পঞ্চম সারণি
নবী পরিবার ও সিদ্দীক পরিবারের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক
উল্লিখিত চিত্রে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবার ও আবু বকর সিদ্দীক রাদি আল্লাহু আনহুর পরিবারের মধ্যকার ছয়টি বৈবাহিক সম্পর্ক দৃশ্যমান হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিবাহ হল মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আয়িশা সিদ্দীকা রাদি আল্লাহু আনহার বিবাহ। হিজরাতের এক বছর পূর্বে এ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় এবং ২য় হিজরীতে তাঁদের সহবাস হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকাল পর্যন্ত তিনি তাঁর স্ত্রী হিসেবে বর্তমান ছিলেন। এর মাধ্যমেই কি তাঁদের দুই পরিবারের সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল? কখনই নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতী হাসান রাদি আল্লাহু আনহু (কোন কোন বর্ণনায় হুসাইন রাদি আল্লাহু আনহু) আবু বকর রাদি আল্লাহু আনহুর পৌত্রী হাফসা বিন্ত আব্দুর রহমানকে বিবাহ করেন। (বালাজুরী: আনসাবুল আশরাফ, ১/৩৮১; ইব্ন হাবীব: আল-মাহবার, ৪৪৮)
অতঃপর হাসান রাদি আল্লাহু আনহুর পৌত্রদের মধ্য থেকে মূসা আল-জাওন ইব্ন আবদুল্লাহ আল-মাহাদ ইব্ন হাসান (দ্বিতীয়); উম্মে সালমা বিন্ত মুহাম্মদ ইব্ন তালহা ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্দুর রহমান ইব্ন আবু বকরকে বিবাহ করেন। (আনসাবুল আশরাফ: ১/৪০৭; নসব কুরাইয়শ: ১/২০; আল-ফাখরী ফী আনসাবুত্ তালিবীন: ১/৩৬; উমদাতুত তালিব: ১১৩)
হুসাইন রাদি আল্লাহু আনহুর পরিবার থেকে ইমাম বাকের রাদি আল্লাহু আনহু আনুমানিক ৮০ হিজরীতে উম্মে ফারওয়া বিন্ত কাসিম ইব্ন মুহাম্মদকে বিবাহ করেন এবং তাঁদের ঘরে জাফর সাদিকের জন্ম হয়। (এটি সব তথ্যসূত্রের সম্মিলিত বর্ণনা)
এভাবেই ইসহাক ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন আলী ইব্ন হুসাইন কুলসূম বিন্ত ইসমাঈল ইব্ন আব্দুর রহমান ইব্ন কাসিম ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন আবু বকরকে বিবাহ করেন। (নসব কুরাইশ: ১/২৪)
জাফর আত্তাইয়ার রাদি আল্লাহু আনহুর সন্তান-সন্তুতির মধ্যে ইসহাক ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন জাফর ইব্ন আবু তালিব বিবাহ করেন উম্মে হাকিম বিন্ত কাসিম ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন আবু বকরকে। যিনি উম্মে ফারওয়া (জাফর সাদিকের মা) এর বোন ছিলেন। এদিক থেকে উম্মে হাকিম জাফর সাদিকের খালা। (ফখরুদ্দীন রাযী: আশ্শাজারা আল-মুবারাকাহ)
এ চিত্র থেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়:
– এ বিবাহগুলোর বেশির ভাগই অনুষ্ঠিত হয়েছে আবু বকর রাদি আল্লাহু আনহুর ইন্তিকালের পর। অতএব এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অথবা অন্যকোন দিক থেকে চাপ প্রয়োগের সম্ভাবনা ছিল না। বরং এটি ছিল দুই পবিত্র গৃহের মধ্যকার প্রেম-ভালবাসা ও সৌহার্দ্য।
– উপরিউক্ত বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে সব পুরুষই ছিলেন নবী পরিবারের এবং সব নারী ছিলেন আবু বকর রাদি আল্লাহু আনহু পরিবারের। এটি সর্বজন বিদিত যে, বিবাহের প্রস্তাব পুরুষের পক্ষ থেকে নারীকে দেয়া হয়। অতএব, এক্ষেত্রেও নবী পরিবারের অনুরাগ ছিল প্রকাশ্যমান।
– উপরিউক্ত বিবাহগুলো বিভিন্ন ঘটনা (সাকীফা, স্ফ্ফিীন, উষ্টের যুদ্ধ, কারবালা….) সংগঠিত হওয়ার পরও চলমান ছিল। যা এ প্রমাণ বহন করে যে, মুসলিম উম্মাহ বিশেষ করে আহলে বাইত্ এসব মতভেদগুলো উত্তোরণ করেছিলেন। এরপরও কতিপয় প্রাচ্যবিদ (ঙৎরবহঃধষরংঃ) এ মতপার্থক্যকে বৃহদাকারে উপস্থাপন করেছেন। তাছাড়া এ সংক্রান্ত অনেক স্পষ্ট ঐতিহাসিক ভুল তথ্য রয়েছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খুলাফায়ে রাশেদুনের আমলের ছোট ছোট মতভেদকে ফুলিয়ে বড় করার জন্যই রচনা করা হয়েছে। এর পিছনে শুধুমাত্র ফিত্না সৃষ্টি ও মতনৈক্যের বীজ বপনের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর অগ্রগতিতে কাঁটা বিধানোই উদ্দেশ্য।