তার নাম লুবাবা, লকব বা উপাধী আল-কুবরা এবং কুনিয়াত বা উপনাম উম্মুল ফযল। তার পিতা ছিলেন হারেস ইবনে হাযন আল-হেলালী এবং মাতা ছিলেন কেননা গোত্রের হিন্দ (খাওলা) ইবনেতে আওফ। নবীজীর চাচা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালেবের সাথে তার বিয়ে হয়। নবীজীর স্ত্রী হযরত খাদীজা ইবনেতে খুওয়াইলিদের পর মক্কার মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু আল-এছাবা গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৯৩৭) উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি হিজরতের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। মনে হয়, এ বর্ণনা দুর্বল। কারণ, অন্যান্য সীরাত গ্রন্থে প্রথম বর্ণনাকে নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আব্বাসের ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। তিনি নবীজীর কাছ থেকে প্রায় ত্রিশটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। এসব হাদীসের বর্ণনাকারীদের নাম হচ্ছে, আব্দুল্লাহ্ তাম্মাম, আনাস ইবনে মারেস, আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস, উমাইর, কুরাইব এবং কাবুস। আঁ-হযরত (সা.) অধিকন্তু তাঁকে দেখার জন্য তার ঘরে যেতেন। সেখানে দুপুরে তিনি সামান্য সময় বিশ্রাম গ্রহণ করতেন।
তাঁরা কয়েক বোন ছিলেন। কোরাইশ এবং হাশেম বংশের বিশিষ্ট পরিবারে এদেরকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। তার এক বোন হযরত মায়মূনা নবীজীর স্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। অপর বোন হযরত সালমাকে বিয়ে দেয়া হয় হযরত হামযার সাথে এবং আর এক বোন হযরত আসমাকে বিয়ে দেয়া হয়, হযরত আলীর ভাই হযরত জাফর ইবনে আবূ তালেবের সাথে। এ আসমাকেই পরে হযরত আবূ বকর এবং তার ইন্তিকালের পর হযরত আলীর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এ কারণে তার মাতা হিন্দ ইবনেতে আওফ সম্পর্কে বলা হয় যে, এ দিক থেকে তিনি ছিলেন এক বড় ভাগ্যবান মহিলা। এ ক্ষেত্রে তার কোন নযীর ছিল না। আঁ-হযরত (সা.) বলতেন, উমউল ফযল, মায়মূনা, সালমা এবং আসমা এরা চার বোন মোমেনা। অন্য রেওয়ায়াতে উল্লেখ আছে যে, উম্মুল ফযল, মায়মূনা, সালমা আসমা লুবাবাতুস সুগরা, হোযাইলা ইয্যাহ এরা সব বোনই মোমেনা। উম্মুল ফযল বিদায় হজ্জে নবীজীর সঙ্গে হজ্জও আদায় করেন। হজ্জের সময় আরাফার দিন অনেকে সন্দেহ করে যে, হযরত (সাঃ) রোযা রেখেছেন। হযরত উম্মুল ফযলের নিকট এ সন্দেহ প্রকাশ করা হলে তিনি নবীজীর খেদমতে এক পেয়ালা দুধ পাঠান। নবীজী দুধ পান করলে এ ব্যাপারে তাদের সন্দেহ দূর হয়। তিনি ছিলেন অতি ইবাদাতগুযার, অতি যাহেদ মহিলা। প্রত্যেক সোম বৃহস্পতিবার তিনি রোযা রাখতেন।
সন্তানদীর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ভাগ্যবান মহিলা। তার সব সন্তানই ছিল অত্যন্ত যোগ্য। আবূল ফযল, আবদুল্লাহ, ওবায়দুল্লাহ, মাবাদ, কাশাম, আবদুর রহমান এবং উম্মে হাবীবা তার স্মৃতিবাহী সন্তান।
কবি আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ হেলালী তার সৌভাগ্যে গর্ব করে একটা কবিতা আবৃত্তি করেন। আঁ-হযরতের মাথা কোলে রেখে চুল আঁচড়ানো বা সুরমা লাগানোর সৌভাগ্য নবুওয়াতের আগে বা পরে অন্য কোন নারী লাভ করতে পারেনি। আর হযরত (সাঃ) তা পছন্দ করতেন না। কিন্তু হযরত উম্মুল ফযল এ গৌরব লাভ করেছেন। একবার তিনি নবীজীর খেদমতে আরয করেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি। যে, আপনার দেহের একাংশ আমার ঘরে আছে। নবীজী বললেন, ইনশা আল্লাহ্ ফাতিমার পুত্র সন্তান হবে, তুমি তাকে দুধ পান করাবে এবং তার লালন পালন করবে। আসলে হয়েছেও তাই। হযরত ফাতিমার পুত্র হযরত হোসাইনের জন্ম হলে হযরত উম্মুল ফযল তাকে দুধ পান করান এবং লালন পালন করেন। একবার হযরত হোসাইনকে নিয়ে নবীজীর কাছে যান। তিনি নবীজীর কোলে পেশাব করে দিলে তাকে হযরতের কোল থেকে নিয়ে রাগ করে বলেন, তুই হযরতের কোলে পেশাব করে দিয়েছিস। নবীজী বললেন, তুমি আমার শিশুকে ধমক দিয়ে আমাকে ব্যথা দিয়েছ। এরপর তিনি নিজে পানি দিয়ে পেশাব ধুয়ে ফেলেন। হযরত উম্মুল ফযল খলীফা ওসমান (রাঃ) এর শাসনামলে ইন্তিকাল করেন। তার স্বামী হযরত আব্বাস (রাঃ) তখনও বেঁচে ছিলেন।