আমাদের দেশে এক শ্রেণীর আলেম আছেন, যাদের সৃষ্টিতে টিভি হারাম। চাই ইসলামী হোক কিংবা অনৈসলামী। এবার দেশে ছুটিতে গিয়ে কাদিয়ানীর চেলা বরকতুল্লাহর তনয় হাবীবুল্লাহ ভণ্ড নবুওতদাবীদারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করছিলাম। কথা প্রসঙ্গে টিভিতে কাদিয়ানীদের প্রচার সম্পর্কে বলেছিলাম; যে তারা বিশ্বের অনেক ভাষায় সরাসরি তাদের দাওয়াত প্রচার করছে। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে আলোচনা সংক্ষেপ করতে বলা হলো। উপস্থিত জনতা হতে আওয়াজ আসা শুরু হলো যে, হুজুর টিভির ওয়াজ বন্ধ করুন। আমি আমার আলোচনা যথা সময়ে শেষ করলাম। আমাকে ভিতরে ডাকা হলো, সকলে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, আপনি তো আজ টিভি দেখা জায়েয করে দিলেন! আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম, এবং বললাম: আমি টিভি হালাল করতে যাবো কেন? টিভি তো আগ থেকেই হালাল। এই জবাব শুনে সকলে এক সঙ্গে বলা শুরু করলো, আপনি বলেন কি! টিভি দেখা হারাম, আমরা এই ফতোয়াই দিয়ে আসছি।
তখন আমি বললাম,আপনাদের এই ফতোয়া শুনে কয়জন লোক টিভি দেখা ত্যাগ করেছে? এবং কয়টি বাড়ি দেখাতে পারবেন যে, টিভি নাই? অথচ গ্রামের প্রতিটা ঘরে এখন স্যাটালাইট টিভির লাইন রয়েছে।
আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম,যে এই যুগটা মিডিয়ার যুগ, তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আমাদেরকেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দাওয়াতী কাজে ভূমিকা রাখতে হবে।
স্থানীয় এক শাইখুল হাদীস ও মুফতী বললেন, ২৫টি দলীলের ভিত্তিতে টিভি দেখা হারাম।
আমি বললাম, দুই একটা দলীল পেশ করুন। তিনি বললেন, দেখুন টিভিতে উপস্থাপনা মহিলারা করে থাকে, তাই হারাম। এই দলীল শুনে হাসবো না কাঁদবো, বললাম অনেক টিভি চ্যানেল এমন আছে, যার উপস্থাপক পুরুষ। মহিলাদের সেখানে কোন সুযোগ নাই। তখন তিনি বললেন, এমন হতেই পারে না। বললাম, হতে পারে। ক্বানাতে মাজদ, ( সৌদী আরব, ক্বানাতে রিসালা, কুয়েত, তাছাড়া ক্বানাত ইক্বরা, এছাড়াও মধ্যপ্রচ্যের সব দেশেই এমন চ্যানেল রয়েছে, যেগুলোতে ইসলামী আলোচনা, কুরআন তেলাওয়াত, হাদীসে রাসূলের আলোচনা হয়ে থাকে। আমার একথা শুনে শায়খ বললেন, যে তবুও হারাম। আমি বললাম এগুলোতে তো আর মহিলারা উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে না। তিনি বললেন, টিভির আবিষ্কারকরা অমুসলিম, তাই টিভি দেখার হারাম। (এটা তার দ্বিতীয় দলীল) আমি বললাম, মাশা আল্লাহ! আজব দলীল পেশ করলেন। এটা যদি হারাম হওয়ার দলীল হয়, তাহলে তো আজ আর এখান থেকে বাড়িতেই যেতে পারবনে না! কারণ, যে গাড়িতে চড়ে বাসায় যাবেন, তাও তো অমুসলিমদের আবিষ্কার, আপনার হাতের মোবাইল সেটটি অমুসলিমদের আবিষ্কার, আপনি হজ্জ করতে সৌদী আরব গিয়েছিলেন, প্যালেনে চড়ে তাও অমুসলিমদের আবিষ্কার, এই দলীলে যদি টিভি দেখা হারাম হয়, তাহলে তো আপনার হজ্জ হয় নাই, বাড়িতে যাওয়া হারাম হবে, মোবাইল ফোন রাখতে পারবেন না।
তাদের সবগুলো দলীল এমন খোড়া যা একজন সাধারণ গবেষক জবাব দিতে পারবেন। কুরআন ও হাদীস হতে একটি দলীলও দিতে পারেন নি। আরো কত কথা। আমার ইমেইজ বিলীন করে দিলাম, কারণ আমি টিভির পক্ষে কেন কথা বললাম। জনগণ আমার কোন কথাই আর শুনবে না। আমি বললাম, আপনাদের এমন ফতোয়ায় কি কোন বাড়ি টিভি ছাড়া হয়েছে, মোবাইল ছাড়া কোন লোক দেখাতে পারবেন। আপনার নিজের হাতেও অমুসলিমদের তৈরী হারাম মোবাইল রয়েছে।
একসময় এই শ্রেণীর আলেমরা ইংরেজি পড়া হারাম ফতোয়া দিয়েছিলেন। এখন অবশ্য তাড়াও ইংরেজি পড়ান।
হক্কানী ওলামেয় কেরামগণ যদি এমন ফতোয়া না দিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতো, তাহলে ইসলামের সঠিক কথাগুলো বিশ্বব্যাপী সহজে পৌঁছে যেতো। বর্তমানে বাংলাদেশের কয়েকটি টিভিতে ইসলামী আলোচনা হয়, তাদের মধ্য হতে কিছু কিছু চ্যানেলে বেদআতী আলেমগণ অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছে, আবার কিছু চ্যানেলে সঠিক কথা-বার্তা প্রচার হচ্ছে।
দেখুন টিভি একটি যন্ত্র, এর মাধ্যমে আপনি যা দেখাতে চাইবেন,তাই সে দেখাবে,এক কথায় টিভি আয়নার মতো,আয়নার সামনে যে ছবি ধরা হবে,সে তাই দেখাবে, ছবি সুন্দর না হলে যেমন আয়নাকে দোষারোপ করা যায় না, টিভিতেও খারাপ কিছু দেখালে, টিভিকে খারাপ বলা যুক্তি সঙ্গত হবে না। বরং যিনি পরিচালনা করছেন, তাকেই দোষারোপ করতে হবে। টিভিতে যদি ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়,সেই ক্ষেত্রেও টিভিকে হারাম ফাতাওয়া দেওয়া এক প্রকারের অজ্ঞতা বা গোঁড়ামী।
আমার এই কথাগুলো একটি বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে লেখা, কাউকে হ্যায় করা উদ্দেশ্য নয়, আসুন আমরা প্রচারের যতগুলো প্রযুক্তি রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে, ইসলামের সঠিক আলো সারা বিশ্বে পৌঁছে দেই। কারণ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং শোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যতদ্রুত সংবাদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, অন্য কোন উপায়ে এত দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব না।
আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন