Main Menu

স্বাধীনতার সূফল পেতে স্বাধীনতার পরও

স্বাধীনতার সুফল পেতে স্বাধীনতার পরও

স্বাধীনতার সুফল পেতে স্বাধীনতার পরও

স্বাধীনতা কথাটা শুনতেই বুকের ভেতর বন্দি পাখিটা মুক্ত ডানায় উড়ে বেড়ায়, পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণী নেই যে, স্বাধীন জীবন কামনা করে না। দীর্ঘ দুইশত বছর ইংরেজ শাসনে গোলামীর জিঞ্জির দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের স্টীম রোলার যখন গোটা ভারত বর্ষে চালিয়ে ছিলো, সে অমানবিক জুলুমে গোটা জাতি হাঁপিয়ে গর্জে উঠেছিলো তাদের বিরুদ্ধে। খুঁজে বের করল যন্ত্রণা লাঞ্ছনা থেকে মুক্তির উপায়। অবশেষে মুক্তিও পেল তারা। কিন্তু নতুন সমস্যা দেখা দিলো, হিন্দু ও মুসলমানদেরকে ভিন্ন করে দেওয়া হলো দুই রাষ্ট্রে, হিন্দুদেরকে হিন্দুস্তানের অধিবাসী করা হলো, আর মুসলমানদেরকে করা হলো পাকিস্তানের অধিবাসী।
পাকিস্তানের নাম এই জন্য পাকিস্তান করা হলো, যেহেতু সেখানে যেই জনগোষ্ঠী বসবাস করবে, তারা সত্যিই পাক-পবিত্র জাতি। একমাত্র মুসলিম জাতি ছাড়া অন্য কোন জাতি পবিত্র নয়। এক সময় দেখা গেল পাকিস্তান সরকার নিজের জাতীয় মর্যাদা ভুলে গেল। তাদের দৈনন্দিন ব্যবহার হয়ে উঠলো সেই ইয়াহুদী নাসারাদের চেয়েও বদ্তর। তারা পাকিস্তানকে বানিয়ে ছিলো ফাঁকিস্তান। জীবনের সর্বক্ষেত্রে তারা শুরু করলো ফাঁকিবাজি। পূর্ব পকিস্তানের লোকদের অধিকার কেড়ে নিলো, তাদের বিবিধ অত্যাচারে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষগুলো যেন পূর্বের মত পরাধীনতার বন্দি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হতে লাগলো। ধীরে ধীরে বাঙ্গালী জাতির রক্তে মুক্তির নেশা দৌঁড়াতে লাগলো। সেই মুক্তির নেশায় তারা ঐক্যবদ্ধ হলো। জবাব দিতে শুরু করলো তাদের অন্যায়ের। এভাবে নয় মাস সংগ্রাম, ত্যাগ তিতিক্ষা ও আত্মবির্সজনের মধ্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে উদিত হলো এক রক্তিম সূর্য স্বাধীন বাংলা। খুলে গেলো পরাধীনতার শিকল। জাতি পেল একটি নতুন দেশ, নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা এক কথায় একটি নতুন পতাকা।
স্বাধীনতার আজ প্রাপ্ত বয়স হওয়া সত্ত্বেও দেশ কেন অচল? কেন তার ৪৬ বছর বয়সেও সে নিজের পায়ে সফলভাবে দাঁড়াতে পারেনি? কে দেবে তার জবাব..? যারা প্রাণ দিয়ে দেশটি স্বাধীন করেছেন, তাদের কি এমন বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন ছিলো? কেন তাদের রক্তের মূল্য অমূল্য হয়ে গেল? যে মানুষগুলো নিজের জীবনের মায়া না করে আমাদের সুখের জন্য গড়ে দিলো একটি স্বাধীন দেশ, আমরা কি পেরেছি তাদের বুকের লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে..? সেই প্রথম থেকে রাজনৈতিক হানাহানি, হিংসা প্রতি হিংসা, স্বার্থপরতা, হরতাল, চাঁদাবাজি, খুন, খারাবি, হত্যা ধর্ষণ, হাইজ্যাক, লুটতরাজ ইত্যাদি এযেন পরাধীনতার জীবনকেও হার মানায়। এটাই কি তাদের স্বপ্ন.? যদি তা না হয়, তবে কেন আমরা এগুলোর প্রতিযোগিতা করছি। আমরা কি সত্যিই দেশপ্রেমিক না দেশদ্রোহী! আজ দেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের চরিত্র পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের চেয়েও নিকৃষ্ট মনে হয়। এই চরিত্র গঠনের জন্যেই কি দেশ স্বাধীন করা হয়ে ছিলো? আমরা স্বাধীনতার মর্যাদা কি রক্ষা করতে পেরেছি? কখনো কি চেষ্টা করেছি সব হিংসা-বিদ্বেষ, দলা-দলি ভুলে গিয়ে দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে গোটা জাতিকে ভালোবেসে সোনার বাংলাকে দূর্নীতি, সন্ত্রাস কালোবাজারি, ও দারিদ্রমুক্ত একাটি শান্তির নীড় গড়তে.? কখনো কি পেরেছি পক্ষ-পাতিত্ব না করে, খাঁটি অন্তরে দেশ ও জাতিকে ভালোবাসতে.?
স্বাধীনতা একটি আল্লাহর অসীম নে’য়ামত। এই নে’য়ামতের অপব্যবহার করলে তা তিনি যে কোন সময় ছিনিয়ে নিতে পারেন। আমরা ফিলিস্তিন থেকে শিক্ষা নিতে পারি। তাই সাবধান! এমন কোন কাজ করা উচিত হবে না, যে কাজে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। যদি একবার মহান আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি আমাদের ভাগ্যে এসে যায়, পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই যে, আমাদের একটি চুল বাঁকা করে। আমরা মানুষ অথচ মানুষকেই ভালোবাসতে জানিনা। স্রষ্টার ভালোবাসা কোত্থেকে আসবে? মানুষ কেমনে অন্য একজন মানুষকে ধোঁকা দেয়, খুন করে.? এগুলো কত বড় অপরাধ, পশুরা পর্যন্ত এমন অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা করে। অথচ আমরা সৃষ্টির সেরা জাতি, তদুপরি আমরা এসব কেন করে বেড়াই.? তার একমাত্র জবাব হলো; আমাদের মাঝে ইসলামের জ্ঞান নেই, নেই কুরআন হাদীসের চর্চা। আমরা দ্বীনি শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়েছি। এসব জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষা অধম হয়ে গিয়েছি। প্রকৃতপক্ষে একজন আদর্শবান ধার্মিক, আল্লাহভীরু লোক কখনো কাউকে ধোঁকা দেওয়া কিংবা তার হক নষ্ট করতে পারে না। বিশ্বাস না হলে, আপনি একজন আদর্শবান মানুষ হয়ে যান। দেখবেন আপনার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র হয়ে গেছে, তখন আপনার দ্বারা কেউ কষ্ট পাবে না। আর উত্তম চরিত্র অর্জনের জন্য আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে রাসূলের আদর্শ থেকে। কেননা তিনি বলেন; আমি প্রেরিত হয়েছি, উত্তম চরিত্র পূর্ণতার জন্য। যখন চরিত্র সুন্দর হবে তখন সত্য পথে চলতে ভালো লাগবে। অন্যায় আর জুলুম করা তো দূরের কথা, এসব মনের ধারেও ভিরবে না।
অবশেষে এ কথা বলতে চাই, আসুন দলমত নির্বিশেষে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য এই মহান স্বাধীনতার মাসে শপথ গ্রহণ করি যেন আমরা সৎ ও যোগ্য এবং আল্লাহভীরু লোকদেরকে জাতীয় নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত করি। তবেই আমরা সত্যিকার অর্থে স্বাধীন দেশ ও স্বাধীনতার স্বাদ পেতে পারবো। যা আমরা সকলেই কামনা করি। সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু লোককে নির্বাচিত করতে পারলেই সম্ভব হবে কাঙ্খিত সোনার বাংলা গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের সকলকে অর্জিত স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার তাওফীক দান করুন। আমীন ॥

Related Post