বিবাহ-বন্ধন
পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি বিয়ের দিন করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে। আজ আলোচনা করবো ইসলামে বিবাহ বন্ধন সম্পর্কে। ইনশা আল্লাহ
ইসলাম এক সুশৃঙ্খল জীবন-ব্যবস্থা। বিবাহ কোন খেলা নয়। এটা হলো দু’টি জীবনের চির-বন্ধন। তাই এই বন্ধনকে সুশৃঙ্খলিত ও শক্ত করার উদ্দেশ্যে ইসলামে রয়েছে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি।
ইসলামী বিবাহ-বন্ধনের জন্য প্রথমতঃ শর্ত হলো পাত্র-পাত্রীর সম্মতি। সুতরাং তারা যেখানে বিবাহ করতে সম্মত নয় সেখানে জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া তাদের অভিভাবকের জন্য বৈধ নয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, অকুমারীর পরামর্শ বা জবানী অনুমতি না নিয়ে এবং কুমারীর সম্মতি না নিয়ে তাদের বিবাহ দেওয়া যাবে না। আর কুমারীর সম্মতি হলো মৌন থাকা। (বুখারী ও মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাযা)
সুতরাং অকুমারীর জবানী এবং কুমারীর মৌন সম্মতি বিনা বিবাহ শুদ্ধ হবে না। এই অনুমতি নিবে কনের বাড়ির লোক।
নাবালিকার বিবাহ তার অভিভাবক দিতে পারে। হযরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল ৬ বছর বয়সে এবং বিবাহ-বাসর হয়েছিল ৯ বছর বয়সে। (মুসলিম: ২১২)
তবে সম্মতি না নিয়ে অভিভাবক অপাত্র, ফাসেক, মদখোর, ব্যভিচারী, বিদআতী বা কোন অযোগ্য পুরুষের হাতে তুলে দিলে মহিলা বা সাবালিকা হওয়ার পর নিজে কাজীর নিকট অভিযোগ করতে পারবে। ইচ্ছে করলে বিবাহ অটুট রেখে ঐ স্বামীর সাথেই সংসার করতে পারে, নচেৎ বাতিল করাতেও পারে। (আবু দাউদঃ ৩১৩)
পাত্রীর জন্য তার অলী বা অভিভাবক জরুরি। বিনা অলীতে বিবাহ বাতিল। (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযা, মুসনাদে আহমদ, ইরওয়াউল গালীল)
এই অলী হবে সাবালক, সুস্থমস্তিষ্ক ও সুবোধসম্পন্ন সচেতন মুসলিম পুরুষ। যেমন পাত্রীর পিতা, তা না হলে দাদা, না হলে ছেলে বা পোতা, না হলে সহোদর ভাই, না হলে বৈমাত্রেয় ভাই, না হলে আপন চাচা, নচেৎ পিতার বৈমাত্রেয় ভাই, না হলে চাচাতো ভাই, অনুরূপ নিকাত্মীয়।
সুতরাং বৈপিত্রেয় ভাই, ভাইপো, নানা, মামা, অলী হতে পারে না। অনুরূপ মা বাবা অন্য কোন মহিলার অভিভাবকত্বে বা আদেশক্রমে বিবাহ হবে না। (আয যিওয়াজ. ১৬) যেমন নিকটের অলী থাকতে দূরের অলীর; যেমন বাপ থাকতে দাদার বা দাদা থাকতে ভায়ের অভিভাবকত্বে নারীর বিবাহ হয় না।
অনুরূপ পালয়িতা বাপ কোন অলীই নয়। যার কোন অলী নেই তার অলী হবে কাজী। (মাজাল্লাতুল বুহুসুল ইসলামিয়া:৯/৫৫)
বাপ নাস্তিক বা কবরপূজারী হলে মেয়ের অলী হতে পারে না। (মাজাল্লাতুল বুহুসুল ইসলামিয়া ২৬/১৩৮)
অভিভাবক ছাড়া নারীর বিয়ে হয় না। যেহেতু পুরুষের ব্যাপারে তার মোটেও অভিজ্ঞতা থাকে না। আবেগ ও বিহ্বলতায় স্বামী গ্রহণে ভুল করাটাই তার স্বাভাবিক, তাই পুরুষ অভিভাবক জরুরি। তবে অবৈধ অভিভাবকত্ব কারো চলবে না। (মাসউলিয়্যাতিল মারআতিল মুসলিমা ৭০ পৃষ্ঠা)
সাধ্যমত সুপাত্র ও যোগ্য স্বামী নির্বাচন ছাড়া খেয়াল-খুশি মত যার-তার সাথে মেয়ের বিবাহ দিতে পারে না। যেহেতু অভিভাবকত্ব এক বড় আমানত। যা নিজের স্বার্থে যেখানে সেখানে প্রয়োগ করতে বা নিজের কাছে ভরে রাখতে পারে না। যথাস্থানে তা পৌঁছে দেওয়া ফরয। মহান আল্লাহ বলেন; হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও রাসূলের খেয়ানত করো না এবং তোমাদের (গচ্ছিত) আমানতেরও নয়। (সূরা: আনফাল: ২৭)
“তিনি কোন খেয়ানতকারী (বিশ্বাসঘাতক) অকৃতজ্ঞকে ভালোবাসেন না।” (সূরা হজ্জ : ৩৮) আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমানত তার যথার্থ মালিককে প্রত্যর্পণ কর…।” (সূরা আনফাল: ৫৮)
সুতরাং যেমন অপাত্রে কন্যাদান হারাম। অনুরূপ সুপাত্র পাওয়া সত্ত্বেও কন্যাদান না করাও হারাম। কন্যার সম্মতি সত্ত্বেও নিজস্ব স্বার্থে বিবাহ না দেওয়া অভিভাবকের অবৈধ কর্তৃত্ব । ওলী এমন বিবাহে বাঁধা দিলে পরবর্তী ওলী বিবাহ দেবে। নচেৎ বিচার-বিবেচনার পরকাজী তার বিবাহের ভার নেবেন। (সহীহ জামেউস সাগীর: ২৭০)
মহান আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা যখন স্ত্রীদের বর্জন করো এবং তারা তাদের ইদ্দত পূর্ণ করে, তখন তাদেরকে তাদের স্বামী গ্রহণ করতে বাঁদা দিও না।” (সূরা বাকারা: ২৩২)
ইসলামী বিবাহে আকদের সময় ২ জন সাক্ষী অবশ্য জরুরি। (ইরওয়াউল গালীল ১৮৪৪)
পাত্র-পাত্রী যদি বিবাহে কোন শর্ত লাগাতে চায়, তাহলে তা লাগাতে পারে। তবে সে শর্ত কোন হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করে নয়। এরূপ হলে সে শর্ত পালন করা ওয়াজেব নয়। সুতরাং পাত্র পক্ষ যদি মোহর না দেওয়ার শর্ত আরোপ করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য ও পালনীয় নয়। বরং অনেকের মতে আকদ শুদ্ধই হবে না। কারণ মোহর দেওয়া ওয়াজেব, যদিও তা সামান্যই হোক না কেন। অনুরূপ যদি পাত্রীপক্ষের নিকট থেকে কিছু পণ পাওয়ার শর্ত লাগিয়ে বিবাহ করে তাবে সে শর্ত পালন পাত্রীপক্ষের জন্য ওয়াজেব নয়। (ফিকহুস সুন্নাহ ২৮৪৭)