মুসলিম নর-নারীর মৃত্যুর পর দাফন কাফনের আগে রুকু ও সিজদা ছাড়া চার তাকবিরের সাথে যে নামাজ আদায় করা হয় তার নাম নামাজে জানাজা। এর উদ্দেশ্য হলো সবাই মিলে মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা। শরিয়তে এই নামাজকে ফরজে কিফায়া নামে ঘোষণা করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির অলি ওয়ারিশসহ পাড়া-প্রতিবেশী সবার ওপর এই নামাজ ফরজ। তবে অলি ওয়ারিশসহ কিছু লোক একবার নামাজ আদায় করে ফেললে সবার পক্ষ থেকে ফরজে কিফায়ার নামাজ আদায় হয়ে যায়। আর যদি কেউই আদায় না করে তাহলে সবাই গোনাহগার হয়। জানাজার নামাজকে নামাজ নামে আখ্যায়িত করা হলেও এই নামাজ অন্যান্য ফরজ নামাজের মতো নয়। এর বিধিবিধান স্বতন্ত্র।
আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায়, একজন ভিআইপি মৃত লোকের জন্য একাধিকবার জানাজা আদায় করা হয়, ভিআইপি লোকদের ভিআইপি আত্মীয়স্বজনদের সামনে প্রকৃত সত্যটি তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য। মৃত ব্যক্তিকে শেষ বিদায় বেলায় শরিয়তের বিধিবিধান মোতাবেক শেষ আনুষ্ঠানিকতা পালনের মাধ্যমে শেষ বিদায় দেয়াই বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে আবেগতাড়িত হয়ে একাধিকবার জানাজা শরিয়তসম্মত না হলে কেন করতে যাবো?
বাংলাদেশের বেশির ভাগ লোকই হানাফি মাজহাবের অনুসারী। হজরত ইমাম আবু হানিফা র:-এর অনুসারীদের মধ্যে একাধিকবার জানাজা জায়েজ নেই। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবীর অনেক হাদিস ও ফতোয়ার কিতাবগুলোতে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। নির্ভরযোগ্য ফাতোয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে আলমগিরি ও ফতোয়ায়ে শামিতে এ বিষয়টির বিশদ বর্ণনা আছে। বাদায়িউস সানায়ি নামে প্রসিদ্ধ গ্রস্হে’র প্রথম খণ্ডে পৃ. নং-৩১১তে প্রিয় নবীর একটি হাদিসের বর্ণনা রয়েছে। হাদিসটির সারমর্ম হলো ‘একদিন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা: এক মৃতব্যক্তির জানাজা শেষে বসে আছেন, এমন সময় হজরত উমর রা:সহ আরো কিছু সাহাবি সেখানে হাজির হয়ে আবার নামাজ পড়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে প্রিয় নবী সা: বলে দিলেন জানাজার নামাজ একাধিকবার জায়েজ নেই। তবে একাধিকবার লোক সমবেত হলে মৃতব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা যায়। এতে মৃতব্যক্তির লাভ হয়। মুনাজাত করা যায়। জানাজার আনুষ্ঠানিকতা একবারই হবে এবং একবারই করা উচিত।
জানাজার নামাজ মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া ও ক্ষমা চাওয়াই উদ্দেশ্য হলে শরিয়তের বিধিবিধানের অনুকরণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ের ওপর চট্টগ্রাম সোবহানিয়া আলিয়া মাদরাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি মো: ফুরকান চৌধুরী সমপ্রতি অতি মূল্যবান একখানা গ্রন্হ’ লিখেছেন। যার নাম হলো : কাইফিয়াতু ছালাতিল জানাজা আলার রাসুলিল মোস্তফা। সেখানে বহু প্রমাণাদিসহ তিনি এ বিষয়ের ওপর মূল্যবান জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন। বইটি সংগ্রহে রাখার মতো।
এ ব্যাপারে বিষয়টির ওপর কুরআন ও হাদিসের বাইরে কোনো দলীয় মতবাদ মান্য করা উচিত নয়। বাংলাদেশের সব মাদরাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম সাহেবসহ হক্কানি আলেম ওলামাদের দৃষ্টি বিষয়টির ওপর আকর্ষণ করছি। কুরআন ও হাদিসের আলোকে যা সত্য নির্ভয়ে তা প্রকাশ ও পালন করা উচিত। বাংলাদেশে শরিয়তের ক্ষেত্রে অনেক সময় অনেক বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হয়, বিভিন্ন ভ্রান্ত মতাদর্শ অনেক সময় টিভি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা হয়। যেমন- পবিত্র ইসলামের নামে একটি শ্রেণী বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে সুদ ব্যবসাকেও বৈধ আখ্যায়িত করে জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। অথচ পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সুদ গ্রহণকারীরা সুদের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অনেক সময় আত্মহত্যা পর্যন্ত করে থাকে। সুদের কারণে সমাজের আর্থিক ভিত বিনষ্ট হয়। একটি ফতোয়ার জন্য ওই চিহ্নিত মহলটি চিরস্থা’য়ী নিজস্ব ফতোয়া বোর্ড পর্যন্ত গঠন করে রেখেছে। এর উদ্দেশ্যই হলো জনগণকে ধোঁকা দেয়া।
এসব ব্যাপারে প্রতিবাদী হওয়ার জন্য দেশের হক্কানি আলেম ওলামাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি, প্রকৃত সত্য উদঘাটনে প্রচার ও প্রকাশে আলেম ওলামারা এগিয়ে আসবেন এবং অন্ধ অনুকরণ থেকে নিজেকে ও জনগণকে হেফাজত করবেন।(সমাপ্ত)