Originally posted 2013-05-19 05:50:38.
যারাই কোন না কোন ধর্ম মানে তারা প্রত্যেকেই মনে করে ধর্ম আমারটাই ঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, একই বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন প্রকার বিপরীত মুখী দাবীর সবগুলিই কি ঠিক হতে পারে? একই অংকের একাধিক উত্তরের সবগুলিই যেমন ঠিক হতে পারে না, তেমন একই সৃষ্টিকর্তার দেয়া ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন প্রকার বিপরীত মুখী দাবী বা ধারণার সবগুলিই ঠিক হতে পারে না। এটা যুক্তি। এখন প্রশ্ন, দাবী কারটা ঠিক এবং কারটা বে-ঠিক? এ প্রশ্নের অবশ্যই সঠিক জবাব আছে তবে তা বুঝতে হলে কমপক্ষে নিচের শর্তগুলি মেনে নিতে হবে। এর প্রধান শর্ত হলো মনকে নিরপেক্ষ ও গোড়ামী মুক্ত করতে হবে এবং কোন ধর্ম ঠিক তা বুঝতে হলে বোঝার পূর্বে নিজেকে ধরে নিতে হবে যে আমি কোন ধর্মেরই লোক নই। আমার সামনে অনেকগুলি ধর্ম রয়েছে। এগুলি আমি দেখি, সত্য মিথ্যা যাচাই করি, এর যেটা সঠিক বলে আমার জ্ঞানে ধরে সেটাই আমি গ্রহণ করবো। এর জন্য আরও যা প্রয়োজন হবে তা হচ্ছেঃ
১। যুক্তি মানত রাজি থাকতে হবে অর্থাৎ সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে মানতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
২। মানতে হবে ধর্ম কোন পৈত্রিক সম্পদ নয়; এ হচ্ছে বিশ্বাসের ব্যাপার।
৩। মানতে হবে বিশ্বাসের সম্পর্ক রক্ত বা বংশের সঙ্গের নয়; এর সম্পর্ক সম্পূর্ণই জ্ঞানের সঙ্গে।
৪। মানতে হবে যে, পূর্ব পুরুষের ভুল বিশ্বাস অকাট্য যুক্তির দ্বারা পরিবর্তনযোগ্য।
৫। মানতে হবে যে, পিতার ভুল বিশ্বাস যদি পরিবর্তনযোগ্য না-ই হতো তাহলে জ্ঞানচর্চার কোন মূল্যই থাকতো না।
যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে, আমাদের দেশের অনেকেরই পিতার বিশ্বাস ছিল পৃথিবী এটা গরুর শিং এর উপর রয়েছে। সে গরু যখন শিং পরিবর্তন করে তখন ভূমিকম্প হয়। আরও বিশ্বাস ছিল যে, রাহু নামক কোন বিরাট আকারের জন্তু চাঁদকে গ্রাস করতো বলে চন্দ্রগ্রহণ হতো এবং এটাই ছিল চন্দ্রগ্রহণের কারণ। এরপর ব্রাহ্মণদের সম্মিলিত অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রাহু চাঁদকে ছেড়ে দিতো, এভাবেই চাঁদের অস্তিত্ব টিকে আছে নইলে বহু পূর্বেই চাঁদ রাহুর পেটে হজম হয়ে যেতো।
পিতার এই সব ভুল – বিশ্বাস যদি অকাট্য যুক্তির দ্বারা পরিবর্তন হতে পারে তাহলে ধর্ম সম্পর্কীয় পিতার ভুল-বিশ্বাস কি পরিবর্তন হতে পারে না? অবশ্যই পারে এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পিতার ভূল-বিশ্বাস ত্যাগ করায় যেমন কারও কোন প্রকার অমর্যাদা হয়নি বরং মর্যাদা বেড়েছে। ঠিক তেমনই ধর্ম সম্পর্কীয় পিতার ভুল-বিশ্বাস ত্যাগ করলেও কারও মর্যাদা কমবে না বরং বাড়বে।
এসব কথা যারা মানতে প্রস্তুত তাদেরই চোখে ধরা পড়বে যে, ধর্ম কোনটা ঠিক আর কোনটা বে-ঠিক।
কয়েকটি ব্যাপারে ধর্ম-বিশ্বাসীদের ঐকমত্য
যারাই কোন না কোন ধর্ম মানে তারাই নিম্নে বর্ণিত চারটি বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করে। যথাঃ
১। সৃষ্টিকর্তা আছেন।
২। পরকাল আছে ও বিচার হবে।
৩। বিচারের পর যার যার কর্মফল সেই সেই ভোগ করবে। সে দিন অপরাধী শাস্তি ভোগ করবে এবং নিষ্পাপ ব্যক্তি মুক্তি পাবে।
৪। পরকালের মুক্তি সবারই কাম্য।
বেশী নয়, এ চারটি বিষয়ে যখন আমরা প্রত্যেক ধর্মের লোকই একমত, তখন আসুন আমরা যার যার নিজের স্বার্থেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি সহকারে খুব গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখি যে, পরকালের মুক্তির সঠিক পথ কোনটি এবং মুক্তির পথ সম্পর্কে কোন ধর্ম কি বলে, আর তার মধ্যে কার কথা কতটুকু যুক্তিগ্রাহ্য। এগুলো আসুন সুস্থির মস্তিষ্কে চিন্তা করে দেখি। দেখুন, রোগ-চিকিৎসার বেলায় যেমন ডাক্তার ও ঔষধের প্রতি রোগীকে আস্থাশীল হতে হয়, ঠিক তেমনই পরকালের মুক্তির ব্যাপারেও একটা পন্থার উপর সম্পূর্ণ নিজেকে আস্থাশীল হতে হয়। তাই প্রত্যেকটি বিবেকবান ব্যক্তির উচিৎ তার নিজের স্বার্থেই পরকালের মুক্তির সঠিক পথ নিজেই বেছে নেয়া।