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন যা জানার মাধ্যমে সবাই উপকৃত হয়। এমন উদাহরণ কুরআনে আরো অনেক আছে। মোদ্দাকথা হল, কুরআনের বর্ণনার বাইরে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের বিস্তারিত বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই, কুরআন বুঝার সময় এ কথাটিও মনে রাখতে হবে।।
৩. কুরআনের বাণী তিলাওয়াতের সাথে সাথে এর অর্থ বুঝা ও তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় নিয়োজিত হওয়া এবং অন্তরকে সে অর্থ দ্বারা প্রভাবিত করা। অতএব কুরআন শুধু তিলাওয়াত করলেই হবে না, বরং এতে যে নির্দেশ ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সেগুলো গ্রহণ করতে হবে এবং আমল করতে হবে আর মানার ক্ষেত্রে ত্রুটি হলে ইস্তেগফার করতে হবে।
যখন রহমতের আয়াত পড়বে তখন হৃদয়ে আনন্দের শিহরণ সৃষ্টি করে মনে মনে প্রভুর কাছে তা পাওয়ার প্রার্থনা করবে। আবার আযাবের আয়াত পড়লে যেন মনে ভীতির সঞ্চার হয় এবং আল্লাহর কাছে তা থেকে পানাহ চাইবে। এভাবেই স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা. করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৯১)
৪. কুরআনের মৌলিক মাকাসিদ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে রাখা, যা কুরআনিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এবং যা কুরআনে পৌনপুনিকভাবে এসেছে। যেমন কুরআন সবচেয়ে বেশী আলোচনা করেছে ও গুরুত্ব দিয়েছে তাওহীদের বাস্তবায়ন, শির্ককে প্রত্যাখ্যান, ঈমান ও ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের উপর। অতএব এগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা রেখেই কুরআন বুঝার চেষ্টা করতে হবে।
৫. আল্লাহর সুন্র নামগুলো এবং যে সকল আয়াতে সেগুলো এসেছে এতদুভয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন ও সমন্বয় সাধন। অনেক সময় দেখা যায় আয়াত শেষ হয় আল্লাহর কোন একটি নাম দিয়ে। মনে রাখতে হবে আল্লাহর ঐ বিশেষ নাম আয়াতের শেষে উল্লেখ করার একটাSignificance আছে যেমন রহমতের আয়াত শেষ করা হয় আল্লাহর রহমতসূচক নাম দিয়ে, আবার আযাব ও শাস্তির আয়াতগুলো শেষ হয় শক্তি, ক্ষমতা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কর্তৃত্বসূচক নাম দ্বারা। আরো বেশী সতর্ক থাকতে হবে যাতে আল্লাহর গুণবাচক কোন নামকে তার প্রকৃত অর্থ থেকে তাবীল করা না হয়।
৬. আয়াতের প্রাসঙ্গিক ও আনুষাঙ্গিক অর্থ সহ আয়াতকে বুঝতে হবে অর্থাৎ যে সব বিষয়ের উপর আয়াতের অর্থ বুঝা নির্ভরশীল সেগুলো সহ আয়াতটিকে বুঝার চেষ্টা করতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ﴾
‘‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)।’’( সূরা আল-মায়িদাহ : ৬)
এখানে অযুর ফরযিয়াতের কথা বলা হয়েছে। তবে জানা কথা অযুর জন্য পানি দরকার, সে পানি অর্জনের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা প্রয়োজন। অতএব অযু করার জন্য যত কাজের প্রয়োজন সবকিছু এ নির্দেশটির অন্তর্ভূক্ত হবে।
৭. বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সাম্প্রতিক কালের আবিষ্কারের বিষয়গুলোকে কুরআনের বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সঙ্গতিপূর্ণ করা। তবে সতর্ক থাকতে হবে যে কুরআন বৈজ্ঞানিক তথ্য দেয়ার জন্য নাযিল করা হয়নি। সুতরাং সকল বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ভান্ডার এটি নয়। আর এ বিশ্বাসও জরুরী যে, কুরআনের সকল বৈজ্ঞানিক তথ্যই সঠিক। তবে সমস্যার সৃষ্টি হয় যখন বৈজ্ঞানিক Facts নয় এমন বিষয়গুলোকে বিজ্ঞানের বিষয় মনে করে আমরা কুরআনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হই। এক্ষেত্রে পাঠকের কাছে কুরআন ও বিজ্ঞানের মধ্যে Contradiction আছে বলে মনে হতে পারে এবং এ জন্য পাঠকের অসতর্কতাই দায়ী। কুরআনে মহাসত্যের বিপরীত কিছু নেই। বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে আমাদের কুরআন বুঝার চেষ্টা করতে হবে।
পরিশেষে বলবো, কুরআন বুঝা সহজ; কেননা আল্লাহই তা আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু কুরআন বুঝার সঠিক পদ্ধতি আমাদের অনুসরণ করতে হবে। সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ ছাড়া যে যার মত কুরআন বুঝার চেষ্টা করলে পদস্খলন অনিবার্য। আল্লাহ আমাদেরকে সকল ভুল বিভ্রান্তি হতে মুক্ত থেকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন বুঝার ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের তাওফীক দান করুন