Main Menu

নুমান ইব্‌ন বাশীর রাদি আল্লাহু আনহু

নুমান ইবন বাশীর

নুমান ইবন বাশীর

নুমান ইবন বাশীর

পূর্বে প্রকাশিরে পর

চতুর্থ সংশয়:-

নুমান ইব্‌ন বাশীর তার গোত্র আনসারদের বিরোধিতা করে মুআবিয়ার সাথে মিলিত হয়েছিলেন এবং আলীকে (রা.) পরিত্যাগ করেছিলেন

‘ওয়াকেয়া সিফফীন’ নামক পুস্তকে এসেছে, তারা দুজন (নুমান ইব্‌ন বাশীর ও মাসলামাহ ইব্‌ন মুখাল্লাদ) ছাড়া মুআবিয়ার পক্ষে কোন আনসার সাহাবী ছিলেন না। অতঃপর মুআবিয়া নুমান থেকে চাইলেন তিনি যেন কায়েসের কাছে যান তাকে ভর্ৎসনা করেন ও আপোষ চান। নুমান বের হন এবং দুই কাতারের মধ্যে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং বলেন, হে কায়েস! (তিনি ছিলেন সায়াদ ইব্‌ন উবাদাহর পুত্র) আমি নুমান ইব্‌ন বাশীর! কায়েস বললেন, হ্যাঁ নুমান, বলুন আমার কাছে কী প্রয়োজন? নুমান বললেন, যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির খুশি অনুযায়ী তোমাদেরকে আহ্বান করেছে সেই তোমাদের সাথে ইনসাফ করেছে। তোমরা আনসাররা কি জান না তোমরা উসমান রাদি আল্লাহু আনহুকে তাঁর গৃহে হত্যার দিন তাকে অপদসস্থ করে অন্যায় করেছ। উষ্ট্রের যুদ্ধের দিন তার সাথীদেরকে হত্যা করেছে, সিফফীন যুদ্ধের দিন সিরিয়াবাসীর সাথে তোমাদের খেয়াল-খুশি মোতাবেক যা ইচ্ছা করেছ। তোমরা উসমানকে অপদস্হ করেছ এর সাথে আলীকেও যদি অপদস্হ করতে তবে একটির বিনিময়ে অন্যটি হত। কিন্তু তোমরা সত্যকে অপদস্হ করেছ ও বাতিলকে সাহায্য করেছ। অতঃপর মানুষের মত থাকতে সন্তুষ্ট হওনি। এমনকি তোমরা যুদ্ধে জড়িয়েছ এবং অমঙ্গলের দিকে আহবান করেছ। কিন্তু আলী রাদি আল্লাহু আনহুর জন্য কিছুই করতে পারনি। শুধুমাত্র তার উপর বিপদ চাপিয়ে দিয়েছ এবং তার জন্য বিজয় এনে দেয়ার ওয়াদা করেছ। অথচ যুদ্ধ তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সমান ছিল। অতএব বাকি ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর।

কায়েস হেসে উঠলেন এবং বললেন, নুমান আমি এ বিষয়ে তোমার স্পর্ধা দেখেছি। যে নিজেকে ধোঁকা দিয়েছে সে তার অপর ভাইকে নসীহত করতে পারে না। আল্লাহর শপথ! তুমি প্রতারক, পথ ভ্রষ্টকারী ও পথভ্রষ্ট। তুমি উসমানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছ। যদি এ বিষয়ের ইতিহাস তোমার যথেষ্ট জানা হয়ে থাকে তবুও আমার থেকে একটি কথা গ্রহণ কর। যে ব্যক্তি উসমানকে হত্যা করেছে তুমি তার চেয়ে ভাল নও এবং যে তাঁকে অপদস্হ করেছে সে তোমার চেয়ে অনেক ভাল। উষ্ট্রের যুুদ্ধে আমরা আনুগত্য ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। যদি গোটা আরবও মুআবিয়ার পাশে সমবেত হয় তবুও আনসাররা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তোমার কথা আমরা অন্য মানুষের মত নই। আমরা এই যুদ্ধে তেমনই অবস্হা গ্রহণ করেছিলাম যেভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধ করতাম। তরবারি থেকে আমাদের মুখমণ্ডল এবং তীর থেকে আমাদের গলা বাঁচিয়ে রাখতাম। এমনকি এভাবেই সত্যের জয় হয় এবং আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত হয় যদিও বিরুদ্ধবাদীরা তা অপছন্দ করত। অথচ হে নুমান! মুআবিয়ার সাথে ভারসাম্যহীন ব্যক্তি অথবা বেদুইন অথবা প্রতারিত ইয়ামিনী ছাড়া কাউকে দেখছো? অতঃপর আবারও চেয়ে দেখো মুআবিয়ার সাথে তুমি ও তোমার এক ক্ষুদ্র সাথী ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছো? আল্লাহর শপথ! তোমরা দু’জন বদর যুদ্ধ, বাইআতে আকাবা বা উহুদযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নও। তোমাদের ক্ষেত্রে ইসলামের অগ্রগামিতা সাব্যস্ত হয়নি, তোমাদেও উদ্দেশ্যে কুরআনের কোন আয়াত অবতীর্ণও হয়নি। আমার জীবনের শপথ! তুমি যদি আমাদের উপর দাঙ্গা-হাঙ্গাম সৃষ্টি কর তবে তোমার পিতাও ইতিপূর্বে আমাদের সঙ্গে হাঙ্গামা সৃষ্টি করেছিল। (নসর ইব্‌ন মাযাহেম, ওয়াকিয়া, সিফফীন: ৪৪৮(৪৪৯; বাহহার“ল আনোয়ার: ৩২/৫১৭; আল-আমিনী, আল গাদীর: ২/৮১।)

এর উত্তর:

প্রথম: সনদ বা বর্ণনাসূত্র।

১. নসর ইব্‌ন মাযাহেম এই ঘটনাটি তার সূত্রে বর্ণনা করে বলেন, আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন উমর ইব্‌ন সাদ তিনি বলেন…. (পৃষ্ঠা-৪৪২। )

অন্য যারা এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন যেমন- আল-মাজলিসী, আল আমিনী প্রমুখ তারা সকলেই নসর থেকে তা বর্ণনা করেছেন। এই গ্রন্হে (ওয়াকিয়া সিফফীন) বর্ণিত বিভিন্ন বর্ণনার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, উমর ইবন সাদ সূত্রে বর্ণনা প্রসঙ্গে নসর ইব্‌ন মাযাহেম কোন কোন স্হানে উমর ইব্‌ন সাদের শিক্ষক থেকে (যেমন- পৃষ্ঠা ৩, ৩০৬, ৩৭৩। ) কোন কোন স্হানে উমর ইবন সাদ তার সূত্রে (যেমন- ৪৩৯। ) আবার কোথাও সরাসরি উমর ইব্‌ন সাদ থেকে বর্ণনা করেছেন যেমন- বক্ষমান বর্ণনাটি।

সে যাই হোক এ বর্ণনার সনদ সম্পর্কে আলিমগণ কী বলেন আমরা সেদিকে দৃষ্টিপাত করব। অতঃপর বিজ্ঞ পাঠকের কাছে এ বর্ণনার শুদ্ধতা বিচারের দায়িত্ব অর্পণ করব।

(ক) নসর ইব্‌ন মাযাহেম: তিনি এ গ্রন্হের প্রণেতা ও কুফার অধিবাসী।

ইব্‌ন হাজর বলেন, তারা তাকে পরিত্যাগ করেছেন।

আকিলী বলেন, তার বর্ণিত হাদীসে জটিলতা ও প্রচুর ভুল রয়েছে।

আবু খায়সামা বলেন, সে মিথ্যাবাদী ছিল।

আবু হাতেম বলেন, সত্যবিচ্যুত ও পরিত্যাজ্য হাদীস বর্ণনাকারী।

দারকুতনী বলেন, দুর্বল বর্ণনাকারী। (লিসানুন মীযান: ৮/২৬৭, জীবনী নম্বর- ৮১২৭। )

(খ) উমর ইব্‌ন সাদ: তিনি ছিলেন ইব্‌ন আবু সায়েদ আসাদী।

ইব্‌ন হাজর বলেন, তিনি আমাশ থেকে বর্ণনা করেছেন…… বিদ্বেষপরায়ণ।

আবু হাতেম বলেন, তার হাদীস পরিত্যাক্ত। (লিসানুল মীযান: ৬/১০৫, জীবনী- ৫৬২৬; মীযানুল এতেদাল: ৩/১৯৩, জীবনী- ৬৫৬৬; আল জরহ্‌ ওয়াত তাদীল: ৬/১১২, জীবনী- ৫৯৫। )

অতএব সনদ থেকে প্রকাশমান হয় যে, উক্ত দুজন বর্ণনাকারীর এ অবস্হার কারণে বর্ণনাটি জাল বর্ণনার কাছাকাছি।

তাছাড়া উমর ইব্‌ন সাদ নিজের পক্ষ থেকে বর্ণনা করে থাকেন বিধায় বর্ণনা সূত্র বিচ্ছিন্ন। আর যদি তার শিক্ষকদের থেকে বর্ণনা করে থাকেন তবে কার থেকে তিনি বর্ণনা করেছেন তা উল্লেখ করেননি বিধায় বর্ণনাকারীদের অবস্হা আমরা অবগত নই।

সবকিছুর আলোকে, এ জাতীয় সনদ দ্বারা কোন প্রমাণ সাব্যস্ত হয় না এবং একে কখনই প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

(২) এই বর্ণনা দুর্বল ও বাতিল হওয়ার ক্ষেত্রে আরও প্রমাণ হল, নসর ইবন মাযাহেম একাই এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন, অন্য যারাই এ ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন সকলেই তার সূত্রে, আর এই বর্ণনার বর্ণনাকারীদের অবস্হা আমরা অবগত হলাম।

দ্বিতীয়ত: মতন বা (মূল বর্ণনা)

(১) বর্ণনার মূল অংশে এমন বাক্য রয়েছে যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, বর্ণনাটি বাতিল ও রচিত যেমন-

(ক) কায়েস ইব্‌ন সায়াদের উক্তি “যে উসমানকে হত্যা করেছে তুমি তার চেয়ে উত্তম নও। যে তাকে অপদস্হ করেছে সে তোমার চেয়ে ভাল। ”

সকলেরই জানা রয়েছে উসমান রাদি আল্লাহু আনহুকে হত্যা করে বিশৃঙখলা সৃষ্টিকারী, নিম্নশ্রেণীর, ইতর, বর্বর কিছু মানুষ। নুমান ইব্‌ন বাশীর রাদি আল্লাহু আনহু কি তাদের চেয়ে ভাল নন? তিনি তো ঐ ব্যক্তি যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য পেয়েছেন, তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই সম্মানিত সাহাবীর সাথে কি ঐসব নিকৃষ্ট, পাপাচারী, মুর্খদের তুলনা হতে পারে? কায়েস ইব্‌ন সায়াদের মধ্যে কি এমন বিদ্বেষ পরায়ণতা প্রবেশ করেছিল যে, তিনি এ দাবি করবেন নুমান এবং ঐসব অপরাধী সমান বরং তাঁর চেয়ে ওরা ভাল?

অতএব এভাবে আমরা এ থেকে কায়েস ও নুমান রাদি আল্লাহু আনহুকে পবিত্র রাখতে পারি। এটি প্রথম কথা।

দ্বিতীয়ত কে উসমান রাদি আল্লাহু আনহুকে অপদস্হ করেছিল ও কারা নুমান রাদি আল্লাহু আনহু থেকে উত্তম?

যিনি উসমান রাদি আল্লাহু আনহুর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত বর্ণনা নির্ভরযোগ্য গ্রন্হ থেকে পড়বেন তিনি দেখতে পাবেন যে, সাহাবীগণ উসমান রাদি আল্লাহু আনহুকে প্রতিরক্ষার জন্য কত উদগ্রীব ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজেই তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই প্রতিরক্ষার সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের শীর্ষে রয়েছেন, আলী ইব্‌ন আবু তালিব, তাঁর ছেলে হাসান, ইব্‌ন যুবাইর, নুমান, আবু হুরায়রা প্রমুখ। এই যখন অবস্হা তখন কি একথা বলা যায় যে, উসমান রাদি আল্লাহু আনহু অপদস্হ হয়েছিলেন?

না, আল্লাহর শপথ! তিনি কখনই অপদস্হ হবেন না।

অতঃপর তাদের একেকজন স্ব স্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে এসব কথা বুঝেছেন, তাদের একজন এই ঘটনার বিশ্লেষণ করতে যেয়ে মন্তব্য করে বলেন-

“এভাবেই দেখতে পাবেন কিভাবে বদর যুদ্ধ ও বাইয়াতে আকাবায় অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণ উসমান রাদি আল্লাহু আনহুর হত্যা ও মুআবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উপর একমত হয়েছিলেন এবং তাদেরকে কাফির ফাতওয়া দিয়েছিলেন। (ড. জাওয়াদ জাফর, শরহ কাসিদাহ্‌ রাঈয়াহ, পৃ. ৩৬৫। )

উক্ত লেখক অন্যত্র বলেন, “এ থেকে বুঝা যায় উসমানকে হত্যা ও তার হত্যার বৈধতা দিয়ে ফাতওয়া প্রদান করেন একদল সাহাবী। যাদের অগ্রভাগে ছিলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী উত্তম সাহাবীগণ। ” (ড. জাওয়াদ জাফর, মাহাকামুতল খুলাফা ওয়া আতবায়ুহুম, ২২৩। )

কায়েস ইব্‌ন সায়াদের থেকে কি এ জাতীয় মন্তব্য প্রকাশ পেতে পারে যা উসমান রাদি আল্লাহু আনহুর হত্যাকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করে ও যাতে তাঁর হত্যাকারীদের প্রশংসা করা হয় এবং তাঁকে অপদস্হকারীদের ওজর প্রদর্শন করা হয়?

বরং এর চেয়ে আরও দুর্বোধ্য হল, এ বাক্য এমন এক প্রমাণে পরিণত হয়েছে যা থেকে কেউ কেউ উসমান রাদি আল্লাহু আনহুর হত্যার উপর সাহাবীগণের ইজমা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রমাণ পেশ করে।

হে আল্লাহ! আমরা কায়েস ও সমস্ত সাহাবীর এ জাতীয় মিথ্যা ও অপবাদ থেকে পবিত্র ঘোষণা করছি।

(খ) কায়েস ইব্‌ন সায়াদের বাণী “আনুগত্যের শপথ ভঙ্গের কারণে আমরা উস্ট্রের যুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। ”

প্রকাশ্যমান যে, উস্ট্রের যুদ্ধের বিরোধীপক্ষ আলী রাদি আল্লাহু আনহুর আনুগত্যের শপথভঙ্গ করেনি। বরং তারা তাঁর সাথে উসমান রাদি আল্লাহু আনহুর রক্তের বদলা গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ করেছিল। তাহলে কায়েস কিভাবে বললেন, বাইয়াত ভঙ্গের কারণে যুদ্ধ হয়েছিল?

যদি বাইয়াত ভঙ্গের অন্য কোন উদ্দেশ্য থেকে থাকে তবে আমরা তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চাই যাতে বাক্যটি আমাদের বোধগম্য হয়।

(গ) কায়েস ইব্‌ন সায়াদের উক্তি “যদি তুমি আমাদের বিষয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি কর তবে তোমার পিতা ইতিপূর্বে আমাদের উপর দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করেছিল। ”

নুমানের পিতা -বাশীর ইব্‌ন সায়াদ- এর দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টির দ্বারা যা উদ্দেশ্য তাও এক মিথ্যা অপবাদ, বর্ণিত আছে, সাকীফা দিবসে তিনি সায়াদ ইব্‌ন উবাদাহর নেতৃত্ব নষ্ট করার জন্য আবু বকরের হাতে প্রথম আনসারী সাহাবী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। যেহেতু বাশীর ইব্‌ন সায়াদ আনসারীদের নেতৃস্হানীয় ছিলেন। তিনি যখন দেখলেন, আনসাররা সকলেই সায়াদ ইব্‌ন উবাদহর (এই ঘটনায় বর্ণিত কায়েসের পিতা) নেতৃত্ব গ্রহণ ও তাঁর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন কিন্তু বাশীর তা নষ্ট করে দেন। তার নেতৃত্ব ধ্বংস করার চেষ্টা করেন এবং এ বিষয়ে কথা বলেন। অতঃপর বাশীর আবু বকরের হাতে বাইয়াত নিলেন তাঁর প্রতি ভালবাসার দাবীতে নয় বরং সায়াদ ইব্‌ন উবাদাহ থেকে নেতৃত্বকে দূরে সরানোর জন্য! এরপর আনসাররা আবু বকরের বাইয়াত গ্রহণের জন্য ঝাপিয়ে পড়ে এবং সায়াদ ইব্‌ন উবাদাহকে পরিত্যাগ করে। (তাবরাসী, আল-ইহতিজাজ: ১/১৭৮; বাহহার“ল আনওয়ার: ২৮/১৮২; শরহ্‌ নাহজুল বালাগাহ: ৬/৭০৬। )

এ ঘটনা ইতিহাসের গ্রন্হাবলীতে কোন প্রকার সনদ ছাড়াই বর্ণিত হয়েছে। এর অর্থ দাড়ায় নুমানের পিতা কায়েসের পিতার সাথে সাকীফার দিনে যা করেছিল তা ভুলে যাননি ফলে তিনি নুমান থেকে তার প্রতিশোধ নিতে চান।

সাহাবীগণের বৈশিষ্ট্য, তাঁদের দ্বীন, তাকওয়া, তাপস্য সম্পর্কে অবহিত কোন বিবেকবান ব্যক্তি কি এর সঙ্গে একমত হবেন?

এর অর্থ এও দাঁড়ায় যে, কায়েস আলী রাদি আল্লাহু আনহুর খিলাফাতকে স্বীকার করেন না। যেহেতু তিনি মনে করেন প্রথম থেকেই খিলাফত তার পিতার অধিকার। আর এটাই তার বিদ্বেষের কারণ ছিল। অতএব সাহাবীগণের ব্যাপারে যারা এমন মিথ্যা বর্ণনার আশ্রয় নেন এ বিষয়ে আপনাদের মতামত কী?

সাকীফার ঘটনায় সায়াদ ইব্‌ন উবাদাহ ও বাশীর ইব্‌ন আযাদের মধ্যকার শত্রুতার যে বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে তা নিছক মিথ্যা ও সাহাবীগণের উপর অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়।

(২) প্রতিপক্ষের জন্য এই ঘটনা উল্লেখ না করাই উত্তম ছিল। কেননা এতে এমন কিছু বর্ণনা বিধৃত হয়েছে যা সাহাবী সংক্রান্ত তাদের নীতিমালা ও আকীদা বিশ্বাসের বিপরীত। কায়েস এখানে মুহাজির, আনসার ও তাঁদের উত্তম অনুসারীদের প্রশংসা করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তাঁরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী হয়ে যুদ্ধ করেছেন। এসব প্রশংসা কায়েস করেছেন সিফফীন যুদ্ধের সৈন্যদের বিষয়ে অথর্াৎ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের অনেক বৎসর পরের ঘটনা সম্পর্কে। অতএব এ বিষয়টি প্রতিপক্ষের বিশ্বাসের বিপরীত। কেননা তারা বিশ্বাস করে, হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত সব সাহাবীই রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর ধর্মত্যাগ করেছিলেন।

সুতরাং বিরুদ্ধবাদী এই প্রশংসার মাধ্যমে যা সাব্যস্ত করতে চাচ্ছেন তা কি প্রমাণিত হয়? নাকি তিনি এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুসন্ধান করবেন, যেভাবে তিনি অন্যের ক্ষেত্রে করেছেন?

হে আল্লাহ! তোমার হিদাআত ও সৎপথ দান কর।

Related Post