ছোটবেলায় একটি প্রবাদ শোনেছিলাম যে, ‘আগাছার জোর বেশি’। অর্থাৎ যেসব গাছাপালা চাষী রোপন করেনি, বরং তা এমনি এমনি হয়েছে, সেই গাছের শক্তি বেশি, এই গাছ ফসলী গাছকে উঠতে দেয় না, যমীনকে জঙ্গল করে রাখে, ফলে চাষী লাগিয়ে আগাছা পরিষ্কার করান। যেন ফলন ভালো হয়। কিন্তু যে গাছ বিনা পরিশ্রমে এমনিতে জঙ্গল করে রাখে, সেই কোন মূল্য নাই। সেটিকে একসময়
মানুষ লাকড়ি বা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে। আর ফসলী গাছের পরিচর্যা করতে হয় ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত। কৃষিবিদদের পরামর্শ এটাই।
একটি বহুল প্রচলিত কথা হলো; আমার দলে এত লোক, আমার দলে কি আলেম কম আছে? আমরা সঠিক পথের যাত্রী না হলে এত লোক ভীড় জমাতো? এমন কথা বুক ফুলিয়ে অনেক বড় বড় দলপতি, মাজারপন্থী, কবর পূজারী, বিদআতী, এক কথায় ভ্রান্তমতাদর্শের লোকদের মুখ থেকে প্রায় শোনা যায়। তবে আসল কথা হলো; যুগে যুগে যারা হকের পথে চলছে তাদের সংখ্যা ছিল কম, সুতরাং হকপন্থীদের বাতিলদের লম্ফঝম্প দেখে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই।
হকপন্থীদের সংখ্যা যে, কম হয়, বা কম হবে, সেই কথা মহান আল্লাহ পবিত্র কালামে অনেকবার বলেছেন; যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করছেন: অতঃপর যখন তাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হলো, আর যখন তাদের লড়াই করার হুকুম দেয়া হলো, তাদের স্বল্পসংখ্যক ছাড়া বাদবাকি সবাই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করলো। আল্লাহ তাদের প্রত্যেকটি জালেমকে জানেন। (সূরা বাকারা-২৪৬) অর্থাৎ বনী ইসরাইলের লোকেরা নিজেরাই যুদ্ধে যাওয়ার কথা আবেদন করেছিলো, কিন্তু যখন যুদ্ধ ফরয করা হলো, তখন তাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক লোক প্রস্তুত ছিলো আর অধিকংশ লোকই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করলো।
এভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো, মহান আল্লাহ মানব ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিলেন, তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারছে, মনচাহি যিন্দেগী পরিচালনা করছে, তবে পরকালের জীবনে সুখে শান্তিতে থাকার জন্য কিছু কাজ করতে বললেন, তন্মধ্যে প্রথম কাজ হলো; আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করা। কিন্তু যখন আল্লাহর উপর ঈমান আনার কথা বলা হলো, তাদের কম সংখ্যক লোকই তা গ্রহণ করলো, এই মর্মে মহান আল্লাহ বলছেন: কিন্তু তাদের বাতিল পরস্তির কারণে তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ পড়েছে। তাই তারা খুব কমই ঈমান এনে থাকে। (সূরা নিসা: ৪৬)
তেমনিভাবে যখন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করা হলো, তখন অধিকাংশ লোকই অনুসরণ করলো, খুব কম সংখ্যক লোকই তা হতে বিরত রইল। এখানেও সত্য ও সঠিক পথ অনুসরণকারীর সংখ্য কম। মহান আল্লাহ বলছেন: মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া তোমরা সবাই শয়তানের পেছনে চলতে থাকতে। (সূরা নিসা: ৮৩) এই আয়াতেও সঠিক পথে অবিচল থাকার লোকের কথা কম হবে, তাই বুঝানো হলো। সুতরাং হকপন্থীদের কম সংখ্যা দেখে ভয়ে বিচলিত না হয়ে বরং আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ সত্যপন্থীদের সঙ্গে আছেন। মহান আল্লাহ বলছেন: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো, এবং সত্যবাদীদের সহযোগী হও। (সূরা তাওবা: ১১৯)
তেমনিভাবে হযরত নূহ (আ.) দীর্ঘদিন দাওয়াত দেওয়ার পরও ঈমান আনয়নকারীর সংখ্যা অল্প কয়েক জন। বাতিলদের সংখ্যা সবযুগেই বেশি ছিলো। হে আল্লাহে বিশ্বাসী পাঠকবৃন্দ! বাতিলের আস্ফালন দেখে হতশাশ্বাস না হয়ে তাঁর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। আল্লাহ বিজয় দিবেন সত্য অবলম্বনকারীদেরকে। এটি তারঁ প্রতিশ্রুতি।
সত্যপন্থীদের দলে লোক সংখ্যা যে, অল্প থাকে এ বিষয় আরো জানার জন্য নি¤েœর সূরাগুলো অধ্যয়ন করতে পারেন। সূরা বাকার-১০০, সূরা আনআম-৩৭ সূরা আনআম-১১১, সূরা আনআম-১১৬, সূরা আরাফ-১৭ সূরা আরাফ-১০২, সূরা ইউসুফ-১০২, সূরা ফুরকান-৪৪।
ইসলাম যে, একাকীত্ব নিয়ে প্রচার লাভ করেছে সে, বিষয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন; আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইসলাম অপরিচিত ও নিসঃঙ্গ অবস্থায় আরম্ভ হয়েছিল এবং তা যেভাবে আরম্ভ হয়েছিল অচিরেই সে অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করবে। অতএব প্রতিকূল পরিবেশে যারা ইসলামের কাজ করে তাদের জন্য সুসংবাদ (মুসলিম)। সাহাবায়ে কেরামগণ জিজ্ঞেস করলো, প্রতিকূল পরিবেশ বলতে কি বুঝায়? রাসূল (সা.) বললেন, এরা সেসব লোক যারা আমার পরে লোকজন কর্তৃক বিগড়ে যাওয়া জীবন বিধান ঠিক করবে। (তিরমিযী) হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সঠিকভাবে ইসলাম বুঝে তদানুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। সংখ্যাধিক্য মূল বিবেচ্য বিষয় না। কেননা, আমরা উপরে আলোচনা করেছি যে, সবযুগে সত্যপন্থীদের সংখ্যা কম ছিলো। হে আল্লাহ! আমাদেরকে সত্য বুঝার তাওফীক দান করুন, এবং তা অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন। সাথে সাথে বাতিলকেও চিিহ্নত করার তাওফীক দান করুন। এবং তা হতে বাঁচার শক্তি দিন। আমীন