চিন্তা ও গবেষণামূলক মনোভাব বিবেকবান মানুষের থাকা উচিত। প্রতিদিন আমাদের সামনে ছোট-বড়, সমান্য-অসামান্য, স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক যে অসংখ্য ঘটনা ঘটে যাচ্ছে এগুলোকে নিছক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করলে কিছুই শিার থাকে না। আমাদেরকে সব কিছু নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। ঘটনার অপকারিতা ও উপকারিতা নিয়ে ভাবতে হবে। ঘটনা থেকে শিা নিতে হবে। ঘটনা থেকে ভালো কিছু শিক্ষা নিয়ে সমাজের কল্যাণে এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত চিন্তা ও কল্যাণকর ভাবনা আমাদেরকে বিবেকবান উন্নত মানুষে পরিণত করতে পারে। তখন তার কর্মপুণ্যিতে পরিণত হয়ে থাকে। পান্তরে ভালো-মন্দ বিবেচনাবহির্ভূত খামখেয়ালিপনা কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এই শ্রেণীর মানুষ মন্দধারণা নিয়ে সমাজকে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্র“তা নির্ভর করে গড়ে তোলে। মন্দধারণার মধ্য দিয়ে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট হয়ে যায়। নানান অন্যায় ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়তে হয়। তখন এর সাথে সম্পৃক্তরা গুনাহগার হয়ে থাকে। এ জন্য সুচিন্তা-ভাবনা নিয়ে চলতে হবে, কখনো কুচিন্তা বা মন্দ ধারণা করা যাবে না।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাকো; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। একে অপরের গিবত কোরো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃতভ্রাতার গোশত ভণ করতে চাইবে?” (সূরা হুজরাত-১২)
অধিক ধারণা ও মন্দ ধারণা করা থেকে অন্যায়ের জন্ম হয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভালো ধারণার পরিবর্তে মন্দটাকে প্রাধান্য দিতে ভালোবাসি। অন্যের সম্মান রার পরিবর্তে নিজের লাভটাকে তালাস করে থাকি। পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে মুসলমানের সম্মান ও ইজ্জত রার আদেশসহ অন্যের প্রতি অনুমান ও মন্দধারণা পোষণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরস্পরের প্রতি সুন্দর ধারণার সৃষ্টি করা এবং সংশয়-সন্দেহ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। আমরা মাঠে-ময়দানে, মঞ্চে-টেবিলে হরহামেশাই ধারণা প্রসূত কথা বলে থাকি। মিথ্যা ও অনুমানভিত্তিক বাগাম্বড় করে আমিত্ব রা ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের চেষ্টা করে থাকি। অথচ পবিত্র কুরআনে এমন মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়ে অন্যের বিরুদ্ধে মুখে কিছু উচ্চারণ তো দূরে থাক মনে মন্দ ধারণা করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
রসূলুল্লাহ সা: বলেন, “তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, ধারণাভিত্তিক কথা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান কোরো না আর পরস্পর হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ কোরো না এবং পরস্পর শত্র“তা ও দুশমনি পোষণ কোরো না; বরং হে আল্লাহর বান্দারা ভাই ভাই হয়ে থাকো।” (বুখারি শরীফ)
আবু হুরায়রা রা: বলেন, রসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন তার মুসলিম ভাইয়ের কাছে যায় তখন যেন সে তার খাবার থেকে খায় ও পানীয় থেকে পান করে এবং অনুসন্ধান না করে।” (বায়হাকী, মিশকাত)
আমাদের সামাজিক জীবনে পারস্পরিক আন্তরিকতা বজায় রাখতে হবে। অযথা সন্দেহ পোষণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইসলামে এর থেকে শুধু নিরুৎসাহিত করা হয়নি বরং কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ধারণা নির্ভর করে এবং গুজবের ওপর ভর করে আমাদের সমাজে অনেক অঘটন ঘটানোর নজির আছে। শোনা কথার সত্যতা যাচাই না করে অন্যায়ভাবে অপরের বিরুদ্ধে বিষোধগার করা বা শায়েস্তা করার নামে নির্যাতন ও অপদস্থ করার ঘটনাও ঘটে আসছে। আর এভাবেই চলছে ব্যক্তিস্বার্থ হাছিলের অপতৎপরতা। চলছে দলবাজি ও সমাজকে বিভক্ত করণের কর্মকাণ্ড। মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত, পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখা এবং ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধকে অটল রাখার জন্য মন্দ ধারণা থেকে নিজেকে পরহেজ করার পাশাপাশি সত্যতা যাচাই ব্যতীত কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ বিশ্বাস না করা। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে ভালো ব্যবহার করা আমাদের কর্তব্য। তা ছাড়া সবার সাথে হাসিমুখে, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হৃদয়ে কথা বলা এবং দেখা-সাক্ষাৎ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মানুষের প্রতি সুধারণা পোষণ করা এবং অন্যের কাজকর্ম দেখার সময় ভালো ও নিরপে দৃষ্টিতে দেখা দরকার। কাজ দেখার আগেই যদি মন্দধারণা পোষণ করা হয় তখন ভালো কিছু মন থেকে দূরে সরে যেতে চায়। বাহ্যিকভাবে যার মধ্যে সততা ও সত্যবাদিতা পরিলতি হয় তার সম্পর্কে অন্যায় ধারণা পোষণ করা সঠিক নয়। তবে কারো মধ্যে যদি সুস্পষ্টভাবে অন্যায় ও অসত্য পরিলতি হয়, তার স্বভাবপ্রকৃতিও ভালো না হয় এবং সে বিষয়ে সমাজে তার কুখ্যাতিও থাকে, সে ক্ষেত্রে মন্দধারণা পোষণ করা অন্যায় হবে না। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, “যে বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞান (জানাশোনা) নেই সে বিষয়ের পেছনে পোড়ো না; নিশ্চয় কান, চোখ ও হৃদয় প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা আল-ইসরা৩৬)
আসুন! আল্লাহর হুঁশিয়ারি বাণীকে সম্বল করে আমরা অজানা বিষয়কে ধারণার বশবর্তী হয়ে সত্য ভেবে মানুষ সম্পর্কে কুধারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করি। সন্দেহপ্রবণ মানসিকতা থেকে নিজেদের মুক্ত করে উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে চেষ্টা করি। সমাপ্ত ।