একজন মুসলিমের জীবনমানের অপরিহার্য ও অনিবার্য গুণ হল তাকওয়া। এর অর্থ বেঁচে থাকা,সাবধানতা অবলম্বন করা ও ভয় করা। সাধারণত নফস মানুষকে অন্যায়,অশ্লীল,খারাপ ও অনিষ্টিকর কথা,কাজ ও চিন্তা থেকে বিরত রাখে মুলত সেটাই হচ্ছে তাকওয়া। আর এ তাকওয়াই সমাজে মানবতাবোধ, নীতিবোধ ও মূল্যবোধ নামে পরিচিত। উঁচু-নিচু, ধনী-গরীব, সাদা-কালো যে কোন মুসলিম নারী পুরুষ তাকওয়া অবলম্বন করে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,তথা সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করেন,তিনি ইসলামের দৃষ্টিতে মু্ত্তাকী নামে পরিচিত। মানুষের জীবনে সাফল্য অর্জনে তাকওয়ার প্রভাব অপরিসীম। বিশেষ করে সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতির কোন বিকল্প হয় না।
তাকওয়া পরিচিতি
তাকওয়া শব্দটি ইসলামের একটি মৌলিক পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ হল-ভালভাবে বেঁচে থাকা পরহেয করা,রক্ষা করা,দূরে থাকা, বিরত থাকা ও সাবধান থাকা। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন,তাকে বলা হয় মুত্তাকী।
আভিধানিকভাবে তাকওয়া শব্দের আর এক অর্থ হল- ভয়,সতর্কতা ও জবাবদিহিতা। আল্লাহর যাবতীয় নির্দেশসমূহ প্রতিপালন ও সকল নিষেধাধ্জ্ঞা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করা(আল-মুজাম আল ওয়াসীত,দেওবন্দ, কুতুবখানা হুসাইনিয়াহ)
এই দ্বিতীয় অর্থে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার রয়েছে।আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ -হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর।( সুরা হজ্জ ০১।
নূহ (আ) নিজ জাতিকে বলেছিলেন,إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ نُوحٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾ স্মরণ কর যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলেছিল,”তোমরা কি ভয় কর না? আশ-শুআরা ১০৬
হূদ (আ),নিজ জাতিকে বলেছিলেন,﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾স্মরণ করো যখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বলেছিলো, তোমরা ভয় করছো না ?(আশ-শুআরা১২৪)
সালেহ (আ),নিজ জাতিকে বলেছিলেন, ﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾স্মরণ করো যখন তাদের ভাই সালেহ তাদেরকে বললোঃ তোমরা কি ভয় করো না?(আশ-শুআরা১৪২)
লুত (আ) নিজ জাতিকে বলেছিলেন, ﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ لُوطٌ أَلَا تَتَّقُونَ স্মরন করো যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বলেছিল,তোমরা কি ভয় করো না?(আশ-শুআরা১৬১)
এবং শুআইব (আ) নিজ নিজ জাতিকে বলেছিলেন, ﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾যখন শোআইব তাদেরকে বলেছিল,তোমরা কি ভয় করো না? (আশ-শুআরা১৭৭
সুতরাং দেখা যাচ্ছে,তাকওয়া শব্দটি আভিধানিক ভাবে দুটি অর্থ ধারণ করে। এক, আত্মরক্ষা,বেঁচে থাকা,বিরত থাকা, মুক্ত থাকা,রক্ষা করা ও পরহেয করা।দুই,ভয়-ভীতি তথা কোন প্রকার অনিষ্ট ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা মিশ্রিত ভয় ।
ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় তাকওয়া অর্থ হল,আল্লাহ্ তাআলার ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে দূরে থেকে ইসলাম নির্ধারিত পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। অথবা,যে কাজ করার কারণে মানুষকে আল্লাহ্র শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে,তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হচ্ছে তাকওয়া। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রাপ্ত করুণা,ভালবাসা,দয়া ও অনুগ্রহ হারানোর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত থাকার নাম তাকওয়া (সম্পাদনা পরিষদ,ইসলমী বিশ্বকোষ,ঢাকা,ইফাবা,১৯৯২,১২শ খণ্ড,পৃ. ১০৭।) ।
মুত্তাকীর পারিভাষিক সংজ্ঞায় কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (র) বলেন,
শরীয়তের পরিভাষায় মুত্তাকী বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যিনি নিজেকে এমন সব কিছু থেকে রক্ষা করেন,বাঁচিয়ে রাখেন,যা তাকে পরকালে ক্ষতির সম্মুখিন করবে”(কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী) ।
আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইব্ন মাসউদ আল বগবী (র) বলেন,
মুত্তাকী ঐ ব্যক্তি,যিনি শির্ক,কবীরা গুনাহ ও সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন। মুত্তাকী শব্দটি আল ইত্তিকাউ থেকে নির্গত। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে দুই বস্তুর মাঝখানের অন্তরাল-দেয়াল। যেমন এক হাদীসে আছে,সাহাবায়ে কিরামের উক্তি,যুদ্ধক্ষেত্রে যখন যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যেত তখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আমাদের ও শুক্রদের মাঝখানে অন্তরায় করে রাখতাম। সুতরাং মুত্তাকী আল্লাহর আদেশ পালন এবং তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকাকে তার এবং আল্লাহর শাস্তির মাঝখানে অন্তরায় তৈরী করে বলেই তাকে মুত্তাকী বলা হয়।(মাআলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল,বৈরুত)
আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশারী (রা) বলেন,ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় মুত্তাকী হল ঐ ব্যক্তি,যে নিজ সত্তাকে রক্ষা করে এমন বিষয় থেকে,যার জন্য সে শাস্তির উপযোগী হয়ে যায়;সেটি করণীয় হোক বা বর্জনীয়।(আল-কাশশাফ)
তাকওয়া হচ্ছে -মূল্যবোধ,মানসিক শুদ্ধতা ও দৃঢ়তা। এটি যে কোন ধরনের পদঙ্খলন থেকে মানুষকে রক্ষা করে;সকল মন্দ ও অশ্লীল কথা,কাজ ও পরিবেশ থেকে ফিরিয়ে রাখ, এবং প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি বা অভিলাষ ও দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতি করা থেকে এবং পরিবার,সমাজ ও দেশের ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করে। জনমানব শূন্য নির্জন স্থানে বা দুর্নীতি করার অসংখ্য সহজ পথ উন্মুক্ত থাকার পরও যে শক্তি মানুষকে তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখে তা-ই তাকওয়া।
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ
প্রকৃতপক্ষে যারা মুক্তাকী,তাদেরকে যদি কখনো শয়তানের প্রভাবে অসৎ চিন্তা স্পর্শও করে যায় তাহলে তারা তখনই সতর্ক হয়ে উঠে তারপর তারা নিজেদের সঠিক কর্মপদ্ধতি পরিষ্কার দেখতে পায়৷(সুরা আল আরাফ ২০১)।
তাকওয়া মানুষের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার শক্তি জাগ্রত করে। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
হে ঈমানদারগণ!,যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,তাকওয়া অর্জন কর,তবে তিনি তোমাদের ভাল-মন্দ পার্থক্য করার শক্তি দান করবেন। এবং তোমাদের পাপগুলো তোমাদের থেকে দূর করে দেবেন এবং তোমাদের ত্রুটি -বিচ্যুতি ক্ষমা করবেন৷ আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল ৷ (সুরা আল আনফাল২৯। )
অর্থাৎ তাকওয়ার ফলে মানুষের বিবেক বুদ্ধি প্রখর হয় এবং সুষ্ঠ বিচার-বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়। তাই সে সত্য-মিথ্যা ন্যায়-অন্যায় ও ভাল-মন্দ চিনতে এবং তা অনুধাবন করতে ভূল করে না। তার হাতে তাকওয়ার আলোকবর্তিকা থাকার ফলে জীবন পথের মন্দ দিকসমূহ সে স্পষ্টত দেখতে পায়। বিবেচনার শক্তির প্রখরতা ও বুদ্ধিদীপ্ততা তার মধ্যে এমনভাবে কাজ করে যে,তার কাছে তখন ইহ-পারলৌকিক যে কোন বিষয়ের কোনটি সঠিক আর কোনটি ভূল তা স্পষ্টতই ধরা পরে। ফলে সে কোন সংশয়,দ্বিধা-দ্বন্দ্ব,ইতস্তত,দুর্বলতা ও হীনমন্যতা ছাড়াই দিবালোকের মত সুস্পষ্ট ও সঠিক পথে চলতে সক্ষম হয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن رَّحْمَتِهِ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর-তাকওয়া অর্জন কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজ অনুগ্রহের দ্বিগুন প্রতিদান তোমাদেরকে দিবেন এবং তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি-আলো,যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে। এবং তোমাদের ত্রুটি -বিচ্যুতি মাফ করে দেবেন৷ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷ (সুরা হাদীদ ২৮।)
অর্থাৎ তাকওয়া জীবনকে এমন এক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করে,যা সকল প্রকার ভয়-ভীতি,লোভ-লালসা,প্ররোচনা-প্রতারণা,প্রলভন-পদস্খলন থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে।অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর সমুদ্রে কম্পাস যন্ত্র যেমন সমুদ্রভিযাত্রীকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে,সমস্যা-সংকুল জীবন পথে তাকওয়াও তেমনি মানুষকে নির্ভূল পথের সন্ধান দেয়।
ভালকে গ্রহণ করার তীব্র আগ্রহ এবং মন্দকে পরিহার করে চলার দৃঢ় মনোবলই হচ্ছে তাকওয়া। মানুষের সকল সৎগুণের সঞ্জীবনী শক্তি হচ্ছে তাকওয়া। এ ক্ষেত্রে তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের ইতবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের বর্ণনা সম্বলিত নিম্নোক্ত আয়াতগুলো প্রণিধানযোগ্য। যেমন,আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ২থেকে ৪ আয়াতে বলেন এই আল কুরআন পথ প্রদর্শণকারী পরহেযগারদের জন্য। পরহেযগার হচ্ছে তারা,যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে,নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে;এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করে,সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু আপনার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে,এবং যা কিছু আপনার পূর্ববর্তীদের ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তারা আখিরাতের প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। (সুরা বাকারার ২-৪।) অন্যত্র বলা হয়েছে,
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
শুধমাত্র পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই;বরং কল্যাণ হচ্ছে,যে ঈমান আনবে আল্লাহ্র ওপর,কিয়ামত দিবস,ফেরেশতাগণ,আসমানী কিতাবসমূহ ও নবী-রাসূলগণের ওপর;আর তাঁরই ভালবাসার মানসে আত্মীয়-স্বজন,ইয়াতীম,মিসকীন,মুসাফির-পথিক,ভিক্ষুক ও সর্ব প্রকার দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তির জন্য সম্পদ ব্যয় করবে;আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে,যাকাত প্রদান করে;আর যারা তাদের অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে যখন তারা অঙ্গীকার করে এবং অভাবে,রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী। আর তারাই হল সত্যাশ্রয়ী,আর তারাই মুত্তাকী।(সুরা আল বাকারা ১৭৭।)তারাই হল সত্যাশ্রয়ী অংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,আয়াতে বর্ণিত বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন কর্মকান্ডসমূহ যখন তারা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করবে তখনই তারা মুত্তাকীরূপে পরিগণিত হবে।(ফাতহুল মাজীদ রিয়াদ)
মুত্তাকী ব্যক্তিকে কতগুলো বিষয় বর্জন করে চলতে হয়। মানুষের মধ্যে দুটি পরস্পর বিরোধী প্রবনতা বা শক্তি পাশাপাশি সাংঘর্ষিক অবস্থানে বিদ্যমান। তা হল,ভাল-মন্দ,সত্য-মিথ্যা,ন্যায়-অন্যায়,কল্যাণ-অকল্যাণ,আলো-অন্ধকার ইত্যাদি। এ পরস্পর বিরোধী দুই প্রবণতার মধ্য থেকে ভাল ও কল্যাণময় প্রবণতা বেছে নিয়ে সেটাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ফলে যত কঠিন পরীক্ষা ও অবস্থারই মুকাবিলার সম্মুখীন হোক না কেন, তা ধৈর্য ও সাহসের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া এটাই প্রকৃত তাকওয়া। অর্থাৎ মানবীয় সহাজাত সুকুমার বৃত্তি বা আকাঙ্খা যা মানুষকে কুপ্রবৃত্তি তথা মন্দ কথা,খারাপ কাজ ও দুষ্ট চিন্তা থেকে বিরত রাখে,তাকেও তাকওয়া বলা হয়। যারা তাকওয়া অবলম্বনে জীবন যাপন করেন এবং মুত্তাকীদের নেতা বা আদর্শ যারা হতে চান,তারা যেসব বিষয় বর্জন করে জীবন যাপন করেন, এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا﴾
তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করেনা বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে৷
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا
তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না,আল্লাহ যে প্রানকে হারাম করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে নাএবং ব্যভিচার করে না ৷এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে৷
আর যখন তারা (সম্পদ) ব্যয় করে তখন অনর্থক ব্যয় করে না,আবার কার্পণ্যও করে না;বরং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে (ব্যয় করে)। সুরা আল-ফুরকান ৬৭-৬৮
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا
(আর রহমানের বান্দা হচ্ছে তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় নাএবং কোন বাজে জিনিসের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মত অতিক্রম করে যায়৷
وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا
তাদের যদি তাদের রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয় হয় তাহলে তারা তার প্রতি অন্ধ বধির হয়ে থাকে না৷
﴿وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا﴾
তারা প্রার্থনা করে থাকে,হে আমাদের রব ! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম ৷আল-ফুরকান ৭২-৭৪।