পরিবার ও নিজ অধীনস্তদের সঠিক নির্দেশনা প্রদান
Originally posted 2013-02-10 14:24:30.
পরিবার-পরিজন, স্বীয় জ্ঞানসম্পন্ন সন্তান-সন্ততি ও আপন সমস্ত অধিনস্থদেরকে আল্লাহ্র অনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর অবাধ্যতা থেকে তাদের নিষেধ করা, তাদের আদব শেখানো এবং শরয়ী নিষিদ্ধ জিনিষ থেকে তাদেরকে বিরত রাখা ওয়াজিব।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا অর্থাৎ আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন।’(সূরা তাহা আয়াতঃ ১৩২) তিনি আরও বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ.
অর্থাৎ “মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।’’ (সূরা তাহরীম আয়াতঃ ৬ ) এখানে কয়েকটি হাদীসের উল্লেখ করা হল যেখানে আমরা দেখতে পারি আমাদের নবী (সাঃ) ছোট বড় সব ধরনের বিষয়ে সবসময় পরিবার পরিজনদের সবসময় সঠিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
১। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন , হাসান বিন আলী (রাঃ) সাদকার একটি খুরমা নিয়ে তাঁর মুখে রাখলেন । তা দেখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘‘ছিঃ ছিঃ! ফেলে দাও। তুমি কি জান না যে আমরা সাদকাহ খাই না?’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘ …… আমাদের জন্য সাদকাহ হালাল নয় ।’’
এই হাদিসটিতে মহানবী (সাঃ) তাঁর প্রিয় নাতি হাসানকে তাদের জন্য নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন।
২। রাসূল্লুল্লাহ (সাঃ)- এর সৎ ছেলে আবূ হাফস উমার ইবনে আবী সালমা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ আসাদ কতৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘ একদা আমি ছোট হিসেবে নবী (সাঃ)- এর কোলে ছিলাম। খাবার (সময়) বাসনে আমার হাত ঘুরছিল। রাসূল্লুল্লাহ (সা) আমাকে বললেন, ‘‘ ওহে কিশোর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছ থেকে খাও।’’ তারপর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করে আসছি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদিসটিতে আমরা দেখছি খাওয়ার আদবের শিক্ষা দিচ্ছেন রাসুল (সাঃ)
৩। ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তাঁর অধিনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে । দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহি করবে । পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে । গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে । তোমরা পত্যেকেই দায়িত্বশীল । অতএব পত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত সহীহুল বুখারী
৪। আমর ইবনে শুআইব (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি আমরের দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে । আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও ।’’ (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)
৫। আবূ সুরাইয়াহ সাবরাহ ইবনে মা’বাদ জুহানী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘ তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সে নামায শিক্ষা দাও এবং দশ বছর বয়সে তার জন্য তাকে মার ।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী )
আবূ দাউদের শব্দেঃ ‘‘শিশু সাত বছর বয়সে পোঁছালে তাকে তোমরা নামাযের আদেশ দাও ।”
উপরোক্ত কয়েকটি হাদিস ও কুরআনের আয়াত থেকেই আমরা বুঝতে পারি, নিজ অধীনস্তদের সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা আমাদের সকলের জন্য কত জরুরী। আমরা যারা নিজ সন্তানদের স্নেহের আধিক্যের কারণে সময় মতো নামাজ পড়তে বাধ্য করি না, অথবা কোন ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে বিরত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করি না, কিংবা নিজ অধীনস্ত কর্মী (এমন কি অধীনস্ত গৃহ কর্মীদেরও ) বেলায় দ্বীনি বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকি, তাহলে তার দায়ভার আমাদেরকেই বহন করতে হবে।
আল্লাহ যেন আমাদেরকে সঠিক আমল করার ও সেই অনুযায়ী আমাদের পরিবার ও অধীনস্তদের পরিচালনা করার তৌফিক দান করেন। ==আমীন==