দোয়া ও মোনাজাত বান্দার হাতিয়ার

 

images[4]আল্লাহ এমন এক মহান সত্তা যিনি তাঁর কাছে কোনো কিছু চাইলে অত্যন্ত খুশি হন। বান্দা যত চাইবে আল্লাহ তত দেবেন এবং তত বেশি খুশি হবেন। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে সেতুবন্ধ হয়। দোয়া শব্দের অর্থ প্রার্থনা করা, আহ্বান করা, কোনোকিছু পাওয়ার জন্য আকুতি-মিনতি করা ইত্যাদি। দোয়া আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের প্রধান মাধ্যম। ইসলামে দোয়াকে একটি স্বতন্ত্র ইবাদতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। দুনিয়াতে যারাই আল্লাহর প্রিয় হয়েছেন তারা দোয়ার মাধ্যমেই হয়েছেন। দোয়ার মধ্যে মানুষের পার্থিব ও পরকালীন সফলতা নিহিত আছে।
আল্লাহতায়ালা বান্দার ওই মুহূর্তটিকে অধিক পছন্দ করেন যখন বান্দা তার নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তার কাছে মাগফেরাত তলব করে। বান্দার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা ও ইচ্ছা নেই—স্বতঃসিদ্ধ এই কথাটি যখন বান্দার মুখ থেকে আকুতির মাধ্যমে বের হয় তখন আল্লাহর করুণা বান্দার প্রতি প্রবল বেগে বর্ষিত হয়। বান্দা কীভাবে তার চাহিদার কথা মহান প্রভুর দরবারে উপস্থাপন করবে তার কৌশল প্রভু নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। নিজের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার আহ্বান করা এবং তার পদ্ধতি বলে দেয়ার নজির একমাত্র মহান আহকামুল হাকিমীনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দুনিয়ার কোনো রাজা-বাদশার সঙ্গে এর তুলনা হতে পারে না। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে দোয়া কীভাবে করতে হবে তার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার জন্য কীভাবে দোয়া করবে এ প্রসঙ্গে শিক্ষা দিয়েছেন ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়ের মধ্যে সফলতা দান কর এবং আমাকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে নাজাত দাও।’ আরেক জায়গায় দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার নিজের ওপর অত্যাচার করেছি; এখন যদি তুমি আমাকে মাফ না কর এবং আমার ওপর দয়া না কর; তবে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ এভাবে কোরআনে আল্লাহ বান্দার আহ্বানে সাড়া দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন ‘হে বান্দারা! তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।’

রাসূল (সা.) আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় হাবীব ছিলেন। দোয়ার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছাকাছি চলে যেতেন। যে কোনো বিপদে আপদে আল্লাহর রাসূল দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করে তা থেকে নাজাত লাভ করতেন। মক্কায় অবস্থানকালীন কঠিন মুহূর্তে, ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধে অনিবার্য পরাজয়ের মুখে, হিজরতের সময় কাফেরদের হাতে ধরা পড়ার অতি নিকটবর্তী সময়েও রাসূল সা. যখনই আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়েছেন তখনই আল্লাহর সাহায্য এসেছে। তার রহমতের দরিয়ায় জোশ উঠেছে। আল্লাহ তার কৃপার অদৃশ্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয়নবীর সাহায্যার্থে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ কিংবা মানবিক বিপর্যের করুণ মুহূর্তে রাসূল (সা.)-এর সর্বোত্কৃষ্ট হাতিয়ার ছিল দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর মনোযোগ আকর্ষণ করা। তার অফুরন্ত ভাণ্ডারে দয়া ও করুণার ভিক্ষা প্রার্থনা করা। গভীর রাতে সমস্ত জগত যখন নিঝুমপুরী, সবাই যখন ঘুমে বিভোর, তখনও রাসূল (সা.) উম্মতের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করতেন। প্রিয় হাবীবের সঙ্গে সেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলোকে মূল্যায়ন করে উম্মতে মুহাম্মদীকে আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ করুণার প্রস্রবনে সিক্ত করেছেন।
দোয়ার আদব হলো, বান্দা তার সমস্ত দুর্বলতা ও কমজোরি আল্লাহর কাছে পেশ করবে অতন্ত বিনম্র ভাষায়। নিজের সমস্ত সত্তাকে বিলীন করে দেবে আল্লাহর দরবারে। নিজেকে সম্পূর্ণ আল্লাহর দরবারে সোপর্দ করে নিজের চাহিদার কথা, নিজের অভাব-অনটনের কথা প্রভুকে জানাবে। প্রকৃত ও যথার্থ দোয়ার ফল অবশ্যম্ভাবী। সঠিক নিয়মে দোয়া করলে তা কখনও বিফলে যাবে না। দোয়ার ফলাফলে বিলম্ব হলেও তাতে নৈরাশ হওয়ার কারণ নেই। কোনো দোয়ার ফল যদি দুনিয়াতে না পাওয়া যায় তবে তা আখেরাতে অবশ্যই পাওয়া যাবে—এ বিশ্বাস রাখতে হবে সবাইকে। সর্বোপরি অন্তরকে স্বচ্ছ, কলুষতামুক্ত করে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে পারলেই দোয়া কবুলের গ্যারান্টি দেয়া যায়।

(সমাপ্ত)

Related Post