Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

কুরআনের আলোচ্য বিষয়

কুরআন তেলাওয়াত

কুরআন তেলাওয়াত

ক) কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়ঃ

মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণের সঠিক পথনির্দেশঃ

এ কেন্দ্রীয় বিষয়কে নিতিবাচক ও ইতিবাচক বিষয়ে ভাগ করা যায় । গোটা কুরআনে একদিকে মানুষকে ভুল পথ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে ; অপরদিকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়া হয়েছেঃ

খ) নেতিবাচক বিষয়ঃ

১. বালষ্ঠ যুক্তি দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে নির্ভুল জ্ঞানের অভাবেই মানুষ জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য বুঝতে পারে না।

২. স্থুল দৃষ্টি, অমূলক ধারণা ও প্রচলিত কুসংস্কারের দরুন মানুষ বিশ্বের স্রষ্টা ও বিশ্বজগত সম্পর্কে এমনসব মতবাদ রচনা করেছে যা মানব জীবনে অশান্তিই বৃদ্ধি করে চলেছে।

৩. বিবেকের দাবী ও নৈতিকতার বন্ধন অগ্রাহ্য করে প্রবৃত্তির দাসত্ব ও ভোগবাদী মনোবৃত্তির দরুন মানুষ নিজের সত্তার সঠিক পরিচয় সম্পর্কে ও সচেতন নয়।

৪. উপরোক্ত কারণে জগত ও জীবন সম্পর্কে বহু অযৌক্তিক ধারনার ভিত্তিতে মানুষ ভ্রান্ত আচরণ ও মন্দ কর্মে লিপ্ত রয়েছে।

৫. মানবজাতির অতীত ইতিহাস থেকে উদাহরন দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে , আল্লাহর বিধানকে অগ্রাহ্য করে মনগড়া মত ও পথে চলার ফলেই মানুষ যুগে যুগে ধ্বংস হয়েছে ।

গ) ইতিবাচক দিক দিয়ে আলোচনার ধারা নিম্নরূপঃ

১. নির্ভুল জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটই আছে। মানুষ ও বিশ্বজগত যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর কাছ থেকেই বিশুদ্ধ জ্ঞান পাওয়া সম্ভব।

২. অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞান যে আল্লাহর নিকট চির বর্তমান তিনিই মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম ।

৩. মানুষকে দুনিয়ায় সঠিকভাবে জীবন-যাপন করে আখিরাতে চির শান্তি লাভ করার একমাত্র উপায়ই হলো আল্লাহর রাসূলগণকে পূর্ণরূপে অনুসরণ করা।

৪. মানুষের চিন্তা ও কর্মের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথনির্দেশকই হলো দ্বীন ইসলাম ।

৫. দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি পেতে হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যই একমাত্র উপায়।

ঘ) উপরোক্ত কেন্দ্রীয় বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে যেসব বিষয় কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে ,তার মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিশেষ উল্লেখযোগ্যঃ

১. পৃথিবী ও আকাশ রাজ্যের গঠন প্রকৃতি , প্রাকৃতির অগণিত নিদর্শন এবং চন্দ্র -সূর্য , গ্রহ-তারা এবং বায়ু ও বৃষ্টি ইত্যাদির প্রতি বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ভূগোল ও বিজ্ঞান শেখাবার উদ্দেশ্যে এসব আলোচনা করা হয়নি । এসবের পেছনে যে মহাকুশলী স্রষ্টা রয়েছেন এবং তিনি যে এসব বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি সে কথা বুঝাবার জন্যই অতি আকর্ষণীয় ভাষা ও ভঙ্গিতে সমস্ত কুরআনে এ বিষয়ে বারবার আলোচনা করা হয়েছে।

২. মানুষের প্রয়োজনে আল্লাহ পাক যত কিছু পয়দা করেছেন —বিশেষ করে খাদ্য ও পানীয় , গৃহপালিত পশু ,ফল ও ফসলাদী সম্পর্কে বারবার উল্লেখ করে চিন্তা করতে বাধ্য করা হয়েছে যে ,আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষে এসবের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় এবং এসব ছাড়া মানুষ দুনিয়ায় একদিন ও বেঁচে থাকতে পারতো না । তাই একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করাই মানুষের কর্তব্য ।

উপরোক্ত দু প্রকার বিষয়কে এক সাথে ‘আফাক ’ বা প্রকৃতি জগত বলা হয় । গোটা সৃষ্টি জগতই এর অর্ন্তভুক্ত। ‘উফুক ’ এর বহুবচন আফাক। উফুক অর্থ দিগন্ত (Horizon)

৩. “আফাক”-এর আলোচনার পাশাপাশি ‘আনফুস’-এর আলোচনা করা হয়েছে ‘আনফুস’ অর্থ মানব জীবন বা মানবসত্তা। আল্লাহ পাক কুরআনে বহু জায়গায় মানুষকে কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এর বিবরণ দিয়েছেন। মানুষের দেহ ও বিভিন্ন অংগপ্রত্যঙ্গ নিয়ে যথেষ্ট কথা বলা হয়েছে। মানুষকে আত্মসচেতন করার উদ্দেশ্যেই এবং তার স্রষ্টাকে চিনে তার প্রতি কৃতজ্ঞ বানাবার উদ্দেশ্যেই এ বিষয়ের দিকে মানুষের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে।

৪. মানব জাতির ইতিহাস থেকে বহু জাতির উথান ও পতন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ আলোচনা এমনভাবে করা হয়নি যেমন ইতিহাসের বইতে করা হয় । অতীত জাতিগুলোর থেকে উপদেশ গ্রহণ করার উদ্দেশ্যেই এ আলোচনা করা হয়েছে । এ প্রসঙ্গে বিশেষ করে অতীতে যেসব নবী ও রাসূল পাঠানো হয়েছে তাদের কাওমের উল্লেখ করে প্রমাণ করা হয়েছে যে ,আল্লাহর রাসূলগণের সাথে যারা যে আচরণ করেছে তাদের সাথে আল্লাহ সে রকম ব্যবহারই করেছেন। যেসব জাতি রাসূলগণকে অস্বীকার করেছে তাদের উপর আল্লাহ অবশ্যই গযব নাযিল করেছেন। মানব জাতির উন্নতি ও অবনতি যে রাসূলের আনুগত্যের উপর নির্ভর করে সে কথা প্রমাণ করাই ইতিহাস আলোচনার উদ্দেশ্য।

৫. কুরআনের বহু জায়গায় কতকগুলো বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করে দু’রকম বিপরীত জিনিসের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করে দু’রকম বিপরীতে জিনিসের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানেই বেহেশতের বিবরণ দেয়া হয়েছে সেখানেই দোযখের চিত্রও আঁকা হয়েছে। সৎলোকের গুনাবলী বর্ণনা করার সাথে সাথেই অসৎলোকের বিবরণও দেয়া হয়েছে । মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আল্লাহর নাফরমানদের চরিত্রও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সফলতা লাভের উপায় বলার সাথে বিফলতার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। বেহেশতের সুখের আকর্ষণীয় বিবরণের পাশে দোযখের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। হাশরে নেক লোকদের অবস্থার পাশে বদলোকদের দশাও বর্ণনা করা হয়েছে। এভাবে কুরআনে বিপরীতমুখী ,(Contrast) চিত্রের মাধ্যমে মানুষকে কল্যাণের পথে আহবান জানানো হয়েছে।

ঙ) কুরআনের সবচেয়ে বেশী আলোচিত বিষয়ঃ

১. আল্লাহর পরিচয় কয়েক আয়াতের পর পরই আল্লাহর কোন না কোন গুণের উল্লেখ পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও এক সাথেই আল্লাহর অনেক গুণের উল্লেখ করা হয়েছে।

২. রাসূল ও নবীদের পরিচয় , মর্যাদা , দায়িত্ব ও কর্তব্য।

৩. আখিরাতের যুক্তি, সম্ভাবনা ও বিবরণ।

Related Post