Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

রোযার উপকারীতা

রোযার উপকারীতা

রোযার উপকারীতা

প্রথমে রোযায় মানষিক দিক:
১। রোযা প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির জন্য এমন একটি উন্মুক্ত পরিচ্ছন্ন উদ্যান যাতে রোযাদার ধরণীর বুকে আল্লাহর শাশ্বত বিধান প্রতিষ্ঠা কল্পে এক অন্যতম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পান।
রোযা মানব অন্তঃকরণে আল্লাহ ভীতির বীজ বপনে এবং দেহের সকল অঙ্গ প্রতঙ্গকে অন্যায় অশ্লীল ও পাপ কার্য থেকে রক্ষায় এক অনন্য ও উৎকৃষ্ট পন্থা। এ পর্যায়ে মহান আল্লাহর বাণী যথার্থ সহায়ক কথা: لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ  যাতে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারো।
৩। রোযা মুসলিম বান্দাকে প্রকৃত ধৈর্য সহসশীলতা এবং ত্যাগের শিক্ষায় অভ্যস্থ করে তোলে। কেননা রোযার ফলেই তিনি দিবসে বিভিন্ন প্রকার ভোগ্য সামগ্রী পরিত্যাগের অভ্যস্থ হন। উল্লেখ্য তিন প্রকার ধৈর্য রোযা পালনের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।
যথা- (১) আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ, (২) তাঁর হারামকৃত বস্তুথেকে সংবরণের প্রতি ধৈর্য ধারণ, (৩) আল্লাহর ফায়সালা মেনে নেওয়ার প্রতি তথা তাকদীরের কল্যাণের অকল্যাণের প্রতি ধৈর্য ধারণ। আর এ তিন প্রকার ধৈর্যের সমন্বয় কারো মাঝে ঘটলে তিনি আল্লাহর অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
মহান আল্লাহর ঘোষণা:

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ

নিঃসন্দেহ সবরকারীদের তাদের পারিশ্রমিক (জান্নাত) দেওয়া হবে হিসাবপত্র ব্যতিরেকে।’’ (সূরা যুমার: ১০) তাফসীরে ইবনে কাসীর)
৪। রোযা মুসলিম বান্দার নফসে আম্মারা বা কুপ্রবৃত্তি দমন ও পরাভুত করতে এক অপ্রতিদ্বন্দী সহায়ক। ঐ কৃপ্রবৃত্তি বান্দাকে সর্বক্ষণ অন্যায় ও অশ্লীল কাজে উদ্দীপনা যোগায় কিন্তু সিয়াম সাধনার ফলে উহা দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
৫। রোযা পালনের ফলে মানবদেহে শয়তান চলাচলের রাস্তাসমূহ নিস্তেজ ও অকর্মন্য হয়ে পড়ে।
৬। সিয়াম সাধনার ফলে একজন ব্যক্তি সৎগুণাবলী ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে পারে।
৭। সিয়াম পালনের দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে, সুতরাং যখন কোন মুসলিম একটি আনুগত্য করে তখন উহা আরেকটি আনুগত্যের প্রতি অনুপ্রেরণা যোগায় আর ইহা হচ্ছে আমল কবূলের একটি আলামত।
সিয়ামে দৈহিক দিক
নিঃসন্দেহ সিয়াম বা রোযা পালনে অকল্পনীয় দৈহিক কল্যাণ ও উন্নয়ন সাধন হয়ে থাকে যা মূল্যবান ঔষধ সেবনেও সম্ভব হয় না। তন্মধ্যে কতিপয় দিক আলোচনা করা হলো:
* রোযা মানব দেহে নব সুক্ষ্ম কোষ গঠন করে থাকে
* সিয়াম পাকস্থলি ও পরিপাক যন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে ফলে ও গুলো সতেজ ও প্রানবন্ত হয়ে উঠে।
* পূর্ণ বৎসর পানাহারের ফলে খাদ্য দ্রব্যের যে অংশ বদহজমের ফলে খাদ্য দ্রব্যের যে অংশ বদহজমের ফলে বিষাক্ত বস্তু সৃষ্টি হয় তা বিনষ্ট ও দূরিভূত করণে রোযা এক অনন্য সহায়ক। (আস সিয়াম: ৫১)
* AERO-SPACE অভিজ্ঞ এবং MEDICINE SPECIALIST  (বিশেষজ্ঞ) ডা. মেজর আব্দুল খালেক সাহেব বলেছেন যে, সিয়াম একটি দৈহিক উপকারী ইবাদত। যথা-
ক) সিয়াম স্থূলতা হ্রাসে এক চমকপ্রদ ফলদায়ক।
খ) কতিপয় ডায়াবেটিকস রোগে উহা উৎকৃষ্ট চিকিৎসা।
গ) মাত্রাতিরিক্ত ওজন জনিত কারণে সৃষ্ট রোগসমূহের নিরাময়ে সিয়াম এক অনুপম সহায়ক।
* অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে ইহা কতিপয় গ্যাসট্রিক এধংঃরৎরপ রোগেরও একটি ফলদায়ক ও সহজ চিকিৎসা।
রোযার সামাজিক দিক
১। সিয়াম সাধনার ফলে শতদাবিচ্ছিন্ন মুসলিম জনগোষ্ঠী এক ও অবিভাজ্য জাতিতে পরিণত হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
২। সিয়াম এমন একটি সাম্যপূর্ণ এবাদত যাতে রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই রাতের শেষভাগে সেহরী খেয়ে পূর্ণ দিবস অনাহারে কাটায়ে সূর্যাস্তের পর ইফতার করেন।
মহান আল্লাহর বাণী:
وَإِنَّ هَـٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ
আর — ”নিঃসন্দেহ তোমাদের এই সম্প্রদায় একই সম্প্রদায়, আর আমিই তোমাদের প্রভু, অতএব আমাকেই তোমরা ভক্তিশ্রদ্ধা করো।’’ (সূরা মুমিনূন: ৫২)
৩। সিয়াম সাধনায় মুমিনদের মাঝে পাস্পরিক ভ্রাতৃত্ব-বোধ, শ্রদ্ধা, স্নেহ ও মায়া বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যা সামাজিক স্থিতিশীলতা আনয়নে ও উন্নয়ন সাধনে যথেষ্ট সহায়ক।
৪। বিশ্বের সকল মুসলমান নারী-পুরুষ বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে শুধু একই উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করে থাকেন, আর তা হলো তাক্বওয়া তথা আল্লাহ ভীতি অর্জন করা।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন:
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿١٨٣﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা: ১৮৩)
আর মুত্তাকী বান্দারাই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়- মহান আল্লাহ বলছেন:
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّـهِ أَتْقَاكُمْ ۚ

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা সম্ভ্রান্ত সেই ব্যক্তি যার ভিতর আল্লাহ ভীরুতা বেশি বিদ্যমান। (সূরা হুজুরাত: ১৩)
৫। সিয়াম পালনের ফলে ধনবান মুসলিম ব্যক্তি দরিদ্র, অসহায় ও অনাহারীদের ক্ষুধার যন্ত্রণা সাময়িকভাবে অনুভব করতে পারেন। যার দরুণ ধনী ব্যক্তিরা দরিদ্রদের প্রতি তার সাহায্য ও সহনুভূতির হস্ত প্রসাওে অভ্যস্থ হয়ে উঠেন। ফলে সমাজে ভারসাম্যতা বহূলাংশে রক্ষা পায়।
এভাবে সামাজিক উন্নয়নে সিয়ামের আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে সিয়াম যথাযথ সংরক্ষণ ও পবিত্রতা বজায় রাখার পূর্ণ তাওফীক প্রদান করুন। আমীন

Related Post