Main Menu

ক্যান্সার হতে বাঁচার উপায়

ক্যান্সার হতে বাঁচার উপায়

ক্যান্সার হতে বাঁচার উপায়

ডাক্তার আব্দুল মালেক
ক্যান্সার এইডস গোটা মানব জাতির জন্য আজ এক মহাঅভিশাপ। এইডস অবশ্য আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে না- কিন্তু ক্যান্সার শতকরা চল্লিশভাগ রোগী এখন মারা যাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানী বন্ধুদের আন্তরিকতা ও মানবপ্রেম থাকা সত্ত্বেও কেন আমাদের উপর এ অভিশাপ তা কি জানা বা বোঝার প্রয়োজন নেই? চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কেমো-থেরাপী, রেডিও-থেরাপী- যত চিকিৎসা কৌশল বা প্রযুক্তি মানব সমাজকে উপহার দেওয়া হচ্ছে রোগীর মৃত্যুকে তত দ্রুত যেন এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তাই এক সুরে আওয়াজ তুলছেন: ‘ক্যান্সার হ্যাজ নো আন্সার’ – অর্থাৎ  ক্যান্সার হয়ে গেলে তার কোন চিকিৎসা নেই।
ক্যান্সার কি? ক্যান্সার কেন হয়- কারণ কি? ক্যান্সারের আরোগ্যকারী ওষুধ বা ক্যান্সার না হওয়ার জন্য তার কি কোন প্রতিষেধক নেই? এ নিয়ে আজকার এই কটি কথা। ক্যান্সার যাতে না হয়- হলেও রোগীকে যাতে বাঁচানো যায়, তার জন্য সাধারণ মানুষকে রোগী বা রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে, রোগীর চিকিৎসককে মৌলিক কথাগুলো জানতে হবে- অন্যথায় চিকিৎসার জৌলুস দিয়ে, রোগীর টাকার প্রাচুর্য দিয়ে রোগীকে বাঁচানো যায় না। সাধারণ মানুষকেও বেহুদা অর্থের অপচয় করে পুষ্টিকর খাদ্য খেয়ে আর দামী দামী ওষুধ সেবন করে মৌলিক তত্ত্ব না পেলে ক্যান্সারের হাতে থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।
বিভিন্ন রোগের পরিণতিতে যখন আর রোগ নির্ণয় হয় না- কোন ওষুধ নির্বাচনের লক্ষণও পাওয়া যায় না, যখনই ঐ যন্ত্রণাবহুল অবস্থাকে ক্যান্সার বলা হয়।
ক্যান্সার কি?
বংশগত কারণে অথবা অর্জিত রোগের জন্য- হাইয়ার এন্টিবাইওটিক এর অসম্পূর্ণ চিকিৎসা, হাতুড়ে বা চাপা দেওয়ার চিকিৎসার কুফল হিসেবে, বিবিধ রোগের পরিণতিতে মানসিক অশান্তি, অস্বস্তির ফলে ঘুম, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি অনিয়ম শরীরের জীবকোষগুলো এলোপাথাড়িভাবে জড় হতে থাকে, বহুদিন ধরে যে অঙ্গে যিনি বেশি দুর্বল সে অঙ্গেই জীবনকোষ জড় হতে থাকলে অর্বুদ বা টিউমার গঠিত হয়। টিউমার দিন দিন বেড়েই চলে- টিউমার বাড়ার সাথে সাথে তাদের মন ও শরীর দিন দিন ক্রমশ অবনতির দিকে যেতে থাকে এবং জীবনীশক্তি লয় পেতে থাকে এবং টিউমারে আস্তে আস্তে বেদনা এবং জ্বালা যন্ত্রণা দেখা দিতে থাকে। এমন অবস্থায় যদি কেউ টিউমারের ব্যথা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সার্জনের চাকু বা চিকিৎসকের ‘কেমো-থেরাপী’ বা ‘রেডিও-থেরাপী’র আশ্রয় নেন- হয়ত সাময়িকভাবে জ্বালা যন্ত্রণা ব্যথা-বেদনা কমতে পারে- কিন্তু টিউমার অবস্থায় যে কোষগুলো এলোমেলো জট বেঁধেছিল তা ঐ যান্ত্রিক নিপীড়নে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সমস্ত শরীর তখন ক্যান্সার কোষ ভর্তি হয়ে যায়। লয়-প্রাপ্ত জীবনীশক্তি তখন আর জীবকোষকে তাজা রাখতে সক্ষম হয় না। দেহে জীবনীশক্তি হারিয়ে প্রাণ-শক্তিকে আর ধরে রাখতে পারে না।
পূর্বেই বলেছি যে, অঙ্গ যার যত বেশি দুর্বল- জীবনীশক্তি সে অঙ্গে পরাজিত হয়ে তার সম্পর্ক ছেড়ে দেয় এবং সে অঙ্গে অংশে ক্যান্সার হয়েছে বলে অভিহিত করা হয় বিভিন্ন নামে- কাসিনোমা, এমনগোমা, ফিব্রোমা, অটিওমা, লিপোমা, ষ্টিওটোসা, ময়োমা, সারকোমা, সিস্টোমা, এসেরোমা ইত্যাদি। গলায় বা কণ্ঠে যে দুর্বল-একটুকুতেই যার টনসিল ফুলে উঠে, একটুকুতেই যার স্বর বসে যায়- তার ফেরিংগাইটিস হতে পারে- অনিয়ম ও বংশগত বা অর্জিত দোষ প্রবল হলে ক্যান্সারও হতে পারে। এভাবে লিভারে হলে ‘সিরোসিস অব লিভার, হাড়ে ক্ষয় দেখা দিলে ওষ্টিওমা, লান্সে, স্তনে, জিহ্বাতে, ঠোঁটে, ব্রেনে- সর্বতোভাবে যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিভিন্ন নামে দেখা দিতে পারে। নামে আসে যায় না- স্মরণ রাখতে হবে জীবনীশক্তির সঙ্গে ঐ অঙ্গের বিচ্ছিন্নতা আরম্ভ হয়ে যায়।
ক্যান্সারের কারণ: ক্যান্সার বা যে কোন জটিল রোগের কারণ চিন্তা করলে এ দুনিয়ার সৃষ্টি-তত্ত্বের সূক্ষ্মতম তত্ত্ব ভেসে ওঠে। কোন কিছুর আদি বা অন্ত নেই। সবই যে বীজাঙ্কুরের মত বীজ হতে বৃক্ষ, আবার বৃক্ষ হতেও বীজ। কে কার কারণ কেউ তা জানে না। যেমন মেঘ হতে বৃষ্টি, আবার বৃষ্টির পানি গড়িয়ে সাগরে- সাগরের পানি পাষ্পকারে মেঘ। মন পঙ্কিল দোষের সৃষ্টি হয়- আবার দোষই মনে পঙ্কিলতা আনে। এভাবে চলছে চক্রাকারে দিন ও রাত। রাতের অন্ধকার না হলে দিনের আলোর কোন মূল্য নেই। সুখ-দুঃখ স্বাস্থ্য ও রোগ যন্ত্রণা। রোগ যন্ত্রণা আছে বলে স্বাস্থ্যের জন্য মানুষ এত হাহাকার। দুয়ের মধ্যে যে কোন একটার অনুপস্থিতিতে অন্যটার মূল্যবোধ হৃদয়ঙ্গম হয়। ক্যান্সারের কষ্ট-যাতনা এক ভয়াবহ অভিশাপ। এই ভয়াবহ অভিশাপ থেকে রেহাই পেতে, স্বাস্থ্য ফিরে পেতে সুখী সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে সত্যিকার আরোগ্য নীতির অনুসন্ধানে এ প্রায়াস। ৩৬/৩৭  বছর আগেও ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা খুব কম। এন্টিবাইওটিক ওষুধ, পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ ও ইনজেকশনের পূর্ব যুগে কান্সারের প্রায় নাম গন্ধই ছিল না। ম্যালেরিয়া, কালা জ্বর, টাইফয়েট, যক্ষা, গনেরিয়া, সিফিলিস, প্লেগ প্রভৃতি রোগ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে বীজাণু-বিধ্বংসী ওষুধ আবিষ্কারে দেশ হতে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে- খুব ভালো কথা কিন্তু মনে রাখতে হবে পীড়াগুলো তো আর মশা মাছি নয়, এমনি তাড়ালেই উড়ে গেলো- আর রোগী সেরে গেলো। মানুষের দেহটাই আসল মানুষ নয়- আসল মানুষ তার প্রাণবৃত্তি এবং জীবনশক্তি। মানব-শরীর দুভাগে ভাগ করা যায়- স্থূল দেহের যেমন রক্ত মাংস, তেমনি সূক্ষ্ম প্রাণবৃত্তিরও রয়েছে মন-মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা, দয়া-মায়া, প্রেম, ভালবাসা ইত্যাদি। মানুষ যখন পীড়িত হয় তখন তার প্রাণের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সমস্ত সূক্ষ্ম অনুভূতিও পীড়িত হয়। তাই মানুষের অন্তর বা অভ্যন্তরীণ অসুখ না সারিয়ে এই শরীর স্থূল শরীর বা দৈহিকভাবে সারালেই সারে না। বরঞ্চ নতুন নতুন রোগের হয় সৃষ্টি। ওষুধের চাপে প্রাণ ক্ষীণ হয়ে আসে জীবনশক্তি বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। প্রাণ ও জীবনশক্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু ওষুধের পর ওষুধ প্রয়োগে জীবনশক্তির বিশৃঙ্খলা এত চরমে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত প্রাণ শরীর থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়। এভাবে লক্ষ লক্ষ বনি আদম নীতিবার্জিত চিকিৎসার ফলে ওষুধ খেয়ে খেয়ে প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে। নীতিহীন ওষুধ প্রয়োগ ও সেবন ক্যান্সারের জন্ম দিচ্ছে। রোগীকে আরোগ্য করা চিকিৎসার উদ্দেশ্য। রোগীকে আরোগ্য না করে, জোর করে শুধু রোগ সারানো চিকিৎসার উদ্দেশ্য নয় এবং জাতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মতও নয়। বিজ্ঞান অর্থ যদি বিশেষ ও যুক্তিসম্মত বিশেষ জ্ঞান হয়, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের বোঝা উচিত প্রাণ ও দেহধারী মানুষের সূক্ষ্ম প্রাণের গুরুত্বই সবচাইতে বেশি। প্রাণ ও জীবনশক্তির সচেতনতা ও সজীবতা সৃষ্টিই আরোগ্যকলার কৌশল। সত্যিকার চিকিৎসা-বিজ্ঞানী বা আরোগ্য কৌশলীর সর্বদিক দিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বুঝতে হবে সহজ, সরল ও সুখকর উপায়ে রোগীর আরোগ্য সাধনই চিকিৎসকের আদর্শ ও চিকিৎসা জীবনের উদ্দেশ্য। রোগ শুধু সেরে গিয়ে, রোগী যদি নিঃশেষ হয়ে যায়- আরোগ্যের নামে রোগীকে দুরারোগ্য করে দেওয়া-কখনও যুক্তিসংগত এবং বিজ্ঞানসম্মত নয়। ওষুধ দিয়ে উপশম দেওয়াতে বাহবা মেলে, চিকিৎসককে লোকে ধন্য ধন্য করে, কিন্তু রোগী বা লোকজন কখনও জানে না যে ঐ মাথা বেদনার উপশমদায়ক ওষুধ এখন হার্টের রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং উপশমদায়ক ওষুধই রোগীর জীবনশক্তিকে ক্ষীণ করে দিচ্ছে। ক্ষুধা নিয়মিত লাগে না, কোষ্ঠ-কঠিন্য বা তরল পায়খানা প্রায় লেগেই থাকে। এভাবে একটার পর আর একটা, প্রত্যেকটাতে নতুন করে উপশম দেওয়ার জন্য গবেষণা ও ওষুধ সবটাই অবৈজ্ঞানিক। বিজ্ঞানী হয়ে সাময়িক উপশম ও শান্তির জন্য অবৈজ্ঞানিক পন্থায় ওষুধ প্রয়োগ নিশ্চয়ই মানবতাবিরোধী। এই মানবতাবিরোধী চক্র সারা পৃথিবীতে আজ জালবিস্তার করে অনেক অবৈধ কাজকেও বৈধ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। প্রচার প্রপাগাণ্ডা ও বিজ্ঞপ্তির জোরে অবৈধকে বৈধ করে নেওয়া হচ্ছে। রংবেরং ফ্যাশনে, নিত্য নতুন ফ্যাশনের জৌলুসে, সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগে উপশমদায়ক ওষুধ রোগীর উপর প্রয়োগ করে অপাতমধুর ক্রিয়া দ্বারা মানুষকে তাক লাগিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু তার মৌলিক রহস্য উদ্ঘাটন করলে দেখা যায়, রোগীর সত্যিকার আরোগ্যনীতিতে রোগ বা রোগ-দোষকে ভেতর হতে বাইরে আনা হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, পাকস্থলি, ফুসফুস ইত্যাদি হচ্ছে মানুষের ভিতরে এবং মাংসপেশী, ত্বক ইত্যাদি শরীরের বাইরে। ভেতরে শান্তি আসার ফলে যদি ঘুম ঠিকমত হয় এবং বাত বেদনা বা চর্মোপরি ফোঁড়া, ফোস্কা, চর্মোরোগ দেখা দেয় তা হলে সঙ্গতভাবে স্বীকার করতে হবে রোগী আরোগ্য লাভ করছে।
রোগ হলে প্রত্যেকটি মানুষ ভাবে তার চিকিৎসার প্রয়োজন কিন্তু চিকিৎসা ছাড়াও যে সব রোগ আরোগ্য হয় সে সব রোগী বংশগতভাবে নির্দোষ এবং পবিত্র জীবন -যাপনে তারা অভ্যস্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা হঠাৎ কোন বিপর্যয়ে যে সাময়িক অসুখ-বিসুখ, কষ্ট যন্ত্রণা তার জন্য সাময়িক উপশমদায়ক ওষুধ কোনও ক্ষতিকর কারণ ঘটায় না বরঞ্চ জীবনীশক্তির স্বাভাবিক আরোগ্যকারীশক্তিকে সাহয্য করে এবং রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।
প্রত্যেক মানুষেরই জীবনীশক্তির স্বাভাবিক একটা আরোগ্যকারী শক্তি আছে। সামান্য রৌদ্র লেগে মাথা ধরা, সামান্য ঠাণ্ডা লেগে সর্দি হাঁচি ইত্যাদি জীবনীশক্তির স্বাভাবিক আরোগ্যকারী শক্তি আরোগ্য করতে পারে অযথা বেশি বেশি ওষুধ দিয়ে স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে দেওয়ার ফলে যে মহাঅসুখ হয়, তার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন, নতুবা রোগীর জন্য আসে মহাবিপদ। তাই অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার চাইতে না খাওয়াই ভালো এবং সত্যিকার চিকিৎসকরেও অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ দেওয়ার না দেওয়া ভালো।
শরীরের সুস্থতার জন্য জীবন-শক্তি সর্ব উপায়ে মানুষের স্বাভাবিকতা রক্ষাকল্পে মানুষের হৃদপিণ্ড থেকে তার ত্বক বা অঙ্গুলির পরিধি পর্যন্ত একটা শৃঙ্খলা বজায় রাখে। একটা দেশ বা রাজ্যের যেভাবে কেন্দ্র বা রাজধানী থাকে, মানুষ ও তার দেহ রাজ্যের কেন্দ্র বা রাজধানী হলো তার হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্ক। ত্বক বা অঙ্গুলির পরিধি তার সীমান্ত। কেন্দ্র দ্বারা সবকিছু শাসিত হয়। মানুষের কেন্দ্র অর্থাৎ মস্তিষ্কে বা হৃদপিণ্ডে শৃঙ্খলা বোধ থাকলে শরীরের যাবতীয় অঙ্গ-প্রতঙ্গ বা ত্বক পর্যন্ত শৃঙ্খলাবোধ ও স্বাভাবিকতা বিরাজ করে। শৃঙ্খলাবোধ থাকলে তার মানবীয় গুণাবলী সম্পর্কে সে সচেতন ও সজাগ থাকে। তার শত্রু ষড়-রিপু (কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ মদ, মাৎসর্য) সম্পর্কে ওয়াকেফহাল থাকে। যে কোন কাজ-কর্ম সে ভেবেচিন্তে করে। মন তার শৃঙ্খলার রজ্জুতে আবদ্ধ থাকে। বিক্ষিপ্ততা, হটকারিতা, আবেগ-প্রবণতা, উত্তেজিত অবস্থা তার দমিত থাকে- তাই সে টেনশনে ভোগে না, ক্ষতি হলেও সে ভেঙ্গে যায় না, খুব লাভবান হলেও ভাবাবেগে উৎফুল্ল হয় না। হৃদপিণ্ডে সঠিক ক্রিয়াহেতু রক্ত সঞ্চালনে তার কোনও ব্যাঘাত হয় না। সব কিছুতে তার স্বাভাবিকতা বজায় থাকে। মানুষের মননধারা ও চিন্তাধারা অনুযায়ী তার কার্যধারও পরিচালিত হয়। মানুষের স্বাভাবিকতার মধ্যেই স্বাভাবিক কার্যধারা সংঘটিত হয়। সমগ্র দেহযন্ত্র সম্মিলিতভাবে মিলে যে শক্তি দ্বারা কাজ সম্পাদন করে – সেই শক্তির নাম জীবনীশক্তি। জীবনীশক্তি যে মৌলিক শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয় তার নাম প্রাণবৃত্তি। এই প্রাণবৃত্তি মানব দেহে আত্মশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে জীবনের পর আগামী জীবনের উদ্দেশ্যে এমন সুনিপুণভাবে তার দেহ-মনকে নিয়োজিত করে-যার জন্য পরম স্রষ্টা মুগ্ধ হয়ে এ দুনিয়াতে তাকে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব অর্পণ করেন। স্রষ্টার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যেসব গুণাবলীর প্রয়োজন স্রষ্টা মানুষকে তা পবিত্রতা ও স্বাভাবিকতার মধ্যে দিয়েছেন। আল্লাহর বিধান পবিত্র ও স্বাভাবিক। পবিত্র ও স্বাভাবিকভাবে চলায় পবিত্র আনন্দ নিয়ে মানুষ জীবনে সুখী হয় এবং দীর্ঘ জীবন যাপন করে। পবিত্র ও স্বাভাবিক জীবন যাপনে দাম্পত্য জীবন পবিত্র ও স্বাভাবিক হয়, ঔরসজাত সন্তানও সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়।
আজকার এই পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যত সব চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত আছে- তাতে হোমিওপ্যাথী পদ্ধতি নীতিগতভাবে উন্নত। অতীব দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় যে, হোমিওপ্যাথদের দক্ষতার অভাবে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা অনেক পেছনে পড়ে আছে।
পেছনে পড়ে থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে দু’চার জন যা গবেষণা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে চিকিৎসা করছে তার ভিত্তিতেই জোর দিয়ে বলতে পারি যে, ক্যান্সার রোগীদের জন্য যদি বি এস এম এম ইউ-এর মত একটি হাসপাতাল আমাদের চিকিৎসাধীনে দেওয়া হয়, তাতে শতকরা আশিজন রোগীর আরোগ্যের আমরা আশা রাখি এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষেধক ব্যবস্থায় ৫ বছর পরে ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুসংখ্যা শতকরা পাঁচ-এ নেমে আসবে। আমার মতে সত্যিকার আরোগ্যনীতিতে ওষুধ প্রয়োগ করলে একবিংশ শতাব্দীতে ক্যান্সার পর্যায়ের রোগী আর দেখা যাবে না।

Related Post