১৪৩৫ হিজরী সালের ঈদুল ফিতর সালামের মধ্য দিয়ে আমরা মাহে রমযানকে বিদায় দিয়েছিলাম। বছরের ১০ মাস অতিক্রম করে শাবান মাসে আমরা অবস্থান করছি। কিছুদিন পরই আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছি বৎসরের শ্রেষ্ঠ মাস পবিত্র মাহে রমযানে। এখন থেকেই শুরু হোক রমযানের প্রস্তুতি। সালফে সালেহীন তথা পূর্বসূরীগণ ছয় মাস পূর্ব হতেই রমযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। আবার রমযান অতিক্রান্ত হলে ছয় মাস পর্যন্ত রমযানে কৃত আমল কবুল হওয়ার জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের সমীপে কায়মনোবাক্যে দোয়া করতেন। আমরা যারা এখনও রমযানের প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করিনি, আসুন এখন থেকেই আরম্ভ করে দেই রমযানের প্রস্তুতি।
প্রত্যেক মাসের নতুন চাঁদ যখন আমরা দেখবো তখনই যেন দোয়াটি পড়ে নেই। যা রাসূল (সা.) পড়েছেন। তালবা বিন উবায়দুল্লাহ (রা.) বলেন: যখন রাসূল (সা.) নতুন চাঁদ দেখতনে, তখন সবসময় আল্লাহর প্রসংশা করতেন, আর বলতেন: اللَّهُمَّ أَهْلِلْهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ
অর্থাৎ হে আল্লাহ! এই চাঁদকে আমাদের উপর উদিত করুন। নিরাপত্তা, শান্তি, ঈমান ও ইসলামের সাথে। (হে চাঁদ) তোমার ও আমার প্রভু একমাত্র আল্লাহ। এই চাঁদ যেন সঠিক পথের কল্যাণের আগমনের বিষয়ে সতর্ক করতেন।
বছর ঘুরে যখন সেই পবিত্র কুরআনের মাসটি খুবই নিকটে, আর দেরি নয়- এখন থেকেই শুরু করা উচিত রমযানের প্রস্তুতি। মুসলমান তার দুনিয়ার সমস্ত কাজ-কারবারকে তো সেই আখেরাতের পাথেয় বানাবে।
রমযানে ক্ষমা না পেলে আর কখন?
আখেরাতে আমাদের সকলকে যেতে হবে, সম্মুখীন হতে মহান আল্লাহ তায়ালার। খুব সাবধানতার সাথে হায়াত নামক সুযোগটাকে কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ। যারা রমযান মাসকে হেলায় খেলায় অতিক্রম করেছি, তারা এবৎসর খালিস তাওবা করি। কারণ রাসূল মিম্বরে আরোহন করে যেই বদদোআয় আমীন বলেছিলেন; তিনটি বদদোআর মধ্যে এই বদদোআও ছিলো “যে, রমযান মাস পেল, কিন্তু নিজেকে ক্ষমা করাতে পারলো না, সে ধ্বংস হোক।” তা কত বড় ভয় ও ভীতির কথা, কত বড় চিন্তা উদ্রেককারী কথা, আমরা পানাহ চাই।
আসলে প্রতি মুহূর্তে হায়াত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে! আমাদের নিয়্যত, চেষ্টা ও দোআর মধ্যে উন্নতি আসা অতি প্রয়োজন। আর কত কাল আমরা এভাবে গুনাহ দ্বারা নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো?
আজ উম্মতের কি দশা!
হায় বাস্তবে আজ আমরা যারা ঈমানদার হওয়ার দাবী করি- কী অবস্থা আমাদের চিন্তা ফিকিরের জগতে ঘুরপাক দিলে ব্যথার অন্ত থাকে না। ব্যবসা-বাণিজ্য আর কায়-কারবার তো খু উ ব অগ্রগণ্য হয়ে যায় পবিত্র রমযানে। আমাদের অনেক ভাইয়েরা এই রমযানকে পয়সা কামানোর সুবর্ণ সুযোগ মনে করে ঝাঁপিয়ে পড়েন! কোথায় যায় কুরআন নাযিলের মাসে কুরআন তেলাওয়াত, আর কোথায় যায় তারাবীর নামযের মত মূল্যবান ইবাদত? (ইল্লা মান রাহিমা রাব্বুনা) দুনিয়ার জন্য দ্বীন হয় ক্ষতিগ্রস্ত; ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার হিসাব মিলাতে গিয়ে চিরস্থায়ী আখেরাতের হিসাবে রয়ে যায় গড়মিল।
রমযানের চাঁদ দেখা গেলে শুধু রুটিনের মধ্যে আসে একটু পরিবর্তন; মার্কেটে যাতায়াত, ইফতার পার্টি, ইফতারী অতি মজার মজার খাওয়া দাওয়া, বিপুল পরিমাণে কেনা-কাটা এইসব কাজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। কিন্তু আসল যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, রমযানের সিয়াম পালন, সালাত আদায়, কুরআন অধ্যয়ন, ইসলামী জ্ঞান চর্চা এগুলো অবস্থা হয়, রেলগাড়ি ও ভ্যানগাড়ির মতন! মানে এত দ্রুত আর এত নিম্নমাণের, আল্লাহ জানেন এমন তেলাওয়াত তিনি গ্রহণ করবেন কি না? আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দাতো কিছু আছেনই, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাদের সংখ্যা খুুবই হাতেগণা।
রহমত, বরকত আর ক্ষমার এই অপূর্ব সুযোগ পেয়েও যদি আমাদের নাজাত হাত ছাড়া হয়ে যায়, তাহলে এই জীবন কতই না আফসোসের।
সম্মানিত পাঠক! রমযান যেন আমাদের গুনাহ মুক্তির মাধ্যম হয়। রমযান যেন আল্লাহর কাছে আন্তরিক তাওবার উপায় ও উপলক্ষ্য হয়ে যায়। রমযান যেন অশ্লীল ছবি ও সিনেমা প্রত্যাখ্যানের মাধ্যম হয়। রমযান যেন কান্নাকাটি, দোআ, ইস্তেগফার, কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। রমযান যেন নেকি বৃদ্ধির আগ্রহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। রমযান যেন আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের মুহাব্বত অর্জনের উপায় হয়। মহান আল্লাহ যেন আমাদের পবিত্র রমযান মাসের হক যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করেন। আমীন ॥