আবহমান কাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মে আল্লাহ, ভগবান, গড বা ঈশ্বর শব্দগুলো অল্পবিস্তরসবার মনে রেখাপাত করে আসছে। বিরাট বিশ্বের বিচিত্র প্রকৃতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরেমানুষের চিন্তাধারাকে নানাভাবে আলোড়িত করেছে এবং এখনো করছে। অসীম, অনন্ত এবংবিচিত্র পৃথিবীর আদি বা মূল সত্তা সম্বন্ধে যুগ-যুগান্তরব্যাপী মানুষ বিভিন্নভাবে এশব্দগুলোর ব্যা
খ্যা করার প্রয়াস পেয়েছে। এ জটিল এবং ব্যাপক সমস্যার প্রকৃতিনির্ণয় এবং ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমরা তাই বিভিন্ন ধর্মের ভাবধারার সাথে পরিচিতহই।
আল্লাহ, ঈশ্বর, গড বা ভগবান বলতে মানুষ একটি আধ্যাত্মিক অতীন্দ্রিয় সত্তাবোঝেন। এ আধ্যাত্মিক সত্তা ন্যায়পরায়ণ ও সর্বশক্তিমান। স্বর্গ-মর্তের যাবতীয়ঘটনার ওপর তাঁর কর্তৃত্ব বিদ্যমান। মানুষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে আধ্যাত্মিকসত্তাকে বুঝতে পারে এবং যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়েতোলাও বিচিত্র নয়। সত্তা ন্যায়, নীতি, সত্য, সুন্দর প্রভৃতি উচ্চতম গুণাবলির আধারও মূর্ত রূপ। ধর্মীয় স্রষ্টা সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে হিন্দুধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, জরাথুষ্ট্রের ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, কনফুসিয়াসের ধর্ম ও সর্বোপরি ইসলামধর্মীয় মতবাদ আলোচনা করা প্রয়োজন।
ইহুদি ধর্মে স্রষ্টার ধারণা : স্রষ্টার নামজিহুবা, উপাস্য হিসেবে নাম ইলোহিম, তাদের গ্রন্থে রয়েছে জিহুবা আমাদের খোদা, জিহুবা এক। জিহুবা সর্বশক্তিমান, সর্বোচ্চ, পবিত্র স্রষ্টা, পালনকর্তা, তিনিএকমাত্র উপাস্য। ল করো আমিই প্রথম, আমিই শেষ, আমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
ইহুদিধর্মে বিখ্যাত দশ আদেশনামার প্রথম দু’টি হচ্ছে১. তোমরা আমাকে ছাড়া কাউকেউপাস্যরূপে গ্রহণ করবে না; ২. কোনো মূর্তি তৈরি করবে না।
অতএব বোঝা গেল, ইহুদিধর্ম একটি একত্ববাদী ধর্ম। কিন্তু তাদের কোনো সম্প্রদায় উযায়েরকে আল্লাহর পুত্রবলে স্বীকার করে এবং মূসা আ: নবীর আনীত ধর্মীয় কিতাবকে কেয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকারকথা বিশ্বাস করে। পরকালে তারাই আল্লাহর সাথে তাদের আত্মীয়তা ও ঘনিষ্ঠতা আছে বলেশাস্তি তাদের স্পর্শ করবে না বলে বিশ্বাস রাখে।
খ্রিষ্টধর্মে স্রষ্টার ধারণা :খ্রিষ্টধর্মে পরম সত্তাকে বোঝানোর জন্য গড শব্দটি ব্যবহার করে। তাদের ভাষায় যিশুইন্তেকালের সময় চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘এলি এলি লিমা সাবাকতানি।’ অর্থাৎ
হে আমারগড, হে আমার গড, তুমি আমাকে কেন পরিত্যাগ করলে? এ থেকে বোঝা যায়, পরম সত্তাবোঝানোর জন্য ইলাহ শব্দটি বোঝানো হয়েছে। এ ধর্ম তাওহিদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, কিন্তু কালের আবর্তনে তার এই এক ঈশ্বর ত্রি-ঈশ্বরে রূপলাভ করেছে। পরবর্তীকালেপ্রচার করা হলো ঈশ্বর, গড দি ফাদার, গড দি সান এবং দি হোলি ঘোস্ট-পিতা, পুত্র ওপবিত্র আত্মার মধ্যে বিভক্ত। যিশুর একেশ্বরবাদ এমনি করে ত্রিঈশ্বরবাদে পরিণত হলো।অধিকন্তু অনেকে ভগবানের দূত যিশুকে ঈশ্বরের পুত্র, এমনকি ঈশ্বর বলেই আখ্যায়িতকরলেন। অসীম, অনন্ত, শাশ্বত, পবিত্র ও সর্বত্র বিদ্যমান ঈশ্বর সসীম ও ণস্থায়ীমানুষের মাঝে এমনিভাবে বিকৃত ও কলুষিত হলেন।
হিন্দুধর্মে স্রষ্টার ধারণা :খ্রিষ্টধর্মের মতো হিন্দুধর্মও প্রথমে ভগবানকে একক ঐশী সত্তারূপে প্রচার করেছে। ‘একমেবা দ্বিতীয়ম’ এ ছিল হিন্দুধর্মের মূলমন্ত্র। কিন্তু পরে এই একক ঈশ্বর বহুদেব-দেবীর মধ্যে হারিয়ে যায়। হিন্দু ধর্মনেতারা ভগবানকে বিভক্ত করলেন ব্রহ্ম, বিষ্ণু, শিব এ তিন দেবতার মধ্যে। সৃষ্টির দেবতা, প্রতিপালনের দেবতা এবং ধ্বংসেরদেবতা এ তিনের মাঝে ঈশ্বরকে বিভক্ত করা হলো। এ ছাড়া এ ধর্মের লোকেরা প্রকৃতিরশান্তিকে বিশ্বাস করে। আসমানের দেবতা, মাটির দেবতা, বৃষ্টির দেবতা, বিদ্যুৎ ওসমুদ্রের জন্য পৃথক দেবতায় বিশ্বাস করে। এদের জন্য পবিত্রতা বর্ণনা করে, উপাসনাকরে, বলি দেয়, এদের কাছে সাাহায্য চায়, কল্যাণ কামনা করে ও শত্র“ দমনে সাহায্যচাওয়ার প্রথা রয়েছে।
বৌদ্ধ ধর্মে স্রষ্টার ধারণা : বৌদ্ধ ধর্মে স্রষ্টার কোনোধারণা নেই। নেপালের হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে তারাই অঞ্চলে সাক্যবংশীয় রাজবংশেজন্মগ্রহণ করা বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক সিদ্ধার্থ গৌতমকে স্রষ্টা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকরা হলে চুপ থাকত, বুদ্ধের শিাকে নাস্তিকবাদী বা আস্তিকবাদী বলা যায় না বরংবৌদ্ধের অনুসারীদের মূল বিষয় বুদ্ধের ব্যক্তিত্ব ও তার বোধসত্তার বিশ্বাস।
মক্কার কাফিরদের স্রষ্টা সম্পর্কে ধারণা : মক্কার কাফিরদের ইবাদত ছিল সেজদাকরা, কোরবানি করা, মানত করা, দোয়া করা, সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। এসব ইবাদততারা আল্লাহর জন্যও করত এবং অন্য উপাস্যদের জন্যও করত। তারা আল্লাহকে এ মহাবিশ্বেরএকমাত্র মালিক, প্রতিপালক, সব মতা ও রাজত্বের অধিকারী ও সর্বশক্তিমান বলে বিশ্বাসকরত। তারা বিশ্বাস করত যে, তিনিই একমাত্র স্রষ্টা। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন, আপনিযদি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, কে তাদের সৃষ্টি করেছেন? তারা উত্তরে বলবে, আল্লাহ। তাহলেতারা কোথায় চলেছে? (জুখরুফ-৮৭)
কাফিররা আল্লাহর কাছে দোয়া করত ও সাহায্যপ্রার্থনা করত। রাসূল সা: যখন তাদের (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) কালেমার দাওয়াত দিলেন, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে আহবান করলে তখন তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলত,হেআল্লাহ, যদি (মুহাম্মাদ যা প্রচার করছে) তা আপনার পাঠানো সঠিক ও সত্য ধর্ম হয়, তাহলে আপনি আমাদের ওপর আসমান থেকে পাথর বর্ষণ করুন অথবা আমাদের যন্ত্রণাদায়কশাস্তি দান করুন।’ (আনফাল-৩২)
বদরের যুদ্ধের আগে মক্কার কাফিররা কাবার গিলাফ ধরেআল্লাহর কাছে দোয়া করেন এবং বলেন, হে আল্লাহ আপনি আমাদের এবং মুহাম্মাদের দলেরমধ্যে যে দল বেশি সম্মানিত ও বেশি ভালো তাদের বিজয়ী করে দেন। কাফিরদের সরদার আবুজাহল আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলে, ‘হে আল্লাহ আমাদের (কাফির ও মুসলিমদের) মধ্য থেকেযারা বেশি পাপী, যারা বেশি আত্মীয়তা নষ্টকারী তাদের আপনি এ যুদ্ধে পরাজিত করুন। (তাফসিরে তাবারি, ৯ খণ্ড ২০৭-২০৮ পৃ:, সহিহ বুখারি ও ফাতহুল বারি, ৮ খণ্ড ৩০৮পৃষ্ঠা)
বিশেষত কঠিন বিপদে তারা সব উপাস্য ছেড়ে আল্লাহকেই ডাকত, তাঁর কাছেত্রাণ প্রার্থনা করত। আল্লাহ বলেছেন,وমেঘচ্ছায়ার মতো তরঙ্গ তাদের আচ্ছন্ন করেফেলে তখন তারা বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করে।’ (লুকমান -৩২)
এখন প্রশ্নহলো, মক্কার কাফিররা যখন বিশ্বাস করত যে, আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা, প্রতিপালক, রিজিকদাতা, বৃষ্টিদাতা, জীবন ও মৃত্যুদাতা, সর্বশক্তিমান, মানুষের সব শক্তি ও মতাতাঁরই নিয়ন্ত্রণে, সব কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক তিনি, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউইকারো কোনো কল্যাণ করতে পারে না এবং তারা আল্লাহর ইবাদতও করত, তাহলে তাদের কাফির বলেগণ্য করা হলো কেন? আর কেনই বা তারা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) বলতে অস্বীকার করল? কেনতারা রাসূল সা:-এর ঈমানের আহবান প্রত্যাখ্যান করল এবং মুসলিমদের ওপর সীমাহীনঅত্যাচার চালাল? এর কারণ হলো তারা আল্লাহকে তাঁর কর্ম গুণাবলিতে এক ও অদ্বিতীয় বলেবিশ্বাস করত কিন্তু সব ইবাদত ও উপাসনামূলক কর্মের একমাত্র প্রাপক বলে বিশ্বাস করতনা। তাই তারা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) বলতে অস্বীকার করেছেন এবং কাফির বলে গণ্যহয়েছেন।
ইসলামের স্রষ্টাতত্ত্ব : ইসলামের মূল আকিদা বা বিশ্বাস হচ্ছে তাওহিদ বাএকত্ববাদ। আল্লাহ অনাদি ও অনন্ত, বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক, তিনি লা শরিকতাঁর কোনো শরিক নেই, এক ও এককের দৃঢ় বিশ্বাসকে তাওহিদি আকিদা বলে। তাওহিদ তিনপ্রকার।
১. মূল সত্তার তাওহিদ : অর্থাৎ সত্তাগত আল্লাহ একক ও অদ্বিতীয়। তাঁরকোনো শরিক নেই। কেউ তাঁর সমক নয়। আল্লাহর বাণী, ‘বলো, তিনি আল্লাহ এক, তিনি কারোমুখাপেী নন। কাউকে জন্ম দেননি তাকেও কেউ জন্ম দেননি। তাঁর সমক কেউ নেই।’ (ইখলাস১-৪)
২. গুণাবলির তাওহিদ : আল্লাহ এমন গুণে গুণান্বিত, যে গুণগুলো অন্যের মধ্যেপাওয়া যায় না। এ েেত্র তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর গুণ দুই প্রকার, ইতিবাচক ও নেতিবাচক।ইমাম মাতুরিদি বলেন, আল্লাহর ইতিবাচক সিফাত বা গুণাবলি আটটি। যথা১. হায়াত, ২.ইলম, ৩. ইচ্ছা, ৪. কুদরত, ৫. শ্রবণশক্তি, ৬. দৃষ্টিশক্তি, ৭.কালাম বা কথা, ৮.তাকবিন হও বলা। আল্লাহর বাণী, ‘কোনো কিছুই তাঁর সাথে তুলনীয় নয়, তিনি সব কিছুশুনেন, সব কিছু দেখেন।’ (শুরা-১১)
নেতিবাচক : যেমন, আল্লাহ এমন সত্তা নন, যেঅন্যের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, তাঁর দেহ নেই, আকৃতি নেই, শরিক নেই। রঙ ও বর্ণ নেই, কালের গণ্ডির বাইরে। তিনি অবিভাজ্য, তিনি বেমেছাল। আল্লাহর বাণী তোমরা আল্লাহরজন্য উপমা ও তুলনা ব্যবহার করবে না। (নাহল-৭৪)
৩. ইবাদতের তাওহিদ : আল্লাহ ছাড়াকাউকে ইবাদত করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না বরংএকমাত্র আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা তারই ইবাদতকারীহয়ে থাক। (হা-মীম সেজদা : ৩৭) কেউ যদি আল্লাহর ইবাদত করেন এবং সাথে সাথে অন্য কারোইবাদত করেন তাহলে তিনি আল্লাহর ইবাদতকারী বলে গণ্য হবেন না। কারণ তিনি ইবাদতেআল্লাহর সাথে কাউকে শরিক বা অংশীদার করেছেন এবং শিরকে লিপ্ত হয়েছেন। আল্লাহরইবাদতের অর্থ হলো একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা। কোনো প্রকার ইবাদতমূলক কর্ম আল্লাহছাড়া অন্য কারো জন্য না করা। কুরআন কারিমে আল্লাহ এ বিষয়ে শিা দান করেছেন যে, বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না বা শিরকে লিপ্তহবে না। এ হলো (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) অর্থ ও নির্দেশ। আল্লাহর বাণী, ‘তিনিচিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই। তাই সার্বিক আনুগত্য ও একনিষ্ঠতারসাথে বিশুদ্ধভাবে তাঁকেই ডাকো, তাঁর কাছেই দোয়া করো।’(গাফির-৬৫)
প্রশ্ন জাগাস্বাভাবিক। আল্লাহকে একমাত্র স্রষ্টা বা সর্বশক্তিমান মালিক জানার পরও অমুসলিমরাঅন্যান্য দেব-দেবী বা মূর্তির পূজা, উপাসনা বা ইবাদত করত কেন?
কুরআন কারিমেরবিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে, তারা বিশ্বাস করত, আল্লাহ একমাত্রপ্রভু, প্রতিপালক এবং সব মতার মালিক। তবে তাদের ধারণা ছিল, কিছু মানুষ ও ফেরেশতাআছেন যারা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয়, তাদের সুপারিশ আল্লাহ গ্রহণ করেন। এসব ফেরেশতা ওমানুষের ইবাদত উপাসনা করলে, এরা খুশি হয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে মানুষের বিপদকাটিয়ে দেন, প্রয়োজন পূরণ করেন।
এদের ডাকলে এরা মানুষকে আল্লাহর কাছে পৌঁছেদেন। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদত করার পেছনে এ দুটি ছিল তাদের যুক্তি। প্রথমত, এরা আল্লাহর প্রিয়, কাজেই এদের ডাকলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করা যায়।দ্বিতীয়ত, এরা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে বিপদ কাটিয়ে দেন, প্রয়োজন মেটান। এব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, আমি আপনার কাছে এ কিতাব (আল কুরআন) যথাযথভাবে অবতীর্ণকরেছি অতএব আপনি বিশুদ্ধ আনুগত্যের সাথে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করুন। জেনে রাখুনঅবিমিশ্র বিশুদ্ধ আনুগত্যই আল্লাহর প্রাপ্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য আউলিয়া (অভিভাবক বা বন্ধু) গ্রহণ করেছে তারা বলে আমরা তো এদের শুধু এ জন্যই ইবাদত করি যেনএরা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেবে। তারা যে বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত রয়েছেআল্লাহ তার ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী, কাফির আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিতকরেন না। (জুমার : ২-৩)
ইসলামের একত্ববাদ যাবতীয় বহুত্ববাদের অবসান ঘোষণা করেস্বর্গীয় সত্তার একত্ব ঘোষণা করেছে। কুরআনে পাকে বারবার বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ছাড়াঅন্য কোনো মাবুদ নেই।’ ইসলামি একত্ববাদের মর্মবাণী হলো আল্লাহকে স্রষ্টা হিসেবেমেনে নিতে হবে তদ্রƒপ ইবাদতের েেত্রও একমাত্র আল্লাহর ইবাদত এ উপাসনা করতে হবে।অন্য কাউকে ইবাদতে তাঁর অংশীদার করা যাবে না।
ইসলামী তাওহিদ দর্শন মানুষের মনেনিঃসন্দেহে আত্মমর্যাদা এবং আত্মসম্মান বোধ সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেখাঁটি মুসলমান কুর্নিশ না করে যেমন এক দিকে মাথা উঁচু করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা ও গৌরব প্রকাশ করতে জানেন, তেমনি মহামহিম আল্লাহর কাছে মাথানত করে বিনয়প্রকাশ করতেও সে জানে। মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্ব ও আত্মমর্যাদাবোধ তাকে যেমন দৃঢ়সঙ্কল্পের অধিকারী করে তুলেছে, তেমনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ত্ব ও ঔদার্যপ্রকাশের মাধ্যমে তাকে বিনয়ী করেছে।
আল্লাহর একত্ববাদ বিশ্বের সব মানুষকেভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সঙ্ঘবদ্ধ করার মূলমন্ত্র শিা দিয়েছে। আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা।তিনি স্বর্গ, মর্ত, পূর্ব, পশ্চিম এবং মুসলমান ও অমুসলমান প্রত্যেকের প্রভু। মানুষেমানুষে এবং জাতিতে জাতিতে আদর্শগত ভেদাভেদ থাকতে পারে। কিন্তু তারা সবাই এক আল্লাহরসৃষ্টি। আর মানুষ ও সব সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। মানুষের ইবাদত ওউপাসনার মালিক একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন, আমিজিন ও মানুষকে এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা কেবল আমার ইবাদত করবে। (৫১-৫৬)
==0=