বাংলাদেশ কুরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-কুয়েত, সাফাত অঞ্চল কর্তৃক আয়োজিত, গেল 04-07-2015 রোজ শনিবার, বাদ আছর, কুয়েত সিটির মসজিদে ফুদালায় (বাংলা খুতবা মসজিদ) রমযান শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। উক্ত আলোচনা সভায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আমি যে বিষয়টি আলোচনা করি, তাহলো: রমযান আমাদের কী শেখায়?
ফেসবুকের বন্ধুগণও উপকৃত হবেন এই প্রত্যাশায় শেয়ার করলাম।
ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভ সাওম বা রোজা, আল্লাহ তায়ালা এটা মানব জাতির উপর ফরজ করে দিয়েছেন। রমযান মাস সাধনা ও আত্মশুদ্ধির মাস এটা অত্যন্ত ফজিলতের মাস সর্বপ্রকার অপরাধের ক্ষমা এ মাসে পাওয়া যায়। এ রমযান মাস থেকে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষাগ্রহণ করা যায় যেমন রোজা বা সিয়াম পাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকার শিক্ষাদেয়।
১। রোযা মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দেয়
عن أبي هريرة -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله-صلى الله عليه وسلم-: (من صام رمضان إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه).
মানুষের পাপ প্রবনতা ও নিষিদ্ধ কাজের দিকে ঝোক এক সহজাত ব্যাপার। আল্লাহর ভীতির দ্বারা সিয়াম মানুষকে এ পাপ থেকে বিরত থাকতে শিক্ষা দেয়, কেননা সিয়াম পালন অবস্থায় অন্যায় করলে যে সিয়াম বা রোজার মূল্য থাকে না।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
ولهذا قال النبي -صلى الله عليه وسلم-: (ليس الصيام من الأكل والشرب، إنما الصيام من اللغو والرفث
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থ : হে বিশ্বাসীগণ তোমাদের জন্য রোযার বিধান দেয়া হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ব পুরুষদের উপর দেয়া হয়েছিল। যাতে তোমরা নিজে দিগকে পাপ হতে সুরক্ষিত করতে পারো।’’
অতএব পবিত্র কুরআনের আয়াতে বোঝা যায় যে, রোযার উদ্দেশ্য শুধু অনাহারে থাকা নয়। খাদ্যসামগ্রী থেকে যেভাবে সংযমী হতে হয় সর্বপ্রকার পাপকাজ হতেও সেভাবে সংযমী হতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূল(সা.) বলেছেন:
অর্থ : ‘‘সাওম ঢাল স্বরূপ’’ অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আত্মরক্ষার হাতিয়ার হল সাওম।
এভাবে আমরা যদি রমযান হতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, তবেই কাঙ্খিত আবাস স্থল জান্নাতের নাজনেয়ামত ভোগ করা সম্ভব: আল্লাহ তায়ালা বলেন:
فهذا الصائم يعطى في الجنة ما شاء الله من طعام وشراب ونساء، قال الله -تعالى-: كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ
. قال مجاهد وغيره: “نزلت في الصائمين”.
২। রোযা শিক্ষা দেয় সর্বপ্রকার গোপনীয় অপরাধ থেকে বিরত থাকতে:
আল্লাহর ভয়ে নির্জনেও খায় না। দুনিয়ার সকল মানুষকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব হলেও আল্লাহকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়। এ বিশ্বাস মানুষকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে বাধ্য করে। যার ফলে মানুষ গোপনেও অন্যায় কাজ করতে পারে না।
৩. সিয়াম সবুরের শিক্ষা দেয় : সাধারণত মানুষের রিপু সবসময় কোন জিনিস পাওয়ার জন্য অস্থির থাকে। তার এ চিত্তের চাহিদা মেটাতে ন্যায় বা অন্যায়ের বিচারটুকু ভুলে যায় সে, এজন্য চিত্তের চাহিদা মেটাবার ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ থাক দরকার। আর এ নিয়ন্ত্রণ থাকার মূলে রয়েছে সবুর বা ধৈর্য। বস্তুত : সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সবুর বা ধৈর্যের শিক্ষা পাওয়া যায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন “وهو شهرُ الصَّبرِ والصَّبرُ ثوابُهُ الجنَّةُ، ‘ইহা সবুরের মাস এবং সবুরের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত বা বেহেস্ত।
৪. আত্মসংযমের শিক্ষা : মানুষের মধ্যে যেমন ফেরেস্তা স্বভাব বা সু-স্বভাব থাকে তদ্রূপ তার মধ্যে পাশবিক বা ইবলিসি স্বভাব থাকে, এ স্বভাব তাকে স্বেচ্ছাচারিতার পথে পরিচালিত করে এবং সংযমহীন রূপে গড়ে তোলে। এর ফলে সমাজে নানা দ্বন্দ্ব ঝগড়া লড়াইয়ের সৃষ্টি হয়। কেননা একশ্রেণীর অসংযমী উচ্ছৃক্মখল লোক অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে এবং সীমালংঘন করে। সাওম ও সীমালংঘনে বাধা দেয়। রাসূল (সা.) বলেছেন:
عن عبد الله بن مسعود يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج ، ومن لم يستطع فعليه بالصوم فإنه له وجاء رواه البخاري و مسلم
৫. সিয়াম মানুষকে সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষাদেয় : মানুষ সাধারণত মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুভব করতে চায় না। কারণ যে ব্যক্তি অভূক্ত থাকেনি সে কি রূপে ক্ষুধার্ত ব্যক্তির ক্ষুধার জ্বালা বুঝবে? তেমনিভাবে যে কখনও রোগাক্রান্ত হয়নি সে কি করে রোগের যন্ত্রণা বুঝবে? তাই সুদীর্ঘ একটি মাসের সিয়ামে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের পানাহার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সকলকেই ইহা উপলব্ধি করতে শেখায়। যে ক্ষুৎ-পিপাসার জ্বালা কি? তাই সিয়ামের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে এমন সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষাদেয় যার নজির বিশ্বের অন্যকোনো ধর্মে নেই।
বস্তুত : সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের স্বীয় উচ্ছৃক্মখল প্রবৃত্তিকে সংযমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে সিয়াম মানুষকে এ সংযমই শিক্ষা দেয়। তাই আল্লাহর এ বিধান পালনের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব।