মোবাইল ফোন ও সালাম

 মোবাইল ফোন ও সালাম

মোবাইল ফোন ও সালাম

আগে হ্যালো নাকি সালাম?

শরীয়তের বিধান হলো, পরস্পর কথা বলার সময় আগে সালাম দিয়ে কথা শুরু করা। তাই মোবাইলেও কথা বলার সময় আগে হ্যালো না বলে সালাম দিয়ে তারপর কথা বলা শুরু করতে হবে। হ্যালো বা অন্য কোনো শব্দ দিয়ে কথা শুরু করলে নিঃসন্দেহে তা সুন্নত পরিপন্থি কাজ হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যাবতীয় কাজ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন। [তিরমিযি খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠা: ৯৯ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড ঃ ৫, পৃৃষ্ঠা ঃ ৩২৫ আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড ঃ ৯, পৃৃষ্ঠা ঃ ২১ আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড ঃ ৫, পৃৃষ্ঠা ঃ২৬৬]

মোবাইলে আগে সালাম দিবে কে?

‘আস্সালামু কাব্লাল কালাম’ অর্থাৎ সালাম হবে কথার পূর্বে এই নিয়মের ভিত্তিতে মোবাইলে কথা বলার সময় যিনি আগে কথা বলবেন তিনিই সালাম দিবেন।
মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, যিনি ফোন রিসিভ করেন তিনিই আগে কথা বলে থাকেন। কারণ রিসিভ করার পর কথা না বললে অনেক সময় রিসিভ হয়েছে কি না তা বুঝা যায় না। অতএব রিসিভকারী যেহেতু আগে কথা বলে থাকেন তাই তিনিই প্রথমে সালাম দিবেন।
অবশ্য কখনো রিসিভকারী যদি রিসিভ করে কথা না বলেন কিংবা কথা বললেও কোনো কারণে কল প্রদানকারী তা শুনতে না পায় তখন কল প্রদানকারীই আগে কথা বলে থাকেন। এমতাবস্থায় কল দানকারী যেহেতু আগে কথা বলছেন তাই কথা শুরুর আগে তিনিই প্রথমে সালাম দিবেন। এখানে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, নিয়মানুযায়ী প্রথমে যে-ই সালাম প্রদান করুক না কেন, অপরজনকে কিন্তু অবশ্যই সালামের উত্তর দিতে হবে। নচেৎ তিনি গুনাহের ভাগী হবেন। কেননা সালাম দেওয়া সুন্নত হলেও উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। [তিরমিযি, খণ্ড ঃ ২, পৃষ্ঠা ঃ ৯৯]

উভয়ের সালাম এক সাথে হলে করণীয় কি?

অনেক সময় দেখা যায়, রিসিভকারী এবং কলকারী একই সাথে সালাম দেয়। এক্ষেত্রে শরঈ বিধান হলো, উভয়কেই সালামের জবাব দিতে হবে। কিন্তু উভয়ের সালাম যদি একত্রে না হয়ে সামান্য আগে পরে হয় তাহলে পরে সালাম দানকারীকে পুনরায় উত্তর দিতে হবে। যদি সে পুনরায় উত্তর না দেয় তাহলে অর্থের দিক দিয়ে তার সালামটি প্রথম ব্যক্তির সালামের জবাব হয়ে যাবে এবং এর দ্বারা জবাব প্রদানের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু শব্দের দিক থেকে সুন্নত তরিকায় জবাব আদায় হবে না। কারণ তার এ জবাবটি ইচ্ছাকৃতভাবে হয়নি। অথচ কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে

  — ﴿৮৬﴾ (النساء:৮৬) وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا

আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হয় তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম পন্থায় (অর্থাৎ একটু বাড়িয়ে) সালামের জবাব দাও অথবা সালামদাতার সালামের মতোই জবাব দাও। (সূরা নিসা: ৮৬)।
উক্ত আয়াতে নতুন করে ইচ্ছাকৃতভাবে সালামের জবাব প্রদানের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। [শরহুল মুহায্যাব, খণ্ড ঃ ৪, পৃষ্ঠা ঃ ৪৬৩ রদ্দুল মুহতার, খণ্ড ঃ ৬, পৃৃষ্ঠা ঃ ৪৯৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড ঃ ৫, পৃৃষ্ঠা ঃ ৩২৫, তাফসীরে রুহুল মাআনী, খণ্ড ঃ ৩, পৃষ্ঠা ঃ ১০২]

বারবার ফোন করার প্রয়োজন হলে প্রতিবারই সালাম দেওয়া সুন্নত

হাদীস শরীফে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন
“কেউ যদি তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে তাহলে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর যদি কোনো গাছ বা পাথর (অল্প সময়ের জন্য হলেও) দু’জনের মাঝে আড়াল সৃষ্টি করার পর পুনরায় তাদের সাক্ষাৎ হয় তাহলে যেন আবার সালাম দেয়।”
এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেল, কেউ যদি কারো সাথে বারবার সাক্ষাৎ করে তাহলে প্রতিবারই সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু করা সুন্নত।
মোবাইলে কথাবার্তা বলাটা যেহেতু অনেকটা সাক্ষাতে কথাবার্তা বলার মতোই তাই যতবার কথাবার্তা বলবে ততবারই পরস্পর সালাম বিনিময় করা সুন্নত। [মাসায়েলে মোবাইল, পৃষ্ঠা ঃ ৩৭]

ম্যাসেজের মাধ্যমে সালাম ঃ জবাব দিবেন যেভাবে

অনেক সময় দেখা যায়, মোবাইলে যেসব ম্যাসেজ পাঠানো হয় তাতে সালাম জানানো হয়। অর্থাৎ ম্যাসেজের শুরুতে সালাম লিখে তারপর অন্যান্য কথা লিখা হয়। এমতাবস্থায় সালামের জবাব কিভাবে দিবেন? মুখে দিবেন, নাকি সালামের উত্তর লিখে ফিরতি ম্যাসেজ পাঠাবেন?
ম্যাসেজের মধ্যে লিখিত সালাম চিঠির মধ্যে লিখিত সালামের মতোই। অর্থাৎ উভয় প্রকার সালামের হুকুম একই। যেমনিভাবে চিঠিতে লিখিত সালামের জবাব মুখে বা জবাবী চিঠিতে লিখে দেওয়া যায় অনুরূপভাবে ম্যাসেজে লিখিত সালামের জবাবও মুখে বা ফিরতি ম্যাসেজের মাধ্যমে দেওয়া যায়। মোটকথা মুখে কিংবা লিখে যে কোনোভাবে উত্তর দিলেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে উত্তম হলো, সাথে সাথে মুখে উত্তর দিয়ে দেওয়া। কারণ, এমনও হতে পারে যে, ফিরতি ম্যাসেজ পাঠানোর সময় পেল না কিংবা ভুলে গেল। তখন তো ওয়াজিব আদায় না করার গুনাহ ঘাড়ে বর্তাবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে শরীয়তের ছোট বড় সকল হুকুম পরিপূর্ণরূপে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন। [সূরা নিসা, আয়াত ঃ ৮৬ আল ফিকহুল হানাফী, খণ্ড ঃ ৫, পৃষ্ঠা ঃ ৪০৮]

মোবাইলে গাইরে মাহরাম মহিলাদেরকে সালাম দেওয়া জায়েয হবে কি?

যদি ফেতনার আশঙ্কা না থাকে তাহলে পর্দায় থেকে গাইরে মাহরাম মহিলাদের সাথে কথা বলা এবং কথা শুরুর আগে সালাম দেওয়া জায়েয। আর নিয়ম যেহেতু যিনি আগে কথা শুরু করবেন তিনিই প্রথমে সালাম দিবেন তাই যে আগে কথা বলবে সেই সালাম দিবে। অর্থাৎ মহিলা আগে কথা বললে সে আগে সালাম দিবে আর পুরুষ আগে কথা বললে সে আগে সালাম দিবে। [তিরমিযি, খণ্ড ঃ ২, পৃষ্ঠা ঃ ৯৯]

মোবাইলে কাউকে সালাম পৌঁছানোর জন্য বলা

মোবাইলে কথা বলার সময় একজন অপরজনকে বলল, অমুকের নিকট আমার সালাম পৌঁছে দিবেন। এমতাবস্থায় সে যদি সালাম পৌঁছানোর দায়িত্ব গ্রহণ করে তাহলে তার জন্য সালাম পৌঁছানো ওয়াজিব। যদি সে না পৌঁছায় তাহলে গুনাহগার হবে। আর যদি সালাম পৌঁছানোর ব্যাপারে কোনোভাবে সে অক্ষমতা প্রকাশ করে কিংবা চুপ থাকে তাহলে তার উপর সালাম পৌঁছানো ওয়াজিব নয়। এই নিয়ম শুধু মোবাইলে কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেই নয়, সরাসরি কথা বলার সময়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য। অর্থাৎ দায়িত্ব নিলে সালাম অবশ্যই পৌঁছাতে হবে, আর দায়িত্ব না নিলে পৌঁছানো জরুরি নয়। [মোবাইল ফোনের শরঈ আহকাম, পৃষ্ঠা ঃ ২৯-৩০]

মোবাইলে কি শুধু ছোটরা বড়দেরকে সালাম দিবে?

অনেক সময় দেখা যায়, কোনো বড় ও সম্মানী ব্যক্তির কাছে কল করার পর তিনি রিসিভ করে সালাম দিলে তার সালামের জবাব না দিয়ে তাকে পুনরায় কলদানকারী সালাম দেয়। এটা ভুল নিয়ম। সঠিক নিয়ম হলো, বড় ও সম্মানী ব্যক্তি কল রিসিভ করে সালাম দিলে অপর প্রান্ত থেকে কলদানকারী শুধু উত্তর দিবে। পাল্টা সালাম দিবে না। মনে রাখতে হবে, এরূপ পরিস্থিতিতে ছোট-বড় বলে কোনো কথা নেই। এখানে বরং বিবেচ্য বিষয় হলো, যিনি আগে কথা শুরু করবেন তিনিই আগে সালাম দিবেন। আর এক পক্ষ থেকে সালাম দেওয়ার পর অপর পক্ষ থেকে শুধু উত্তর দিবেন। পুনরায় সালাম দিবেন না।
এক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় এমনও অবস্থা হয় যে, উভয় পক্ষ থেকে শুধু সালামই দেওয়া হয়, উত্তর দেয় না কেউই। যা নিয়মের খেলাফ ও গুনাহের কাজ। [তিরমিযি শরীফ, খণ্ড ঃ ২, পৃষ্ঠা ঃ ৯৯]

না জেনে মোবাইলে অমুসলমানকে সালাম দিলে গুনাহ হবে কি?

কল রিসিভ করার সময় যদি রিসিভকারী জানতে না পারে যে, কলদানকারী মুসলমান না অমুসলমান এবং সে না জেনেই অমুসলমান কলকারীকে সালাম দিয়ে দেয় তাহলে তাতে কোনো গুনাহ হবে না। কারণ জেনেশুনে অমুসলমানকে সালাম দেওয়া নিষেধ। ভুলে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে দিয়ে ফেললে গুনাহ হয় না। [আল ইমদাদ স্মারক’ ০৮, পৃষ্ঠা ঃ ১৮২]

Related Post