Main Menu

সফরের আদাব-শিষ্টাচার

index (3)
এক – সফরের র্পূবের আদাবসমূহ :
সফররে র্পূবে অনেকগুলো আদব আছে, মুসলমানের জন্য এগুলি পালন করা র্কতব্য।
১- পরামর্শ চাওয়া এবং ইস্তেখারা করা। কোন ব্যাক্তির অন্তরে সফরের বাসনা জাগ্রত হওয়া মাত্রই তার উচিত এমন একজন লোকের নিকট পরামর্শ চাওয়া যে তার হিতাকাঙ্খী এবং তার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত। পরামর্শের পর যদি মনে করে এর মাঝে কল্যাণ রয়েছে, তখন সে ইস্তেখারা করবে। দুই রাকাত সালাত আদায় করবে এবং ইস্তেখারার দুআ পড়বে; অতঃপর যার প্রতি তার মন ধাবিত হয়, সে অনুপাতে আমল করবে।
২- নতুনভাবে তওবা করবে। মানুষের দেনা-পাওনা পরিশোধ করে দায় মুক্ত হবে, এবং ওছিয়তনামা লিখবে। কারণ, সফরে কোন সময় কি অঘটন ঘটে তা তো বলা যায় না।
৩- নেককার-উত্তম সঙ্গী নির্বাচন করবে যিনি আল্লাহর ইবাদত-আদেশ নিষেধ পালনে সহযোগী হবে। কারণ, সফরে মানুষ তার সঙ্গীর সাথেই সব সময় থাকে। এতে তার সঙ্গীর প্রভাব তার উপর অবশ্যই পড়ে। অসৎ সঙ্গী নির্বাচণ হতে সর্ম্পূণ বিরত থাকবে। আর মনে রাখতে হবে একা একা সফর করা মাকরূহ।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একা সফর করা হতে নিষেধ করেন, তিনি বলেন-
একজন আরোহী শয়তান আর দুইজন আরোহী দুইটি শয়তান। তবে তিন জন আরোহী হল একটি জামাত। (তিরমিযী-১৫৯৮) তিনি আরো বলেন
একা সফর করার ক্ষতি সর্ম্পকে যদি মানুষ জানতে পারতো যা আমি জানি তাহলে কেউই রাত্রে একা সফর করত না। (বুখারী-২৭৭)
একাকী সফর করার কারণে কখনো কখনো সে ভীত সন্ত্রস্ত হতে পারে। বিভিন্ন ধরণের চিন্তা-ভাবনা তার মাথায় চাপতে পারে। অথবা কোথাও কোন বিপদ হলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন তার সহযোগিতা করার মত কাউকে পাওয়া যাবে না -ইত্যাদি কারণে ইসলামী শরীয়ত একা সফর করাকে নরিুৎসাহিত করে।
৪- সফরের মাঝে যে সব বিষয়ে জানা থাকা দরকার তা পূর্বেই জেনে নিবে। যেমন- কছর সালাতের বিধান, একত্রে সালাত আদায়ের বিধান, তায়াম্মুম ও মোজার উপর মাছেহ করার বিধান ইত্যাদি।
৫- মহিলাদের জন্য মুহরিম ছাড়া সফর করা বৈধ নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলনে :
একজন পর-পুরুষ একজন মহিলার সাথে কোন মুহরিম ছাড়া একাকী হতে পারবে না। এবং কোন মহিলা মুহরিম ছাড়া সফর করতে পারবে না। একথা বলার পর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমার স্ত্রী হজ্বের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। আর আমি অমুক যুদ্ধে তালিকাভুক্ত হয়েছি। (এখন আমি কি করবো?) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্ব কর। (মুসলমি-২২৯১)
৬- যদি কোন প্রকার কষ্ট না হয় মানুষ তার সফর বৃহস্পতিবারে আরম্ভ করতে চেষ্টা করবে। কারণ, রাসুল (সাঃ) অধকিাংশ সময় বৃহস্পতিবারে সফর করতেন।
৭- তার পরবিার পরিজন এবং সাথী-সঙ্গীদের বিদায় দিবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবীরা এরকমই করতেন। এ র্সম্পকে হাদীসে বর্ণিত আছে মুকীম মুসাফিরকে বলবে –
‘আসতাও দি‘উল্লাহা দীনাকা ওয়া আমা-নাতাকা ওয়া খওয়াতীমা ‘আমালিকা’
আমি তোমার দ্বীন, তোমার আমানত সমূহ এবং তোমার আমলের সমাপ্তি পর্যায়কে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছি।(সহীহ আত-তিরমিযী ২/১৫৫)
আর মুসাফির মুকীমকে বলবে – লা তাদী‘উ ওয়াদাই‘উহ’
আমি তোমাদেরকে সেই আল্লাহর হেফাজতে রেখে যাচ্ছি যার হেফাজরে অবস্থানকারী কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। (সহীহ ইবনে মাজাহ ২/১৩৩)
সফর চলাকালে ও সফর থেকে ফিরে এসে করনীয় :
এমন কিছু শিষ্টাচার আছে যেগুলো সফরের মধ্যে এবং সফর হতে ফিরে এসে পালন করা উচিত।
১-আল্লাহর যিকির দ্বারা সফর আরম্ভ করবে। আরোহণের সময়, বিশেষ করে সফরের শুরুতে হাদীসে বর্ণিত দু’আ সমুহ পড়ব। ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) যখন সফরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর উটকে প্রস্তুত করতেন তখন তিনবার আল্লাহু আকবর বলতনে অতঃপর তিনি বলতেন-
سبحان الذي سخر لنا هذا وما كنا له مقرنين وإنا إلى ربنا لمنقلبون. اللهم إنا نسألك في سفرنا هذا البر والتقوى ومن العمل ما ترضى، اللهم هون علينا سفرنا هذا واطو عنا بعده، اللهم أنت الصاحب في السفر والخليفة في الأهل، اللهم إنا نعوذ بك من وعثاء السفر وكآبة المنظر وسوء المنقلب في المال والأهل
‘সুবহানাল্লাযী সাখখারালানা হাযা ওয়ামা কুন্নালাহু মুক্করিনীন, ওয়াইন্না-ইলা রব্বিনা লামুন ক্কালিবূন, আল্লাহুম্মা ইন্নানাসআলুকা ফী সাফারিনা হাযাল বিররাওয়াতাক্কওয়া, ওয়ামিনাল ‘আমালি মা তারদ্বা, আল্লাহুম্মা হাওয়্যিন ‘আলাইনা সাফারানা হাযা ওয়াতউই ‘আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আনতাসসা-হিবু ফিস সাফারী ওয়াল খলীফাতু ফিল আহলী, আল্লাহুম্মা ‘ইন্নী আউযুবিকা মিন ওয়া’সা’ইস সাফারী, ওয়া কা-বা তিল মানযারী, ওয়া সুইলমুনক্কালাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহলি’
পাক পবিত্র সেই মহান সত্তা যিনি আমাদের জন্য উহাকে বশীভূত করে দিয়েছেন যদিও আমরা উহাকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না, আর আমরা অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব আমাদের প্রতিপালকের নিকট। হে আল্লাহ! আমাদের এই সফরে আমরা তোমার নিকট প্রার্থনা জানাই পুন্য আর তাক্ওয়ার জন্য এবং আমরা এমন আমলের সামর্থ্য তোমার কাছে চাই যা তুমি পছন্দ কর। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ সাধ্য করে দাও এবং উহার দুরত্বকে আমাদের জন্য হ্রাস করে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই এই সফরে আমাদের সাথী, আর আমাদের (গৃহে রেখে আসা) পরিবার পরিজনের তুমি (খলীফা) রক্ষণাবেক্ষণকারী। হে আল্লাহ! আমরা তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের ক্লেশ হতে এবং অবাঞ্ছিত কষ্টদায়ক দৃশ্য দর্শন হতে এবং সফর হতে প্রত্যাবর্তনকালে সম্পদ ও পরিজনের ক্ষয়ক্ষতির অনিষ্টকর দৃশ্য দর্শন হতে। (মুসলিমঃ ২/৯৯৮)
২-জামাতের মধ্য হতে একজনকে আমীর নিযুক্ত করবে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
যখন এক সাথে তিন জন সফরে বের হবে তখন একজনকে আমীর নিযুক্ত করবে। (আবু দাউদ -২২৪১)
৩-যখন কোন উঁচা স্থানে আরোহন করবে তখন সুন্নাত হল আল্লাহ আকবর বলবে। আর যখন নিচের দিকে অবতরণ করবে তখন সুবহানাল্লাহ বলবে।
যাবের (রা.) বলেন, আমরা যখন উপর দিকে আরোহন করতাম আল্লাহু আকবর (الله أكبر) বলতাম আর যখন নিচে অবতরণ করতাম সুবহানাল্লাহ (سبحان الله) বলতাম।(বুখারী-২৭৭১)
৪-যখন কোন ঘরে অবতরণ করবে তখন সুন্নাত হল খাওলা বিনতে হাকিমের হাদীসে উল্লেখিত দুআটি পাঠ করবে -নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি কোন স্থানে অবতরণ করার পর এ দুআ পড়বে
আ‘উযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মা-তি মিন শাররি মা খালাক
কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। যতক্ষণ সে ঐ স্থান ত্যাগ না করে। (বুখারীঃ ৪৮৮১)
৫-যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজন শেষে পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে আসবে। রাসুল (সাঃ) বলেন –
সফর আযাবরে একটি অংশ সফর একজন মানুষকে ঠিকমত খেতে দেয়না, পান করতে দেয়না এবং ঘুমাতে দেয়না। তাই যখন প্রয়োজন পুরণ হয়ে যাবে সে যেন তার পরিবার পরিজনের নিকট তাড়াতাড়ি ফির আসে। (বুখারী-১৬৭৭)
৬-যখন তার নিজ শহরে ফিরে আসবে তখন শুরুতে যে দুআ পড়ছলি তা আবার পুনরায় পড়বে। তবে آيبون تائبون عابدون لربنا حامدون (আ-ইবুনা তা-ইবুনা ‘আবিদুনা লিরব্বিনা হামিদূন) বাড়াবে। অর্থাৎ, আমরা (এখন সফর হতে) পপ্রত্যাবর্তন করছি তওবা করতে করতে ইবাদতরত অবস্থায় এবং আমাদের রবের প্রসংশা করতে করতে।
৭-সফর হতে প্রত্যার্বতন করা মাত্রই মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত সালাত আদায় করবে। কাব ইবনে মালেক (রা.) ঘটনা সম্বলতি হাদীসে বর্ণিত :
তিনি বলেন যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর হতে ফিরে আসতেন প্রথমে তিনি মসজিদি প্রবেশ করতেন। এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন। (বুখারী-৪০৬৬
======== সমাপ্ত===

Related Post