পবিত্র রমজানের রোজা আল্লাহ তা-আলা শুধুমাত্র পুরুষের জন্যই ফরজ করেননি তামাম মাখলুকাতের সকল দ্বীনদার মুসলমান বালেগ নর-নারীর উপর রোজা ফরজ করেছেন। এই রোজা পালনে নারীদের কিছু করণীয় রয়েছে। যা পালন করা আমাদের একান্ত আবশ্যকীয় কর্তব্য। যা সংপ্তিাকারে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- ক. কোনো মেয়ে যদি বালেগ হওয়ার পর লজ্জার কারণে সিয়াম বা রোজা পালন না করে, তাহলে তাকে খালেছ ভাবে তাওবা পালন করতে হবে এবং ভাংতি রোজাগুলো কাজা পালন এবং প্রতি দিনের বদলে একজন করে মিসকিন খাওয়ানো আবশ্যক। মহান আল্লাহর হুকুম পালনে লজ্জা-দ্বিধা করা ঠিক নয়।
(ক) কোন মহিলার হায়েজ (ঋতুস্রাব) বা নিফাস (সন্তান প্রসবকালীন ইদ্দত) সন্ধ্যায় অথবা রাতে বন্ধ হয়ে গেলে রাতেই ঐ মহিলাকে রোজার নিয়্যত করতে হবে। গোসল করার আগেই ফজরের সময় (সকাল) হয়ে গেলেও রোজা শুদ্ধ হবে।
(খ) কোনো মহিলা যদি জানে যে, আগামীকাল ভোরে ঋতুস্রাব হবে তবুও সে রোজা রাখার নিয়্যতে সাহরি খাবে; যতণ না পর্যন্ত সে স্রাব দেখে। ঋতুস্রাব দেখার পরই কেবলমাত্র সে রোজা ভঙ্গ করতে পারবে।
(গ). রমজান চলাকালে যে সকল মহিলার ঋতস্রাব দেখা দিবে তা স্বাভাবিকভাবে শেষ হতে দেয়া উচিত। অতিরিক্ত ছাওয়াবের আশায় ওষুধ বা অন্য কোনো উপায়ে ঋতুস্রাবকালীন সময়কে কমানো বা ঋতস্রাব বন্ধ করা ঠিক নয়।
(ঘ) ইসলামি শরীয়ত মতে রোজার সময় ঋতুস্রাব কারণে রোজা ভঙ্গ করলে পরবর্তী সময়ে তা কাজা পালন করার স্পষ্ট বিধান রয়েছে। হাদীসে এসেছে-হজরত মুয়াযাহ বিনতে আব্দুল্লাহ আল-আদাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আয়েশা (রা.)কে বলি- ঋতুবর্তী মহিলা কেন সওম বা রোজা কাজা করে, সালাত কাজা করে না? তিনি বললেন তুমি কি হারুরি? আমি বললাম না, কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করছি, তিনি বললেন, আমাদের এমন হতো, অতপর আমাদেরকে শুধু সাওম বা রোজা কাজার নির্দেশ দেয়া হতো, সালাত কাজার নির্দেশ দেয়া হতো না। (বুখারি, মুসলিম)
(ঙ. ) তিরমিযির এক বর্ণনায় এসেছে- হযরত আয়েশা (রা.) আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সা.) এর যুগে ঋতুবর্তী হতাম, অতপর পবিত্রতা অর্জন করতাম, তিনি আমাদেরকে সওম বা রোজা কাজার নির্দেশ দিতেন, কিন্তু সালাত কাজার নির্দেশ দিতেন না। এ হাদিস অনুযায়ীও ঋতুবর্তী মহিলা সিয়ামের কাজা পালন করবে, নামাজের কাজা করবে না। (তিরমিজি)
(চ) যদি কোনো মহিলার চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে নিফাস বন্ধ হয়ে যায়, সেদিন থেকেই গোসল করে পবিত্র হয়ে রোজা পালন করবে এবং নামাজ আদায় শুরু করবে। পান্তরে কোনো মহিলার যদি চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নিফাসের রক্ত দেখা দেয়, ইহা নিফাস বলে গণ্য হবে না। অতএব গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে রোজা ও নামাজ শুরু করতে হবে। ব্যতিক্রম : নিফাসের সময়ের সাথে যদি হায়েজের সময় সংযুক্ত হয় তবে ইহাকে হায়েজ মনে করতে হবে। সেেেত্র রোজা থেকে বিরত থাকবে এবং ইদ্দত পূর্ণ করে পবিত্র হয়ে রোজা পালন করবে। চ. ১. গর্ভস্থিত সন্তানের শারীরিক গঠনের কোনো একটি অঙ্গ অর্থাৎ হাত, পা, মাথা ইত্যাদি গঠনের পর গর্ভপাত হলে, গর্ভপাতের পর নিফাস মনে করতে হবে এবং ইদ্দতপূর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রোজা রাখবে না। ২. আর যদি গর্ভস্থিত সন্তানের কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠিত হওয়ার পূর্বে গর্ভপাত হয়, তখন গর্ভপাতের পরবর্তী সময়ে স্রাব নিফাস বলে গণ্য হবে না বরং মোস্তাহাযাহ বলে গণ্য হবে। আর এেেত্র সম হলে রোজা পালন করতে হবে। আর যদি গর্ভপাতের ফলে অসুস্থ হয়ে যায় তবে তা ভিন্ন কথা। নিফাস ব্যতিত রক্তস্রাবে রোজার কোনো তি হবে না।
(ছ.) গর্ভবতী ও স্তন্যদায়িনী মহিলা রোজা ভাঙ্গতে পারবে। যদি রোজা পালনের কারণে তার নিজের বা শিশু সন্তানের তি বা জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরবর্তী সময়ে তাকে একদিনের বদলে একদিন ঐ রোজা কাজা পালন করতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ইন্নালল্লাহা ওয়াজাআ’ আনিল মুসাফিরিস সাওমা ওয়া শাত্বারাস সালাতি, ওয়া আনিল হামিলি ওয়াল মুরজিই’স সাওমা। (তিরমিজি) অর্থাৎ : আল্লাহ তায়ালা মুসাফিরদের জন্য রোজা রাখতে বারণ করেছেন এবং নামাজের অংশ বিশেষ ছাড় দিয়েছেন, আর গর্ভবর্তী ও স্তন্যদানকারীর জন্য রোজা পালনের বাধ্য বাধকতা শিথিল করেছেন। অর্থাৎ পরবর্তীতে কাজা আদায় করতে হবে। জ. যে মহিলার উপর রোজা ফরজ হয়েছে, তার সম্মতিতে রমজানের দিনে স্বামী-স্ত্রীতে যৌনকার্য সংঘটিত হলে, উভয়ের উপর একই হুকুম কার্যকরী হবে (কাজা করতে হবে ও কাফ্ফারা দিতে হবে)। আর স্বামী যদি জোর করে সহবাস করে তাহলে স্ত্রী শুধু কাজা আদায় করবে, কাফ্ফারা দিতে হবে না। তবে স্বামীকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। যে সব পুরুষ লোক নিজেদেরকে সংযত রাখতে পারে না, তাদের স্ত্রীদের উচিত দূরে দূরে থাকা এবং রমজান দিবসে সাজ-সজ্জা না করা। শেষ কথা, সিয়ামের মাসআলা-মাসায়েল সংপ্তিাকারে দেয়া হলো। আল্লাহর দরবারে বিনীত প্রার্থনা তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সঠিক পন্থায় ও উত্তমভাবে তাঁর ইবাদত, জিকির ও শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। আল্লাহ যেন এ মাসে আমাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ দেন এবং জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে ক্ববুল করে নেন। আমীন।