রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন কতটুকু বাঞ্ছনীয়

রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন কতটুকু বাঞ্ছনীয়

রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন কতটুকু বাঞ্ছনীয়

 মহিলাদের রূপ সৌন্দর্য সত্যই এ পৃথিবীকে করেছে আকর্ষণীয়। এ জন্য পৃথিবীর মানুষ নারীকে নিয়ে ভেবেছে ভিন্ন আঙ্গিকে। মহিলাদের রূপ সৌন্দর্যের মাঝে সবচেয়ে বেশি অবগাহন করেছেন কবি বা সাহিত্যিক। মহিলাদের নিয়ে তাদের চিন্তা-চেতনার ফলে পৃথিবীর সব অঙ্গন সুশোভিত হয়েছে। ক্যাম্পবেল এ ব্যাপারে যথার্থ উক্তি করেছেন-
‘নারী হেসে ওঠার আগে পর্যন্ত পৃথিবী ছিল বিষণ্ন, বাগানগুলো জঙ্গলাকীর্ণ আর পুরুষেরা ছিল সন্ন্যাসী।’ ক্যাম্পবেলের উক্তিরই যেন প্রতিধ্বনি শুনতে পাই একাধারে বিদ্রোহের ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়- ‘এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল/ নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।’
নারীর রূপ সৌন্দর্য জন্ম দিয়েছে বহু কবিতা, গান, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, উপন্যাস। কবি-সাহিত্যিকদের লেখনীর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে সেই চমকপ্রদ অজানা কাহিনী। নারীবিহীন এই জগৎ-সংসারে পুরুষ শুধু হৃদয়হীন নয়- গানহীন, কবিতাবিহীনও হয়ে পড়ত। ফলে তার আর কবি হওয়া হতো না। ‘নারীর বিরহে, নারীর মিলনে নর পেল কবি প্রাণ/ যত কথা তার হইল কবিতা শব্দ হইল গান।’ নারীর এই জয়গান নজরুলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে- ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
এ থেকে পরিষ্কার যে, নারীর রূপ-সৌন্দর্য পৃথিবীর আবহমান কাল থেকে পুরুষদের আকৃষ্ট করে আসছে। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে এ রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন কতটুকু সমীচীন হবে নিম্ন্নে লেখনীর মাধ্যমে সেটা কিছুটা হলেও তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
নারীর রূপ-সৌন্দর্য অকাতরে সমাজের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এটা যেমন বুঝি তেমনি কতটুকু প্রদর্শন সমাজের জন্য মানানসই তা আবার বেশির ভাগ মানুষই জানেন না। যেমন যক্ষ্মা একটি মারাত্মক ব্যাধি। এটা সংক্রমণ হওয়ার ব্যাপারে আমরা দ্বিমত পোষণ করি না। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আমরা সবাই একমত, জিনা বা ব্যভিচার একটি ঘৃণিত কাজ কিন’ রূপ-সৌন্দর্যের প্রদর্শন এবং তথাকথিত নারী স্বাধীনতা, স্বেচ্ছারিতা এগুলো ব্যভিচারের সহায়ক হিসেবে কাজ করে- এ ব্যাপারে আমরা একমত হতে পারি না।
একজন মহিলা থেকে যেসব বিষয়ে একজন পুরুষ আকৃষ্ট হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রূপ-সৌন্দর্য। কারণ একজন পুরুষ মানুষ একজন সুন্দরীর দিকে যতটা আগ্রহ ঔৎসুক্য নিয়ে তাকায়, কালো কিংবা অসুন্দর একজন মহিলার দিকে ততটা আগ্রহ নিয়ে তাকায় না। অথচ মহিলা হিসেবে দু’জনই সমান।
মানুষ যেসব ব্যাপারে পুলক অনুভব করে, দৃষ্টিনন্দন বিষয় অবলোকন তার মধ্যে অন্যতম। বাড়িঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি দিয়ে বাগান সাজানো, ঘরের দামি নজরকাড়া আসবাবপত্র ইত্যাদির পেছনে মানুষ যে লাখো কোটি টাকা ব্যয় করে তা কেবল দেখার সৌন্দর্যের জন্য এবং দেখে পরিতৃপ্ত হওয়ার জন্য। তাহলে সুন্দরী, লাবণ্যময়ী তরুণীর পরিপাটি মুখচ্ছবি দেখে পুলক অনুভবের কথা কে অস্বীকার করতে পারেন? কিন’ তাকওয়া ও আল্লাহভীতি মানুষকে এই সুন্দরই শিক্ষা দেয়, ‘তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে, যাতে ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে বাঁচতে পারে।’ অতএব সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে গিয়ে সামনের চুল ছোট করে ওড়নার পাশ দিয়ে কপালে ঝুলিয়ে দেবে, নামকাওয়াস্তে ওড়না পরবে, পাতলা শাড়ি পরে বাতাসের সাথে এলোমেলো ভঙ্গি দিয়ে সৌন্দর্য জাহির করা খুবই অন্যায় ও জঘন্য কাজ। আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে বলেন- ‘এমন জোরেও যেন তারা পা না ফেলে যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে।’
অপরিচিত বলতে ইসলামী শরিয়ত যেটা সমর্থন করে না এমন পুরুষের সামনে মহিলাদের রূপ-সৌন্দর্য প্রকাশ করা খুবই অনুচিত। কারণ এ ধরনের সাজগোজ দেখে পুরুষের মনের সুপ্ত বাসনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। যেমনিভাবে খাদ্য দেখে কিংবা তার ঘ্রাণ পেলেই একজন লোকের ক্ষুধার তীব্রতা বেড়ে যায়। চোখের কামনা প্রকাশিত হয়, চোখ যা দেখে মনও তা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। এ জন্য মুমিনদের দৃষ্টিকে অবনত রাখার নির্দেশ দেয়ার পর বলা হয়েছে- ‘এবং তারা তাদের লজ্জাস’ানকেও যেন সংরক্ষিত রাখে।’ তদ্রূপ মুমিন মহিলাদেরকেও দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে বলে দেয়া হয়েছে- ‘নিজের লজ্জাস’ানকেও যেন হিফাজত করে।’
মুমিন মুত্তাকি মহিলার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তাদের বেশভূষা ও পোশাক পরিচ্ছদ হবে মার্জিত, যা তাকওয়ার পরিপন’ী নয়। তাদের কথা ও আচরণ হবে তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ। তাদের যাবতীয় তৎপরতা ঈমানের শিকলে বাঁধা পড়বে। দেখে মনে হবে আল্লাাহর নির্দেশকে তারা অবনত মস্তকে মেনে নিয়েছেন। তখন মুমিন পুরুষগণ যেমন তাদের শ্রদ্ধা করবে তেমনিভাবে কোনো লম্পটও তাদের দিকে হাত বাড়াতে সাহস করবে না।
তাকওয়া অর্জন, পর্দা মেনে চলা সবই ইসলামের নিদর্শন। পর্দা লজ্জা ও শরমের চিহ্ন। পর্দা সম্মান ও মর্যাদার চাদর। অতএব হে বিশ্বের মুসলিম বোনেরা আপনারা পর্দাকে সম্মান করুন। পর্দা আপনাদের সৌন্দর্যের মুকুট এবং ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের দলিল। আপনি আপনার পবিত্র শরীরকে দুষ্টের শ্যেন দৃষ্টি থেকে বাঁচান। মর্যাদা ও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখুন। পবিত্র ও ভদ্রমহিলা তিনি, যিনি পরপুরুষের নজর পর্যন্ত তার ওপর পড়তে দেন না। আল্লাহর কাছে আমাদের ফরিয়াদ- তিনি যেন নারী ও পুরুষের মাধ্যমে এ পৃথিবীকে জান্নাতের অন্যতম বাগিচা তৈরিতে সাহায্য করেন।

Related Post