আল কুরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ বিশ্বমানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ। এ মহাগ্রন্থ ছাড়া মানুষের মুক্তির চিন্তা করা একটি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমান এ বিপর্যস্ত পৃথিবীটাই এর প্রধান সাক্ষী। পৃথিবীজুড়ে মানবরচিত বা মানুষের মস্তিষ্ক তৈরি আইন ও কানুন দিয়ে শান্তি আনয়নের চেষ্টাসাধনা করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি তো দূরের কথা,বরং মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। আল কুরআন মানবগোষ্ঠীর জন্য ম্যাগনাকার্টা। যারাই এ মহাগ্রন্থকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র পথনির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করতে পেরেছে,তারা প্রকৃতপক্ষে একটি মজবুত অবলম্বনকেই ধারণ করেছে।
কুরআন নিজেই নিজের সম্পর্কে দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানবসভ্যতার অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সব সমস্যার সমাধানের কথা বর্ণনা করেছে। আল কুরআনের গুণবাচক নামগুলোর তাৎপর্য থেকে আমরা জানতে পারব এর মহানত্ব।
১. আল কুরআন : বেশি বশি পাঠ করার গ্রন্থ। এটি আল কুরআনের মৌলিক নাম এবং এ নামেই পৃথিবীজুড়ে পরিচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতএব না, আমি শপথ করছি তারকাগুলোর ভ্রমণ পথের।এটা এক অতি বড় শপথ যদি তোমরা বুঝতে পার। এ তো মহা সম্মানিত কুরআন। একখানা সুরক্ষিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ। পবিত্র সত্তাগুণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করতে পারে না’ (সূরা আল ওয়াকিয়া ৭৫-৭৯)। কুরআন শব্দটি ‘কারাআ’ ইয়াকরাহু থেকে নির্গত। এর আসল অর্থ পাঠ করা। কোনো কর্মবোধক মূল শব্দকে যখন কোনো জিনিসের নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন তার তাৎপর্য এই হয় যে, সে জিনিসে মূল শব্দে নিহিত কর্ম পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। এ কিতাবের নাম ‘কুরআন’ রাখার তাৎপর্য হচ্ছে, এ কিতাব বিশেষ ও নির্বিশেষে সবার পড়ার জন্য এবং অধিক অধিক পড়ার কিতাব।
আল কুরআনের মধ্যে আকিদা-বিশ্বাসের ভিত্তিতে নৈতিক চরিত্র, ইবাদত, তাহজিব, তমুদ্দুন, অর্থ ও সমাজব্যবস্থা, আইন ও আদালত, যুদ্ধ ও সন্ধি মোট কথা মানবজীবনের সব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।
২. আল কিতাব : মহাগ্রন্থ। এ নাম প্রায় সারা কুরআনেই বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘আলিফ লাম মিম। এ সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকি লোকদের জন্য পথপ্রদর্শক।’ (সূরা বাকারা ১-২) কিতাব শব্দটি কাতাবা এয়াকতুবু শব্দ থেকে এসেছে। অর্থ হলো আল্লাহর লিখিত ফরমান, আল্লাহর লিখিত নির্দেশ, ফরজ ইত্যাদি। যেহেতু আল কুরআন লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে, তাই এটি একটি লিখিত নির্দেশ। আল-কুরআনের প্রতিটি ফরমানই মানুষের জন্য অবশ্যই পালনীয়।
৩. আল মুবিন : সুস্পষ্ট বর্ণনা। বা আল-বায়ান অর্থাৎ স্পষ্ট বিবরণ। আল কুরআন এমন এক গ্রন্থ যাতে মানুষের জীবন পরিচালনার প্রতিটি দিক বা বিভাগ আল্লাহ খোলে খোলে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন ‘আমি আপনার ওপর এমন এক কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে এবং মুসলমানদের জন্য পথনির্দেশনা, রহমত ও সুসংবাদ রয়েছে।’ (সূরা নাহল, ৮৯)
৪. আল কালাম : বাণী। আল কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী। অজ্ঞ লোকেরা মনে করত, মুহাম্মদ সা: যেটিকে আল্লাহর কালাম বলে প্রচার বা দাবি করে সেটি নিছক ভাষার তেলেসমাতি, কবিসুলভ অবাস্তব কল্পনা এবং গণক ও জ্যোতিষীদের মতো ঊর্ধ্বজগৎ সম্পর্কিত কিছু আলোচনার সমষ্টি মাত্র। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, তোমাদের এ ধারণা ঠিক নয়। বরং এগুলো দয়াময়, জ্ঞানময় আল্লাহর তায়ালার কালাম বা বাণী চিরন্তনী। সুতরাং যারা এর প্রতি মনোযোগী হবে না তারা আল্লাহর কালাম থেকে চিরবঞ্চিত হবে এবং সারা জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে।
৫. আল নূর : আলো। আল কুরআন একটি আলোকরশ্মি। অন্ধকারে পথ চলার জন্য আল-কুরআন হলো আলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আলিফ-লাম-র। এটা একখানি কিতাব যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে। যাতে তুমি লোকদের তাদের রবের অনুমতিক্রমে জমাট বাঁধা অন্ধকার থেকে সেই আলোর পথে নিয়ে আসতে পার যে পথটি এমন এক সত্তার যিনি পরাক্রমশালী এবং নিজেই প্রশংসিত।’ (ইব্রাহিম : ১-২) আল কুরআন জুলুমাত তথা অন্ধকার জগৎ শব্দটি বহুবচনে উল্লেখ হয়েছে, তার মানে অন্ধকারের পথ হয় অনেক। কারণ অন্ধকারে পথচলা আন্দাজ-অনুমানের মাধ্যমে যেকোনো দিকেই চলতে পারে। আর আলোর পথ একটিই। এটি মহান প্রভুর রহমত, করুণা ও অনুগ্রহ পাওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। নৈতিক অধপতন, ভ্রষ্টাচার ও বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আল্লাহকে চেনা ও আল্লাহর রহমতের পথে চলার জন্য অন্তর্দৃষ্টির আলোর বা জ্ঞানের প্রয়োজন। আল কুরআন মানুষের অন্তর্দৃষ্টির সেই জ্ঞান বা আলো সরবরাহ করে থাকে।
৬. আল হুদা : পথ নির্দেশক। দুনিয়ার জীবনে যারা নিশ্চিন্তে সিরাতুল মুস্তাকিমের ওপর চলার একমাত্র উত্তম সাথী হলো আল-কুরআন। যারাই এ মহাগ্রন্থকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র পথনির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করতে পেরেছে, তারা প্রকৃতপক্ষে একটি মজবুত অবলম্বনকেই ধারণ করেছে। কারণ কুরআন হচ্ছে সর্বকালের বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র দিকদর্শন। এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার জন্য উত্তম সাথী। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন; ‘নিশ্চয় এ কুরআন এমন এক পথের দিকনির্দেশনা দেয় যা অতিব মজবুত এবং যে সব ঈমানদার মানুষ নেক আমল করে এ কিতাব তাদের সুসংবাদ দেয়, তাদের জন্য মহা পুরস্কারও রয়েছে।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৯)
৭. আল ফোরকান : সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। মানুষদের যেকোনো একটি ফাঁদে জড়ানোর জন্য শয়তান অসংখ্য মিথ্যা ও বাতিল পথ তৈরি করে রেখেছে। এ অসংখ্য পথ ও মত থেকে সঠিক পথটি বাছাই করার জন্য কুরআনই একমাত্র সাহায্যকারী ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু। আল-কুরআনই বলবে কোনটি জান্নাতের পথ, আর কোনটি তাগুতের পথ। যেমন আল কুরআনের ঘোষণা ‘আর এ কুরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য পথের দিশা। মানুষের জন্য (হক বাতিলের) পার্থক্যকারী।’ (সূরা-বাকারা-১৮৫) এটি সত্য-মিথ্যা, আলো-অন্ধকার, বিশ্বাস-কুফর, একত্ববাদ-শিরক, শান্তি-ফাসাদ, সন্ধি-যুদ্ধ, নীতি-দুর্নীতি, সচ্চরিত্র-দুশ্চরিত্র, হালাল-হারাম সর্বোপরি আল্লাহ ও তাগুতের পথের ঠিকানা বলে দেয়।
৮. আশ শিফা : প্রতিকার, আরোগ্য। কুরআন যে মানুষের অন্তরের ওষুধ এবং শিরক, কুফর, কুচরিত্র ও আত্মিক রোগ থেকে মনের মুক্তিদাতা এটা সর্বজন স্বীকৃত সত্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি কুরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত।’ (সূরা বনি ইসরাইল, ৮২) মানুষের দৈহিক রোগের চেয়ে আত্মিক রোগ অধিকতর ধ্বংসাত্মক। আর এটির চিকিৎসা যে কারোর জন্য সাধ্যাতীত। একমাত্র মহামহিম ডাক্তারের অপার করুণা আল কুরআনই এ রোগের অব্যর্থ চিকিৎসার কার্যকরী ব্যবস্থাপত্র।
৯. আজ-জিকর : উপদেশ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আমার জিকির থেকে বিমুখ হবে তার জন্য দুনিয়ায় হবে সঙ্কীর্ণ জীবন, আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে ‘হে আমার রব! দুনিয়ায় আমি চুষ্মান ছিলাম। কেন আমাকে অন্ধ করে তুললে? আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ এমনিভাবেই তো আমার আয়াতগুলো যখন তোমার কাছে এসেছিল তুমি তখন তা ভুলে গিয়েছিলে। ঠিক সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে।’ (সূরা ত্বহা-১২৪-১২৭) জিকর মানে আল কুরআন। প্রকৃতপক্ষে সারা কুরআনই মানুষের জন্য উপদেশ। যারা এ উপদেশ গ্রহণ করবে এবং তদনুযায়ী নিজেদের জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি দুনিয়াবাসীর সামনে এ উপদেশবাণী পেশ করবে, তাদের দুনিয়ার জীবনে মুক্তি ও কল্যাণ এবং আখিরাতের জীবন হবে শান্তি সুখের। পক্ষান্তরে যারা কুরআনের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের অবস্থা উল্লিখিত আয়াতে সুস্পষ্ট হয়েছে।
১০. আল হিকমাহ : জ্ঞানভাণ্ডার। ‘ইয়া-সিন। বিজ্ঞানময় কুরআনের কসম, তুমি নিঃসন্দেহে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত, সরল-সোজা পথে প্রতিষ্ঠিত, (এ কুরআন) প্রবল পরাক্রমশালী ও করুণাময় সত্তার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত, যাতে তুমি সতর্ক করো এমন জাতিকে যার বাপ-দাদাকে সতর্ক করা হয়নি ফলে তারা গাফিলতিতে নিমজ্জিত আছে।’ (সূরা ইয়া-সিন, ১-৬) এখানে মহা বিজ্ঞানী তাঁরই নাজিলকৃত বিজ্ঞানময় কুরআনের কসম খেয়েছেন। কুরআন ও রাসূল উভয়ই রেসালাতের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ বিজ্ঞানময় কুরআনই প্রমাণ করে মুহাম্মদ সা: সত্য নবী। আল কুরআন বিজ্ঞানের সুউচ্চ মিনার। কুরআন ছাড়া তিনি যতবড় জ্ঞানীই হোন না কেন, বাস্তবিক পক্ষে তিনি একজন মূর্খই সাব্যস্ত হবেন।
১১. আহসানুল হাদিস : সর্বোত্তম কথা। আসমান ও জমিনের মধ্যকার যত কথা বা বাণী আছে তন্মধ্যে আল কুরআনই হলো সর্বোত্তম বাণী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী নাজিল করেছেন, এমন একটি গ্রন্থ যার সব অংশ সামঞ্জস্যপূর্ণ যার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।’ (জুমার, ২৩) বাস্তবিক পক্ষেই আল কুরআন সর্বোত্তম এক বাণী। কারণ এর বাণীগুলোর মধ্যে কোনো বৈপরীত্য ও বিরোধ নেই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা কিতাব একই দাবি, একই আকিদা-বিশ্বাস এবং চিন্তা ও কর্মের একই আদর্শ পেশ করে। এর প্রতিটি অংশ অন্য সব অংশের এবং প্রতিটি বিষয় অন্য সব বিষয়ের সত্যায়ন, সমর্থন এবং ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। অর্থ ও বর্ণনার উভয় দিক দিয়েই এ গ্রন্থের পূর্ণ মিল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বিদ্যমান। যারা এ সর্বোত্তম কথা দিয়ে নিজেদের ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রকে রাঙাতে পারিনি তারা সত্যিই পৃথিবীতে যেমন লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হবে, আখিরাতের জীবনে থাকবে আরো কঠিন শাস্তি।
১২. আল-মাজিদ : মহামান্য; মহা সম্মানিত। আল কুরআনের অসংখ্য আয়াতে কুরআনের মহানত্ব ও মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, (তাদের মিথ্যা আরোপ করায় এ কুরআনের কিছু যায় আসে না) বরং এ কুরআন উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।’ (সূরা বুরুজ ২১-২২) মাজিদ আল্লাহ তায়ালা একটি গুণবাচক নাম। কুরআনের এ গুণবাচক নামটি ব্যবহারের তাৎপর্য হচ্ছে আল্লাহ যেমন শ্রেষ্ঠ সম্মানিত তাঁর কথা বা বাণীও তেমনই শ্রেষ্ঠ সম্মানিত। সুতরাং এ মহান ও শ্রেষ্ঠ সম্মানিত কুরআনের প্রতি মিথ্যা আরোপ মানে শ্রেষ্ঠ সম্মানিত আল্লাহকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করারই শামিল।
১৩. আল-কাসাস : কাহিনী; ইতিহাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রায় সারা কুরআনেই বিভিন্ন জাতির ইতিহাস বিশ্ববাসীর শিক্ষা গ্রহণের জন্য উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘আমি তোমার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি, যে মতে আমি এ কুরআন তোমার নিকট নাজিল করেছি। তুমি এর আগে অবশ্যই এ ব্যাপারে অবহিতদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।’ (সূরা ইউসুফ-৩) প্রকৃতপক্ষে যে জাতি অতীত ইতিহাস বর্ণনা করার সাথে সাথে বিরূপ আচরণকারী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির ইতিহাসও বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: ‘পূর্ববর্তী ইব্রাহিমের জাতি এবং আদ, সামুদ ও নুহের জাতিগুলো এবং মাদায়েনবাসী ও মুতাফিকাতধারীদের ইতিহাস কি তারা জানে না? তাদের কাছে নবীরা সুস্পষ্ট নির্দেশনা নিয়ে এসেছিলেন। আল্লাহ তাদের ওপর জুলুম করেননি বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছিল। পক্ষান্তরে ঈমানদার নারী-পুরুষেরা পরস্পরের মিত্র ও সহযোগী। তারা ভালো কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে।’ (তাওবা, ৭০-৭১)
১৪. আল মুতাহ্হারাহ : অতি পবিত্র ও পবিত্রতার প্রতীক আল কুরআন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যিনি সর্বপ্রকার দুর্বলতা থেকে অতি পবিত্রতম সত্তা। যেহেতু তিনি পবিত্র তাই তাঁর কালামও পবিত্র। তাই পবিত্রতা ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পবিত্র সত্তাগণ ছাড়া আর কেউ তা স্পর্শ করতে পারে না। (সূরা আল ওয়াকিয়া, ৭৯) এখানে শুধু অজু-গোসলের মাধ্যমে দেহ, পোশাক ও জায়গার পবিত্রতা বুঝায় না। বরং মানুষের নিয়ত, উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির পবিত্রতাও বুঝায়। কাফের ব্যক্তি অজু ও গোসল করলেই পবিত্র হয়ে যাবে না। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস ও আচার-আচরণের কারণে ইসলামে তাদের অপবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। আল-কুরআন মানুষকে সর্বদিক থেকে পবিত্র করে গড়ে তুলতে চায়।
এতক্ষণ আল-কুরআনের বিভিন্ন নামগুলোর তাৎপর্য থেকে এর শক্তি-সামর্থ্য ও মর্যাদা সম্পর্কে যা জানতে পারলাম তা বিশাল এ গ্রন্থের যৎকিঞ্চিত মাত্র। প্রকৃতপক্ষে বিশাল এ ভাণ্ডারের উপকারিতা, প্রভাব প্রতিপত্তি ও মর্যাদা বর্ণনা করা মানুষের সাধ্যাতীত।
সুতরাং আসুন আল কুরআন দিয়ে আমাদের হৃদয়-প্রাণকে ভরে দেই। আমাদের গোটা দেহ ও মন নিয়ে আল-কুরআনের বিশাল ভুবনে প্রবেশ করি। ইনশাআল্লাহ শয়তান আমাদের কাছেও ভিড়তে পারবে না।